তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ৩৭

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ৩৭
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

হলুদের পাঞ্জাবী পড়ে সবেই ঘর থেকে বেরিয়েছে উৎসব৷ এমন সময় শান্ত এসে সামনে দাঁড়ালো। উৎসব ডান হাত দিয়ে বা হাতের পাঞ্জাবী গুটিয়ে কুনই অব্দি উঠাতে উঠাতে বললো,
–“কি ব্যাপার শান্ত? কিছু বলবে?”
শান্ত কিছু সেকেন্ড নিরব থেকে বললো,
–“ভাইয়া একটা কথা বলবো?”

উৎসব ভ্রু কুঁচকে ফেললো। সন্দিহান দৃষ্টিতে শান্ত’র দিকে তাকিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ বলো, এখানে অনুমতি নেওয়ার কি আছে?”
শান্ত আমতা আমতা করে বললো,
–“আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম___”
উৎসব শান্ত’র কাঁধে হাত রেখে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলো শান্তকে। তারপর বললো,
–“তুমি নিশ্চিন্তে বলো, আমি শুনছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“বলছিলাম ভাইয়া, বিয়ের ঝামেলা মেটার আগ অব্দি পুরো রিসোর্ট’টাতে বেশ কিছু গার্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে হয় না?”
শান্ত’র এহেন কথায় কিছুটা অবাক হলো উৎসব। ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে বললো,
–“এভ্রিথিং ইজ ওকে? কোথাও কোনো প্রবলেম হয়নি তো?”

এই কথার পরিবর্তে শান্ত কি বলবে খুঁজে পেলো না। সত্যি বলতে শান্ত’র এরকম বিহেভিয়ার এর কারণ তো ও নিজেও জানে না। শুধুমাত্র ভেতরটা অস্থির হয়ে আছে কাল থেকে। আর সেই অস্থিরতা থেকেই উৎসবকে আজ গার্ড রাখার কথা বললো শান্ত। শান্ত জিহ্বা দিয়ে ওর শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বললো,

–“আসলে এই রিসোর্ট’টা তো আমাদের শহর থেকে অনেকটা দূরে। আর এদিকে আমাদের তেমন চেনাজানা কেউ নেই। অচেনা পরিবেশ অচেনা মানুষজন। কখন কোন বিপদ-আপদ হয়ে যায় বলা তো যায় না। তাই বলছিলাম___”
উৎসব মৃদু হেসে শান্ত’র কাঁধে আবারো হাত রাখলো। ওকে আস্বস্ত করে বললো,
–“এই রিসোর্টের ম্যানেজার আমার পরিচিত শান্ত। মনে হয় না এখানে আমাদের তেমন একটা অসুবিধা হবে। তবুও তুমি যখন বলছো তাহলে আমি গার্ড রাখার ব্যবস্থা করছি।”

উৎসবের কথায় শান্ত মুচকি হাসলো। উৎসব ফোন বের করে একজনকে কল করে বললো,
–“ইমিডিয়েটলি চৌদ্দ/পনেরো জন্য গার্ড লাগবে।”
ওপাশ থেকে কিছু একটা বলতেই উৎসব বললো,
–“আমি ম্যাসেজ করে এ্যাড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

আরো টুকটাক কথা বলে উৎসব লাইন কেটে দিলো। এতক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো শান্ত। অজানা কারণেই ওর মনটা কুঁ ডাকছিলো। যাক এবার নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো। এতগুলো গার্ডের মাঝে নিশ্চয়ই কেউ ওদের ক্ষতি করতে আসবে না। উৎসব ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বললো,
–“তো চলো যাওয়া যাক? ওদিকে স্টেজে বসে নিশ্চয়ই সকলে অপেক্ষায় আছে আমাদের জন্য।”
–“হ্যাঁ চলুন।”
মৃদু হেসে কথাটা বললো শান্ত৷ তারপর দুজনে একসাথেই এগিয়ে গেলো স্টেজের দিকে।

হলুদের জন্য মোট তিনটে স্টেজ করা হয়েছে। তিন-জোড়া কাপলের জন্য তিনটে স্টেজ। দুই পাশের স্টেজে নূর আর টায়রা বসেছে আর মাঝের স্টেজটায় অর্নি বসা৷ তিনজনেই কাঁচা হলুদ রঙের জামদানী শাড়ি পড়েছে সাথে কাঁচা ফুলের গয়না৷ ছেলেরাও কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে৷ উপরে গোল্ডের কালার কটি।

তিন স্টেজেই জোড়ায় জোড়ায় তিন কাপল বসেছে। অর্নব চুপিসারে একটু হলুদ নিয়ে প্রথমেই টায়রাকে লাগিয়ে দেয়৷ তা দেখে টায়রা মুচকি হাসলো৷ টায়রা নিজেও একটুখানি হলুদ নিয়ে ছুঁইয়ে দেয় অর্নবের গায়ে। ওদের এই একে অপরকে হলুদ লাগানোর সময় ফটোগ্রাফারও বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয়৷
শান্ত একধ্যানে নূরকে দেখছে। মেয়েটাকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নজরকাঁড়া সুন্দর যাকে বলে। শান্ত’র চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে। ফটোগ্রাফার শান্ত’কে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“স্যার, আপনিও ম্যামকে একটু হলুদ লাগান। ফটো নিবো।”
ফটোগ্রাফারের কথায় নূর লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে নিলো। শান্ত কিছুটা ফিসফিস করে বললো,
–“হাফ-বউ? লজ্জা পেও না প্লিজ। তোমায় লাজুক চেহারায় দেখে অভ্যস্ত না আমি৷ আমার তো তোমাকে রণচণ্ডী রুপেই বেশ লাগে।”

কথাগুলো বলে শান্ত মৃদু হাসলো। নূর চোখ রাঙিয়ে তাকালো। শান্ত বাঁকা হেসে হাতে হলুদ নিয়ে লাগিয়ে দিলো নূরের গালে৷ কিছুক্ষণ চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থেকে আচমকাই ফিক করে হেসে দিলো নূর৷ সেসময়েই ছবি ক্লিক করলো ফটোগ্রাফার। নূরের হাসিতে শান্ত’ও মুচকি হাসলো।
ফটোগ্রাফার এবার অর্নি আর উৎসবের স্টেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ উৎসব তখন অর্নির আঙুল গুলো নিজের আঙুলের ভাজে নিয়ে রেখেছিলো। ফটোগ্রাফার উৎসবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“স্যার? আপনিও প্লিজ ম্যামকে হলুদ লাগান।”
–“নাহ, আমি হলুদ লাগাবো না।”
উৎসবের এমন কথায় অর্নি, ফটোগ্রাফার সহ সকলেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে। উৎসব এক পলক তাকালো সবার দিকে। ফটোগ্রাফার বললেন,

–“কিন্তু কেন স্যার? ওদিকে অর্নব স্যার এবং শান্ত স্যারও ম্যামদের হলুদ লাগিয়েছেন। শুধুমাত্র আপনিই বাকী। আপনি হলুদ লাগানো শেষ করলেই হলুদের বাকী অনুষ্ঠান শুরু হবে।”
–“অনুষ্ঠান শুরু হোক। আমার আপত্তি নেই।”

কথাটা বলে উৎসব অর্নির দিকে তাকালো। অর্নি দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। উৎসবের কথায় মেয়েটা হয়তোবা কষ্ট পেয়েছে। যেখানে অর্নব শান্ত দুজনেই দুজনের উডবিদের হলুদ লাগিয়েছে সেখানে উৎসব লাগাবে না। কষ্ট লাগাটা স্বাভাবিক। মন খারাপ হতেই পারে। উৎসব অর্নিকে নিজের দিকে ঘুরালো। তারপর অর্নির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“সবাই তো চায় নিজের বর/বউ’কে প্রথমে হলুদ লাগাতে৷ আমি না হয় একদম লাস্টে লাগাবো। সা’য়াদাত আবরার উৎসব বলে কথা৷ সে তো একটু ইউনিক কিছুই করবে৷ রাইট?”

এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো অর্নির গাল বেয়ে৷ উৎসব অর্নির চোখের পানি মুছে দিলো। তারপর অর্নিকে একপাশ থেকে জড়িয়ে নিয়ে চুমু খেলো ওর কপালে। ঠিক সেই মূহুর্ত’টাতেই ফটোগ্রাফার ছবি তুলে নিলেন ওদের।
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। একে একে সবাই হলুদ লাগালো। রাত দেড়টা নাগাদ চলতে থাকলো ওদের হলুদ অনুষ্ঠান। ডিনার সেরে সবাই একে একে শুতে চলে যাচ্ছে। অর্নিও এগোচ্ছিলো নিজের ঘরে। উৎসব যেতে দেয় না ওকে। অর্নিকে টেনে আবার স্টেজে এনে বসিয়ে বললো,

–“আমার বউকে তো এখনো আমিই হলুদ লাগালাম না। তাহলে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয় কিভাবে বউ?”
অর্নি মুচকি হাসলো। ততক্ষণে গার্ডেনের এই এরিয়াটা সম্পূর্ণ ফাঁকা৷ যে যার ঘরে ঘুমাতে চলে গেছে। উৎসব ফোন বের করে ফটোগ্রাফার কে ম্যাসেজ করলো। মিনিট দুয়েক বাদেই ফটোগ্রাফার এসে হাজির। উৎসব বললো,
–“এবার আমি আমার বউকে হলুদ লাগাবো। ছবি তুলবেন আপনি। সাথে বেশ কিছু কাপল পিক তুলতে হবে। “মিস্টার এন্ড মিসেস সা’য়াদাত আবরার উৎসব” নামে আলাদা একটা ইয়েলো নাইট এবং ওয়েডিং ডে এর স্পেশাল একটা এলব্যাম চাই আমার। সাথে আরো একটা ওয়েডিং এলব্যাম তো মাস্ট থাকবেই। যেখানে রঙ খেলা থেকে শুরু করে বিয়ে অব্দি সব ধরনের ছবি থাকবে।”

ফটোগ্রাফার হাসিমুখে বললো,
–“ওক স্যার, পেয়ে যাবেন।”
উৎসব অর্নিকে হলুদ লাগালো। সাথে অর্নিও। দুজনে মিলে বেশ কিছু সিঙ্গেল এবং কাপল পিকও তুলেছে।

নূর আর টায়রা রিসোর্টের ভিতরে ব্রাইড রুমে বসে আছে। এদিকে অর্নি দুই হাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে গেটের সামনে এসে হাজির৷ একমাত্র ননদিনী প্লাস বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে বলে কথা গেট তো ধরতেই হবে৷ তবে মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা টেনে এসেছে অর্নি। যাতে উৎসব ওর মুখ দেখতে না পারে। বেশ তর্কাতর্কি করে শান্ত’র থেকে গেটের টাকা আদায় করেছে অর্নি। জাস্ট গেটের টাকা আদায় করেই ব্রাইড রুমে চলে যায় অর্নি। বাকী সব তরী আর রুশান করে নিবে। কিন্তু জুতা সামলানোর সময় আবারো হাজির হয় অর্নি। শান্ত’র জুতা চুড়ি করে এনে নূরের পায়ে পড়িয়ে দেয় অর্নি। সব জায়গায় জুতা তল্লাশি করলেও কনের পায়ে খুঁজতে আসবে না নিশ্চয়ই।

বেশ হই হুল্লোড়ের মধ্য দিয়েই তিন-জোড়া বিয়ে সম্পন্ন হয়। সকলেই ভীষণ খুশি নিজেদের ভালোবাসার মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়ে। শান্ত’র অস্থিরতা কমেছে। এবার শান্ত নিশ্চিন্ত বিয়েটা ভালোই ভালোই মিটেছে বলে। হুট করেই বিয়েটা নিয়ে এক অজানা আশংকা কাজ করছিলো ওর মনে। কিন্তু বিয়েটা ভালোভাবে মিটে গেছে। তাই শান্ত’র চিন্তার আর কোনো কারণ নেই।
রিসোর্টে’র তিনটা ঘরে তিন-জোড়া কাপলের জন্য বাসর ঘর সাজানো হয়। আজ এখানে কাটিয়ে কাল ওরা ঢাকায় যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বে সকলে।
নূর তরী রুশান শান্ত টায়রা ইশা ছয়জনে মিলে আগেভাগেই উৎসবের থেকে বাসর ঘরের টাকা আদায় করে নেয়৷ অর্নব এসবে ছিলো না। ছোট বোনের বরের থেকে তো আর বাসর ঘরের টাকা আদায় করা যায় না৷ সেই সাথে অর্নি রুশান তরী ইশা এই চারজনে শান্ত’র থেকে বাসর ঘরের টাকা নেয়। এবং বাকী সকলে মিলে অর্নবের থেকে টাকায় নেয় বাসর ঘরের৷

অর্নব দরজা আটকে ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলো টায়রা ফুলে সজ্জিত বিছানায় মাথায় ঘোমটা দিয়ে দুই হাটুতে হাত রেখে বসে আছে। অর্নব ধীর পায়ে এগিয়ে যায় টায়রার দিকে। অর্নবের উপস্থিতি টের পেয়ে টায়রা জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো। বুকের ভিতরটায় ঢিপঢিপ করছে টায়রার। অজানা অনুভূতি হচ্ছে। ভালো-লাগা, খারাপ-লাগা, ডর-ভয়, লজ্জা সবকিছুর মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে টায়রার মনে। অর্নব বিছানায় বসে হাঁসফাঁস করছে। ওর নিজেরও কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। অর্নব ধীর হাতে টায়রার ঘোমটা তুললো। টায়রা চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। অর্নব পকেট থেকে একটা চেইন বের করে টায়রার গলায় পড়িয়ে দিলো। টায়রা চোখ তুলে তাকালো অর্নবের দিকে। অর্নব বললো,

–“চেঞ্জ করে আসো।”
টায়রা সম্মতি জানিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে গেলো। একটা শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো চেঞ্জ করতে। বেশ কিছু সময় বাদে চেঞ্জ হয়ে আসলো টায়রা৷ দুজনে একসাথে নামায পড়ে নিলো প্রথমে৷ অতঃপর অর্নব টায়রাকে কোলে তুলে নিলো। টায়রা অর্নবের গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে রইলো। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে টায়রা। অর্নব টায়রার কপালে চুমু খেয়ে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে।

উৎসব ঘরে ঢুকতেই দেখলো অর্নি বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে৷ তা দেখে ভ্রু কুঁচকালো উৎসব। বিছানায় গিয়ে অর্নিকে টেনে তুললো। অর্নি হাই তুলতে তুলতে বললো,
–“কি হলো? এভাবে টেনে তুললেন কেন?”
–“ঘুমাচ্ছো কেন তুমি?”

অর্নি আবারো শুতে গেলে উৎসব ধরে ফেলে ওকে৷ অর্নি বললো,
–“ঘুমাবো না তো কি করবো? কয়টা বাজে এখন?”
উৎসব ঘরির দিকে তাকালো। দেখলো রাত দুইটা বাজে। উৎসব বললো,
–“স্যরি__”
–“ইট’স ওকেহ। এখন ঘুমাবো আমি।”

বলেই শুয়ে পড়লো অর্নি। উৎসব আবারো টেনে তুললো ওকে। অর্নি বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে বললো,
–“কি? আবার টেনে তুললেন কেন? ঘুমাবো তো। লাস্ট কয়েকদিন বিয়ের চক্করে একদম ঘুমাতে পারিনি আমি।”
–“আমি কি করবো তাহলে?”
–“আপনিও ঘুমাবেন সিম্পল।”
উৎসব অবাক কন্ঠে বললো,

–“তাই বলে আমাদের বাসর ঘরে আমরা ঘুমাবো?”
–“হ্যাঁ তা নয়তো আর কি করতে চান আপনি?”
–“এত কষ্ট করে বিয়ে করলাম, বাসর ঘর সাজানো হলো, আর বাসর করবো না আমরা?”
–“এটা আর নতুন কি? বাসর তো আগেই করে ফেলেছেন আপনি।”
উৎসব বাঁকা হেসে বললো,

–“তা তো অবশ্যই করেছি, কিন্তু ফুলে সাজানো ঘরে তো আর বাসরটা করিনি আমরা। আচ্ছা বউ? এবার নিয়ে ক’বার বাসর করা হবে আমাদের? দু বার? তিনবার? নাকি আরো অনেক বেশি___”
উৎসবের এমন কথায় লজ্জায় পড়ে গেলো অর্নি। লজ্জায় দুই হাতে মুখ ঢেকে বললো,
–“যাহ অসভ্য।”

উৎসব ক্ষানিকটা শব্দ করেই হাসলো। অর্নির মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে বললো,
–“আরেহ? আমার বউ দেখি লজ্জা পাচ্ছে।”
অর্নি উৎসবকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
–“তো লজ্জা পাবো না? কিসব অসভ্যের মতো কথা বলছেন আপনি?”

