তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ৩০

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ৩০
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

চোখের পলকেই আড়াই মাস কেটে গেলো। কাল রুশান আর তরীর বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে অল্প পরিসরে। সকালে গায়ে হলুদ আর সন্ধ্যায় কাজি আর হজুর ডেকে এনে বিয়ে৷ রুশানদের খুব কাছের লোকজন এবং ওর বন্ধুবান্ধব এবং দু/চার প্রতিবেশী ছাড়া আর কাউকে ডাকা হয়নি এই বিয়েতে। আজ থেকেই রুশানদের বাড়ি ডেকোরেশন এর কাজে লেগে পড়েছে লোকজন।

যেহতু অল্প আয়োজনে বিয়েটা সম্পন্ন হবে তাই ওদের বাড়িতেই সবকিছু করা হচ্ছে। সকালে হলুদের পোগ্রাম টা অর্নি আর নূরের আবদারে হয়েছে। সাথে রুশান আর তরীরও ইচ্ছে ছিলো। বিকেলের দিকে রুশানের আম্মু রুশানকে জানালো অর্নি ওদের নিয়েই বিয়ের কেনাকাটা সারতে। তাই রুশান ফোন লাগিয়েছে ওদের। ওরাও চটপট রেডি হয়ে গেলো৷ রুশান কিছুক্ষণের মাঝেই এসে উপস্থিত হয়। এখন অপেক্ষা শুধু উৎসবের জন্য।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এ দোকান ও দোকান ঘুরে রুশান আর তরীর বিয়ের প্রায় সকল কেনাকাটা শেষ। অর্নি নূর উৎসব শান্ত ওরাও কিছু কেনাকাটা করে সাড়ে আটটা নাগাদ মল থেকে বের হয়। উৎসবের কথামতো একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে সকলে। একেবারে ডিনার সেরেই বাড়ি ফিরবে। খাবারের জন্য বসে আছে সকলে। এমন সময় উৎসবের ফোন বেজে উঠে৷ উৎসব ফোন রিসিভ করতে টেবিল ছেড়ে একপাশে চলে যায়। কথা বলা শেষে নিজেদের টেবিলের দিকে এগোতেই আচমকা ইশা এসে গলা জড়িয়ে ধরে উৎসবের। উৎসব সাথে সাথেই ইশাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

–“তুই এখানে?”
–“ফ্রেন্ডদের সাথে এসেছিলাম, তুমি কি করছো এখানে? চলো আমাদের সাথে জয়েন করবে।”
–“আজ না, অন্যদিন। ফ্যামিলি নিয়ে এসেছি আমি।”
ইশা নূরদের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কোথায় ফ্যামিলি? ওখানে শুধু নূর, নুরের উডবি এবং নূরের বন্ধুরা। তুমি আজ আমার সাথে চলো।”

বলে আবারো উৎসবের হাত ধরে নিজেদের টেবিলে নিয়ে যেতে লাগলো। অর্নি এসব দেখে রাগে ফুঁসছে। রেগে কাটা চামুচ দিয়ে টেবিলে আঘাত করতেই রুশান চিৎকার করে চেঁচিয়ে উঠলো। অর্নি দ্রুত সেদিকে তাকাতেই দেখলো রুশানের হাতে বসিয়েছে চামুচটা৷ দ্রুত চামুচ সরিয়ে বললো,

–“স্যরি দোস্ত, আসলে আমি খেয়াল করিনি।”
–“হ্যাঁ তা খেয়াল করবি কেন? ধ্যান জ্ঞান তো সবসময় থাকে উৎসব ভাইয়ের দিকে৷”
রুশানের চেঁচানো শুনে উৎসবও দ্রুত এদিকে চলে আসে। সাথে ইশাও এসেছে। উৎসব রুশানকে জিজ্ঞেস করে,
–“কি হয়েছে? চিৎকার করলে কেন ওভাবে?”
রুশান অর্নির মাথায় গাট্টা মেরে বললো,

–“কোন অলক্ষুণে যে এর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করছিলাম আল্লাহ জানে। কাটা চামুচ বসিয়ে দিয়েছে হাতে।”
অর্নি বললো,
–“স্যরি বললাম তো।”
–“তোর হাতটা দে, আমিও কাটা চামুচ বসিয়ে স্যরি বলবো, দে হাত দে তোর।”
–“আমি কি ইচ্ছে করে দিয়েছি নাকি? আমি টেবিলে আঘাত করতে চেয়েছিলাম, তুই হাত দিয়ে রাখছিলি কেন? সব দোষ তোর।”

উৎসব এক পলক অর্নির দিকে তাকালো। অর্নি নিচ দিকে মাথা দিয়ে রাগে ফুঁসছে৷ হঠাৎ অর্নির এরকম রেগে থাকার কারণ বোধগম্য হলো না উৎসবের৷ রুশানকে বললো,
–“খুব বেশি লেগেছে? চলো ডক্টর__”
–“অস্থির হওয়ার কিছু নেই ভাইয়া, অল্পের উপর দিয়েই গেছে।”
–“আর ইউ সিয়র?”

রুশান মাথা নাড়লো। উৎসব ইশাকে বললো,
–“তুই চাইলে আমাদের সাথে জয়েন হতে পারিস।”
ইশা সম্মতি জানালো। উৎসব অর্নির পাশে বসতেই ইশা বসলো উৎসবের আরেক পাশে৷ বসে উৎসবের হাত জড়িয়ে ধরলো। উৎসব দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিলো। এদিকে অর্নির বিরক্ত লাগছে বেশ। কি দরকার ছিলো এই মেয়েটাকে ওদের সাথে এখানে বসতে বলার? রাগ হচ্ছে প্রচুর ইশার উপর৷ অর্নির যতটা না ইশার উপর রাগ হচ্ছে তার থেকে বেশি রাগ হচ্ছে উৎসবের উপর। নূর আর তরী মুখ টিপে হাসছে অর্নিকে দেখে। এতক্ষণে অর্নির রাগের কারণ বুঝতে পারলো ওরা৷ শান্ত নূরের দিকে কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,

–“অর্নি ভাবী কি জেলাস?”
–“হু, ইশা আপু ভাইয়াকে পছন্দ করে। প্রপোজও করেছিলো। ভাইয়া অর্নিকে রাগানোর জন্য বলেছিলো পরে জানাবে। এরপর আর ইশা আপুর সাথে ভাইয়ার কথা হয়েছে কিনা জানি না।”
–“উৎসব ভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে জানে না?”

–“উহুম, হুট করেই ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হওয়াতে তেমন কাউকে জানানো হয়নি। শুধুমাত্র বড় চাচা-চাচী জানে, ইশা আপু বোধহয় জানে না। সামনেই অর্নব ভাইয়ার বিয়ে। অর্নির ইচ্ছে অর্নব ভাইয়ার সাথেই ওর বিয়ের অনুষ্ঠান হবে৷ তখনই আমাদের বাড়িতে আসবে ও৷ কিন্তু ভাইয়া তো ভাইয়া-ই কয়েকদিন বাদেই আম্মুকে দিয়ে আন্টিকে ম্যানেজ করিয়ে নিয়ে এসেছে অর্নিকে। কিন্তু অনুষ্ঠানটা হবে অর্নব ভাইয়ার বিয়ের সময়ই৷ তাই ভেবেছে যারা যারা না জানে সকলকে একেবারে অনুষ্ঠানের সময়ই জানানো হবে।”

শান্ত সব শুনে মৃদু হাসলো। অর্নির দিকে তাকিয়ে বললো,
–“তোমার ভাই তো আজ গেলো। শালীকা যেভাবে রেগে আছে। একবার বাসায় যেতে দাও শুধু, আ’ম সিয়র অর্নির রাগ ভাঙাতে উৎসব ভাইয়ের বহুত কষ্ট করতে হবে।”
খাওয়ায় মনোনিবেশ করেছে সকলে। অর্নি না খেয়ে শুধু খাবার নেড়ে যাচ্ছে৷ উৎসব অর্নির দিকে তাকিয়ে বললো,
–“খাচ্ছো না কেন?”
–“খিদে নেই।”

ভ্রু কুঁচকে তাকালো উৎসব। অর্নির পছন্দের সেট ম্যানু অর্ডার করা হয়েছে, তাহলে খাচ্ছে না কেন? উৎসব অর্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“খাইয়ে দিবো? তুমি চাইলে___”
উৎসবের কথায় অর্নি নিজের প্লেট থেকেই দু চামুচ খাবার মুখে তুললো। তা দেখে মুচকি হাসলো উৎসব। খাওয়া শেষে ওরা যখন চলে আসছিলো তখন হুট করেই ইশা বললো,
–“উৎসব আমিও যাবো তোমাদের সাথে৷”

