তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৮ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৮
Suraiya Aayat

সকাল সকাল আর্শিয়ানের স্কুলের বাস এসে আর্শিয়ানকে স্কুলে নিয়ে গেছে, আরু অফিসে যাবে বলে রেডি হচ্ছে ৷ আজ আরশিয়ানের স্কুলের 2য় দিন তাই তার আর একা যেতে সমস্যা হয়নি, প্রথম দিন আরু নিয়ে গিয়েছিল ৷ অফিসে আরুর প্রমোশন হয়েছে,মাইনে 6 হাজার টাকা বেড়েছে, এবার আর সবকিছু সামলাতে খুব বেশি একটা অসুবিধা হবে না, ভালো ভাবেই মাস চলে যাবে ৷

প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল আরূ আরিশকে অনেকবার খোঁজার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেই দিন পার্ক থেকে যে আরিসের থেকে দূরে চলে এলো তারপর আর আরিশকে খুঁজে পাইনি আরু ৷ যদিও বা আর্শিয়ান অনেকবার ওকে জিজ্ঞাসা করেছে যে তার পাপা কোথায় কিন্তু আরু কোনো উত্তর দিতে পারেনি কারণ সে নিজেকে খুঁজে পাইনি আরিশকে ৷ এই নিয়ে আর্শিয়ান মাঝে মাঝে মন খারাপ করে থাকে, এতো বছর পর ও যখন নিজের বাবাকে পেয়েছে তখন তার ভালোবাসা টাও পাবে ভেবেছিলো কিন্তু তা আর হল কোথায় ! ছেলের এই কষ্টটা মেনে নিতে আরুর নিজেরও কষ্ট যাচ্ছে , যতই চেষ্টা করছে ওর জীবনের কুলসিতা ও আর্শিয়ানের জীবনে পড়তে দেবে না তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না , সেই কোনো-না-কোনোভাবে আর্শিয়ানের ছোট্ট মনটা কষ্ট পাচ্ছে বারবার ৷

টিফিনের বাক্স টা ব্যাগে গুছিয়ে নিয়ে আরু রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই দরজায় বেল পড়তেই আরু খানিকটা অবাক হল
“এখন আবার কে?”
তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলতেই দেখতে পেল ওর বাবাকে, ওর বাবাকে দেখেই সকাল-সকাল মাথাটা গরম হয়ে গেল ৷ আগের দিন ওর সাথে উনি যা ব্যবহার করেছেন তার পরে উনার সাথে কথা বলার কোন প্রশ্নই ওঠে না ৷
উনাকে দেখে আরূ কঠিন হয়ে বলে উঠলো
” কি ব্যাপার তুমি এখানে এত সকালে !”
হঠাৎ উনি সামান্য মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
” শুধু আমি একা না রে, আরেকজন ও আছে আমার সাথে ৷”
উনার কথাটা শুনে আরূর ভ্রু কুচকে এলো তারপরে কৌতুহলী সাথে বলল
” কে?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরূর বলা কে শব্দ টা শুনে পাশ থেকে বেরিয়ে এল ইলমাজ ৷পরনে লাল রঙের একটা পাঞ্জাবি , হাতে একটা ঘড়ি, মুখটা শুকনো লাগছে , দেখে মনে হয় অনেক দিন যেন আপনজনের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত খেয়াল রাখার মতো কেউ নেই ৷ইলমাজকে দেখে আরু খানিকটা হতভম্ব হয়ে গেল, তাড়াতাড়ি করে ইলমাজের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ওর বাবাকে বললো
” তোমরা এখানে ! আর তোমার সাথে এই লোকটা কেন এসেছে?”
আরূর বাবা বললেন

