মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৩০

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৩০
সাদিয়া জাহান উম্মি

ঘন জঙল,সেখানে রয়েছে বড়ো বড়ো মেহগনি গাছ।সেই গাছের ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে কিঞ্চিত পরিমানে রোদের আলো দেখা দিচ্ছে।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিত চারপাশ।আশেপাশে ঝোপঝাড়ে নাম না জানা হরেক রঙের ফুল ফুটে রয়েছে। এ যেন রূপকথার কোনো রাজ্যে এনে দিয়েছে অথৈকে রুদ্রিক।আর সেই রূপকথার রাজ্যে অথৈয়ের সামনে কাঠের কটেজটা হলো একটা রাজপ্রসাদ।

চারদিকের এই অপার সৌন্দর্যে অথৈয়ের চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে।সে বাকরুদ্ধ।ঠিক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে।সে কি এসব বাস্তবেই দেখছে।নাকি তার মনের ভ্রম।এসব ভেবে ভেবে সে হয়রান।তার অবস্থাটা হয়তো রুদ্রিক বুঝতে পারল।অথৈয়ের নরম হাতটা তার শক্তপোক্ত,নিরেট হাতের মাঝে আগলে নিলো।অতঃপর মৃদ্যু হেসে বলে,
‘ এটা তোমার স্বপ্ন না বউ।এটা তুমি বাস্তবেই দেখছ।সবটা তোমার চোখের সামনেই স্পষ্ট।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অথৈয়ের গলা কাঁপছে। এমন সুনশান-নিস্তব্ধ জঙলের মাঝে এতো সুন্দর কাঠের কটেজ কেউ তৈরি করতে পারে ওর ভাবনার বাহিরে ছিলো।এমন না যে সে এসব দেখেনি।দেখেছে তবে তা বিভিন্ন মুভিতে।কিন্তু বাস্তবে যে এমন কিছু ও দেখতে পারবে এটা ওর ভাবনার বাহিরে ছিলো।অথৈ তাকালো রুদ্রিকের দিকে।কণ্ঠ তার স্পষ্টভাবে কাঁপছে।অথৈ বলে উঠে,

‘ এটা এতো সুন্দর কেন রুদ্রিক?’
‘ তোমার পছন্দ হয়েছে?’
‘ আপনি কি আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন নাহ?’
রুদ্রিক বিনিময়ে হাসল।বলল,
‘ ভীতরে যাবে নাহ?নাকি এইভাবেই বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে?’

অথৈ মাথা দুলালো।পা বাড়াতে নিয়েও কিছু একটা মনে করে থেমে গেল।কৌতুহল দমাতে না পেরে অথৈ মনের কথাটা বলেই ফেলল,’ কিন্তু এই কটেজটা কাদের?এইভাবে না জেনেশুনে কটেজের ভীতরে যাওয়া ঠিক হবে?’
অথৈয়ের এমন বোকাসোকা প্রশ্নে রুদ্রিক ভ্রু-কুচকালো। দু কদম এগিয়ে আসল অথৈয়ের কাছে। গম্ভীর গলায় আওড়ালো,’ তোমার কি মাথা খারাপ?আমি আমার বউকে অন্যের কটেজে নিয়ে আসব?আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়?’
রুদ্রিকের গম্ভীর গলায় বলা বাক্যে চুপসে যায়।মিনমিন করে বলে,’ এভাবে বলছেন কেন?আমি কি খারাপ কিছু বললাম নাকি?’

রুদ্রিক বলল,’ হ্যা সেরকমই কিছু বলেছ।’
‘ আর সেটা কি?’
‘ এইটা তোমার শশুড়বাড়িরই সম্পত্তি।মানে এটা আমাদের ই কটেজ।বাবা এই কটেজটা মাকে তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী সময়ে গিফট করেছিলো।’

অথৈ আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো।সে যে আসলেই বলদের মতো কান্ড করেছে তা আর বুঝতে বাকি নেই।একটু লজ্জা লাগল।মাথা নিচু করে নিলো অথৈ। রুদ্রিক অথৈকে মাথা নিচু করতে দেখে সাথে সাথে অথৈয়ের থুতনিতে স্পর্শ করে ওর মাথা উঁচু করে দিলো।শক্ত গলায় সুধালো,’ আর কখনও যেন না দেখি মাথা নিচু করতে। তুমি আরিহান রুদ্রিক মির্জার স্ত্রী এটা ভুলে যাবে না।আর আমার বউ সবসময় মাথা উঁচু করে বাঁচবে।কখনও কোনো পরিস্থিতিতেই যেন মাথা নত না হয়।বুঝেছ?’

