আবেগময় সম্পর্ক শেষ পর্ব 

আবেগময় সম্পর্ক শেষ পর্ব 
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

প্রমি রায়াননকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে সে অনেক কষ্ট পায় এবং সে একটি হোস্টেলে গিয়ে রাত কাটায় সে অনেক কাঁদতে থাকে। এমন সময় রায়ানকে ফোন করে মায়ান। ফোন করে সে জানতে চায় যে রায়ান কোথায়? বাড়ি ফেরেনি কেন?

তখন রায়ান বলে, যে সে এখন সিলেটে আছে।
মায়ান বলে,“তুমি সিলেটে কি করছো।”
রায়ান নিজের সব কথা বলে দেয়। প্রমির সাথে এখানে আসার পর কি কি হয়েছে সবকিছুই বিস্তারিত ভাবে বলে। সব শুনে মায়ান বলে, “ইউ ডোন্ট ওয়ারি ব্রো। আমি দেখছি কি করা যায়।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়ান দ্রুত রেডি হয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। সিলেটে পৌঁছেই সে সবার আগে দেখা করে পিহুর সাথে। মানে সে পিহুদের বাড়িতে যায়৷ বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজানোর কিছু সময় পর পিহু এসে দরজা খুলে দেয়। মায়ানকে দেখে চিনতে না পেরে প্রশ্ন করে বসে, “কে তুমি?”

মায়ান তখন ভেতরে এসে বলে, “তুমি আমাকে চিনতে পারছ না খালামনি? আমি মায়ান।”
এত দিন পর মায়ানকে দেখে অনেক খুশি হয় পিহু। সে মায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমার মেহুল আপির ছেলে। কত দিন পর তোকে দেখলাম। আমি সত্যি আজ ভীষণ খুশি। কেমন আছিস তুই?”

মায়ান বলে,“আমি তো ভালোই আছি খালামণি। কিন্তু তোমার জন্য যে দুটো মানুষ একদম ভালো নেই। রায়ান ভাইয়া আর তোমার মেয়ে প্রমি একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু শুধুমাত্র তোমার জন্য তারা এক হতে পারছে না। তুমি প্লিজ ওদের মধ্যে আর দেয়াল হয়ে থেকো না। ওদের এক হতে দাও।”

পিহু কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না৷ তার মনের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিছু মুহুর্ত চুপ থেকে পিহু বলে, “তুই কিভাবে পারছিস এটা বলতে? ঐ রায়ানের জন্য আমার মেহুল আপি মারা গেছে। ও আমার আপির খু*নি আর আমি ওর হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দেব কখনো না।”

মায়ান বলে ওঠে, “তুমি ভুল করছ খালা মনি রায়ান ভাইয়া কোনভাবেই মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়। বরঞ্চ তাকে বাঁচানোর জন্যই কিন্তু আম্মু নিজের জীবন দিয়ে ছিল। তুমি হয়তো ব্যাপারটা বুঝছ কিন্তু তবুও না বুঝে থাকার চেষ্টা করছ৷ এটা ঠিক নয়। জান তোমার মতো আমিও প্রথমে ওদের সম্পর্ক মেনে নেই নি, কারণ আমার মনে হয়েছে প্রমি রায়ান ভাইয়ার জন্য ঠিক নয়। কিন্তু প্রমির প্রতি রায়ান ভাইয়ার সত্যিকারের ভালোবাসা দেখে আমি আর তাদের মধ্যে বাধা হয়ে থাকতে পারিনি।”

পিহু আর কিছু বলল না। এমন সময় আশিক ছুটে এলো তার কাছে। এসে বলল,“এবার তুমি নিশ্চয়ই শান্তি পাবে। তোমার জন্য সব কিছু শেষ হয়ে গেল।”
পিহু কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে,“কি বলতে চাইছ টা কি তুমি? আমার জন্য কি শে-ষ হলো?”
আশিক কাঁদতে কাঁদতে বলে, “পিহু অনেক গুলা ঘুমের ওষুধ খেয়ে সু*ই*সাইড করার ট্রাই করেছে।”

পিহু থমকে যায়। নড়াচড়া করার সব শক্তি যেন সে হারিয়ে ফেলে৷ যেই মেয়েটাকে এতগুলো দিন নিজের মেয়ের মত মানুষ করলো তার আজ এত বড় ক্ষতি হতে চলেছে পিহুর জন্য এটা ভাবা কষ্টকর। পিহু মন খারাপ করে সোফায় বসে পড়ল। এরমধ্যে মায়ান আশিককে নিজের পরিচয় দিল এবং তারা দুজনে মিলে প্রমিকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। পিহু ঠাঁই বসে রাখলো সোফায়। আর ভাবতে লাগল তার জন্য সব কিছু কি সত্যিই শে*ষ হয়ে গেল নাকি?