” দেখ মা তুই তো জানিস ইলমাজের ওয়াইফ মারা গেছে, একা থাকে আর তুই ও একা একা থাকিস,তাই বাকিটা জীবন ভালোভাবে থাকতে সকল মনোমালিন্য দূর করে বিয়েটা করে ফেল ৷”
ইলমাজ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পারছে যে এখুনি আরূ একটা বড় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাবে ৷.
ইলমাজ যা ভাবলো তাই হলো , ক্ষণিকের মধ্যে আরু গর্জে উঠে বলল
” বেরিয়ে যাও এখান থেকে , আর কখনো যেন আমার আর আমার ছেলে ত্রিসীমানায় তোমাদেরকে না দেখি ৷ আর এই যে আমি কি আপনাকে বলেছি যে আমি আপনাকে বিয়ে করবো ! কেন নিজেরা জেছে জেছে অপমানিত হতে আসেন বারবার , আর আপনারা কি আত্মসম্মান বোধ বলে কিছু নেই ৷”
ইলমাজের দিকে তাকিয়ে ৷

“একটু সুযোগ পেয়েছেন আর তৎক্ষনাত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চলে এসেছেন….”
ইলমাজ আর চুপ করে না থেকে মুখ ফুটে বললো
“দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমাকে ৷”
” আমি বুঝেছি, আর আমার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে , এখন আপনারা এখান থেকে বেরিয়ে যান নাহলে আমি সিকিউরিটি এনে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেবো ৷”
আরুর বাবা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন
” একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস, বারবার বলি মেয়ে মানুষের অত তেজ ভালো না ৷”
” আমার তেজ কতোটা তুমি হয়তো তা এখনো জানো না ৷”
কথটা বলে আরু রুমে তালা দিয়ে বেরিয়ে গেল ও , ও বেরিয়ে যেতেই ইমরান সাহেব ইলমাজকে বলল
” মেয়েটার তেজ দেখলে ! একবার বাগে পাই শুধু ৷”
ইলমাজ ওনার কাঁধে হাত রেখে বলল
” আপনি কষ্ট পাবেন না আংকেল, রাগের মাথায় বলছে, ও শান্ত হয়ে গেলে ওর রাগ ও চলে যাবে ৷হয়তো আরিশের এই চলে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারছে না ৷”
” যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই ভালো ৷”

ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ নিয়ে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ,দেখে মনে হচ্ছে বড়ো কোন রহস্য উৎঘাটন করতে চলেছে ৷ ল্যাপটপের screen এ থাকা আরিশের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে, একটা মডেলের সাথে খুবই অন্তরঙ্গ অবস্থায় ৷ ছবিটা দেখে আরুর হাতের লোম গুলো শিউরে উঠলো, আর যাই হোক আরিশকে অন্যকারোর সাথে সহ্য করতে পারবে না ৷
রিতীমতো ছবিটা দেখে রাগে ফুসছে আরু, সামনে আরিশ থাকলে হয়তো ওকে ক্ষতবিক্ষত করে দিতো ৷
হঠাৎই কোন পুরষালী কন্ঠস্বর পেয়ে আরু পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখল আবির দাড়িয়ে আছে ৷ আবির দেখে আরু অবাক হলো , তবুও স্বাভাবিকভাবেই বলল

“কি ব্যাপার আপনি এখানে !”
” দরকারে এসেছি ৷”
” কি দরকার?”(ভ্রু কুঁচকে )
আরুর কথার উত্তরে আবির আরুকে ওর দরকারটা জানালো , আরু আবিরকে বলল
” আপনি বাইরে দাঁড়ান আমি আসছি ৷”
” ওকে ৷”
আরু সেখান থেকে অফিসের কিচেনে গিয়ে শেফকে বলল
” মীনা , কোন এক্সটা ছুরি আছে ?”
” হমম আছে আপা, আপনার কি দরকার কোন?”
” হমম দরকার ৷”
আরুর কথাটা শুনে মীনা একটা বেশ ধারালো আর নতুন ছুরি আরুকে দিয়ে বলল
” আপা সাবধানে কাটিয়েন, অনেক ধার ৷”
আরু মুচকি হেসে বলল
” চিন্তা করোনা, সঠিকভাবে ব্যাবহার ই করবো ৷”
কথাটা বলে আরু অফিসের বাইরে এসে দাঁড়ালো , আবির গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আরু ও গাড়িতে উঠে বলল
” চলুন যাওয়া যাক ৷”
” হমম ৷”