উৎসব অর্নির হাতে একটা রিং পড়িয়ে দিয়ে হাতের উপর চুমু খেলো। তারপর শক্ত করে অর্নিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আমি তো এরকমই, আর সারাজীবন আমার বউয়ের কাছে এরকমই থাকতে চাই।”
অর্নি কিছু বললো না৷ উৎসবের স্পর্শ গুলো গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। উৎসব নেশা ধরানো কন্ঠে বললো,
–“বউ__”
–“হু?”
–“মে আই?”
–“অনুমতি নিচ্ছেন কবে থেকে?”

কথাটা বলে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো উৎসবকে। উৎসব তৃপ্তির হাসি হাসলো৷ যাক ওর বউ এবার অন্তত প্রতিবারের মতো লজ্জায় নুইয়ে থাকেনি। কিছু তো বলেছে মুখ ফুঁটে৷ এই ভেবে উৎসব ওর স্পর্শ গুলো আরো গভীর করতে লাগলো।

দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নূর ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুল টেনে বসেছে৷ উদ্দেশ্য গায়ের গয়না গুলো খুলে রাখবে। তখন চেঞ্জ করার সময় হাতে দুটো চুড়ি রেখে বাকীসব চুড়ি, গলার হাড়, কোমড়ের বিছা, নাকের নোলক খুলে রেখেছিলো৷ এখন দুল, চুড়ি, আর টিকলি খুলতে বসেছে। শান্ত এসে নূরের দুই কাঁধে হাত রেখে ওর দিকে ঝুঁকে মাথায় চুমু খেলো। মৃদু কেঁপে উঠলো নূর৷ শান্ত আয়নায় নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“ফাইনালি তুমি আমার হাফ-বউ থেকে ফুল-বউ হলে।”

নূর মাথা নামিয়ে নিলো। চুপচাপ হাতের চুড়ি দুটো খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখলো। কানের দুল খুলতে গেলে শান্ত বললো,
–“আমি খুলে দিচ্ছি।”
নূর হাত নামিয়ে নিলো। শান্ত আলগোছে নূরের কানের দুল, মাথার টিকলি খুলে দিলো। তারপর পকেট থেকে একটা লকেটসহ চেইন বের করে পড়িয়ে দিলো নূরের গলায়। তারপর একটানে নূরকে দাঁড় করিয়ে নিজের দিকে ঘুরালো। নূর চোখ নামিয়ে রেখেছে। এই মূহুর্তে শান্ত’র চোখের দিকে তাকানোর সাধ্য একদমই নেই ওর। শান্ত আচমকাই নূরের দুই গাল আকড়ে ধরে ঠোঁট জোড়া দখলে নিয়ে নিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর নূরকে ছেড়ে দিলো। হাঁপাচ্ছে নূর। শান্ত নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে মোহ লাগানো কন্ঠে বললো,

–“আর পারছি না হাফ-বউ ওপস স্যরি ফুল-বউ। আজ আর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারবো না। আমার মাঝে ডুব দেওয়ার জন্য, তোমাকে আমার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হও বউ। বি রেডি।”
কথাগুলো বলেই নূরকে একটানে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে যায় শান্ত।

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ৩৬

|আপনাদের সকলের কথাই রাখলাম। বিয়েতে কোনো ঝামেলা হয়নি। ভালোভাবেই সব মিটে গেছে। এমন কি বাসর___ইশ! আর কমু না আমার লজ্জা লাগে৷ এবার সকলেই খুশি নিশ্চয়ই? সব্বাইকে খুশি করে দিয়েছি, এবার সবাই নাইছ নেক্সট না লিখে ভালোভালো গঠনমূলক মন্তব্য করে আমাকেও খুশি করে দিন|

তুমি শুধু আমারই হও শেষ পর্ব