হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৪১+৪২

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৪১+৪২
সাইয়ারা মম

আমি আর রেণু ফুফু যেদিন শহর ছেড়ে আসলাম সেদিন থেকেই মনের মধ্যে কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করত । করিম ভাই আমাদের কিসের চিঠি দিয়েছিলেন সেটা আমরা তখন বুঝতে পারিনি । একদিন রাতে আমি আর রেণু ফুফু গল্প করছিলাম তখন হঠাৎ করে হারিকেন নিভে গেল । হারিকেন সরাসরি জ্বালানো যেতো না ।

আগে একটা কাগজে আগুন ধরিয়ে তারপরে জ্বালানো লাগতো । হাতের কাছে কাগজ না পাওয়ায় ফুফু বিছানার নিচ থেকে একটা কাগজ বের করে আগুন জ্বালালো । হারিকেন টা ঠিক করে দেখতে পেলাম বিছানার নিচ থেকে অনেকগুলো কাগজ পড়ে গিয়েছে । সেগুলো তুলতে গিয়ে দেখলাম তালেব মাস্টারের চিঠি । আমি অবাক চোখে ফুফুর দিকে তাকালাম । ফুফুও আমার দিকে একইভাবে তাকালো । আমি বললাম

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– রেণু ফুফু তুমি ছোট চাচাকে চিঠি দেওনি ?
– আমার যতদূর মনে পড়ে আমি যেখানে রেখেছি সেখান থেকেই চিঠিটা ছোট দাদাকে দিয়েছিলাম
– তোমার কি স্পষ্ট মনে আছে যে সেই চিঠিটাই তুমি দিয়ে ছিলে ?
– ঐ সময় তাড়াহুড়োর কারণে আমি খেয়াল করিনি ভালোভাবে ।
– আচ্ছা থাক এ বিষয়টা । আগে চলো চিঠিটা পড়ি ।
রেণু ,

তোমাদের জানা উচিত বিষয় টা । আসলে আমার এক বোন ছিল যে শহরে পড়াশোনা করত । একদিন তোমার ছোট দাদার সাথে ওর পরিচয় হয় । যেহেতু দুজনেই শহরে থাকতো তাই দুজনার সাথে আলোচনার একটা ধাচ আসে । আমি তোমার ছোট দাদাকে একজন গুরু হিসেবে দেখতাম । ভাবতাম অত বড় জ্ঞানী মানুষের সাথে কথা বললেও কিছু শেখা যাবে । আমি জানি না তোমার ছোট দাদা কেমন ?

তবে জানি সে খুব খারাপ । জানো আমার সেই বোনটা তার কয়েকদিন থেকেই মিসিং । কেউ কোথাও খুঁজে পায় না । আমি শহরে গিয়ে তোমার ছোট দাদার শরনাপন্ন হই । সে আমাকে বলে আমি দেখছি বিষয় টা । কিন্তু আমার একটা বিষয়ে খটকা লাগে । তিনি গ্রামে সবাইকে বলেন বিয়ে করেন নি । কিন্তু তার ওখানে দুজন ছেলেকে দেখলাম যারা কিনা অনেক সাবলিল ভাবে তার সাথে কথা বলছে । একদম একটা পরিবারের মতো । তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলে যে এটা তার বন্ধুর পরিবার । আমার খটকা তখনো যায় নি ।

তাই আমি একদিন তার অনুপস্থিতিতে তার বাসায় ঢুকি । তখন করিম ভাই বাড়িতে ছিলেন । তিনি আমাকে তখন বলে আমার বোনকে নাকি তোমার ছোট দাদার সাথে দেখতে পেয়েছে । আরো বলেছে তারা দুজনে নাকি তোমার ছোট দাদার ছেলে । আমি একদিন তমার পিছু করতে গিয়ে জানতে পারি তিনি আমার বোনকে মেরে ফেলেছেন । কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমাণ না থাকায় কিছুই করতে পারিনি ।

