আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩১

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩১
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

রায়ান বাড়িতে আসতেই চমকে গেল৷ তার জন্য যে এত বড় সারপ্রাইজ এর আয়োজন করা হয়েছে সেটা তার ধারণার মধ্যে ছিল না। মায়ান রায়ানকে দেখামাত্রই দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ওয়েলকাম ব্রো। তোর জন্য এসব কিছুর আয়োজন করেছি আমি। দেখ তো তোর কেমন লাগে।’’

রায়ান চারি দিকে চোখ বুলিয়ে বলে,“বাহ, খুব সুন্দর এরেঞ্জমেন্ট। এত দিন পর বাড়িতে এসে যে এরকম সারপ্রাইজ পাবো ভাবতে পারিনি। থ্যাংকস আ লট মায়ান। বাই দা ওয়ে, আব্বু কোথায়?”
মায়ান বলে, “আব্বু তো ঘরে আছে। ওনার অবস্থা আগের থেকেও খারাপ হয়ে গেছে। সেই এক্সিডেন্টের পর তো চলাফেরা করার ক্ষমতা হারিয়ে ছিলেন, এত দিন তবু হুইল চেয়ারে চলতে পারতেন কিন্তু এখন হাঁটা চলা করার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এত কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে জানালি না কেন?”
“জানিয়ে কোন লাভ ছিল না ব্রো৷ ডক্টর বলে দিয়েছে তার অবস্থার উন্নতি আর সম্ভব নয়। তাছাড়া আব্বুই নিষেধ করেছিলেন তোমাকে জানাতে। তুমি বিদেশে এত বড় একটা অপারেশন করতে গেছ, আর তাই উনি চান নি তুমি ওনার কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করো।”
“ঠিক আছে। আমি যাই আব্বুর সাথে দেখা করে আসি।”

রায়ান চলে যায়। মায়ান পার্টিতে আসা গেস্টদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আকাশ পাঁচ বছর আগে একটা এক্সিডেন্ট করে হাঁটা চলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। রায়ান গিয়ে তার সাথে দেখা করে। তার খোঁজ খবর নেয়। বাবা-ছেলে এত দিন পর একে অপরকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যায়। রায়ান আকাশকে বলে, “তুমি চিন্তা করো না আব্বু। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আকাশ বলে, “এখন শুধু আমি নিজের মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি। মেহুলের কাছে যে ক্ষমা চাওয়া বাঁকি আছে। মরে গিয়ে ওর কাছে যাব আর ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে বেব। তাহলে ই কেবল আমি শান্তি পাবো৷ তার আগে নয়।”
রায়ান কিছু বলে না৷ শুধু চোখ বন্ধ করে মেহুলের কথাই ভাবতে থাকে। তারও যে ক্ষমা চাওয়া বাঁকি আছে।

মায়ান পার্টি টাই সেলিব্রেট করছিল। এমন সময় মায়ানের সেক্রেটারি আজিজ এসে বলে, “সর্বনাশ হয়ে গেছে স্যার। অনেক বড় একটা ব্লান্ডার হয়ে গেছে।”
মায়ান সবেমাত্র জুস খেতে ধর ছিল। এমন সময় আজিজ এর কথা শুনে তার হাত থেকে জুস পড়ে যায়। মায়ান রাগী চোখে আজিজের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আসার আর সময় পেলে না ইডিয়েট? তোমার জন্য আমার জুসই পড়ে গেল।”
আজিজ ভয়ার্ত গলায় বলে, “সরি স্যার। বাট কথাটা খুব আর্জেন্ট৷”

“যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
“উত্তরার আবাসন প্রজেক্ট নিয়ে নামী একটি নিউজ চ্যানেলে নিউজ বেরিয়ে গেছে। এর বাজে ইফেক্ট পড়তে পারে আমাদের কোম্পানিতে। ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারে আমাদের রেট পড়তে শুরু করে দিয়েছে। অনেক ক্লাইন্ট তো মিটিং এবং চুক্তিও বাতিল করে দিচ্ছে।”

আজিজের কথা শুনে মায়ান রাগী গলায় বলে, “ড্যাম ইট৷ তোমাকে আগেই বলে ছিলাম আমি ব্যাপার টা দেখার জন্য। তুমি তো তখন বললে সব দেখে নেবে। এই তার নমুনা। এইজন্যই বলেছিলাম হালকা ভাবে না নিতে। এখন আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। প্রব্লেমটার একটা স্থায়ী সমাধান করে নাও। নাহলে তোমাকে আমি…”
আজিজ বলে, “আচ্ছা স্যার আমি দেখছি।”
“না থাক। তোমাকে আর কিছু করতে হবে না। আমিই কিছু করছি। তোমার উপর ভরসা করে থাকলে আমার কোম্পানি ডুবে যাবে। ইডিয়েট কোথাকার।”

প্রমি আজ খুব খু্শি। তার নিউজটা নিয়ে প্রচুর পরিমাণে আলোচনা হচ্ছে। এই নিউজটা করে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেছে প্রমি। আনন্দে গা ভাসাচ্ছে সে।
প্রমির এই আনন্দ আর বেশি ক্ষণ টিকল না। কারণ তার বস তাকে ডেকে পাঠালো৷ প্রমি যেতেই তিনি বললেন,“তুমি এসব কি ফালতু নিউজ করেছ? তোমার এসব ফেক নিউজের জন্য আমাদের নিউজ চ্যানেলের নাম খারাপ হচ্ছে।”
প্রমি বলে, “আমি কি ফালতু নিউজ করলাম স্যার? নিউজটা তো একদম সঠিক।”

প্রমির বস বলে, “তাই তাহলে নিজের ফোন বের করে লাটেস্ট ব্রেকিং নিউজ টা দেখ।”
প্রমি ফোন বের করে নিউজ চ্যানেলে ঢু মা*রতেই তার মাথায় হাত উঠে যায়৷ এটা কি দেখছে সে? আরএম কোম্পানি নাকি কোন জালিয়াতি করে নি। বরং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব রটানো হয়ে ছিল। যারা বলেছিল তারা টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট দেয়নি, তারা তো টাকা দেয়ইনি। স্ক্যাম করা হয়েছে।”

প্রমির বস তাকে বলে, “তোমাকে ফা*য়ার করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। নাহলে মায়ান খান আমাদের নিউজ চ্যানেল বন্ধ করে দেবেন।”
প্রমি অনুরোধ করে বলেন, “না স্যার, প্লিজ এমন করবেন না। আপনি তো জানেন আমি কাজের প্রতি কতটা সিরিয়াস। এই একটা ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দেবেন না।”
প্রমির বস বলে, “আমার এসবে কিছু করার নেই। তুমি মায়ান খানের কাছে যাও। উনি যদি তোমাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে তোমার চাকরি টা বেঁচে যাবে।”
প্রমি বলে, “আমি দেখছি কিছু করা যায় কিনা।”

প্রমি ক্যামেরা ম্যান রাজীবকে সাথে নিয়ে যায় মায়ান খানের সাথে দেখা করতে তার অফিসে।
দুই ঘন্টা, টানা দুই ঘন্টা বসিয়ে রাখার পর প্রমির সাথে দেখা করে মায়ান খান। প্রমির মেজাজ তো পুরো বিগড়ে যায়৷ কিন্তু নিজের চাকরিটা বাচানোর জন্য কিছু বলতেও পারে না। বর্তমানে মায়ানের মুখোমুখি হয়ে বসে আছে প্রমি।
কিন্তু প্রমির অস্তিত্ব যেন টেরই পাচ্ছে না মায়ান। সমানে ফোনে কারো সাথে কথা বলে যাচ্ছে। প্রমি আর থাকতে না পেরে বলে দেয়, “আমি কিছু জরুরি কথা বলতে চাই৷ একটু শুনুন প্লিজ।”
মায়ান কল রেখে বলে, “যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।”

প্রমি বলে, “আই’এম ভেরি ভেরি ভেরি সরি। কোন কিছু বিচার না করে আপনার কোম্পানির এগেইনস্টে এমন নিউজ করা আমার উচিৎ হয় নি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন।”
“আচ্ছা করে দিলাম ক্ষমা। নাও গো।”
প্রমি খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,“সত্যি আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাহলে আমি এখন নিজের আবার নিউজ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতে পাবো?”
মায়ান বাঁকা হেসে বলে, “আপনি ক্ষমা চেয়েছেন, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। এখন বাকি কিছু আমি জানি না।”

“এএ”
“এ নয় হ্যাঁ। প্লিজ গো নাও। আমাকে একটা জরুরি মিটিং এটেন্ড করতে হবে।”
প্রমি অনুনয়ের সুরে বলে, “প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি জানি আমি ভুল করেছি কিন্তু তাই বলে জব লেস হতে পারব না।”

মায়ান কোন কিছু না বলে চলে যায়। যাওয়ার আগে প্রমির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, “আপনি সাপের লেজে পা দিয়েছেন মিস প্রমি। ছোবল তো আপনাকে খেতেই হবে।”
মায়ান চলে যেতেই প্রমি মন খারাপ করে বাইরে চলে আসে। রাজীব প্রমির চুপসে যাওয়া মুখ দেখেই কিছুটা আন্দাজ করতে পারে কি হয়েছে ভেতরে। রাজীব প্রমির কাছে এসে বলে, “ম্যাম আপনি ভেঙে পড়বেন না। আলমাস হাতে এখনো একটা উপায় আছে।”
“কি উপায় রাজীব?”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ২৯+৩০

“শুনেছি মায়ান খানের একজন বড় ভাই আছেন ডাক্তার রায়ান খান। মায়ান খান নাকি তার বড় ভাইকে অনেক মান্য করেন। আমরা যদি কোনভাবে ওনার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে পারি তাহলে কেমন হয়?”
প্রমি ভেবে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে। চলো একবার শেষ চেষ্টা করে দেখি।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩২