তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৭

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৭
Lutful Mehijabin (লেখা)

–আমি খাব না।
ইয়াদ জারার বলা কথার গুরুত্ব দিল না। পিছন থেকে রিভালবার বের করে টেবিলের উপর রাখল। প্লেটটা হাতে নিয়ে খাবার মাখতে শুরু করলো। জারার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–খাবে না? তাই তো!

পুনরায় বিভালবারের দিকে দৃষ্টি পড়তেই, জারা কাঁপতে আরম্ভ করলো। সে হা করে খাবার মুখে দেওয়া পূর্বে ঢলে পড়ল ইয়াদের উপর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আকস্মিক জারা সেন্স লেস হয়ে পড়াতে ইয়াদ অপ্রতিভ হয়ে পড়ল। তার শান্ত হৃদয়ে অশান্ততার আবির্ভাব ঘটলো। বুকের ভিতর অবস্থিত হৃদ স্পন্দন বিদ্যুৎ তড়িৎ দ্বিগুণ হাড়ে বেড়ে গেল। তার মুখশ্রীতে ভয় নামক অনুভূতির উপস্থিত ঘটলো। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়ল। কী করবে সে? কিছুই বুঝে উঠতে পাড়ল না। জারাকে ঠিক করে বিছানাতে শুইয়ে দিল। তৎক্ষণাৎ জারার মুখে পানির ছিটে দিতে লাগলো এবং শীতল কন্ঠস্বরে জারাকে ডাকতে লাগলো।

–হেই জারা আর ইউ ওকে?
জারার জ্ঞান নেই আন্দাজ করতে পেরে নিজের ঠোঁট যুগল শক্ত করে কামড়ে ধরলো ইয়াদ। জারার মুখশ্রীতে দুশ্চিন্তা গ্রস্ত চাহনি নিক্ষেপ করে তার মাথার চুলগুলো টানতে লাগলো। অতঃপর নিরুপায় হয়ে কল দিলো তার চেনা পরিচিত ডক্টরকে।

খানিকক্ষণ বাদে ইয়াদের পরিচিত ডক্টর মেহরাভ চলে এলেন। ডক্টরের জলদি আসার কারন হচ্ছে ইয়াদের এপার্টমেন্টের সামনের এপার্টমেন্টে তিনি সপরিবারে বসবাস করেন। ইয়াদ ডক্টরকে সঙ্গে সঙ্গে জারার ঘরে নিয়ে এলো।

প্রায় মিনিট পাঁচেক ডক্টর মেহরাভ জারাকে চেক আপ করলেন। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন টেবিলের উপর খাবারের সঙ্গে রিভালবার পড়ে আছে। তিনি বুঝতে পারলেন কেন জারা সেন্স লেস হয়ে পড়েছে। অতঃপর মুচকি হেসে ইয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত দিয়ে বলে উঠলেন,
–ভয় পাবার মতো কিছু হয় নি, ইয়াদ।

মেহরাভের কথা শুনে পরাপর দুটো স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো ইয়াদ। ডক্টর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ইয়াদের কাঁধে এক হাত দিয়ে স্পর্শ করে বললেন,
–সবকিছু ভয় দেখিয়ে অর্জন করা যায় না ইয়াদ।
ইয়াদ কিছু বুঝতে পারলো না। অবুঝের ন্যায় বলে উঠলো,
–কী হয়েছে আঙ্কেল?

ডক্টর মেহরাভ টেবিলের উপর অবস্থিত রিভালবার দিকে ইশারা করলেন। ইয়াদের চোখ যুগল টেবিলের উপর পড়তেই, সে অস্কুটস্বরে বলল,
–ওহ্ শেট।
মেহরাভ ইয়াদের অশান্ত চোখের চাহনি দেখে বলে উঠলো,

–জারা কোন কিছু দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। আই থিংক রিভালবারে ওর ফবিয়া আছে। তাই বোধহয় অতিরিক্ত ভয় পেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে। খানিকক্ষণ পরেই ওর জ্ঞান ফিরবে।
মেহরাভের কথা শুনে ইয়াদ নিজের উপর মনে মনে হাজারো গালি দিতে লাগলো। সে এতোটা কেয়ারলেস হলো কবে থেকে? সে নিজের প্রতি একরাশ ক্রোধ নিয়ে হাতের মুঠো শক্ত করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল।
ডক্টর মেহরাভ যাওয়ার আগে বললেন,

–ইয়াদ আমি একটু পানি খাব।
ইয়াদ ডক্টরের জন্য পানি আনতে রুম হতে বেরিয়ে গেল। অতঃপর তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে চলে এলো সে। মূহুর্তেই দরজার বাইরে থাকাকালীন সময় তার কর্ণপাত হলো ডক্টর মেহরাভ এবং জারার কথোপকথন। তারমানে জারা সেন্স লেস হয় নি?
পানি নিয়ে ভিতরে ঢোকার আগে ডক্টর ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ইয়াদের হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এক চুমুক পানি খেয়ে চলে গেল। যাওয়া পূর্বে বলে গেলেন,