তিনি যখন জানলেন আমি জেনে ফেলেছি তখন তিনি উল্টো আমাকে টাকার জোরে ফাসিয়ে দিলেন । আমি নিজেকে বাচিয়ে অনেকভাবে তোমার বড় দাদাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই তোমার ছোট দাদা গ্রামে রটিয়ে দেয় আমি আমার বোনকে খুন করেছি । তাই বাধ্য হয়ে তোমাদের দুজনকে জানাতে হলো । আর একটা কথা তোমরা তো গ্রামের খবর রাখো না । এই কয়েকদিনে গ্রাম থেকে অনেক মেয়ে ই উধাও হয়ে গিয়েছে । আমি আশা করি তোমরা বিষয় টা খোঁজ নিয়ে দেখবে । কারণ আমি তোমার বড় দাদাকে অনেক সম্মান করি । আর আমি হয়তো তোমরা যখন চিঠি পড়বে তখ বেচে নাও থাকতে পারি ।

চিঠি পড়ার পড়ে আমাদের দুজনের অবস্থা ছিল বেগতিক । দুজনেই হঠাৎ হঠাৎ ভয় পেয়ে উঠতাম । অনেক খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখতাম । একা কোথাও যেতে পারতাম না । ছোট চাচাকে এই বিষয়ে খবর পাঠালে সবাই সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের শহরে নেওয়া হবে । ভালো ডাক্তার দেখানো হবে । যেই কথা সেই কাজ । আমাদের সব কিছু গুছিয়ে আমরা শহরে রওনা দেই ।ডাক্তার দেখানোর পরে ডাক্তার বললো আমরা কোনো কিছু দেখে ভয় পেয়েছি ।

তখন চাচা আমাদের জিজ্ঞেস করে আমরা এমন কি দেখেছি । কিন্তু আমরা কি বলব ভেবে পাই না । একদিন এর মাঝে রেণু ফুফু একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে তিনি ছোট চাচাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন । কিন্তু আমি তা নিষেধ করি । কারণ যদি তালেব মাস্টারের কথা সঠিক হয় তবে ছোট চাচা অনেক বিপজ্জনক । ফুফু বললেন যদি তার কথা মিথ্যা হয় ? এমন ও তো হতে পারে ছোট দাদা কিছুই করেনি ?

তবুও আমি না বলায় রেণু ফুফু থেমে যায় । কিন্তু তার লক্ষ্যে অটল থাকে । মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে পাশে তাকিয়ে দেখি ফুফু আমার পাশে নেই । আমার অনেক ভয় হতে শুরু করল । তালেব মাস্টারের চিঠি পড়ে ভয়টা মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করল । আমি দোয়া দরুদ পড়তে আরম্ভ করলে দেখতে পাই ফুফু টর্চ নিয়ে বাইরে থেকে আসছে । সে বলে ফুফু নাকি বাথরুমে গিয়েছিল ।
কিন্তু ফুফুর দিকে তারপরও তাকিয়ে থাকলে হেসে বলে

– তুই কি ভেবেছিস আমি ছোট দাদাকে সব বলে দেবো ? বলিনি কিছু । এখন শান্ত হয়ে ঘুমা ।
আমি ঘুমিয়ে পড়ি । সকালে উঠে দেখি ছোট চাচা রেডি হচ্ছেন আর ফুফুও রেডি হয়ে কোথাও যাচ্ছেন । জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি । আমি যাবো না ? জিজ্ঞেস করলে বলে দুজনের যখন একই রোগ তাহলে একজনকে নিলেই হয় । আর রাতে নাকি তুই ভয় পেয়েছিলি ? তাই বাইরে বেরোনো ঠিক হবে না ।

আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । তারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই করিম ভাই আসে । আমি অনেক সাহস করে করিম ভাইকে সব ঘটনা খুলে বলি । তখন তিনি বলেন তালেব মাস্টারের কথা ঠিক । তারা দুজন তার ছেলে । কিন্তু এই বিষয় টা লুকিয়ে রাখতে বলেছেন । আরো একটা তথ্য জানতে পারলাম ছোট চাচার কোনো অবৈধ ব্যবসা আছে যেটার কারণে নাকি করিম ভাইয়ের মায়ের মৃত্যু হয় । কিন্তু করিম ভাই বিশ্বাস করেন তার মাকে তার বাবা মেরে ফেলেছেন । এই জন্য তিনি তাকে ঘৃণা করেন ।

