তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২০ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২০
Suraiya Aayat

সানাকে ফোন করে আরু দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে সামান্য ক্ষীনস্বরে বলল
” কেমন আছিস ?”
আজ বহুদিন পর আরুর কণ্ঠস্বর পেয়ে সানা মনে খানিকটা উত্তেজনা পেয়েছে ৷তাছাড়া বাড়ির যা পরিস্থিতি তাতে নিজেকে কেমন আবদ্ধ জীবনের মধ্যে কল্পনা করছে সানা, যে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে নিজেকে বড্ড কষ্ট হচ্ছে ৷ ছোট্ট মুগ্ধতা আছে বলে সময়টা কোন রকম ভাবে কেটে যায় আর এখন তো আফসানা বেগম বেশিরভাগ সময় ঘর থেকে বের হন না ৷ আরমান সাহেব নিজের মত চলে , ওনার সাথে এখন কথা বলতে সানার ভয় লাগে, সারাদিনের ব্যস্ততায় ভরপুর থাকে আহান ৷ সেই সকাল সকাল বেরিয়ে যায় আবার রাতে বাসায় ফেরে, জীবনটা যেন কোথাও একটা গিয়ে থেমে গেছে আর আগের মতো জীবনের সেই সৌন্দর্যটা আর নেই ৷
সানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো

” আমি ভালো নেই , আমার আজকে তোকে অনেক কিছু বলার আছে ৷ তোর সাথে কথা বলার জন্য আমি এতোদিন ধরে ব্যাকুল হয়েছিলাম কিন্তু কোন এক অজানা টানে আমি যেন বলতে ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু এখন তোর সাথে কথা বলে যেন আমার আর কোন কিছুই ভয় লাগছে না এখন মনে হচ্ছে আমি হাজারো দ্বিধা অতিক্রম করে তোকে কথাগুলো বলতে পারি আর এই কথাগুলো তোকে না বললেই নয় ৷”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল সানা ,কথাটা বলেই নিঃশ্বাস ছাড়লো সানা ৷
সানার এই বিশাল দীর্ঘশ্বাস দেখে আরুর ভ্রু কুঁচকে এলো, ও বললো
” কেন নতুন করে কি আবার কোনো সমস্যা হয়েছে?”
সানা সাবলীল ভাবেই বলল

” এটাকে কতটা সমস্যা বলা যায় আমি জানিনা কিন্তু এটা এক প্রকার সত্যতা যেটা তোর মনে হয় জানা উচিত ৷”
সানার কথাগুলো শুনে আরুর মধ্যে মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জাগছে , সানা কি এমন বলতে চাইছে !
আরু এবার খানিকটা কিন্তু কিন্তু করে বলল
” আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি তুই অনেক মানসিক চিন্তার মধ্যে আছিস , আগে নিজেকে আরেকটু সামলে নে তারপর একটু শান্ত হয়ে সমস্ত টা গুছিয়ে আমাকে বল ৷”
সানাই এবার বলতে শুরু করলো
” আমি বলব আর তোকে শুনতে হবে কারণ এগুলো তোর জানা খুবই জরুরী ৷ শোন আরু আমার কোনোভাবে মনে হচ্ছে যে আমাদের খুব কাছের একজন তোর আর আর্শিয়ানের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে,এটা আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি ৷ আর্শিয়ানের এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া পিছনে হয়তো কেউ একজন আছে যে সমস্ত টা করছে ৷”
সানার কথাটা শুনে আরূ এবার গাঢ কন্ঠে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” কে সে ?”
” আমার মনে হচ্ছে বাবা আর্শিয়ানের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন ৷”
এটুকু শোনার জন্য আরু হয়তো প্রস্তুত ছিল , মুখে না প্রকাশ করলেও উনি যে আরশিয়ান কে সহ্য করতে পারেন না সেটা আরূ উনার ব্যবহারেই বুঝতে পেরেছে , কিন্তু এর পরবর্তীতে সানা কি বলে সেটা শোনার অপেক্ষায় আছে ও ৷”
সানা আবার বলতে শুরু করল
” বাবা তোর ভালো চায়না, তোর ক্ষতি চায় ৷ আমি যতদূর জানি উনি আবার তোদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন, উনি থেমে যাননি, উনি আবার তোদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন , আমার খুব আফসোস হয় এটা ভেবে যে আজ ভাইয়া তোর পাশে নেই ৷ আজ যদি আরিশ ভাইয়া তাদের সাথে থাকত তাহলে কখনোই কেউ তোদের এত বড় ক্ষতি করার সুযোগ পেত না ৷ ভাইয়া সব সময় তাদেরকে আগলে আগলে রাখতো ৷”
সানার কথা শুনে আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো

” আমার সন্দেহটা কতটা ঠিক জানিনা কিন্তু তবে তোর আরিশ ভাইয়ের সাথে হুবহু মিল আছে এমন একজনকে আমি পেয়েছি, শুধু মিল না সামনে থেকে দেখলে মনে হবে উনিই আমার আরিস তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে উনি ওনার নাম নিহান বলেছেন যিনি একজন অভিনেতা , আমার আর যাই হোক আমার আরিশ একজন অভিনেতা হতে পারেনা, আর যাই হোক ওনার( আরিশ ) সঙ্গে অভিনয় জিনিসটা ঠিক যাই না, অভিনয় হল একপ্রকার ছলনা যে ছলনায় মানুষকে আকর্ষিত করা যায় কিন্তু উনি তেমন ছলনা করার মানুষ নন ৷”

আরুর কথা শুনে সানা জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো “তুই সত্যি বলছিস আরু ? আরিশ ভাইয়া বেঁচে আছে মানে আমার ভাইয়া বেঁচে আছে ! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না ৷ কোথায় ভাইয়া ? তুই আমাকে প্লিজ ভাইয়ার কাছে নিয়ে চল ,আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করবো ৷ কথাটা বলেই সানার চোখে জল চলে এলো ৷ আর যাই হোক নিজের ভাইয়া কে পাঁচ বছরে খুব মিস করেছেও ৷ ওর ভাইয়া ওর কাছে খুব প্রিয় ৷
সানাকে আরু আশ্বস্ত করে বলল

” আমি শিওর না , তবে ওনার অনেক কাজকর্মে আমার মনে হয় উনি আরিশ , তবে মাঝে মাঝে উনি আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দেন ৷ তাই উনি যদি আরিশ হন তাহলে যতদিন না নিজে থেকে আমার কাছে ধরা দেবেন ততদিন আমিও ওনাকে আর পাওয়ার চেষ্টা করবো না , আর তাছাড়া এই চার বছরে আরশিয়ান কে আমি একাই বড় করে তুলেছি, চার বছরে কখনো আর্শিয়ানের তার পাপার প্রয়োজন হয়নি , আর আশা করি এখন ও আরসিয়ানের তার পাপাকে প্রয়োজন হবে না ৷ আরশিয়ানের পাপাও আমি আর ওর মাম্মাম ও আমি, কারোর দরকার নেই ওর ৷”
বাবা মা কথাটা শুনে সানার মনে পড়ে গেল আরমান সাহেবের কথা, উনি তো আরুর বাবা নন এই কথাটা তো ওর এখনো আরুকে জানানোই হয়নি, তাই সানা একটু নিস্তব্ধ থেকে বলতে শুরু করল

” আরু তোর একটা ধারণা ভুল, বাবা তোর,,,,”
কথাটুকু অর্ধেক বলে আর যেন বলতে পারলো না, তার আগে হন্তদন্ত হয়ে আফসানা বেগম সানার বেডরুমে ছুটে এসে বললেন,,
” আমাদের আরিশ বেঁচে আছে ! সত্যিই আছে বেঁচে আছে ! ও কোথায় আমি ওর সাথে দেখা করবো, আমি আর আমার মেয়ের এম কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না, আমার মেয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একা লড়াই করে এসেছে , সব ঝড়ঝাপটা একা সামলে এসেছে ৷ আর না, আমিও চাই আমার মেয়েটাও আর পাঁচ জনের মতো সুখে থাকুক, ভালো থাকুক, আরিশ ই ওর একমাত্র ভালো থাকার উপায় ৷ কোথায় আছে আরিশ , আমাকে বলো আমি আরিশে এর সাথে দেখা করবো ৷ আমি আরিশকে ফিরিয়ে আনবো ৷ ”

