মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২৫

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

অথৈ রাগ দেখিয়ে চলে তো এসেছে।কিন্তু একা একা করবে টা কি?সব অসহ্য লাগছে ওর কাছে।বন্ধুদের ছাড়া একা থাকা যায় নাকি?অথৈ হতাশার শ্বাস ফেলল।সামনে তাকাতেই হঠাৎ লাইব্রেরির দিকে চোখ চলে যায়।অথৈ ভেবে বসল।এইভাবে একা একা চরকির মতো না ঘুরে।লাইব্রেরিতে গিয়ে একটু পড়াশোনা করলেই হয়।সবকিছু ভুলে বইয়ের মাঝে ডুবে যাবে।

তাহলেই আর কোনো কিছুর খেয়াল থাকবে না।যেই ভাবা সেই কাজ।অথৈ লাইব্রেরিতে চলে গেল।লাইব্রেরিতে একজন মানুষও নেই।অথৈ সেদিক থেকে নজর তোর সরিয়ে নিলো।তারপর কাধের ব্যাগটা টেবিলে রেখে সে চলল বই খুঁজতে।কিন্তু কোন বইটা পড়বে সেটাই বুঝতে পারছে না।প্রায় দশ মিনিট যাবত এটা সেটা বই নেড়েচেড়ে দেখছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর রেখে দিচ্ছে।হঠাৎ বামপাশের বুকশেল্ফের পাশ থেকে কেমন যেন একটা শব্দ পেলো অথৈ।ভ্রু-কুচকে তাকালো।মনোযোগ দিলো সেদিকে।নাহ,এখন পাচ্ছে না শব্দটা।নিজের কাজে আবারও ধ্যানমগ্ন হলো অথৈ।কিন্তু মিনিট পাঁচের বাদে আবারও সেই শব্দ।অথৈ এইবার নড়েচড়ে উঠল।হাতের বইটা বুকশেল্ফে রেখে সেদিকে এগিয়ে গেল।আস্তে ধীরে বামপাশের বুকশেল্ফের কাছটায় গিয়ে মাথা বাঁকা করে উঁকি দিতেই।কেউ একজন ওর হাত চেপে ধরে সজোড়ে টান মারে।

ভয় পেয়ে চিৎকার করবে তার আগেই একটা শক্তপোক্ত হাত ওর মুখ চেপে ধরল।এদিকে অথৈ আকস্মিক টানে নিজের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে সেই ব্যক্তির উপর হুরমুরিয়ে পরেছে।আতংকিত অথৈ ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে তাকাতেই রুদ্রিককে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখল। রুদ্রিকের এহেন কান্ডে মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল অথৈয়ের।উন্মুক্ত হাত দ্বারা সজোড়ে মুষ্টাঘাত করে বসল রুদ্রিকের বুকে।

অথৈ হঠাৎ আক্রমনে রুদ্রিক অপ্রস্তুত হয়ে পরে। ফলে অথৈকে ছেড়ে দেয়।ব্যথিত স্থানে হাত বুলাতে লাগল।অথৈ কিছু না বলেই রেগে চলে যাবার জন্যে পা বাড়ালো।হুহ্,পেয়েছেটা কি লোকটা?এমন কেউ করে?আর একটু হলেই তো তার প্রাণ বেড়িয়ে যেতো।হঠাৎ করে এমন গুন্ডাদের মতো ব্যবহার করলে ভয় পাবে না সে?অথৈ যেতে নিয়েই থেমে গেল।ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।

রুদ্রিকের ব্যথাতুর মুখশ্রী দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল।লোকটা কি বেশি ব্যথা পেয়েছে?সে তো অতোটাও জোড়ে দেয়নি?মাথা দুলালো অথৈ।ভুলবশত জোড়ে লেগেও যেতে পারে।সে কি একবার গিয়ে দেখবে?জিজ্ঞেস করবে লোকটাকে বেশি ব্যথা পেয়েছে নাকি?অথৈ আবারও গিয়ে দা্ঁড়ালো রুদ্রিকের সামনে।কণ্ঠে তার ব্যাকুলতা স্পষ্ট, ‘ কেন এসেছিলেন?এখন পেলেন তো ব্যথা?বেশি ব্যথা লেগেছে?’

অথৈয়ের বাক্যটা সম্পূর্ণ হতে দেরি রুদ্রিক দ্রুত গতিতে হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসল।ঘটনা এতো দ্রুত ঘটেছে যে অথৈ ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো রুদ্রিকের দিকে।হুশ আসতেই ছটফট শুরু করে দিলো।রুদ্রিক ছটফট করতে থাকা অথৈকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসল।মেয়েটা কেমন বাচ্চাদের মতো করছে।
‘ আহ,অথৈ ব্যথা করছে অনেক।’
অথৈয়ের ভ্রু-কুচকে আসে রুদ্রিকের কথায়।বলে,

‘ তো আমাকে এইভাবে চেপে ধরে আছেন কেন?ছাড়ুন আমাকে।আর গিয়ে ব্যথার মেডিসিন খেয়ে নিন।সেরে যাবে।’
‘ ব্যথার মেডিসিন তো এখানেই আছে।’ রুদ্রিকের সোজাসাপ্টা জবাব।
অথৈ বুঝতে পারল না রুদ্রিকের কথা।ভাবুক কণ্ঠে বলে,
‘ মানে বুঝলাম না।লাইব্রেরিতে মেডিসিন আসবে কোথা থেকে?’

রুদ্রিক দুষ্টু হেসে বলে,’ ‘ এইযে তুমিই তো আমার সব রোগের একান্ত ব্যক্তিগত মেডিসিন।আর এখন যেহেতু ব্যথাটা তুমি নিজে দিয়েছ।সো আমার ব্যথা সারাবেও তুমি।তাই এখন বিনাবাক্যে ঝটপট এখানটায় তোমার ওই তুলতুলে, গোলাপিবর্ণের ঠোঁটজোড়ার স্পর্শ করে ব্যথাটা সারিয়ে দেও।’

রুদ্রিকের এহেন বেফাঁস কথায় অথৈয়ের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল দৃশ্যবান ভাবে।লজ্জায় সর্ব মুখশ্রী রক্তিম আভায় ছেয়ে গেল।লোকটা দিন দিন এতো নির্লজ্জ হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না।হুটহাট সময় অসময়ে কিসব কথাবার্তা যে বলে।অথৈয়ের মন চায় সে মাটি খুরে সেখানে লুকিয়ে পরতে।অথৈ কাঁপা গলায় বলে,’ আপনি দিন দিন চরম অসভ্য হচ্ছেন।’
রুদ্রিকের সরল স্বিকারোক্তি,’ তোমাকে দেখার পর আমি অসভ্য হয়ে গিয়েছি।আর ভবিষ্যতে আরও হবো।’

‘ এমন করছেন কেন?ছাড়ুন না এটা লাইব্রেরি। কেউ দেখে ফেলবে।’ অথৈ ছোট্টো কণ্ঠে বলে উঠে।কিন্ত মনে মনে ভাবে ব্যাটা একবার শুধু ছাড়া পাই।আর সামনেও আসব না আমি।কিন্তু তা আর মুখে আনলো না।এদিকে রুদ্রিক অথৈকে নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরে বলল,’ দেখলে দেখুক।আমার কোনো সমস্যা নেই।’
‘ আমার আছে।আপনার লজ্জা নাই থাকতে পারে।কিন্তু আমি আপনার মতো নির্লজ্জ নই।’
‘ তাহলে চুমু খাও,ছেড়ে দিবো।’

অথৈ বাকরুদ্ধ।এই রুদ্রিক যে তাকে এইভাবে লজ্জায় সাগরে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মারবে তা একশ পার্সেন্ট নিশ্চিত সে।অথৈ করুণ গলায় বলল,’ এখানে কিভাবে?’
রুদ্রিক ওর মুখটা অথৈয়ের কানের কাছে নিয়ে আসল।এতে অথৈ নিজের মাথাটা খানিকটা পিছিয়ে নিলো।রুদ্রিক ফিসফিস করে বলে,’ তাহলে চলো আমার সাথে একান্ত ব্যক্তিগত আমাদের রুমটায়।আমি মাইন্ড করব নাহ।তবে সেখানে গেলে আমার শুধু চুমুতে হবে না।আরও অনেক কিছু চাই।’

অথৈয়ের আর সহ্য হচ্ছে না রুদ্রিকের এমন কথাবার্তা। তাই সে ওর দিকে ধ্যানমগ্ন রুদ্রিককে আকস্মিক ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে চাইলো।কিন্তু তা বোধহয় ওর কপালে লিখা নেই।ও একপা বাড়ানোর আগেই রুদ্রিক কৌশলে ওর হাত টেনে বুকশেল্ফের সাথে লাগিয়ে নেয়।অথৈয়ের মুখশ্রী মুহুর্তেই কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।বিরবির করল,’ হে আল্লাহ্! তুমি এ কোন বিপদে এনে আমাকে ফেললে।এই অসভ্য লোকের অসভ্য মুখটা একটু বন্ধ করে দেও। সাময়িক সময়ের জন্যে প্লিজ।’

কিন্তু উপরওয়ালা বোধহয় ওর দোয়া কবুল করল না।অথৈ পিটপিট করে তাকালো রুদ্রিকের দিকে। রুদ্রিক ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হেসে বলে,’ কি পালাতে চাইছ?কিন্তু আজ তো তোমাকে এতো সহজে ছাড়ছি না।উপ্সস! সরি।ভুল বললাম।তোমাকে আজ কেন?আমি সারাজীবনেও কোনোদিন ছাড়ছি না।তুমি চাইলেও না।তোমাকে আমার হয়েই থাকতে হবে।’

রুদ্রিক ওর শক্তপোক্ত পেশিবহুল হাতটা অথৈয়ের নরম গালে স্পর্শ করল।চমকে উঠল অথৈ। রুদ্রিক যেখানটায় ছুঁয়েছে সেখানটায় শিরশির করছে।শীতলতা অনুভব করছে।রুদ্রিকের শীতল হাতের স্পর্শ তাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে।হুট করে রুদ্রিক ওর মুখটা অথৈয়ের সামনে নিয়ে আসে।অথৈ ভড়কে গিয়ে ওর মুখশ্রী ডানদিকে ফিরিয়ে নিলো।রুদ্রিক মুচঁকি হাসল অথৈয়ের কান্ডে।

আলগোছে হাতটা রাখল অথৈয়ের বাঁকানো কোমড়ে।মৃদ্যু ভঙিতে ছুঁয়ে দিচ্ছে সে তার সহধর্মিণীকে।তার উদ্দেশ্য আজ অথৈয়ের ছোট্টো মনে অনুভূতির তুফান উঠিয়ে ছাড়বে।আর সে তার উদ্দেশ্যে অনেকটা সফলও।রুদ্রিক কণ্ঠে মাদকতা ঢেলে বলে,’ আমার উপর আর কতো অভিমান করে থাকবে ডার্লিং?শুধু একবার আমার দেহের উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজেকে মিশিয়ে নেও।দেখবে তোমার সব অভিমান চলে যাবে।আমার বুকে আসো অথৈ। জাস্ট ওয়ান্স ম্যাই বাটারফ্লাই।’

রুদ্রিকের বলা এমন আবেগমিশ্রিত প্রতিটা বাক্য যেন অথৈয়ের হৃদয়ে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।কি বলবে? কি করবে?কোনো কূল কিনারা পাচ্ছে না।আচ্ছা সে কি এখন ঝাপিয়ে পরবে রুদ্রিকের প্রসস্থ বুকে?লেপ্টে নিবে নিজেকে লোকটার উষ্ণতার মাঝে?মন বলছে, হ্যা যা।এক্ষুনি যা।সে তোর স্বামী।এই গোটা মানুষটা তোর।এতো দ্বিধা কিসের তোর? অথৈও মনের কথা শুনতে চায়।

কিন্তু এই লজ্জা?এই লজ্জা কোথায় লুকাবে সে?অথৈ ভেবেচিন্তে মনের কথাই শুনলো।হাত বাড়িয়েই রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরল।রুদ্রিক বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।পরপর অথৈকে নিজের প্রসস্থ শক্তপোক্ত বুকের মাঝে চেপে ধরল।দুজনেই মুহূর্তটাকে অনুভব করতে লাগল।অথৈয়ের চোখের কোণ ঘেষে এক ফোঁটা তপ্ত জলের ফোটা গড়িয়ে পরল।এতো শান্তি কেন লাগছে এখানটায় মাথা রেখে।মনে হচ্ছে সে এখন পৃথ্বীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে আছে।যেখানে দুঃখ’রা কোনোদিন ছুতে পারবে না তাকে।