রায়ান, মায়ান এবং আশিক হতাশ হয়ে বসে আছে হাসপাতালে। প্রমির চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার এখনো কিছু বলে নি। প্রমির অবস্থা আশংকা জনক। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হলে ডাক্তার বলে পেসেন্ট একেবারে আশংকা মুক্ত। আশা করি কয়েক ঘন্টার মধ্যে উনি নিজের জ্ঞান ফিরে পাবেন ইনশাআল্লাহ।”
ডাক্তারের কথায় সবাই ভরসা পায়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রমির জ্ঞানও ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরতেই সবার আগে সে রায়ানের সাথে কথা বলতে চায়।

রায়ানের সাথে কিছু সময় নিয়ে কথা বলে প্রমি। রায়ান বলে, “ এটা তুমি কি করতে যাচ্ছিল প্রমি? জানো আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হতো একবার ভেবে দেখেছো? আর কখনো এরকম ছেলে মানুষি করবে না একদম।”
প্রমি শান্ত গলায় বলে, “ আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে নিজেও অনেক কষ্ট ছিলাম। নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি আমি ভেবেছি তোমাকে অনেক বড় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আর এই কষ্ট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই আমি আ*ত্ম*হত্যা করার চেষ্টা করি।”

রায়ান প্রমিকে জড়িয়ে ধরে বলে,“এবার সবকিছু ঠিকই হবে। আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। দেখে নিও তুমি।”
প্রমি মৃদু হাসে রায়ানের কথা শুনে। এরপর সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু হঠাৎ পিহুর আগমন ঘটে হাসপাতালে। পিহুকে দেখে আশিক ভীষণ পরিমাণে রেগে যায়। রেগে গিয়ে বলে, “কি করতে এখানে এসেছ তুমি? প্রমির এই অবস্থার পরেও কি তোমার শান্তি হয়নি? ও বুঝি আরো খারাপ করতে চাও ?”

পিহুর চোখে জল চলে আসে। সে বলে,“আমি নিজের সব ভুল বুঝতে পেরেছি৷ আমি এখন অনুতপ্ত। প্লিজ তুমি একটি বার প্রমির সাথে আমার দেখা করতে দাও।”
“একদম না। তুমি চলে যাও এখান থেকে।”
এর মাঝে মায়ান বলে, “যদিও আমার তোমাদের মধ্যে কথা বলা উচিত হবে না। তবে আমার মনে হয় যেহেতু মানুষ মাত্রই হয় আর এই ভুল ধরে বসে থাকলে তো আর আমাদের চলবে না আমাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। তুমি খালামণিকে ক্ষমা করে দাও।”

আশিক বলে, “আজ ওর জন্য যদি প্রমির কিছু হয়ে যেত তাহলে?”
“হয়নি তো।”
আশিক আর আপত্তি করতে পারেনা পিহুকে প্রমির কাছে যেতে দেয়। প্রমির রুমে এসে পিহু বলে,“আমাকে ক্ষমা করে দিস প্রমি। তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু এখন নিজের ভুল বুঝেছি৷ রায়ান তোমার কাছেও ক্ষমা চাইছি। আমি এবার আর তোমাদের মাঝে বাঁধা হবো না। বরঞ্চ তোমাদের এক করে দেব।”
রায়ান ও প্রমি ক্ষমা করে দেয় পিহুকে।

সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আজকে প্রমির সাথে রায়ানের বিয়ে। এই উপলক্ষে সবাই অনেক আনন্দে ব্যস্ত। কারণ আজ বাড়িতে অনেক খুশির একটি দিন সকলের মনে খুশির হাওয়া বইছে।
প্রমিকে বউয়ের সাজে সাজানো হয়েছে। তাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। লাল গ্রাউন পড়ে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। রায়ানও লাল শেরওয়ানি পড়েছে।
অবশেষে কাজি ডেকে আনা হয়৷ কবুল বলে একে অপরের সাথে চিরকালের মতো বন্ধনে জড়িয়ে যায় তারা।

আবেগ দিয়ে তৈরি হয় আরেকটি সম্পর্ক। এই গল্প শুরু থেকেই বিভিন্ন আবেগময় সম্পর্কের সাক্ষী হয়েছে। রায়ান-মেহুল, প্রমি-পিহু-আশিক এখন প্রমি-রায়ান।

সমাপ্ত

(গল্পটা শেষ করে দিলাম। আরেকটু বড় করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আমি লেখার আগ্রহ পাচ্ছিলাম না। জানি না কতোটা ভালো হয়েছে বা হয়নি। আপনারাই সেটা জানেন। তবে আমি মেহুলকে অনেক মিস করেছি। আমার নিজের কাছেও মনে হয়েছে মেহুল ছাড়া এই গল্পটা অসম্পূর্ণ। তাই গল্পটা বড় করলাম না। মেহুল ছাড়া এই গল্প এগানোর মানে নেই। মেহুলকে মে*রে ফেলা আমার সবথেকে বড় ভুল ছিল 😢)

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩৪