আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩২

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩২
লেখিনীতে মৃদু সুপ্রিয়া

প্রমি অনেক ক্ষণ থেকে হাসপাতালে এসে বসে আছে। উদ্দ্যেশ্য রায়ানের সাথে দেখা করা৷ কিন্তু রায়ান একটার পর একটা রোগী দেখতে ব্যস্ত। মূলত সেই কারণেই প্রমির সাথে এখনো দেখা হয়নি তার। প্রমি অপেক্ষা করতে করতে অনেক বেশি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল।

কিন্তু এখন অপেক্ষা করা ছাড়া তার আর কিছু করার নেই বিধায় সে চুপ করে ধৈর্য ধরে বসে থাকার চেষ্টা করে। একটু পরেই ডাক্তার রায়ান তার সামনে এসে বসে। মূলত তার কেবিনেই বসে ছিল প্রমি। রায়ান রোগীর সাথে দেখা করে নিজের কেবিনে এসে প্রমির দেখা পায়। প্রমিকে দেখেই থমকে যায় রায়ান। প্রমিও রায়ানকে দেখে থমকে যায়।
দুজনে একে অপরকে দেখে কিছু একটা ফিল করে। প্রমি মনে মনে বলে,“ওয়াও ডাক্তারটা কি হ্যান্ডসাম।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই দিকে রায়ানও নিজের চোখ সরাতে পারছে না প্রমির দিক থেকে। দুজনের মধ্যে যখন এরকম রোমাঞ্চকর পরিবেশ বজায় থাকে তখনই রাজীব চলে আসে এই সুন্দর মুহুর্তে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য। রাজীব এসেই প্রমিকে বলে,“ম্যাডাম আপনি ওনার সাথে কথা বলেছেন?”
প্রমির ধ্যান ভাঙলে সে রাজীবকে বলে,“উনি এখনই এলেন। এখন কথা বলব।”
রায়ান নিজের চেয়ারে বসে আলতো হেসে বলে, “কি বলতে চান বলুন। আমি শুনছি। এরপর আবার আরেকটা পেশেন্টকে দেখতে যেতে হবে।”

প্রমি বলা শুরু করে, “আমার নাম জাহানারা আক্তার প্রমি। আসলে আমি একজন জার্নালিস্ট। আমি আপনার ভাই মায়ান খানের উত্তরা আবাসন প্রজেক্ট নিয়ে নিউজ করেছিলাম। নিউজটা ভুয়া ছিল, কিন্তু আমি সেটা জানতাম না। এখন সব সত্যটা সামনে এসেছে৷ আপনার ভাইয়ের জন্য আমি নিজের চাকরি হারাতে বসেছি। কিন্তু আমি ভালো জার্নালিস্ট হতে চাই, এটা আমার অনেক অনেক দিনের ইচ্ছা। আমি এই কারণেই তো স্পোর্টস রিপোর্টিং ছেড়ে, নিউজ রিপোটিং শুরু করি। যাতে অন্যায় কারীদেরকে সবার সামনে আনতে পারি। কিন্তু একটা ভুলের জন্য আমার ক্যারিয়ার ডুবতে বসেছে।”

রায়ান জানতে চায়,“তো এখানে আমি কি করতে পারি? আমার থেকে কি সাহায্য চান আপনি?”
প্রমি অনুনয়ের সুরে বলে, “আমি অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। আপনি যদি নিজের ভাইকে একটু বোঝাতেন ভালো হতো৷ মানে যদি ওনাকে একটু ম্যানেজ করতে পারেন যাতে আমার চাকরিটা না খায়। আমি শুনেছি আপনার ভাই আপনাকে অনেক মান্য করে চলে।”

রায়ান বলে,“ওকে আমি ট্রাই করে দেখবো, যদি কিছু করতে পারি। আপনি কি খাবেন চা না কফি?”
“এক গ্লাস পানি হলেই চলবে৷ আমি গ্রীন টি ছাড়া কিছু খাই না।”
“ওকে ফাইন আমি গ্রীন টিই অর্ডার করছি।”
“না থাক আপনাকে এত কষ্ট করে গ্রীন টি অর্ডার করতে হবে না।”

“আরে কষ্ট কিসের। গ্রীন টি তো আর আমি আনবো না, হাসপাতালে লোক আছে তারা গিয়ে আনবে৷ আপনি বসুন একটু।”
প্রমি আর কিছু বলতে পারে না। রায়ান তার হাসপাতালে একজন লোককে ডাকে এবং তাকে গ্রিন টি আনতে বলে৷ কিছু সময়ের মধ্যেই সে গ্রিন টি নিয়ে আসে। প্রমি গ্রিন টি খেতে শুরু করে। রায়ান প্রমির গ্রিন টি খাওয়া দেখে বলে,“আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অনেক ভালো গ্রিন টি খেতে পারেন। এত সুন্দর গ্রিন টি খাওয়া আপনি কোথা থেকে শিখলেন? না মানুষের অনেক মানুষই তো গ্রীন টি খেতে চায় না। এর স্বাদ নাকি তাদের বিদঘুটে লাগে। সেখানে আপনি এত স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গ্রীন টি খাচ্ছেন দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছি।”