–বি কেয়ারফুল ইয়াদ।
ডক্টর মেহরাভ প্রস্থান করার পর ইয়াদ খাবারে প্লেটটা ঢেকে জারার ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। ডক্টরের মিথ্যা কথা ধরতে পেরে তার মাথা গরম হয়ে উঠলো। বারংবার তার মিথ্যা অপছন্দ। তার এখন মাথা ঠান্ডা করার খুবই প্রয়োজন। তাই ইয়াদ টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল।

খানিকক্ষণ আগে এশার আজান দিয়েছে। মাত্র সালাত আদায় করে রুমের বেলকণিতে চলে এলাম। সমুদ্র নামক লোকটা যে গভীর সমুদ্রের ন্যায় জটিল ধাধার মানুষ তা আমি কিছুটা হলেও আভাস পাচ্ছি। কোন কিছু ভালো লাগছে না। পৃথিবীটা বিষাদগ্রস্ত লাগছে। মুক্তি পেতে ইচ্ছে করছে এই বিয়ে নামক মায়াজাল থেকে। মন গহীনে অভিপ্রায় জাগছে সমুদ্র নামক মানব থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়ার। কিন্তু আমি তো নিরুপায়। কোথাও যাওয়ার তো যায়গা নেই আমার। সমুদ্র নামক আবাসস্থল যে আমার একমাত্র ঠাই।

ওই দূর আকাশের দিকে জলভরা নয়নে তাকিয়ে আছি। আজ রাত্রির কালো অন্ধকার আকাশটা জাঁকজমক রূপে সেঁজে উঠেছে। পূর্ণিমার আলো অন্ধকারকে গ্রাস করে নিয়েছে। আহা! কতোই না সুন্দর এই পৃথিবীর সৌন্দর্য। আমার মন প্রাণ ভরে উঠলো। খানিকক্ষণের জন্য ভুলে গেলেম সমুদ্র নামক অস্বাভাবিক প্রাণীর কথা। মত্ত হয়ে উঠলাম প্রকৃতির সৌন্দর্য বিলাস করতে। পলক হীন নয়নে গভীর দৃষ্টিপাতে তাকিয়ে রইলাম আকাশ পানে।

জারার ঘুম ভাঙতে বিছানা থেকে উঠে বসলো সে। ইয়াদের সামনে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করতে করতে সে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি। এই হলো এক জটিল সমস্যা, ঘুম প্রিয় মানুষগুলো সুযোগ পেলেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। জারার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। সেও সুযোগ পেলেই ঘুমিয়ে পড়ে। এমনকি জারাকে নিয়ে কোথাও দাওয়াত খেতে গেলেও সে ঘুমিয়ে পড়বে। চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার রেকর্ড তার আছে!

জারা ঘুম থেকে উঠে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করলো। টেবিলের উপর রিভালবার না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। পাশে থেকে চশমাটা পড়ে, খাবারের প্লেটটা সামনে এনে খেতে আরম্ভ করে দিলো। সারাদিন লং জার্নি করে ক্লান্ত সে। এতক্ষণ ঘুমানোর ফলে প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তার। তাই জারা দেরি না করে প্লেটের খাবার খেয়ে নিলো। অতঃপর প্লেটটা কিচেনে রাখতে উঠে দাঁড়ালো। ঘর থেকে বেরিয়ে ওলি গলি চিনতে ব্যর্থ হলো সে। অবশেষে ভুল করে ঢুকে পড়েলো ইয়াদের রুমে। মাত্র শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম হতে বেরিয়েছে ইয়াদ। সে ফোনের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে।

ঘরে প্রবেশ করতেই সর্বপ্রথম জারার চোখ পড়ল ইয়াদের উপর। মূহুর্তে তার চোখ যুগল বেহায়া রুপে রুপান্তর হলো। চাহনি আঁটকে রইলো লম্বা চাওড়া সুদর্শন যুবকের উপর! সিল্কি চুল বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে! ইয়াদ শীতে কম্পনিত তার লালাভ ঠোঁট যুগল কামড়ে ধরে রয়েছে।
জারা খানিকটা মূহুর্ত ইয়াদের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বিরবির করে ইয়াদকে শ খানিক গালি দিয়ে পা বাড়াল ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য। হঠাৎ ইয়াদের কঠিন কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই তার চলমান পা যুগল থেমে গেল। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সে।

–কী ভাবেছ ইডিয়েট! আমি কিছু বুঝিনা?
জারা ভয় পেয়ে দৌড়ে ইয়াদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে তার রুম খুঁজতে লাগলো। বড়ো এপার্টমেন্ট হওয়ার ফলে জারা রুমের ওলি গলি বুঝতে পারল না। প্রায় মিনিট দশেক পর রুমটা খুজলো। তখন তার খেয়াল হলো তার ঘরটা ইয়াদের ঘরের পাশে। জারা ঘরে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। প্রায় তিন মিনিটের মধ্য গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল সে।