সেই দিন সন্ধ্যা হয়ে যায় ছোট চাচার ফিরতে ফিরতে । কিন্তু তিনি যখন বাসায় ফিরেন তখন তিনি একা ফেরেন । আর তার অবস্থা কিছুটা খারাপ । কারণ তারা আসার সময় নাকি গাড়ি এক্সিডেন্ট হয় । আর সেই গাড়ি এক্সিডেন্টে নাকি রেণু ফুফুকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না । আমি কথাটি শোনার সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি । যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমার অবস্থা আগে থেকে অনেক খারাপ হয়ে যায় । আমার গায়ে আচমকা জ্বর আসত ।

অবস্থা অনেক বেগতিক হয়ে গিয়েছিল । তখন ডাক্তার দেখিয়েও আমাকে সুস্থ করা গেল না । এর মাঝে ঘটে যায় আরেক ঘটনা । গ্রামে নাকি কোনোভাবে আমাদের কাজী বাড়িতে আগুণ লাগে । আর সেই আগুন আমাদের বংশের বাকি লোকজনদের পুড়িয়ে দেয় । এক রেণু ফুফুর শোক আবার আরেক দিক দিয়ে পরিবার হারানোর বেদনা । দুই মিলিয়ে আমার অবস্থা বলার মতো না । আমি তখন অন্য কিছু ভাবার সুযোগ বা সময় পাই নি ।

নিজেকে কোনোভাবে বাঁচিয়ে রেখেছি । আমার তখন একটা বিশ্বস্ত হাতের প্রয়োজন ছিল । আর সেই হাতটা বাড়িয়ে দেয় করিম ভাই ।তার সহায়তায় আমি ধীরে ধীরে এই ট্রমা থেকে বের হয়ে আসি । কিন্তু তাতে প্রায় অনেকখানি সময় কেটে যায় । এই সময়টিতে করিম ভাই আমার সাথে ঐ বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করেনি । তিনি আমাকে এই বিষয়ে ভাবতে নিষেধ করেছিলেন । আমি নিজেও আগে সুস্থ হওয়াকে প্রধাণ্য দিয়েছিলাম । কিন্তু একদিন জানতে পারি রেণু ফুফুর মৃত্যুতে নাকি করিম ভাই দায়ী । তাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে । তবে আমি এই কথা বিশ্বাস করিনি । যদিও ছোট চাচা জানতেন না যে আমি সব জেনে ফেলেছি ।

ভুল বলব না । করিম ভাইকে জেলে নেওয়া হলে আমি অনুভব করি করিম ভাইয়ের প্রতি আমার একটা অনুভূতি ছিল । যেহেতু একটা আবেগ ছিল তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে , যেকরেই হোক ঐ বাড়িতে ঢুকতে হবে । আগে বলে নেই আমাদের জন্য ছোট চাচা অন্য বাড়িতে থাকতেন । আর তার ছেলেদের নিয়ে আরেক বাড়িতে থাকতেন যেটা আমাকে বন্ধুর বাড়ি বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল । তিনি নিজেই আমাকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে ঐ বাসায় নিয়ে যান ।

বলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারা গিয়েছে আর তার পরিবারের দায়িত্ব তিনিই নিতেন । এখন আবার করিম ভাইও নেই তাই ঐ বাসায় গিয়ে থাকাটাই ভালো হবে । আমার একটাই লক্ষ্য ছিল ঐ বাড়িতে ঢোকা । তাই আমিও তার অযৌক্তিক কথা মেনে নেই । ঐ বাড়িতে গিয়ে আমি একটা আশ্চর্য জনক ঘটনার স্বীকার হই । করিম ভাই দুই বাচ্চার বাবা ছিলেন । এই ঘটনা আমাকে আমার লক্ষ্য ভেস্তে দেয় । ঐদিন খুব কান্না করেছিলাম ।