অথৈয়ের মন ছুঁয়ে গেল রুদ্রিকের প্রতিটি কথায়।এই লোকটা এমন এমন কথা বলে। যে অথৈয়ের মন চায় রুদ্রিককে খুশিতে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিতে।লোকটার কথাগুলো একদম বুকে গিয়ে লাগে।হৃদয়ে গেধে রাখার মতো।নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেলো অথৈ। গালদুটোকে লাল আভা ছেঁয়ে গেল।রুদ্রিক অথৈয়ের ওই ফোলা ফোলা গালে লজ্জার লাল আভাগুলো দেখে মুগ্ধ হলো।এই মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগে কেন?রুদ্রিকের মাঝে মাঝে মন চায় অথৈকে একদম তার শক্তপোক্ত বুকের মধ্যিখানটায় লুকিয়ে রাখতে। যাতে কেউ অথৈকে না দেখতে পায়। একমাত্র সে একাই দেখবে তার বউকে।রুদ্রিক অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।নম্র কণ্ঠে বলে,’ চলো তাহলে। যাওয়া যাক।’

অথৈ রুদ্রিকের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। তারপর পা বাড়ালো রুদ্রিকের সাথে কটেজের ভীতরে।যাবার আগে আরেকবার কটেজের বাহিরের সৌন্দর্যটা পরখ করে নিলো।কাঠের কটেজটা বেশি বড়ো না আবার ছোটোও না।দুতলা কটেজটা অন্যরকম সুন্দর লাগে।এই কটেজের বেশিরভাগ সৌন্দর্য এই কারনে যে কটেজটায় প্রায় সব জায়গাতেই গাছ লাগানো। গাছ গাছালি দিয়ে ভড়পুর।তাতে নানান রকম ফুল ফুটে আছে।পাতা বাহার গাছও আছে।যে কারোরও ভীষণ পছন্দ হবে জায়গাটি।তার মধ্যে অথৈ একজন।

এদিকে রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে কটেজের মধ্যে প্রবেশ করতেই অথৈ চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।কটেজটার ভীতরটা দেখেও অথৈ মুগ্ধ হলো।কটেজটার ভীতরকার ডিজাইন, এর প্রতিটা আসবাবপত্র। সবকিছুই বেশ সুন্দর।অথৈ উচ্ছ্বাসিত গলায় বলে,’ ভীতরটাও বেশ সুন্দর।আসবাবপত্রগুলোও বেশ ইউনিক।আর ঘরের মধ্যেও কি সুন্দর নানান জাতের গাছের সমাহার।এতো এতো সুন্দর।’

অথৈয়ের খুশিতে রুদ্রিক যেন দ্বিগুন খুশি হলো। তার এখন আফসোস হচ্ছে।আরও আগে কেন আনলো না মেয়েটাকে।তাহলে আর প্রাণপ্রিয়ার এই স্নিগ্ধ মুখখানায় ওই নির্মল হাসিটুকু আরও আগেই দেখতে পারত ও।তবে এখন আফসোস করে তো আর লাভ নেই। এখন শুধু সময় প্রেয়সীর ওই হাসিটুকু দুচোখ ভরে দেখা।আর রুদ্রিক সেটাই করছে।রুদ্রিক হেসে বলে,’ কটেজটার ডিজাইন বাবা করলেও।মা এই কটেজটা নিজ হাতে সাজিয়েছে।এই কটেজের প্রতিটা আসবাবপত্র তার করা ডিজাইনে বানানো।’

অথৈ চারদিক থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।প্রশ্ন করল,’ আচ্ছা আপনারা তো সবসময় এখানে থাকেন না।তাহলে কটেজটা দেখাশোনার জন্যে নিশ্চয়ই কেয়ারটেকার রেখেছেন।কিন্তু এমন কাউকেই তো দেখলাম নাহ।’
‘ তা দেখবে কিভাবে?আমি তোমাকে নিয়ে এখানে আসার আগে তাকে ফোন করে বলে দিয়েছি। সবকিছু গুছিয়ে রেখে সে যেন চলে যায়। ‘

কথাটা শেষ করে এইবার অথৈয়ের কাছে একটু ঝুকে আসল রুদ্রিক।ফিসফিস করে বলে,’ বউয়ের সাথে একান্তভাবে একটু সময় কাটাতে এখানে এসেছি।সেখানে তাকে এখানে রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’
লজ্জা পেল অথৈ। লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,’ ধুর,আপনিও না।’

রুদ্রিক শব্দ করে হেসে দিলো। সেই হাসি শব্দে বুক কেঁপে উঠল অথৈয়ের।চোখ তুলে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো।এই লোকটার হাসি এতো সুন্দর।যে একবার তাকালে অথৈ চোখ সরাতে পারে না।এদিকে হাসি থামিয়ে অথৈকে নিজের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক মৃদ্যু হাসে। ভ্রু নাচিয়ে বলে,’ কি এভাবে কি দেখছ?’

অথৈ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় বলে,’ আপনি এভাবে কারো সামনে হাসবেন না রুদ্রিক।কোনোদিন হাসবেন না।এই হাসিটুক সবসময় শুধু আমার সামনে হাসবেন। আপনার এই প্রাণখোলা হাসি যেন শুধু এবং শুধু আমিই দেখতে পাই।আপনার হাসি দেখার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যক্তিটি শুধু আমি হবো।আর কেউ না।’

অথৈয়ের সহজসরল সিকারোক্তিটুক যে রুদ্রিকের হৃদয়ে কি পরিমান প্রভাব ফেলেছে তা শুধু সে জানে। এই মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে তাকে আরও বাজেভাবে নিজের মায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছে।মেয়েটার ভালোবাসায় আরও গভীরভাবে পরে যাচ্ছে সে।তবে রুদ্রিকের এতে একটুও খারাপ লাগে না।সে তো আরও ভালোবাসতে চায় মেয়েটাকে।

শতবার,হাজারবার,লাখোবার,কোটিবার,বহুবার এই এক মেয়েরই প্রেমে পরতে চায় সে।যে কিনা তার সহধর্মিনী,তার স্ত্রী,তার ভালোবাসা।রুদ্রিক অথৈয়ের বাহু ধরে তাকে নিজের বরাবর এনে দাঁড় করালো।মুখ নামিয়ে আনলো অথৈয়ের কাছে।তার নিখাঁদ ভালোবাসাটুক বুঝানোর জন্যে অধর ছোঁয়ালো অথৈয়ের ললাটে।ওই একটুখানি স্পর্শে অথৈয়ের সর্বাঙ্গ যেন ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠল।

লোকটার অধরের ওই স্পর্শটুকু যেন তাকে জানান দিয়ে দিচ্ছে যে রুদ্রিক তাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।অথৈ তা খুব করে অনুভব করতে পারছে। তাইতো পরম সুখে অথৈয়ের বন্ধ চোখের কোণ ঘেষে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।তা রুদ্রিকের অগোচরেই বিলীন হয়ে গেলো। সময় নিয়ে সরে আসল রুদ্রিক।অথৈ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।রুদ্রিক মুচঁকি হেসে বলে,’ দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে।নিশ্চয়ই তোমার ক্ষুদা লেগেছে। খাবার তৈরিই আছে।চলো যাওয়া যাক।’

‘ চলুন তাহলে।’
অথৈকে নিয়ে কিচেনরুমে আসল রুদ্রিক।মূলত কিচেনরুমেই খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা।রাউন্ড একটা টেবিল।সেখানে চারটা চেয়ার রাখা।রুদ্রিক অথৈকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও বসে পরল।তারপর খাবারের বাটিগুলো ঢাকনা সরালো।কিন্তু দেখে খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ আগেই বানিয়ে রেখেছে খাবারগুলো।যা দেখে নাক মুখ কুচকালো রুদ্রিক।রাগি স্বরে বলে,’ এই ছাব্বিরটাও না।একটা কাজও ঠিকঠাকভাবে করতে পারে না।খাবারগুলো পুরো ঠান্ডা।না জানি কখন বানিয়েছে।উফ,অসহ্য।’

রুদ্রিকের কথা শেষ হতেই দেখে অথৈ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। অথৈকে দাঁড়াতে দেখে ও প্রশ্ন করে,’ তোমার আবার কি হলো?দাঁড়িয়ে পরলে কেন?’
অথৈ ওর ব্যাগ থেকে একটা ক্লিপ বের করল।তা দিয়ে নিজের চুলগুলো সুন্দরভাবে বেধে নিলো।এরপর বলল,’ খাবারগুলো যেহেতু ঠান্ডা।আর আমি জানি আপনি গরম খাবার ছাড়া খেতে পারেন না।তাই খাবারগুলো গরম করা প্র‍য়োজন।আর আমি এখন সেটাই করব।’

অথৈয়ের বলতে দেরি রুদ্রিকের চেঁচাতে দেরি হয়নি।সে বলে,’ হোয়াট?কি বলছ এসব?তুমি খাবার গরম করবে?’
‘ হ্যা। কেন কোনো সমস্যা?’
‘ সমস্যা মানে,অনেক সমস্যা।এখানে ওভেন নেই যে সেটা দিয়ে খাবার গরম করবে তুমি।এখানে চুলো জ্বালিয়ে সব করতে হবে। আর আমি তোমাকে তা করতে দিবো না।বাই চান্স যদি ছ্যাঁকা ট্যাকা লেগে যায়।আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায়নি।’

রুদ্রিকের এহেন কথায় অথৈয়ের বিরক্ত লাগল।সে কপাল কুচকে বলে,’ আমি কি কচি খুকি?যে রান্না করতে পারি না।আর চুলো জ্বালাতে গেলে আগুনের আঁচ লেগে যাবে।শুনুন আপনার বউ কোনো অকার্মার ঢেকি না।সে মোটামুটি সবকিছুই রান্না করতে পারো।সো কোনো কথা বলবেন না।আমি এখন এই খাবারগুলো গরম করে নিয়ে আসছি।আপনি বসুন।’
কি আর বলবে রুদ্রিক।বউয়ের করা কথায় তাকে চুপচাপ মেনে নিতে হলো।হতাশ হয়ে বলল,’ ঠিক আছে। তবে সাবধানে হ্যা?আর আমিও তোমাকে হ্যাল্প করি?’

‘ ঠিক আছে। আপনি আমাকে তরকারির বাটিগুলো চুলোর কাছে এনে দিন।তাহলেই হবে।’
বলেই অথৈ একটা তরকারি বাটি নিয়ে চলে গেল।তারপর চুলোতে একটা ননস্টিকি কড়াই দিয়ে সেটাই তরকারিগুলো ঢেলে দিলো।সুন্দরভাবে তরকারিটা গরম করতে লাগল। এর মধ্যে রুদ্রিক বাকি তরকারির বাটিগুলোও নিয়ে আসল।অথৈ একটা একটা করে তরকারি গরম করে নামাচ্ছে আর রুদ্রিক সেগুলো নিয়ে টেবিলে সাজাচ্ছে।এইভাবে সবগুলো তরকারি গরম করে নিলো তারা মিলেমিশে।অথৈ গিয়ে নিজে খাবার বেড়ে দিলো প্লেটে।কিন্তু একটা প্লেটে খাবার বাড়তেই রুদ্রিক অথৈকে থামিয়ে দিলো।

‘ একটাতেই খাবার বাড়ো।’
ভ্রু-কুচকে অথৈ বলে,’ কিন্তু কেন?’
মুচঁকি হেসে রুদ্রিক বলল,’ কারন আমি তোমার হাতে খাবার খাবো।’
রুদ্রিকের সরল আবদার।যা শুনে অথৈ মনটা কেমন করে যে উঠল।সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে রুদ্রিক বলে,’ কি হলো?চুপ করে আছ যে?খাইয়ে দিবে নাহ?’