মিষ্টি রোদের আলো মুখে এসে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ যুগল পিটপিট করে খুললাম। ঝাপসা চোখে দেয়াল ঘড়ির দিকে দৃষ্টি মেলে তাকালাম। সঙ্গে সঙ্গে ঝট করে বিছানা থেকে পড়লাম। চলে গেলাম ওয়াশরুমে। আমার তো মনে ছিল না আজকে নতুন স্কুলে যেতে হবে। ভেবেই অনেক আনন্দ লাগছে। আমি কতদিন পরে স্কুলে যাব! আমি এক বছর যাবত রেগুলার স্কুলে যেতে পারি না। হঠাৎ মাঝে মাঝে যায় কিন্তু পরীক্ষায় নিয়মিত এটেন্ড করি।

ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে চলে এলাম। সাথে সাথে আমার চোখ যুগল আকাশে পৌঁছে গেলো। উনি কিচেনে রান্না করছেন! আমার হা করে চিন্তা মগ্ন থাকা সময়ের মধ্যে তিনি খাবার সার্ভ করে টেবিলের উপর রাখলেন।
সমুদ্র একপলক মেহেরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে খেতে আরম্ভ করে দিল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাবার শেষ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। পুনরায় মেহেরের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠলো। মেয়েটা এখনো খেতে বসে নি, আজব! ভেবেই সমুদ্রের কাপাল কুঁচকে গেল। কন্ঠে তিক্ততা বজায় রেখে বলে উঠলো,

–পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরো খাবারটা শেষ দেখতে চাই।
এ যেন আবেদন নয় এক প্রকার ভর্ৎসনা। আমি তার কথা মতো চুপচাপ খাওয়া শুরু করে দিলাম। তিনি নিজের ঘরে চলে গিয়েছেন। খাবারের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করতেই আমার নাম মুখ কুঁচকে এলো। এ্যা ওটস! এখন আমাকে ওটস নামক পঁচা খাবার খেতে হবে!

কিছু বলার মতোন সুযোগ পেলাম না। চোখ বুঁজে খাবারটা গিলে নিলাম। খেয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তখনই কলিং বেলের বাজে শব্দে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বেশি কিছু না ভেবেই দরজা খুলে দিলাম।
–হাই বেবি কেমন আছো?
অহনা আপুর মিষ্টি কন্ঠ পেয়ে আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। আনন্দের উদ্ভব ঘটলো অন্তরালে!
–ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

অহনা আপু আমার কথার প্রত্যুত্তর মিষ্টি করে বলল,
–আপনি নয় তুমি করে বলবে প্লিজ। এইতো রাতে যেমন ছিলাম এখনো ঠিক তেমনি আছি।
–ঠিক আছে আপু।

আমাদের কথার মধ্যে সমুদ্র নামক মানুষটা উপস্থিত হলেন। সাদা শার্টের উপর কালো কোট কালো প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় অহনা আপুর নিকট এগিয়ে এলেন। অহনা আপুর হাতে একটা ফাইল দিয়ে রুম ত্যাগ করলেন। যাওয়ার পূর্বে বলে গেলেন,

–ফাইলের মধ্যে সব কিছু আছে। আমি যাচ্ছি। তুই ওকে নিয়ে আয়।
উনি যাবার পর অহনা আপু আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
–যাও ড্রেস চেন্জ করে এসো। এই ব্যাগের ভিতরে তোমার ড্রেস আছে।
আমি ব্যাগটা হাতে নিয়ে দু দিকে মাথা হেলিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম।

অহনা আপুর সঙ্গে টিচারস রুমে বসে আছি। আমার মনে খুশির জোয়ার চলছে। ইশ, এখন থেকে ক্লাস করব! ভেবেই বুকের ভেতর প্রশান্তির হাওয়া বইছে। অহনা আপু ফাইল নিয়ে পিন্সিপাল টিচারের সাথে ভর্তি নিয়ে আলোচনা করছে। আমার নাইনে অন্য স্কুলে এস এস সির রেজিস্ট্রেশন থাকার ফলে তারা প্রথমে ভর্তি নিতে চাইছিলেন না। অবশেষে আপুর জন্য ভর্তি নিতে বাধ্য হলেন তারা।

অহনা আপু আমাকে ক্লাস রুমে বসিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। পিছের একটা বেন্চে বসে আছি। কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছে না। আমি বিষন্ন মনে নতুন বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছি। খানিক বাদেই ক্লাসে টিচার প্রবেশ করতে সবাই উঠে দাঁড়াল। আমিও উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম সামনের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে আমি স্তম্ভিত হয়ে উঠলাম। ক্লাস চিটারের স্থানে উনাকে দেখে আমি বিহ্বল হয়ে পড়লাম!

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৬

[দ্বিতীয় পর্বে একবার বলেছি মেহের ক্লাস টেন এ পড়ে। দুঃখিত, প্রথম পর্ব ইডেট করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই এই পর্বে আবার ও বলে দিলাম।
সম্পূর্ণ প্রকার কপি করা নিষিদ্ধ। এমনকি ইউটিউব এ দেওয়াও নিষিদ্ধ। যারা দিয়েছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিলিট করে দিবেন। নয়তো বিনা নোটিশে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

তুমি নামক অনুভূতি পর্ব ৮