আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩৪

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩৪
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

প্রমি আজ রায়ানকে নিয়ে সিলেটে এসেছে তার পরিবারের সবার সাথে দেখা করানোর জন্য। প্রমি খুব উৎসাহিত কারণ তার মনে হয়েছে তার পুরো পরিবার যেন রায়ানকে সাদরে গ্রহণ করবে৷ তবে তার এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হতে বেশি সময় নিলো না।

বাড়ির সামনে এসে কলিং বেল বাজাতেই পিহু এসে দরজা খুলে দিল। পিহুকে দেখামাত্রই রায়ান বলে উঠল,“কাকি তুমি!”
রায়ানের মুখে কাকি ডাক শুনে অবাক হলো পিহু। বলল,“আমাকে কাকি বলছ কেন? আমি কিভাবে তোমার কাকি হই?”(রায়ান অনেক বড় হয়ে গেছে, এত দিন পিহুদের সাথে কোন যোগাযোগ না থাকায় চিনতে পারে নি।)
পিহুর কথা শুনে রায়ান বলে, “তুমি আমায় চিনতে পারছ না কাকি? আমি রায়ান।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ব্যাস পিহুর মুড পুরো খারাপ হয়ে গেল। সে আক্রোশের দৃষ্টিতে তাকাল রায়ানের দিকে। কেননা, আজোও সে রায়ানকে মেহুলের খু*নি ভাবে। পিহু রাগী চোখে প্রমির দিকে তাকিয়ে বলল,“আজকে না তোর নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমাদের পরিচয় করানোর কথা ছিল। তাহলে এই ছেলে কে? আবার এটা বলিস না, যে এই তোর বয়ফ্রেন্ড। যদি এমনটা হয় তাহলে!”

প্রমি বলে ওঠে, “আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না এসব। তোমরা কি একে অপরকে আগে থেকে চেনো নাকি? আম্মু উনি তোমায় কাকি বলছেন কেন?”
রায়ান তখন উত্তেজিত হয়ে বলে,“কারণ উনি আমার কাকি। আমার চাচ্চু আশিকের বউ উনি। আর তুমি ওনাদের মেয়ে, মানে আমরা সম্পর্কে কাজিন হই।”

পিহু জোরালো ভাবে বলল,“না এসব কিছু নয়৷ তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমি ঘৃণা করি তোমাকে। দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। নাহলে আমি..”
পিহুর পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আশিক চলে আসে সেখানে। আশিক এসেই পিহুকে থামিয়ে দিয়ে বলে,“কি হচ্ছে এসব? এত চিৎকার করছ কেন? কে এসেছে বাড়িতে? আজ না প্রমির ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে আসার কথা ছিল।”

আশিক এবার রায়ানের দিকে নজর দেয়। তারপর বলে,“এই কি প্রমির বয়ফ্রেন্ড? ছেলেটাকে দেখে তো আমার ঠিকঠাকই মনে হচ্ছে। তাহলে তুমি এত রিয়্যাক্ট করছ কেন? তোমার কি ওকে পছন্দ হয়নি কোন কারণে?”
পিহু বলে উঠল,“না হয়নি৷ কেন হয়নি জানো? কারণ ও আর কেউ নয়, তোমার বড় ভাই আকাশের ছেলে রায়ান। সেই ছেলে যার জন্য আমার মেহুল আপি মা*রা গেছে। আর তোমার মনে হচ্ছে আমি এত সহজে ওকে মেনে নেবো। কক্ষনো না।”

আশিক এত দিন পর রায়ানের দেখা পেয়ে খুশি হবে নাকি পিহুর কথায় দুঃখিত হবে সেটাই বুঝতে পার ছিল না।
এরমধ্যে প্রমি রায়ানের হাত শক্ত করে ধরে বলে, “তোমাদের মধ্যে কিসের শত্রুতা আমি জানি না। আর সত্য বলতে আমার জানার তেমন কোন ইন্টারেস্টও নেই। আমি শুধু এটুকু জানি যে, আমি রায়ানকে ভালোবাসি। রায়ানও আমাকে ভালোবাসে। তাই আমাদের মধ্যে তুমি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি করো না আম্মু। আমি চাই রায়ানকে নিয়ে সুখী থাকতে।”

পিহু এবার ক্ষেপে যায়। ক্ষেপে গিয়ে বলে,“আমি তোমাদের মেনে নিবো না। তুই যদি একটা রাস্তার ছেলেকেও ধরে আনতি তাহলেও আমি রাজি হয়ে যেতাম। কিন্তু এই ছেলে তো কখনোই না। এখন তুই চুজ কর কি করবি। হয় ঐ ছেলের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যা, আর নাহয় ঐ ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দাও।”

প্রমি কিছু বলার আগেই আশিক বলে,“এ তুমি ওকে কেমন ধর্ম সংকটে ফেললে বলো তো? ও এত চাপ কিভাবে নেবে?”
এরপর আশিক প্রমি ও রায়ানের কাছে এসে বলে, “তোরা আপাতত এখান থেকে যা। আমি প্রমির বাবা হিসেবে তোদের বিয়ের অনুমতি দিলাম। পিহু রেগে আছে। ধীরে ধীরে কোন ভাবে ওকে মানিয়ে নেব।”
আশিক রায়ানের হাত ধরে বলে,“ভাইয়া আর মায়ান কেমন আছে?”

“মায়ান ভালো আছে কিন্তু আব্বু ভালো নেই চাচ্চু। আব্বু হাটাচলা করার ক্ষমতা হারিয়েছে। আর এখন নতুন মাকে খুব মিস করে।”
আশিক নিজের চোখের জল মুছে বলে,“আমি তোদের সাথে সম্পর্ক ঠিক করতে চাইছিলাম৷ কিন্তু পিহুর জন্য পারিনি। এতদিন সৃষ্টিকর্তার কাছে কত প্রার্থনা করেছি। অবশেষে তিনি নিজেই সুযোগ তৈরি করে দিলেন। হয়তো তোদের বিয়ের মাধ্যমে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হবে। তাই তোরা বিয়ে করে নে। এতে আমাদের ভাঙা সম্পর্ক হয়তো জোড়া লাগবে।”
প্রমি রায়ানের সাথে বাড়ি থেকে বের হতে যাবে এমন সময় পিহু বলে উঠল,“আজ আরো একবার প্রমাণিত হয়ে গেল পর সবসময় পরই হয়। তাকে যতই আদর যত্ন করো সে কখনো আপন হয়না।”

থেমে যায় প্রমির পা। সে পিছনে ফিরে পিহুর দিকে তাকায়। পিহু সামনে এগিয়ে এসে বলে, “এই রায়ান আমার আপির সতীনের ছেলে ছিল। কিন্তু আমার আপি ওকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসত। পরিণাম কি হলো? আমার আপিকে কত অপমান লাঞ্চনা সহ্য করে শেষে নিজের জীবনটাও দিতে হলো। আর তুই প্রমি, তুই আমার নিজের মা না। যদি নিজের মেয়ে হতি তাহলে হয়তো…”

পিহুর পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আশিক তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “কি বলছ তুমি এসব? ভেবে বলছ তো?”
“আমি সব কিছু ভেবেই বলছি। অনাথ আশ্রম থেকে এনে নিজের মেয়ের মতো বড় করেছি প্রমিকে। ওর কোন চাহিদার অভাব রাখিনি। আজ তার এই প্রতিদান দিল। আসলে সবাই ঠিকই বলে আবেগময় সম্পর্ক বলে কিছু হয়না। রক্তের সম্পর্কই আসল।”

প্রমির চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। সে আজ প্রথম নিজের জীবনের সব থেকে বড় সত্যের মুখোমুখি হল যে,এতদিন সে যাদেরকে নিজের আসল মা-বাবা জেনে এসেছে তারা আসলে তার কেউ নয়। প্রমির যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না কথাটা।
প্রমি উন্মাদের মতো আশিকের কাছে গিয়ে বলতে লাগল,“আব্বু তুমি বলো আম্মু যা বলছে সেটা রাগের মাথায় বলে ফেলেছে। তুমি তো আমার নিজের আব্বু তাইনা? কি হলো তুমি চুপ কেন বলো?”

আশিক নিজের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে বলল,“কে বলল তুই আমার মেয়ে নয়? তুমি আমারই মেয়ে। রক্তের সম্পর্কই সব নয়। তোকে আমরা জন্ম দেইনি তো কি হয়েছে, তোকে নিজের সন্তানের মতোই দেখেছি। তুই আমাকে আব্বু বলে ডেকেছিস। তুই তো আমার মেয়ে।”

প্রমি দুই ধাপ পিছিয়ে বলল,“তার মানে আম্মু যা বলল তাই ঠিক। আমি তোমাদের নিজের মেয়ে নই, পালিত মেয়ে।”
প্রমি এবার রায়ানের হাত ধরল। তাকে গেটের বাইরে বার করে দিয়ে বলল,“আম্মুর নিজের মেয়ে না হওয়ার পরেও তিনি আমাকে এত আদর যত্নে মানুষ করেছেন।

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩৩

আমি তার অবাধ্য হতে পারবো না। আমাকে প্রমাণ করতে হবে যে আবেগময় সম্পর্কের শক্তি কতোটা। তাই আমি তোমাকে অনুরোধ করে বলছি আমার জীবন থেকে দূরে সরে যাও। আজ থেকে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। আমি তোমার সাথে ব্রেকাপ করে নিলাম।”
রায়ান তাকে কিছু বলতে চাইছিল। কিন্তু প্রমি কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মুখের উপরেই দরজা বন্ধ করে দিল।

আবেগময় সম্পর্ক শেষ পর্ব