যদি জানতাম করিম ভাই বিবাহিত তাহলে আমি আর তার প্রতি অনুভূতি প্রশ্রয় দিতাম না । এর মধ্যে ঘটে আরেক ঘটনা । করিম ভাইয়ের ছোট ভাই কবির আমাকে পছন্দ করেন । কিন্তু ভালোবাসার অনুভূতি টাকে ঘৃণা করতাম । ভাবতাম করিম ভাইয়ের মতো তার যদি অন্য কোনো কিছু থেকে থাকে ? এভাবে কেটে যায় অনেকটা সময় । আমি ছোট চাচার সব কথা মেনে চলতাম । দেখতে চাইতাম তিনি কি করেন ?

মাহিনের মা আমাকে কখনোই ভালো নজরে দেখতেন না । তিনি ভাবতেন আমার কারণে তার স্বামী মারা গিয়েছে । হয়ত ছোট চাচা তাকে কিছু বলেছিল বা তিনি হয়ত ছোট চাচার ব্যপারটা জানে । কিন্তু আমি মাহিনকে খুব ভালোবাসতাম । কারণ মাহিনের মুখে করিম ভাইয়ের অনেকটা মিল ছিল । একদিন কবির ভাই হয়তো মাতাল ছিলেন । তবে কবির ভাই মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না ।

কারণ ঐদিন তিনি রাতে আমার ঘরে ঢুকে মাতলামো করেছিলেন ঠিকই কিন্তু তার কোনো খারাপ ইন্টেনশন ছিল না । তিনি শুধু আমাকে বলতেন তাকে ভালোবাসি না কেন ? তবে সকাল বেলা ই শুনতে পাই এই ঘটনা পুরো মহল্লা জানে । তুলির মা আরো রং ঢং বাড়িয়ে বলতো । পরে বাধ্য হয়ে আমাকে কবির ভাইয়ের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় । বিয়ের পরে আমি জানতে পারলাম যে কবির ভাই আসলে মানুষ হিসেবে অনেক ভালো ।

তবে তিনি তার বাবার খারাপ দিক সম্পর্কে কিছুই জানতেন না । একদিকে আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকি অন্য দিকে আমার লক্ষ্যে অটল থাকি । এর মধ্যে আমি জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি । আমার খুশি বাড়িয়ে দিতে আরো একটা সংবাদ শুনি আর সেটা হো আমার জমজ সন্তান হতে চলেছে । কিন্তু এই খুশি বেশি দিন টিকে না । কারণ আমি তখন আমার চাচার আসল পরিচয় জানতে পারি ।

মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়েই তার কাজ । তিনি মেয়েদের বেশী তার কাজে শিকার করতেন । আর তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো তিনি বিক্রি করতেন । একদিন তিনি আমাকে তার আতরের গোডাউনে নিয়ে যান আর বলেন তার একটা কাজে সহায়তা করতে হবে । আমি রাজি হবার পরে তিনি আমাকে গোডাউনের ভেতর থেকে একটা সুরঙ্গ পথে তার আস্তানায় নিয়ে যান । সেখার কার পরিবেশ দেখে আমার মাথা ঘুরে ওঠে । তিনি আমাকে অফার দেন আমি যেন তার রিসার্চে সহায়তা করি । যাতে তিনি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো আরো ভালো ভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন ।

আমি রাজি না হলে তিনি বলেন আমার নাকি রাজি না হয়ে উপায় নেই । কারণ তিনি আমার শরীরে এমন একটা ইন্জেকশন দিয়েছেন যেটার মাধ্যমে আমার শরীরে একটা মারাত্মক ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় আছে । তার কাছে আরেকটা ইন্জেকশন আছে যেটা দিলে আমার শরীরে সেটা প্রকাশ পাবে ।

আমি তার কথায় রাজি না হয়ে পারলাম না । কারণ আমি আমার মেয়েদের নিয়ে ভয় পাচ্ছি । আমার শরীরে কিছু থাকলে তাদের শরীরেও থাকবে এটা স্বাভাবিক । তাই আমি বাধ্য হয়ে তার কথায় রাজি হই । সময় যাওয়ার সাথে সাথে আমি একদিন জানতে পারি ছোট চাচার একটা মেয়েও আছে যাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে । সেই মেয়েও আমাকে করিম ভাইয়ের মতো অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার অত সাহস না থাকায় বলতে পারেনি ।

আমি ছোট চাচার জন্য ফর্মুলা ঠিকই বানিয়েছি কিন্তু সেটার কপি আমি এমন ভাবে রেখেছি যেটা এই ডায়েরির লেখা যে উদ্ধার করেছে সে ছাড়া উদ্ধার করতে পারবে না । আমি জানিনা এরপরে কি হতে চলেছে । কারণ একটু পরে আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হবে । সেখানে হয়ত আমি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতেও পারি । তবে আমি চাই আমার মেয়েরা ভালো থাকুক । আর কবির সত্যিই একজন ভালো মনে মানুষ । আমি না চাইতেও কবিরকে ভালোবেসে ফেলেছি । সব শেষে আমার মেয়েদের যেন কোনো ক্ষতি না হয় । আল্লাহ সব কিছুর মালিক তিনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন ।

ঘড়িতে বাজে সকাল সাড়ে পাঁচটা । আজকে রাতটা পুরোটাই নির্ঘুম কাটিয়েছে আরফান । সব কিছু মাথার মধ্যে নিতে একটু সময় লাগছে । ফজরের নামাজ আদায় করে রাস্তার পাশে হাটছে । পরিবেশটাকে আরফানের তেমন কিছু মনে হচ্ছে না । কারণ মিহুর মায়ের ডায়েরি পরার পরেও কিছু কথা ধোঁয়াশা থেকে গেল । এই কথা গুলোর উত্তর দুজন ব্যক্তি দিতে পারবে । ঐ মহিলা বা মিহুর দাদু । এতক্ষণ এই ভাবনায় থাকতে থকতে ফোনের দিকে কোনো খেয়াল নেই । আরফান ভাবছে মিহুর দাদুর গোডাউনের দিকে গেলে একবার কেমন হয় ?

সারা রাতে তল্লাশি করেও নীলুর যখন কোনো খোজ পেল না তখন বাধ্য হয়েই পুলিশের সহায়তা নিতে হলো । মাহিনদের বাসায় খোঁজ করে কিছু পাওয়া যায় নি । পুলিশ সবাইকেই সন্দেহ করছে । মিহুর দাদুর যেহেতু একটা গোডাউন আছে তাই সেখানে গিয়ে ও তারা তল্লাশি নিয়েছে । যদিও মিহুর দাদু এই মূহুর্তে এখানে নেই । কিন্তু সেখানে তার কিছুই পায়নি ।

সবাই যখন ব্যর্থ হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল তখন আরফানের সাথে দেখা । আরফান সবাইকে দেখে অবাক হয়ে যায় । গাড়ি থামিয়ে মিহু আরফানের কাছে দৌড়ে যায় । কান্নার কারণে ওর কথা কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না । মাহিন নিস্তব্ধ হয়ে ফুটপাতে বসেছিল । কোনো কিছুই তার কানে ঢুকছিল না । নেহাল আরফানকে সব কিছু বলছিল । তখন মাহিন একটা কন্ঠস্বর শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় বাকি সবাইও সেদিকেই তাকি আছে ।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৪০

নীল শাড়ি পড়া রক্তাক্ত অবস্থায় নীলু ‘মাহিন ভাই ‘ শব্দ দুটি উল্লেখ করে রাস্তার অপর পাশ থেকে এই পাশে দৌড়ে আসছিল আর ঠিক তখনি একটা ট্রাক সবার আশার আলো নিভিয়ে দিল ।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৪৩