উৎসব মৃদু হেসে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। ইশার যাওয়ার কথা শুনে অর্নির রাগটা আরো বেড়ে গেলো। হনহনিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলো। ব্যাক সিটে গিয়ে বসেছে অর্নি। তা দেখে উৎসব কিঞ্চিৎ অবাক হলো। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিছু সেকেন্ড। উৎসব ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো। ইশা ফ্রন্ট সিটে বসার জন্য দরজা খুললো৷ নূর আর তরী অর্নির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছিলো। বেচারি উৎসবের পাশে সহ্য করতে পারছে না ইশাকে। সহ্য না করারই কথা৷ নিজের বরের পাশে অন্য নারীকে কোনো স্ত্রীই সহ্য করতে পারবে না৷ ঠিক তেমনই অর্নিও পারছে না। ইশা গাড়িতে উঠার জন্য পা বাড়াতেই উৎসব বলে,

–“শান্ত?”
–“জ্বি ভাইয়া?”
–“তুমি সামনে এসে বসো। ইশা? পেছনে যা তুই।”
উৎসবের কথামতো ইশা চুপচাপ পেছনে নূরের পাশে গিয়ে বসলো। অর্নি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। উৎসব এক পলক অর্নির দিকে তাকালো। বুঝলো বউ তার রাগ করেছে। রাগের কারণটা বুঝতেই মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো উৎসব।

আগে আগেই গাড়ি থেকে নেমে অর্নি নূরের ঘরে চলে গেলো। বাসায় ফেরার পথে উৎসব শান্ত আর রুশানকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে এসেছে। কাল সকাল সকাল অর্নি ওরা এখান থেকে তরীকে নিয়ে যাবে রুশানদের বাড়ি। অর্নিকে এভাবে ভিতরে যেতে দেখে ইশা ভ্রু কুঁচকে ফেললো। পরমূহুর্তেই ভাবলো অর্নি নূরের ফ্রেন্ড তাই হয়তোবা এসেছে এ বাড়িতে। সাতপাঁচ না ভেবে ইশা শায়লা বেগমের সাথে কথা বলে এ বাড়িতে নিজের বরাদ্দকৃত ঘরে চলে গেলো। উৎসবের পাশের ঘরটাই ইশার।

উৎসব নিজের ঘরে গিয়ে অর্নিকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুঁচকে ফেললো। পরমূহুর্তেই হাসলো অর্নির জেলাসি দেখে। মৃদু হেসেই টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
অর্নি নূরের বিছানায় আসাম দিয়ে বালিশ কোলে নিয়ে বসেছে। দুহাতে গাল ধরে রাগ ফুঁসছে ও। নূর অর্নিকে রাগানোর জন্য বললো,

–“দেখলি? ইশা আপু এখনো ভাইয়াকেই ভালোবাসে, ভাইয়ার জন্য এ বাসায় চলে এলো আমাদের সাথে৷ তুই যদি আর একটু ত্যাড়ামি করতি না তখন? আ’ম সিয়র আজ তুই না ইশা আপু আমার ভাবী থাকতো।”
রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো অর্নি। ও এমনিতেই রেগে আছে তার উপর নূরের এসব কথা যেন আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো কাজ করছে। অর্নি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–“ওই মেয়ের সাহস কত বড় আমার বরকে জড়িয়ে ধরে, আমার তো ইচ্ছে করেছিলো চাপড়ে গাল লাল করে দিই। আর তোর ভাইয়া? তোর ভাইয়া কিছু বললো না কেন ওকে? আমার আশেপাশে তো কোনো ছেলে দেখলে সহ্য করতে পারতো না। আর সেখানে একটা মেয়ে উনাকে সোজা জড়িয়ে ধরে? হাউ? বল আমাকে?”
এমন সময় দরজা খুলে উৎসব ঢোকে ঘরে৷ এতক্ষণ অর্নির বলা সবগুলো কথাই ও শুনেছে। অর্নি উৎসবকে দেখে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো৷ উৎসব বললো,

–“ঘরে চলো।”
–“নূর তোর ভাইকে বল আমি আজ এখানেই থাকবো। উনাকে উনার ইশার কাছে যেতে বল।”
অর্নির কথায় ঠোঁট চেপে হাসলো উৎসব। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে বললো,
–“আপাতত অন্য কাউকে লাগবে না। এসময় বউ লাগবে কাছে। উঠে এসো।”
–“নূর, তোর ভাইকে বলে দে আমি যেহেতু বলেছি যাবো না তারমানে যাবো না।”
নূর বেচারি অসহায় মুখ করে বললো,

–“আমাকে টানছিস কেন মাঝে? আমি কিছু বলতে পারবো না।”
অর্নি জবাব দিলো না। উৎসব বিছানার কাছে গিয়ে বললো,
–“লাস্ট টাইম বলছি, উঠে এসো।”
এবারেও অর্নি জবাব দিলো না। উৎসব নূরকে বললো,
–“সরে বোস।”

উৎসবের কথামতো নূর সরে বসলো। উৎসব বিছানার দিকে ঝুঁকে অর্নিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালো। অর্নি নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালালো কিছুক্ষণ। অতঃপর শান্ত হয়ে গেলো। উৎসব নূরের ঘর থেকে বেরিয়ে অর্নিকে বললো,

–“সোজাসাপ্টা বললেই হতো আমার কোলে চড়ে ঘরে যেতে চাও তুমি।”
অর্নি রেগে উৎসবের বুকে কিল লাগালো কয়েকটা। উৎসব বাঁকা হেসে অর্নিকে বিছানায় বসিয়ে দরজা আটকে দিলো। ইশা এসব দেখে দ্রুত নূরের ঘরে গেলো। নূর আর তরী তখন শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ইশাকে দেখে নূর বললো,
–“আপু কিছু বলবে?”

–“উৎসব তোর ফ্রেন্ডকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে দরজা আটকে দিলো কেন? আর তোরা এখনো স্বাভাবিক আছিস কি করে? ওখানে ওই মেয়েটা উৎসবের সাথে উৎসবের ঘরে___”
–“ওটাই তো অর্নির ঘর আপু, তাহলে ওই ঘরে না থেকে কোথায় থাকবে?”
–“মানে? ওটা অর্নির ঘর হবে কেন? ওটা তো উৎসবের ঘর।”
–“হ্যাঁ ভাইয়ার ঘর, সাথে অর্নিরও।”

–“কি যা-তা বলছিস? তোর মাথা ঠিক আছে? আমি এক্ষুনি গিয়ে কাকিয়াকে বলছি, ওই মেয়েটা উৎসবকে ফাঁসিয়ে ওর বেডরুমে গিয়েছে। দুজনে দরজা আটকে___”
–“অর্নি ভাইয়ার বউ আপু।”
দরজার কাছ অব্দি গিয়ে থেমে গেলো ইশা। নূরের কথা শুনে পেছন ঘুরে অবাক কন্ঠে বললো,
–“মানে?”

–“মানে অর্নি ভাইয়ার বউ। চারমাস হলো ওদের বিয়ে হয়েছে।”
–“উৎসব বিয়ে করেছে আর আমরা জানি না? মিথ্যে বলছিস তুই রাইট?”
–“বড় চাচা চাচী জানে তো সবটা, কেন তুমি জানো না? জানায়নি তোমাকে?”
দু কদম পিছিয়ে গেলো ইশা। চোখ জলে ভরে উঠলো। বললো,

–“উৎসব এরকমটা করতে পারে না। ও আমায় ভালোবাসে না? ও তো আমায় ভালোবাসে। আমি ওকে ভালোবাসার কথা জানানোর পর ও তো সময় চেয়েছিলো ভেবে জানানোর জন্য। ভালোবাসে বলেই তো সময় চেয়েছিলো রাইট? ভালো না বাসলে তো সরাসরি সেদিন না করে দিতো। তাহলে ও অর্নিকে কি করে বিয়ে করতে পারে?”
–“ভুল ভাবছো তুমি, ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে না। ভাইয়া শুধু অর্নিকেই ভালোবাসে। আর সেটা দেশে আসার পর প্রথম যখন দেখেছিলো তখন থেকেই।”

উৎসবকে এগোতে দেখে অর্নি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে গেলো। উৎসব তবুও এগিয়ে আসছে। পেছাতে পেছাতে একসময় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায় অর্নির। উৎসব একহাতে অর্নির দুহাত ধরে মাথার উপর দেয়ালে আটকে রেখেছে। অন্যহাতে অর্নির সামনে আসা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললো,
–“কি ব্যাপার? ম্যাডাম আজ এত রাগ করেছে যে?”
অর্নি মোচড়ামুচড়ি করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য৷ উৎসব অর্নির কোমড় টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। অর্নি বললো,
–“ছাড়ুন আমায়।”

–“ছাড়ছি না। ম্যাডামের যে এত্ত জেলাসি আমার তো জানাই ছিলো না।”
–“তো হবে না জেলাসি? ওই মেয়েটা আপনাকে জড়িয়ে ধরবে কেন? আর আপনি? আপনি কিছু বললেন না কেন ওকে? আবার পাশে বসিয়ে খাওয়ালেন। ওই মেয়েটার সাহস কত বড় গাড়িতে আবার আপনার পাশে বসতে চায়।”
–“পাশে বসার সুযোগটা তো তুমিই করে দিয়েছিলে। তুমি সামনে না বসে রাগ দেখিয়ে পেছনে বসেছো কেন?”
–“তাই বলে ও__”
–“বসতে দিইনি তো।”
–“জড়িয়ে ধরতে দিয়েছেন তো।”

–“আচমকা এসে জড়িয়ে ধরেছে কি করতাম তখন আমি?”
–“বলেননি কেন? আপনি বিবাহিত? আমি আপনার বউ? খুব ভালো লাগে না অন্য মেয়েরা জড়িয়ে ধরলে? আমি বলেছিলাম না আমি ব্যাতিত অন্য মেয়ে যাতে আপনাকে স্পর্শ করতে না পারে? আপনিও তো বলেছিলেন কেউ স্পর্শ করতে পারবে না তাহলে ও কি করে___?”
–“আরে বাবা, হুট করেই সামনে এসে যে আচমকা জড়িয়ে ধরবে তা কি জানতাম আমি? নেক্সট টাইম আর হবে না এমন। আর রেগে থেকো না প্লিজ।”

–“যখন আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্কও ছিলো না তখন নিহাল ভাইয়ের বাইকে করে গিয়েছিলাম বলে আপনি রাগ দেখিয়েছেন আমার উপরে। আর এখন আপনি আমার বিয়ে করার বর, সেখানে ওই মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আপনাকে আর আপনি বলছেন আর রেগে থেকো না?”
অর্নি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় গিয়ে আসাম করে বসলো। উৎসবও গিয়ে বসলো ওর পাশে। অর্নি তখনো রাগে ফুঁসছে৷ উৎসব কিছু বলতে গেলেই অর্নি বলে,

–“একদম কথা বলবেন না আপনি। মাথা গরম আছে রাগের বসে পরে আঘাত করে ফেলবো।”
–“সমস্যা নেই, তবুও তো আমার বউয়ের রাগ কমবে নাকি?”
অর্নি কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। উৎসব অর্নিকে একটানে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরলো। অর্নি জোরে কামড় বসালো উৎসবের বুকে। উৎসব মুচকি হেসে অর্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। এত জোরে কামড়ে ধরাতেও কোনো টু শব্দ অব্দি করেনি। কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিলো উৎসবকে৷ উৎসব অর্নির দুই গালে হাত রেখে বললো,

–“নাউ হ্যাপি? এবার তো রাগ কমেছে? এখনো না কমলে আবারো কামড়াও৷ তবুও রেগে থেকো না বউ।”
কথাগুলো বলে এবার হাত বাড়িয়ে দিলো অর্নির দিকে। অর্নি উৎসবকে জাপ্টে ধরে কেঁদে দিলো। উৎসব অস্থির কন্ঠে বললো,
–“আরেহ পাগলী কাঁদছো কেন?”
–“আপনাকে অন্য কেউ স্পর্শ করলে সহ্য হয় না আমার উৎসব। আপনি শুধু আমার। আর আমার হয়েই থাকবেন। কোনো মেয়ে যেন আপনার সংস্পর্শে না আসে উৎসব। এমনকি ইশাও না।”
উৎসব মৃদু হেসে বললো,

–“আপনার উৎসব আপনারই আছে ম্যাডাম। ইশা টিশা কোনো মেয়েই আপনার উৎসবকে আপনার থেকে নিতে পারবে না। বুঝলেন?”
কথাগুলো বলে উৎসব অর্নির নাক টেনে দিলো। অর্নি ততক্ষণে কান্না থামিয়েছে। নাক টেলে বললো,
–“মনে থাকে যেন। আমি ব্যাতিত অন্য কোনো মেয়ে এলে একদম খুন করে ফেলবো আপনাকে।”
উৎসব হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো,

–“যো হুকুম, মেরি রানী। এখন যেমন আছো তেমনই সবসময় এর জন্য #তুমি_শুধু_আমারই_হও, ব্যাস! আর কিচ্ছু চাই না আমার।”
অর্নি হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো উৎসবকে। উৎসবও মুচকি হেসে নিজের প্রেয়সীকে বুকে জাপ্টে ধরে মাথায় চুমু খেলো।

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ২৯

[ আজকে প্রতিদিনের থেকে অনেক বড় করে দিয়েছি, আর আগে দিয়েছি। সুতরাং কেউ নাইছ নেক্সট না লিখে গল্প সম্বন্ধে দু/চার লাইন লিখে আমাকেও খুশি করে দিন ]

তুমি শুধু আমারই হও পর্ব ৩১