প্রমি গর্বে বুক ফুলিয়ে বলে, “এ আর এমন কি? আমি তো একসাথে দশ গ্লাস গ্রিন টি খেতে পারি।”
“বাহ, আপনি তো অনেক ট্যালেন্টেড। আপনি এতগুলো গ্রিন টি খেতে পারেন।”
“হ্যাঁ পারি তো। দেখুন গ্রীন টি কিন্তু অনেক স্বাস্থ্যকর। আমরা সাধারণত যেসব চা খাই সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অতোটা ভালো না কিন্তু গ্রীন টি অনেক উপকারী। তাই সবার উচিৎ গ্রিন টি খাওয়া। এতে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। ফিটনেস মেইনটেইন থাকবে সবার।”

“আপনাকে দেখে তো সবার উচিৎ অনুপ্রানিত হয়ে গ্রিন টি খাওয়া। আমিও আজ থেকে আমার চেনা জানা সবাইকে বলব গ্রীন টি খেতে।”
প্রমি খাওয়া শেষ করে রায়ানকে বলে,“আমার খাওয়া শেষ। আমি তাহলে এখন উঠি।”
রায়ান বলে, “আরো একটু গ্রিন টি খেয়ে যান।”
“ঠিক আছে আনতে বলুন। আমি খেয়ে তারপর যাই।”

রায়ান আর এক কাপ গ্রিন টি আনে। প্রমি গ্রিন টি খায়। হঠাৎ করে তার খুব চাপ দেয় এবং সে বায়ু দূষিত করে দেয়। বেশ জোরেই শব্দ হয় পা*দের। সেই শব্দ রায়ানও শুনতো পায়। প্রমির এই মুহুর্তে খুব লজ্জা হতে থাকে, একটু আগের সব গর্ব যেন মুহুর্তেই শেষ হয়ে গেল।
প্রমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়ান বলে, “ইটস ওকে। এটা মনে হয় গ্রীন টির সাইড এফেক্ট।”

এরমধ্যে প্রমি আরেকবার শব্দ করে পা*দে। মুহুর্তেই ঘরে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে যায়। রায়ান গন্ধ সইতে না পেরে নাক চেপে ধরে। প্রমি বোকার মতো হেসে বলে, “আসলে কাল রাতে আমি বিরিয়ানি খেয়েছিলাম এটা তারই সাইড এফেক্ট। বাহ কি সুন্দর বিরিয়ানির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে।”

পাশ থেকে রাজীব বলে ওঠে, “এটা বিরিয়ানির গন্ধ হয়, এটা আপনার পা*দের গন্ধ।”
প্রমি বড় বড় চোখ করে রাজীবের দিকে তাকায়। রাজীব চোখ সরিয়ে নেয় প্রমির দিক থেকে। এরমধ্যে প্রমি আরো একবার ঢাস করে পা*দে। এবার আর লজ্জায় বসে থাকতে পারে না সে। এক প্রকার দৌড়ে রায়ানের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। রায়ান প্রমির এরকম অবস্থা দেখে হো হো করে হাসতে থাকে।

রাতে বাড়িতে এসে রায়ান ও মায়ান এক সাথেই ডিনার করতে বসে। খাওয়া শেষ করে রায়ান মায়ানকে বলে,“আমার তোকে কিছু বলার ছিল।”
“হ্যাঁ বল।”
“তোর নাকি জাহানারা আক্তার প্রমি নামের কোন মেয়ের সাথে নাকি তোর কোন ঝামেলা হয়েছে সেই জন্য নাকি মেয়েটার চাকরি যেতে বসেছে৷ মেয়েটা আজ আমার কাছে এসেছিল তখন অনুরোধ করে বলে তোকে মানাতে।”

“মেয়েটার জন্য আমার অনেক লস হয়েছে ব্রো।”
“আমার জন্য মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিতে পারবি না?”
“তোর জন্য আমি সব করতে পারি ব্রো। ঠিক আছে তুই যখন বলছিস তখন আমি ওকে ক্ষমা করে দেব এবং ওর চাকরিও খাবো না।”

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩১

রায়ান খুশি হয়। এরপর সে প্রমির কথাই ভাবতে থাকে। কিছু তো একটা আছে মেয়েটার জন্য যার কারণে সে তাকে ভুলতে পারছে না।

আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৩৩