কথাটা বলে আফসানা বেগম কান্না করতে শুরু করে দিলেন ৷ হঠাৎ ওনার এমন কান্নাকাটি দেখে সানা ঘাবড়ে গেল বেশ ৷ ফোনের ওপার থেকে সমস্ত টা আরুর কানে যাচ্ছে, ওর মায়ের করা পাগলামিগুলো স্বাভাবিক ৷ সকল মায়েরা তার মেয়ের সুখের জন্য এমন পাগলামি টা করে থাকেন ৷ উনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয় ৷ আফসানা বেগম সানার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে কানে ধরে বললেন
” আরু মা আমার আমি আরিশকে তোর জীবনে ফিরিয়ে দেবো , কেউ থাকুক আর না থাকুক তোর আম্মু সবসময় তোর সাথে আছে , তোর আর কোন চিন্তা নেই ৷ আরিশকে আমি তোর জীবনে ফিরিয়ে আনবোই, আরিশ কোথায় থাকে শুধু একটা বার আমাকে সেটা বল ৷ আমি ওর সাথে দেখা করবো ৷”

আরো অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে ওটা আরআশ নয় নিহান , তবুও উনি মানতে নারাজ ৷ যতই হোক মায়ের মন, সন্তানের সুখের জন্য যেকোনো কাজ করতে পারে ৷
” বনানী 1 নম্বর রোডে থাকেন উনি , আর তাছাড়া উনি সবার সাথেই অপিরিচিতর মতো ব্যাবহার করেন , উনি যদি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন তাহলে তুমি আর কখনও ওনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না ৷ আফসানা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,,
” একবার তো চেষ্টা করে দেখতেই পারি, সমস্যা কোথায় ! তুই চিন্তা করিস না আমি কালকেই আরিশের সাথে দেখা করতে যাব ৷”

আরুর আর কিছু শুনতে ভালো লাগছে না , সমস্ত কিছুতেই বিরুক্তি কাজ করছে,সানাকে ফোন করেছিল খানিকটা প্রাণ খুলে কথা বলবে তাই কিন্তু হিতে বিপরীত হলো ৷ এতে ওর অস্বস্তির মাত্রাটা যেন আরো বেড়ে গেল, ওর মায়ের পাগলামো আর আরমান খানের সমস্ত কার্যকলাপ শুনে এখন মনের মধ্যে রাগ লাগছে ৷ ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল , এখন একটু বাইরে হাটবে যদি অসস্তি আর বিরক্তির মাত্রাটা কমে ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ১৯

আরশিয়ানের এখনো স্কুল খুলেনি , তাই অফিস টাইমে তো আর আরশিয়ান কে একা ফেলে রেখে আসা যায় না তাই নিজের সাথে আরশিয়ানকে নিয়ে এসেছে আরু, যদি বা আবির নিজের সাথেই আর্শিয়ানকে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু আরু যে এখনো কাউকে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না তাই জন্যই আরশিয়ান কি নিজের সাথে নিয়ে আসা ৷
অফিসে ঢুকতেই লারার আর্শিয়ানকে দেখে আর্শিয়ান কে কলে নিয়ে নিজের ডেক্সের দিকে নিয়ে গিয়ে বসালো ৷ লারা আর্শিয়ান কে খুব ভালোবাসে , মাঝেমাঝে আর্শিয়ানের জন্য চকলেট আইসক্রিম পাঠায় , আবার মাঝে মাঝে ফোনে কথাও বলে তাই আর কাউকে না চিনলেও আর্শিয়ান লারাকে বেশ ভালই চেনে ৷

আরু নিজের ডেক্সে ওর ব্যাগটা রেখে মিনহাজ সাহেবের রুমের দিকে যেতেই দেখল রুমের দরজা বন্ধ, তার অর্থ আজকে উনি অফিসে আসেননি ৷ ওনার সাথে খানিকটা দরকারি কথা বলার জন্য আরু উনার রুমে গিয়েছিল, তাছাড়া এত দিন ছুটি কাটানোর পর অফিসে এসেছে আরু,আর
উনি অফিসের বস তাই ওনার সাথে দেখা করাটা আবশি্্যক ৷
ওনাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজের জায়গায় ফিরে এলো আরু ৷
হঠাৎ খেয়াল করলো উনি অফিসে ঢুকছেন তবে খানিকটা বিধ্বস্ত হয়ে, মন মেজাজ যে ঠিক নেই তা বলাই বাহুল্য ৷
ওনাকে অন্যদিন সাধারনত এমন দেখাই না,বেশ প্রানচ্ছল লাগে তবে আজকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে ওনার ?

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২১