নিজেকে সামলে নিলো অথৈ। ধীর আওয়াজে বলে,’ আসলে আমি কখনও কাউকে খাইয়ে দেয়নি।তাই আর কি।’
‘ কোনো সমস্যা নেই।তবুও আমি তোমার হাতেই খাবো।’

অথৈ মাথা দুলালো।তারপর ভাতের প্লেটটা হাতে তুলে নিলো।তরকারি দিয়ে ভাতটুকু মেখে নিয়ে রুদ্রিকের মুখের সামনে ধরল। রুদ্রিক অনতিবিলম্বে খাবারটুকু মুখে পুরে নিলো।এদিকে রুদ্রিকের ঠোঁটের ছোঁয়া অথৈয়ের আঙ্গুলে এসে লাগতেই অথৈ ঠোঁট কামড়ে ধরে। তার পায়ের তলা শিরশির করছে।রুদ্রিক খাবারটুকু গিলে নিতে।অথৈ আবারও খাবার ধরল রুদ্রিকের মুখের সামনে।কিন্তু এইবার রুদ্রিক খেলো না।সে অথৈয়ের হাতটা ধরে সেটা অথৈয়ের দিকে ঘুরিয়ে দিলো। চোখের ইশারায় করে বলে উঠল,’ তুমিও খাও। তোমারও তো ক্ষিদে পেয়েছে।’

অথৈ বিনাবাক্যে খাবার খেয়ে নিলো।ঠিক এইভাবেই পুরোটা খাবার শেষ করল দুজনে।অথৈ এঁটো থাল নিয়ে চলে গেল।অপরিষ্কার থালাবাসনগুলো সুন্দরভাবে ধুঁয়্র মুছে জায়গামতো রেখে দিলো। কাজ শেষ করে পিছনে ঘুরতেই রুদ্রিকের প্রসস্থ বুকের সাথে ধাক্কা লাগে অথৈয়ের।পরে যেতে নিলেই রুদ্রিক দ্রুত অথৈয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো অথৈ। এখন নিরাপদে আছে ভেবে চোখ মেলে তাকায়।তারপর কপট রাগ দেখিয়ে বলে,’ এসবের মানে কি?এমনভাবে ভুতের মতো পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর একটু হলেই তো পরে আমার কোমড়টা ভেঙে যেতো।’

রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ ভাঙতে তো দেয়নি।তার আগেই তো ধরে ফেলেছি।’
‘ হুহ! ‘ ভেঙচি কাটলো অথৈ। রুদ্রিক আলতো হাসল।পর পর এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো অথৈকে।ভয় পেয়ে অথৈ রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরল।আতংকিত গলায় বলে,’ আরে এভাবে হুটহাট কোলে নিয়ে নেন কেন আজব?আমি ভয় পাই নাহ হ্যা?’

‘ অভ্যাস করে নেও।’
বলেই রুদ্রিক কিচেন থেকে বেড়িয়ে দোতলার দিকে হাটা ধরল।দোতলায় এসে একটা রুমে প্রবেশ করল রুদ্রিক।রুমে আসতেই অথৈ গোলগোল চোখে সব দিকে তাকাচ্ছে।রুমটা আকাড়ে বেশ বড়ো।এবং বেশ খোলামেলা।রুমের একপাশ পুরো খোলা।মানে সেখানে স্লাইডিং ডোর লাগানো।সেখান দিয়ে ব্যালকনিতে যায়।সেখানে পর্দা লাগানো।সাদা আর নীল রঙের সংমিশ্রণে।

বিছানার চাদর,আর সোফা সেটের কুশনগুলো একই কালারের সংমিশ্রণে।রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে সোজা বিছানায় সুইয়ে দিলো।এরপর নিজেও অথৈয়ের অন্যপাশে শুয়ে পরল।পর পর হাত বাড়িয়ে অথৈকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিলো।অথৈয়ের বুক কাঁপছে।কেমন যেন অস্থির লাগছে।

এই প্রথম রুদ্রিকের সাথে এক বিছানায় শুয়েছে সে।মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।রুদ্রিকের একটা হাত অথৈয়ের কোমড়ে।যা আলতো হাতে স্পর্শ করে যাচ্ছে ওকে।অথৈ নিজেই আরো একটু মিশে গেলো রুদ্রিকের বুকের মাঝে।এদিকে রুদ্রিকের নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।মেয়েটাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে গভীরভাবে।আদরে আদরে ভড়িয়ে তুলতে ইচ্ছে করছে।রুদ্রিক ধীর স্বরে বলে উঠল,’ অথৈ?’

