তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৭ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৭
Suraiya Aayat

আরুর হাত ধরে টানতে টানতে আবির আরুকে রুমে এনে আরুর হাতটা ছেড়ে দিতেই আরু অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল

” আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে এখানে এভাবে টেনে আনার ! আর আপনি আমার হাত ধরলেন কোন সাহসে !”
আবিরের মাথাটা এমনিতেই গরম ছিলো আর তার ওপর আরুর এমন চিল্লাপাল্লা শুনে ওর মাথা আরো গরম হয়ে গেল ৷ আরুর কথাটা শুনে রেগে গিয়ে বলল “আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? আপনি ওইভাবে পার্কের অত লোকজনের মধ্যে অন্য একজন লোককে নিজের স্বামী বলে দাবি করেছেন , সবাই তো আপনাকে পাগল বলবে ৷ এমনিতেই আপনি যা করেছেন সেটা পুরো বিল্ডিং রটে গেছে অলরেডি তার ওপর এগুলোকে বাইরের লোককে না জানালেই কি নয় ! আপনি যা যা করছেন সেগুলো শুনে সমাজের লোকেরা কি বলবে !”

আরু এবার আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো
” একবার বলেছিনা আমি সমাজের লোকের পরোয়া করিনা, বারবার আমাকে সমাজের মাঝখানে টেনে আনবেন না ৷ আপনি যে সমাজের কথা বলছেন সে সমাজের মায়া আমি বহুদিন আগেই ত্যাগ করে চলে এসেছি ৷ আমার সমাজটা ভিন্ন, আমার সমাজে প্রতিবাদী মায়েরা লড়াই করে বিলাসিতা পূর্ণ জীবনযাপনকারী রা নয় , আর সেটা আপনি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন সেটা ততই আপনার জন্যই ভালো ৷সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আমার আরশিয়ান এর কোন ব্যাপারই না আসেন ৷ এতদিন অনেক প্রকার উপকার করেছেন যার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না আমি তাই দয়া করে সেই ঋণের পরিমাণটা আর বাড়াতে আসবেন না, পারলে আমার আর আমার ছেলের থেকে দূরে থাকুন , এটাই আমাদের জন্য ভালো হবে আর আপনার জন্যও ৷”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরুর এমন কথা শুনে আবির রেগে গেলে, রেগে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আবির বেরিয়ে যাওয়াতে আরু একেবারে অনুতপ্ত নয় কারন ওর মনে যা এসেছে সমস্ত সত্যি কথাটাই ও বলেছে ৷ আরু লক্ষ্য করেছে যে আবির এই কদিন যেচে আরুর জীবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে যে জিনিসটা ওর একদমই ভালো লাগছেনা, তাই কথাগুলো এই মুহূর্তে আবিরকে বলার দরকার ছিল ৷
আবির চলে যেতেই আরশিয়ান আরুর হাত ধরে ডাকতে ডাকতে বলল
” মাম্মাম ওই লোকটা কে ছিলো?”

আরু এবার আরশিয়ান কে বিছানায় বসিয়ে আরশিয়ান কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল
” ওটা তোমার পাপা আরশিয়ান , ওটা তোমার পাপা ৷ তোমার পাপা ফিরে এসেছে ৷ উনি যতই বলুক যে উনি আরিশ খান নন কিন্তু আমি জানি উনিই আরিশ খান , উনাকে চিনতে আমার এতোটুকুও ভুল হবেনা কখ্নো ৷”
আর্শিয়ান সমস্তটা না বুঝলেও এটুকু বুঝতে পারলো যে লোকটা তার পাপা ৷ কথাটা ভেবেই মুখের হাসিটা চওড়া করে আরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ৷ তার পাপা আবার ফিরে এসেছে ,আর আরশিয়ান তার পাপাকে সামনাসামনি দেখলো, এখন থেকে স্কুলে গিয়ে সে ও বলতে পারবে আমার পাপা সুপারম্য৷ন ৷আরশিয়ান আবার তার পাপাকে ফিরে পেতে চায়, তার মাম্মামের মুখে হাসি দেখতে চাই ৷

” দেখুন আন্টি আমি আর কি বলব সবইতো আপনারা জানেন, আমার স্ত্রী বিয়ের পাঁচ মাস পরে মারা যান কঠিন অসুখে , অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমি বাঁচাতে পারিনি ৷ ”
কথাটা বলতেই ইলমাজের চোখের জল চিকচিক করে উঠলো ৷ পলক ঝপকালেই জল টপটপ করে গড়িয়ে পড়বে ৷ বাড়ি ভর্তি লোকজন এর সামনে তার মনের কথাগুলো ব্যক্ত করছে ইলমাজ , মনে একরাশ অভিমান জমা রয়েছে সমস্ত কিছুর প্রতি ৷ তাছাড়া আরুর প্রতি যা হয়েছে তার জন্য নিজেকে দোষী মনে করে ও ৷
আহান মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে আর সব মনোযোগ সহকারে শুনছে কারণ যা হচ্ছে সেগুলো সব শোনার খুব দরকার ৷ হঠাৎ ওর দেড় বছর বয়সী বাচ্চা মেয়েটা উঠতেই আহান সানাকে ডেকে বলল
” সানা মুগ্ধতা কাঁদছে, ওকে নিয়ে যাও , ওর হয়তো খিদে পেয়েছে ৷”

সানা হাত মুছতে মুছতে এসে মুগ্ধতাকে কোলে নিয়ে চলে যেতে নিলেই ইলমাজের কথাটা শুনে খানিকটা থেমে গেল , হঠাৎ ইলমাজ আবার বলতে শুরু করল
” মৃন্ময়ী চার মাসের অন্তঃসত্তা ছিলো , কত আশা ছিল ওর আমাদেরও একটা এমন ফুটফুটে মেয়ে হবে , তার ও একটা সুন্দর নাম দেবে , কিন্তু তার আগেই তো সবকিছু শেষ হয়ে গেল ৷”
ইলমাজের কথা শুনে আহানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে এল ৷ইলমাজের কথা শুনে তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বললো
” তা কি এমন রোগ হয়েছিল আপনার স্ত্রীর, যে আপনার স্ত্রী মারা গেলেন ৷”
” এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস , এই রোগটা হয়েছিল তার ৷”

” হ্যাঁ মানলাম আপনার স্ত্রীর এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস হয়েছিল কিন্তু এটা তো দ্বিতীয় বার প্রেগনেন্সির সময় বেশিরভাগ সময় হয়, কিন্ত আপনার ওয়াইফ তো প্রথমবার প্রেগনেন্ট তাহলে ! ”
আহানের কথাশুনে ইলমাজ খানিকটা থতমত খেয়ে গেল তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
“হমমম প্রথমবার ই তো ৷”

” মায়ের আরএইচ ফ্যাক্টর পজেটিভ আর বাচ্চার আরএইচ ফ্যাক্টর নেগেটিভ হওয়ার দরুন অনেক কম্পলিকেশন দেখা যাই তাই বেবিটাকে মিসক্যারেজ করে দিতে বলা হয় ৷ ডাক্তার নিশ্চই বেবিটাকে মিসক্যারেজ করার কথা বলেছে কিন্তু আপনার স্ত্রী কেন বেবি মিসক্যারেজ করাননি ? কেন এত বড় একটা রিস্ক নিতে গেলেন ?”
কথাশুনে ইলমাজ থমকে গেল ৷
হঠাৎ করে আহানকে থামিয়ে দিয়ে আরমান সাহেব বলে উঠলেন
” আহান তোর কি সব জায়গায় এমন করতে হবে ডক্টর বলে ৷ আরে ইলমাজ কি তোর মতো ডক্টর যে ওইসব ব্যাপারে ও এতটা ডিটেইলসে জানবে ! এসব ছাড় আর ও কি বলতে চাইছে সেটা শোন ৷”
এবার ইলমাজ বলে উঠলো

” আরু যদি আমাকে বিয়ে না করতে চাই তাহলে আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই, কারণ ওর ও তো একটা নিজস্ব জীবনের স্বাধীনতা বলে কিছু আছে, নিজের মতামত প্রকাশের সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাই ওকে জোর করলে ওর মতবিরোধে কিছু করলে সেটা ঠিক হবে না,বরং অন্যায় হবে ওর প্রতি তাই আমি জোর করে কোন কিছু চাইনা ৷”
আহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরমান সাহেব বলে উঠলেন
” আরশিয়ান আছে বলেই হয়তো আরুর এগুলোকে মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু আমরা যদি মাথা ঠান্ডা রেখে ওকে সবটা বোঝাই তাহলে আমি নিশ্চিত আরু বুঝবে ৷আর ও এতটাও অবুঝ নয় ৷ আগের দিন রাগের মাথায় আমিও অনেক উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি , আমার মাথারো কোন ঠিক ছিল না, ৷”

উনার এমন কথা শুনে আহান আর না বলে পারল না, ” ও যদি বিয়ে না করতে চায় তাহলে ওকে জোর করছ কেন! অযথা জোর করে কারোর মতবিরোধে কিছু করে সেটা কখনো শান্তি পূর্ণ হয়না , ও যদি আরশিয়ানকে নিয়ে একা ভালো থাকতে চাই তো থাক না ৷ কেন ওর জীবনে হস্তক্ষেপ করছো !”
আরমান সাহেব মুচকি হেসে বললেন
” মুগ্ধতা বড় হচ্ছে আহান ৷ যখন মুগ্ধতার বিয়ে হবে তখন তুই বুঝবি এটা ৷ এটাও বুঝবি যে একটা বাবার তার মেয়েকে নিয়ে কতটা চিন্তা থাকে ৷”
বলে উনি চোখের চশমাটা খুলে চোখের জলটা মুছে নিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলেন ৷ বাবার এমন কথা শুনে আহান আর কিছু বলতে পারলো না ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৬

আরশিয়ান বসে বসে কার্টুন দেখছে আর আরু আইসক্রিমটা ফ্রিজে রাখছে , আরশিয়ানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করলো ৷ আরশিয়ান রোজ রোজ ই বাহানা করে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কিন্তু আরু খেতে দেইনা, কিন্তু আজকে হঠাৎ কি মনে হলো নিজেই আইসক্রিম অর্ডার দিয়েছে , তবে এখনো আরশিয়ানকে দেখাইনি,আরশিয়ানকে দেখালেই এখন খাওয়ার জন্য বাহানা করবে আর আরু দিতে না পরলে ছেলেটা মনে মনে কষ্ট পাবে তাই আরশিয়ানের থেকে লুকিয়ে রেখেছে ৷

ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করে আরু রোজকারের দিনের মতো আজকেও ব্যালকনিতে গেল, হয়তো নিহান নামক ছদ্মবেশি মানুষটাকে একটাবার দেখবে সেই আশায় ৷ যদিও ও জানে না যে আরিশ সেখানে থাকে কি থাকে না, কিন্তু রোজ ই মনুষটাকে এই জায়গাটাই ও দেখতে পাই, সেটা ওর কল্পনা হোক বা ওর বাস্তবে ৷
বাইরে ফুরফুরে হাওয়া বইছে আর আরু বাসাতে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই আছে ৷ সমাজের এই কুলষিতার মাঝে আরুর মাঝে মাঝে বড্ড ইচ্ছা করে সবকিছুর মিছে মায়া ত্যাগ করে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে ,শুধুমাত্র আরশিয়ানের জন্য যেতে পারেনা, আরিশয়ান সাবলম্বী হলে আরু আরশিয়ানের বিয়ে দিয়ে সবকিছুর মায়া কাটিয়ে চলে যাবে ,কারোর বোঝা হয়ে ও থাকতে চাই না ৷

বেশ অনেকখন হয়ে গেল কিন্তু আজকে আর অন্য দিনের মতো আরিশ নেই দেখে আরুর মনটা খারাপ হয়ে গেল ৷ আরিশকে ও নিজের কাছে ফিরিয়ে নেবেই,নিজের জন্য না হলেও আরশিয়ান এর জন্য ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৮