তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ১৮

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ১৮
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

উৎসব আর অর্নব মুখোমুখি বসে আছে। পাশেই এক কোনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অর্নি। ওর পাশে নূর আর রুশানও আছে। উৎসব নড়েচড়ে বসে ঠিক করে নিলো নিজেকে। তারপর গলা ঝেড়ে অর্নবের চোখের দিকে তাকিয়েই বললো,
–“আমি অর্নিকে ভালোবাসি।”
অর্নব চমকালো না। ও দেখেই আন্দাজ করতে পারছিলো এরকম কিছুই হবে। অর্নি একবার আড়চোখে নিজের ভাই আর উৎসবের দিকে তাকিয়ে মাথা আবার নিচু করে নিলো৷ অর্নব বললো,

–“হ্যাঁ তারপর? আমি কি করতে পারি এখন?”
–“আপনি নিহালের সাথে অর্নির বিয়েটা ভেঙে দিন। জাস্ট এনগেজমেন্ট হয়েছে বিয়ে না। আর বিয়ে হলেও আমার সমস্যা ছিলো না। আমার অর্নি হলেই হলো।”
অর্নি চমকে তাকালো উৎসবের দিকে। লোকটা অকপটে ওর ভাইয়ের সামনে বসে ওকে বিয়ে করার কথা বলে যাচ্ছে৷ একটু ঘাবড়াচ্ছেও না। অর্নব ভ্রু কুঁচকে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“তোমার কথায় আমি আমার বোনের বিয়ে ভাঙবো কেন?”
এবার উৎসব সরাসরি দৃষ্টি তাক করলো অর্নির দিকে। অর্নি ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ উৎসব অর্নির চোখের দিকে তাকিয়েই অর্নবকে বললো,
–“আমার কথায় ভাঙতে হবে না। আপনার বোনের কথা ভেবেই বিয়েটা ভেঙে দিন। অর্নিও আমাকে ভালোবাসে।”
এবার অর্নব চমকালো। একটু না বেশ অনেকটাই চমকেছে অর্নব। অর্নব অর্নির দিকে তাকাতেই অর্নি দ্রুত মাথা নিচু করে নিলো। রুশানের একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। রুশান অর্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

–“চিন্তা করিস না, ভালোই হবে দেখিস।”
অর্নি তবুও শান্ত হতে পারলো না৷ হাত পা রীতিমতো কাঁপছে ওর। এবার ওর ভাইয়ের উত্তর কি আসে এই ভেবে চিন্তা হচ্ছে ভীষণ নূর রুশান অর্নি উৎসব সকলেরই। অর্নব ধীর পায়ে অর্নির দিকে এগিয়ে গেলো। অর্নি সাথে সাথেই মাথা নিচু করে নেয়। গম্ভীর কন্ঠে অর্নিকে বললো,

–“তাকা আমার দিকে।”
অর্নি তাকালো না৷ মাথা নিচু করেই রইলো। অর্নব ধমকের স্বরে বললো,
–“তাকাতে বললাম না আমার দিকে?”
কেঁপে উঠলো অর্নি। আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকালো অর্নবের দিকে৷ অর্নবের চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। অর্নব থমথমে গলায় উৎসবকে ইশারায় দেখিয়ে অর্নিকে প্রশ্ন করলো,

–“ভালোবাসিস ওকে?”
অর্নির গলা শুকিয়ে আসছে। যদি হ্যাঁ বলে তাহলে অর্নবের রিয়্যাকশন কেমন হবে কে জানে। অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“ভাইয়া___”
–“এক কথায় উত্তর দিবি, হ্যাঁ কি না? ভালোবাসিস উৎসবকে?”

অর্নি নূর আর রুশানের দিকে তাকালো। ওরা দুজনেই ইশারায় হ্যাঁ বলতে বলছে। অর্নি একপলক উৎসবের দিকেও তাকালো। উৎসব ওর চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। অর্নি একটা লম্বা শ্বাস টেনে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তারপর মাথা উপর-নীচ ঝাঁকালো৷ যার অর্থ অর্নি উৎসবকে ভালোবাসে। অর্নির জবাবে উৎসবের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। নূর আর রুশানও বেজায় খুশি।

আচমকায় অর্নির গালে ঠাস করে চ/ড় বসালেন মিসেস অদিতি৷ অর্নব সহ সকলেই চমকে উঠলো। এতগুলো বছরে যে কখনো সামান্য ফুলের টোকা লাগতে দেয়নি আর আজ সে কিনা মারলো? অর্নি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছে৷ মিসেস অদিতি অর্নি হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
–“বেয়াদব মেয়ে, কাল নিহালের সঙ্গে তোর এনগেজমেন্ট হলো আর আজ তুই আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসার কথা বলছিস৷ লজ্জা করছে না তোর।”
কথাগুলো বলে মিসেস অদিতি আবারো চ/ড় মারতে উদ্যত হলেই অর্নব অর্নিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নেয়। তারপর বলে,

–“আম্মু মারছো কেন ওকে? পাগল হলে নাকি? একদম হাত তুলবা না ওর গায়ে।”
মিসেস অদিতি রাগী স্বরে বললো,
–“এখন নিহাল ওরা যদি জানে তোর বোনের কর্মকাণ্ড আমি মুখ দেখাবো কি করে আমার ভাইকে?”
অর্নব গম্ভীর স্বরে বললো,
–“অর্নি আহামরি এমন কোনো অন্যায় করেনি যে তুমি মামা-মামীকে মুখ দেখাতে পারবে না৷ ভালোবাসা কোনো অন্যায় না৷ বরং আমরা ভুল করেছি ওর মতামত না নিয়ে৷ ওর কোনো পছন্দ আছে কিনা এটা জিজ্ঞেস না করে আমরা ভুল করেছি।”

–“তোর আস্কারা পেয়ে পেয়ে ও এমন হয়েছে। একটাবারও আমাদের মান সম্মানের কথা ভাবলো না বেয়াদব মেয়ে। কথায় আছে না, পর কখনো আপন হয় না। এখন সেটা সত্যিই মনে হচ্ছে আমার। ও যদি আমার নিজের___”
এইটুকু বলেই মিসেস অদিতি নিজের মুখ দুহাতে চেপে ধরলেন। বেশ উত্তেজিত আর রেগে থাকার কারনে কথাগুলো বেরিয়ে গেছে মুখ দিয়ে। এখন উনি নিজেই ভয় পাচ্ছেন অর্নির কথা ভেবে৷ মায়ের মুখে এরকম কথা শুনে অর্নি চমকে তাকালো। সাথে অবাক হলো সেখানে উপস্থিত নূর রুশান আর উৎসবও। অর্নব মিসেস অদিতিকে ধমকের স্বরে বললেন,
–“আম্মু এবার বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না? তোমার আইডিয়া আছে তুমি কিসব বলছো?”।

অর্নি অর্নবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মিসেস অদিতির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মিসেস অদিতির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
–“আম্মু, ও আম্মু একটু আগে এসব কি বলছিলে তুমি? থেমে গেলে কেন? পুরো কথা শেষ করো। আম্ আমি তোমাদের মেয়ে নই? তুমি আমার নিজের আম্মু না? ভাইয়া আমার নিজের ভাই না? ও আম্মু চুপ করে আছো কেন তুমি? বলো না। আচ্ছা এটা বলো, এতক্ষণ যা যা বলেছো সব মিথ্যে। আমি তোমার নিজের মেয়ে, আমাকে তুমি নিজের গর্ভে ধারণ করেছে তাই না আম্মু? এটাই তো সত্যি বলো না। বলো না চুপ করে আছো কেন?”

মিসেস অদিতি আঁচলে মুখ চেপে ধরে ডুঁকরে কেঁদে দিলো। এতেই অর্নির যা বোঝার বুঝে গিয়েছে ও। এতদিন ও যাকে নিজের আম্মু ভাই ভেবেছে তারা কেউ ওর নিজের না? কথাটা ভাবতেই ধপ করে ফ্লোরে বসে শব্দ করে কেঁদে দিলো। অর্নব একসাইডে গিয়ে দেয়ালে এক হাত রেখে মাথা নিচু করে আছে। ওর চোখে জল টলমল করছে। নূর আর রুশান এগিয়ে গিয়ে বসলো ওর কাছে। রুশান বললো,

–“আরেহ দোস্ত কান্না করিস কেন? আন্টি কি একবারো বলেছে নাকি তুই উনার নিজের মেয়ে না? রাগের মাথায় কিসব বলছে আন্টি নিজেই জানে না।”
নূরও রুশানের কথায় তাল মিলিয়ে বললো,
–“রুশান ঠিক বলেছে অর্নি৷ আন্টি তো এরকম কিছু বলেনি। তুই বেশিই ভাবছিস।”
অর্নি কাঁদতে কাঁদতেই বললো,

–“মিথ্যে সান্তনায় ভুলাতে পারবি না আজ৷ আম্মু কি কি বলেছে তা তোরা খুব ভালো করেই জানিস।”
এবার উৎসব এগিয়ে এলো৷ অর্নিকে টেনে তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“বাচ্চাদের মতো কি কান্নাকাটি শুরু করলে বলো তো? কিচ্ছু হয়নি অর্নি, তুমি উনারই মেয়ে। রাগ জেদ থেকে কথাটা বলে ফেলেছে।”
অর্নি সরে এলো উৎসবের কাছে থেকে। বললো,

–“ছোট বাচ্চা না আমি উৎসব ভাই। আম্মু কি বলেছে আর কি বোঝাতে চেয়েছে তা আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি।”
উৎসব প্রত্যুত্তরে কি বলবে জানা নেই ওর। এখানে কারোরই জানা নেই। মিসেস অদিতির কথা থেকে এটা স্পষ্ট অর্নি উনার নিজের মেয়ে না। এতদিন বুকে আগলে মানুষ করেছে অর্নিকে। আজ একটা রাগ জেদের বসে বেখেয়ালি ভাবে কথাটা বলে ফেলেছে যেটা এতগুলো বছর অর্নির কাছ থেকে আড়ালে রেখেছিলেন উনি আর অর্নব। কথাটা বলার পর এখন উনি নিজেও কাঁদছে, মেয়েটাকে যে বড্ড বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেললেন। অর্নি এলোমেলো পায়ে অর্নবের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্নবের হাত ধরে বললো,

–“ভাইয়া? আমি তোমার নিজের বোন নই না? আম্ আমি___”
অর্নি আর কিছু বলার আগেই অর্নব বোনকে জাপ্টে ধরলো বুকে। বললো,
–“কে বলছে তুই আমার বোন না? তুই আমার বোন ছিলিস আর থাকবি। এক মায়ের পেটে না হলে কি বোন হয় না?”
অর্নি কিছু না বলে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। পেছন পেছন নূর ওরা সকলেই গেলো বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কানোর পরও অর্নি দরজা খোলেনি। জানালো একা থাকতে চায় কিছু সময়। তাই কেউ আর বিরক্ত করেনি।

একটা রেস্টুরেন্টে নিহাল আর উৎসব মুখোমুখি বসে আছে। উৎসবই ডেকেছে নিহালকে। উৎসব দুজনের জন্য কফি অর্ডার দেয়। কিছুক্ষণ বাদে ওয়েটার এসে কফি দিয়ে যায়। কফির মগ হাতে তুলে নিয়ে উৎসব বললো,
–“আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”
নিহাল কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,

–“আমি জানি আপনি কি বলতে ডেকেছেন আমায়। অর্নব আমায় সব জানিয়েছে।”
এরপর দুজনেই বেশ কিছুটা সময় নিরব থাকলো। নিরবতা ভেঙে নিহাল বললো,
–“কথাটা যদি আগেই জানাতেন তাহলে এতকিছু হতোই না আজ। না ফুপিমণি রাগে উত্তেজিত হয়ে অর্নিকে ওভাবে হার্ট করতো।”

–“আপনার আর অর্নির এনগেজমেন্ট এর কথা আপনাদের এনগেজমেন্ট এর দিন রাতেই জানতে পারি___”
এরপর উৎসব একে একে সবটা বলতে শুরু করলো নিহালকে। অর্নির সাথে ওর পরিচয় হওয়া থেকে এখন অব্দি সবটা মনোযোগ দিয়ে শোনে নিহাল। সব শুনে এটাই দাঁড়াচ্ছে অর্নিও ভালোবাসে উৎসবকে। অর্নব আর মিসেস অদিতিকে কষ্ট দিতে চায় না বলে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়েছিলো এই বিয়েতে৷ নিহাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

–“থ্যাংকস আপনাকে সবটা জানানোর জন্য। নয়তো আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে তখন তিনটে জীবনে নড়বড়ে হয়ে যেত। আপনি অর্নি দুজনেই কষ্ট পেতেন, সাথে হয়তো আমিও কষ্ট পেতাম ক্ষানিকটা। একটা সময় হয়তো অর্নি মানিয়ে নিতো আমার সাথে। কিন্তু মন থেকে কখনোই ভালো থাকতে পারতো না। অর্নির জন্য আপনিই পারফেক্ট।”
উৎসব মৃদু হাসলো। ও ভাবেনি নিহাল এত সহজেই সবটা মেনে নিবে। নিহাল আবারো বললো,
–“আমি চাই অর্নি ভালো থাকুক৷ সেটা যদি আপনার সাথে হয় তাহলে তাই হবে। বাসায় আমি কথা বলছি। আপনার অর্নি আপনারই থাকবে।”

দুদিন পর। নিহাল বাসার সবাইকে মানিয়ে নিয়েছে। অর্নি এ দুদিন ঘর থেকে বের হয়নি তেমন একটা। মিসেস অদিতি মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধবোধে অর্নির সামনে যায়নি আর। অর্নবই রুমে খাবার নিয়ে খাইয়ে দিতো অর্নিকে। অর্নি শুধু অর্নবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো। অর্নব মুচকি হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো।
সন্ধ্যা নাগাদ। অর্নি বিছানায় জানালার পাশে বসে বই পড়ছে৷ এমন সময় দরজায় কড়াঘাতের শব্দ হলো। অর্নি বই পরতে পরতেই বললো,

–“এসো ভাইয়া।”
গুটিগুটি পায়ে ভিতরে ঢুকলো মিসেস অদিতি। অর্নি বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মিসেস অদিতিকে দেখে বই নামিয়ে রাখলো। এই দুদিন অর্নবই এসেছে রুমে। মিসেস অদিতি আসেন নি। তাই অর্নি ভেবেছিলো এখনো অর্নব এসেছে। মাকে দেখে অর্নির চোখ জলে ভরে উঠলো। মিসেস অদিতি অর্নির পাশে গিয়ে বসে অর্নির হাত নিজের হাতে নিলেন। বললেন,
–“আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না রে মা? ক্ষমা করবি না আমায়?”
অর্নি গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। বললো,

–“তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন আম্মু? তুমি তো ঠিকই বলেছিলে। আমি তোমার নিজের মেয়ে হলে অবশ্যই তোমাদের মান সম্মানের কথা চিন্তা করতাম। পর তো কখনো আপন হয় না। আমি আরো সারাজীবন ঋণী থাকবো তোমার কাছে। গর্ভে না ধরেও এতগুলো বছর আমাকে এত যত্নে আগলে রাখার জন্য।”
মিসেস অদিতি চোখের জল ফেলে বললেন,

–“গর্ভে না ধরলে কি মা হওয়া যায় না? আমি কি তোর মা হতে পারিনি?”
–“জ্ঞান হওয়ার পর তো এটাই জানতাম আম্মু। তুমি আমার আম্মু অর্নব ভাইয়া আমার নিজের ভাই। কিন্তু এখন তো অন্যটা জানলাম আম্মু। আমি তোমাদের কেউ না। কেউ না আমি তোমাদের।”
মিসেস অদিতি মেয়েকে বুকে আগলে নিলেন। পিঠে হাত বুলাতে লাগলেন। অর্নি মায়ের সান্নিধ্যে গিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিলো। মিসেস অদিতি অর্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–“কে বলে তুই আমাদের কেউ না? তুই তো আমার আর অর্নবের প্রান ভোমরা রে মা। তুই আমার মেয়ে। অর্নব তোর নিজের ভাই। আগে যেমন ছিলি সামনেও তেমন থাকবি। তুই যে আমাদের কাছে কি সেটা তুই জানিস না? অর্নব তোকে চোখে হারায় জানিস না তুই? তোর একটু কিছু হলে আমরা পাগল হয়ে যাই, তুই এসব জানিস না? তারপরো কিভাবে বলিস তুই কেউ না আমাদের? রক্তের সম্পর্কই কি সব অর্নি? হতে পারে আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই। তোকে গর্ভে ধরিনি আমি। কিন্তু মাতৃস্নেহে বড় করেছি। নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছি। তুই আমাদের সবকিছু মা। আ’ম স্যরি রে আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি।”

অর্নি কিছু বললো না। মিসেস অদিতির বলা সবগুলো কথা সত্যি। অর্নবের আর মিসেস অদিতির চোখের মণি অর্নি। ওকে ছাড়া এ দুজন মানুষ কিচ্ছু বোঝে না। অর্নি ওর মাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে শক্ত করে। মিসেস অদিতি অর্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। অর্নিকে ছেড়ে দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“আর একদম কান্নাকাটি নয়। আমার মেয়ের চোখের পানি আমি একদম দেখতে চাই না।”
অর্নি আবারো মিসেস অদিতিকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–“তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসি আম্মু।”
মিসেস অদিতি মুচকি হেসে বললেন,
–“সে তো আমিও আমার মেয়েকে এত্তগুলা ভালোবাসি। এখন বোস তো এখানে। আমি যাই তোর জন্য সন্ধ্যার নাস্তা নিয়ে আসছি আমি।”

মিসেস অদিতি অর্নির কপালে চুমু খেয়ে চলে গেলেন মেয়ের পছন্দমতো নাস্তা বানাতে। মিনিট পনেরো বাদে অর্নিকে ডাকলেন। অর্নিও বাধ্য মেয়ের মতো রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মিসেস অদিতি অর্নিকে সোফায় বসিয়ে অর্নির পাশে বসলো। তারপর নিজ হাতে পাস্তা খাইয়ে দিতে লাগলেন৷ এমন সময় অর্নব এলো অফিস থেকে৷ বাসায় ঢুকেই এই দৃশ্য দেখে মুচকি হাসলো অর্নব৷ যাক মান-অভিমানের পালা মিটলো তাহলে। অর্নব অফিস ব্যাগটা সোফায় রেখে অর্নির পাশে ধপ করে বসে পড়লো। গোমড়া মুখে বললো,

–“ভালোই তো, এখন মা-মেয়ে মিলে গেছো এদিকে আমার কথা কারো মনেই নেই।”
অর্নি ফিক করে হেসে দিলো অর্নবের কথায়। মিসেস অদিতি মুচকি হেসে অর্নবকেও খাইয়ে দিলেন। অর্নব বোনের গালে হাত রেখে বললো,

–“তুই এভাবেই সবসময় হাসি খুশি থাকবি অর্নি। তোর হাসি মুখটাই আমরা দেখতে চাই সবসময়।”
অর্নি আলতো হেসে একপাশ থেকে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। অর্নব অর্নির দিকে ঝুঁকে বললো,
–“বাই দ্যা ওয়ে, উৎসবের সাথে কথা হইছে তোর? ও কিন্তু নিহালের সাথে কথা বলেছে। নিহালও বুঝেছে ব্যাপারটা। ও এই বিয়েতে না করে দিয়েছে আর সবাইকে ও-ই বুঝিয়েছে।”

অর্নি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“এত কিছু কখন হলো?”
অর্নব অর্নির গাল টেনে দিয়ে বললো,
–“আপনি যখন নিজেকে ঘর-বন্দী করে রেখেছিলেন তখন। কেন উৎসব কিছু বলেনি তোকে?”
অর্নি গোমড়া মুখে বললো,

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ১৭

–“নাহ, মনে হয় না উৎসব ভাই এত সহজেই কথা বলবেন আমার সাথে। উৎসব ভাই আমায় অন্যকারো হতে দিবে না তাই বিয়ে ভাঙার দরকার ছিলো বিয়ে ভেঙেছে।”
অর্নব বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“পাগলী একটা, মন খারাপ করিস না। উৎসব ভালোবাসে তো তোকে। দেখবি বেশিদিন রাগ পুষে থাকতে পারবে না।”

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ১৯