গাড়ি এসে থামলো একটা ছোট্ট বাংলোর সামনে,পুরো বাংলো টা গাছগাছালি দিয়ে ভরা, ফুলের বাগান, খুব সুন্দর একটা পরিবেশ ৷
আরু গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবিরকে বলল
” আপনি এখানেই থাকুন , আমি আসছি ৷”
আবির আরুর কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
” আমি যাই, যদি আপনার কোন কাজে আসি ৷”
” এতোদিনেও তাহলে আপনার ভুল ধারনাটা আমি ভাঙাতে পারানি দেখছি ৷”
আবির থতমত থেকে বলল
” মানে !”

আরু একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলল
” এই যে এতদিনেও আপনি আমার সাহসিকতার দৌড় কতটা সেটা আপনাকে বোঝাতে পারিনি ৷ আমাকে দূর্বল ভেবে ভুল করছেন আপনি ৷”
আবির আর কিছু বললো না,
আরু আবিরের দিকে একবার তাকিয়ে বলল
” আমি আসছি ৷”
আরু বাড়ির সামনে গিয়ে বেল বাজাতেই একটা সারভেন্ট এসে দরজাটা খুলে দিয়ে বলল
” কে আপনি ?”
” আরুশি খান, আপনাদের sir বাসায় আছে ?”
” হমম আছে, আপনার কি কোন দরকার আছে sir এর সাথে ?”
” হমম,,,, আচ্ছা আসুন ৷”

আরুকে নিয়ে উনি ড্রয়ংরূমে নিয়ে বলল
” আপনি এখানে বসুন আমি sir কে ডাকছি, sir সুটিং এ যাবেন ৷”
কথাটা বলে উনা বিশাল অকৃতির কিচেনে ঢুকে গেলেন ৷
আরিশের সাথে দেখা করার জন্য ওকে অপেক্ষা করতে এই জিনিসটা যে আরু কিছুতেই মানতে পারছে না ৷
আর কোনরকম দেরি না সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল, উপরে উঠতেই অবাক হলো কারন উপরে কেবলমাত্র একটাই রুম আর পুরোটা ব্যালকনি ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৭

সে দিক থেকে চোখ সরিয়ে আরু হাট করে দরজাটা খুলে রুমের ভিতর ঢুকে গেল ৷
রুমের ভিতর ঢুকতেই আরুর হার্টবিট বেড়ে গেল, সামনে লোকটা উন্মুক্ত শরীর নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে ৷আয়নাতে আরুকে দেখছে যে আরু তারদিকে এগিয়ে আসছে ৷
আরু এগিয়ে গিয়ে মানুষটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,,মানুষটাও আরুর দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক ভাবে ৷
আরু কাপা কাপা হাতটা মানুষটার দিকে এগিয়ে যেতেই লোকটা আরুর হাতটা ধরে আরুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো, আরুর পিঠ মানুষটার বুকে, আয়নাতে দুজনকে দেখা যাচ্ছে ৷লোকটা এবার আরুর কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে আরুর কাঁধের ওপর ঠোঁট বসিয়ে গভীর ভাবে স্পর্শ করতেই আরু খানিকটা কেঁপে উঠলো,,,,,ওনার এমন ছোয়া আরুর নেশা ধরিয়ে দিতেই যথেষ্ট ৷

আরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরুর থুতনিতে থাকা তিলটাতে ঠোঁট বোলাতেই আরুর যেন হুস ফিরে এলো, কোনরকম কোন কথা ছাড়াই কেবলমাত্র ওনার ছোঁয়াতেই আরু আবেগে ভেসে যাচ্ছে ৷
হুঠ করে কোমরে গুজে রাখা ছুরিটা আরিশের গলায় চেপে ধরলো ৷ ধারালো ছুরিটার একটা কোনা গলায় লেখে খানিকটা কেটে রক্ত বেরোচ্ছে ৷
আরু দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” কে আপনি ?”

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৯