‘ হু!’
‘ একটুখানি ছুঁয়ে দেই তোমায়?রাগ করবে?’
কি সুন্দর আবদার।এই আবদার কি অথৈ ফিরিয়ে দিতে পারবে? অথৈ হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল রুদ্রিককে শক্ত করে।খামছে ধরল রুদ্রিকের পিঠ।মৌনতা বজায় রেখেই রুদ্রিককে সম্মতি দিয়ে দিলো অথৈ। ও নিজেও চায় রুদ্রিক তাকে ছুঁয়ে দিক।

কোন মেয়েই বা না চাইবে নিজের স্বামি আদর,সোহাগ, ভালোবাসা পেতে।রুদ্রিক অথৈকে বালিশে শুইয়ে দিলো।অথৈ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে।রুদ্রিক চুমু খেল অথৈয়ের কপালে।একে একে অধরের স্পর্শ দিলো অথৈয়ের গালে,নাকে,চিবুকে।অথৈ রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরেছে।

রুদ্রিক মাদকতা চাহনী নিয়ে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।অথৈয়ের ওই ওই ভেজা,গোলাপি ঠোঁটজোড়া দেখে শুকনো ঢোক গিলল।হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো অথৈয়ের অধরজোড়া।ছুঁয়ে নিজেই কেঁপে উঠল।এদিকে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে অথৈয়ের সারাদেহ কাঁপছে।রুদ্রিক ঢোক গিলে বলে,’ এই ঠোঁটজোড়া আমায় বড্ড টানছে অথৈ। চেয়েও নিজেকে সামলাতে পারছি না।’

জোড়ে শ্বাস নিতে থাকা অথৈ রুদ্রিককে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিলো।কাঁপা গলায় থেমে থেমে বলে উঠল, ‘ নিজ..নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসবেন।আ..আমি তো আপ..আপনাকে আটকাইনি।’

রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।যা দেখে লজ্জা চোখ বন্ধ করে নিলো অথৈ। রুদ্রিক কালবিলম্ব না করে অধরে অধর মিলিয়ে দেয় অথৈয়ের।অথৈ ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠল।খামছে ধরল রুদ্রিককে।স্বামীর ভালোবাসাময় ছোঁয়ায় নিজেকে মাতিয়ে তুলল।রুদ্রিক যেন প্রিয়িতমার ওষ্ঠ সুধায় মত্ত হয়ে গিয়েছে।নিয়ন্ত্রণহীন্ন হয়ে গিয়েছে সে।প্রেমময় দীর্ঘ চুম্বনে লিপ্ত হলো তারা।অনেকটা সময় কেটে গেলো। অথৈ ঠিকঠাক শ্বাস নিতে পারছে না আর।তা উপলব্ধি করতে পেরে সরে আসল রুদ্রিক।দুজনেই হাপাচ্ছে।রুদ্রিক হাঁপানো কণ্ঠে বলে,’ নেশা ধরে গিয়েছে বউ।এখন থেকে তো প্রতিদিন এই সুধা পাণ করতে হবে আমায়।নাহলে যে আমি শান্তি পাবো না।’

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২৯

এমনিতেই প্রচুর লজ্জা পাচ্ছিলো অথৈ। আর এখন রুদ্রিকের এই কথায় আরও ভয়ানক লজ্জা পেলো।সর্ব মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে।রুদ্রিকের বুকে আলতো আঘাত করল সে।পর পর নিজের লজ্জা ঢাকতে রুদ্রিকের বুকে মুখ লুকালো।রুদ্রিক তৃপ্তির হাসি দিয়ে অথৈয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।বলল,’ এখন ঘুমাও একটু।’
তারপর নিজেও চোখ বন্ধ করে নিলো।অথৈও কিছুক্ষন হাশফাশ করে ঘুমিয়ে গেল।

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৩১+৩২