এদিকে অথৈয়ের চোখের জল রুদ্রিকের বুকে এসে পরতেই। চট করে রুদ্রিক চোখ মেলে তাকায়।অথৈকে বুকের মাঝ থেকে সরিয়ে চিন্তিত নজরে চোখ বুলায় অথৈয়ের মুখে।মেয়েটার লালচে চোখজোড়া দেখে রুদ্রিক অস্থির কণ্ঠে বলে,’ কি হলো?কাঁদছ কেন?আমার স্পর্শ কি খারাপ লাগছে তোমার?কাঁদে না তো।দেখি কি হয়েছে বলো আমাকে?’

অথৈ চোখ মুছল।হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো রুদ্রিকের বুকের বা পাশটায়।রুদ্রিকের শরীরটা হালকা কাঁপলো।অথৈয়ের এই ছোঁয়াটায় কি যেনো আছে।যে সে ছুঁয়ে দিতেই রুদ্রিকের মনে হলো ওর শরীরে কারেন্টের ঝটকা লেগেছে।রুদ্রিক নিজেও এইবার অথৈয়ের ছোট্টো, নরম হাতটার উপর নিজের শুষ্ক,অনমনীয় হাতটা রাখল।অথৈ ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হয়ে যায়।নিজের মনের কথাটাই অকপটে ব্যক্ত করে বসে সে,’ আপনার এখানটায় মাথা রাখার সাথে সাথে আমার মনে হলো।যে এখানটার মতো শান্তির আর ভরসাযোগ্য জায়গা পৃথ্বীর কোথায় গেলেও আমি পাবো না।সেই সুখে চোখে জল চলে এসেছে।’

অথৈয়ের মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে রুদ্রিক।হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের গাল ছুঁয়ে বলে,’ এই গোটা আমিটাই তো তোমার।যখন যেভাবে আমাকে তুমি চাইবে।তুমি আমাকে সেভাবেই পাবে অথৈ।’
রক্তিম আভা ছড়িয়ে পরল অথৈয়ের ফর্সা গালে।তা দেখে রুদ্রিক ঘোরলাগা গলায় বলে,’ লজ্জা পেলে একদম লাল আপেলের মতো লাগে।কামড় দিতে ইচ্ছে করছে।দিবো?’

অথৈ মাথা নিচু করে নিলো। ওর ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল লজ্জামিশ্রিত হাসি।রুদ্রিক সেই হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে বলে’ ‘ তোমার ঐ হাসিমুখ খানা দেখলে আমি আমার সারাদিনের কষ্ট ভুলে যাই। তুমি সেই যাকে আমার হৃদয়ের মাঝে সারা জীবন খুশিতে রাখতে চাই।’

রুদ্রিকের আবেগি কথায় অথৈ মায়াময় চাহনী নিয়ে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।এই মুহূর্তে অথৈকে যে কতোটা আবেদনময়ী লাগছে তা রুদ্রিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না।ওর বুক কাঁপছে।এই মেয়েটা এতো সুন্দর কেন?এই মেয়ের সৌন্দর্যে তার চোখ ধাধিয়ে যায়।রুদ্রিক ঢোক গিলল।মনের মাঝে নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা উঁকিঝুকি দিচ্ছে।নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সে।আচ্ছা একটুখানি মেয়েটাকে ছুঁয়ে দিলে কি মেয়েটা রাগ করবে? না রাগ করবে না অথৈ। তা সে ভালোভাবেই জানে।

রুদ্রিক একটা হাত অথৈয়ের পিঠের পিছন দিকে নিয়ে গেল।আরেকহাতে অথৈকে আরেকটু নিজের কাছে আনলো।পিঠের পিছনের হাতটা আরামসে অথৈয়ের চুলগুলো তার মুঠোয় নিয়ে ডানদিক থেকে বামদিকে এনে ঘাড়ের কাছটায় রাখল।রুদ্রিকের চোখ আটকে গেল অথৈয়ের ডানপাশের ঘাড়ের একটু নিচে থাকা একটা কালচে দাগের উপর।দাগটা কিসের তা রুদ্রিক জানে না।তবে তার ভীষণ ইচ্ছে করছে ওই কালচে দাগটা একটু ছুঁয়ে দিতে।নিজের ওষ্ঠজোড়া সেখানে চেপে ধরতে।রুদ্রিক মুখ নামিয়ে অথৈয়ের কানের কাছে আনলো।রুদ্রিকের গরম নিশ্বাস সেখানটায় এসে লাগতেই অথৈ থরথর করে কেঁপে উঠল।আজ রুদ্রিক যেভাবে ওর এতো কাছে আসছে।সে বোধহয় দম আটকে মারা যাবে।যাবেই যাবে।রুদ্রিক অথৈয়ের কানে কানে ফিসফিসানো ডেকে উঠে,’ অথৈ!’

কথা বলার কারনে রুদ্রিকের ঠোঁটজোড়ার আলতো ছোঁয়া অথৈয়ের কানে এসে লেগেছে।অথৈ চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।খামছে ধরল রুদ্রিকের বুকের কাছের শার্ট।থেমে থেমে বলে,’ হ…হুঁ!’
রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে এইবার ছুঁয়ে দিলো সেই কালচে দাগটা।ইশ,অথৈ বুঝি এইবার মরেই গেল।এ কেমন অনুভূতি।লোকটার স্পর্শগুলোতে কি মাদকতা মেশানো?নাহলে অথৈয়ের নিজেকে এমন পাগল পাগল লাগছে কেন? রুদ্রিক নেশালো কণ্ঠে বলে, ‘ অথৈ?ক্যান এই কিস ইউ ইন হ্যেয়ার?’

অথৈ শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো। এ কি আবদার করে বসল লোকটা? কি করবে সে?তার যে কণ্ঠনালি ভেদ করে শব্দগুচ্ছগুলো বের হতে চাচ্ছে না।রুদ্রিক অস্থির কণ্ঠে বলে,’ প্লিজ অথৈ! মানা করো না।আমি নিজেকে শান্ত রাখতে পারছি না।হ্যাল্প মি অথৈ!’

সেভাবেই কিছুক্ষণ থেকে রুদ্রিকঅথৈয়ের কোনো জবাব না পেয়ে ওর কাছ থেকে সরে আসতে চাইলো।কিন্তু অথৈ তা হতে দিলো না।খামছে ধরে রেখেছে রুদ্রিককে।রুদ্রিক অথৈয়ের দিকে তাকালো।মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে।নিজেকে চেপে ধরে অথৈয়ের সেই হাত দুটোই তাকে বলে দিচ্ছে।অথৈয়ের সম্মতি আছে।মেয়েটা শুধু লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না।রুদ্রিক অথৈয়ের সম্মতি পেয়ে আর একমিনিটও সময় নষ্ট করলো না।

অথৈয়ের সেই কালচে দাগটার উপর নিজের অধরজোড়া চেপে ধরল।সাথে সাথে ভূমিকম্পের ন্যায় অথৈ কেঁপে উঠল।নিজেকে সামলাতে না পেরে সজোড়ে খামছে ধরে রক্তাক্ত করে দিলো রুদ্রিকের বুকটা।অথৈ শ্বাস নিতে পারছে না।অস্বাভাবিকভাবে হার্টবিড হচ্ছে।এদিকে রুদ্রিক থেমে নেই।সে ছোটো ছোটো চুমুতে অথৈয়ের গলদেশ ভড়িয়ে দিচ্ছে।অথৈ হাত বাড়িয়ে খামছে ধরল রুদ্রিকের চুল।লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে থাকা অথৈ থেমে থেমে বলল,’ প্লি..প্লজি রু..রুদ্রিক আর না থামুন।আমি ম..মরে যাবো,প্লিজ।’

অথৈয়ের আকুলতা ভড়া কণ্ঠ কানে আসতেই রুদ্রিক থেমে গেল।সে নিজের হুশ হারিয়ে ফেলেছিলো।মেয়েটা তাকে চুম্বুকের মতো টানে।রুদ্রিক নিজেও জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।নিজেকে বহু কষ্টে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।এদিকে রুদ্রিকের ভালোবাসাময় এই এইটুকু স্পর্শে অথৈ একদম নেতিয়ে গিয়েছে।হাত পা অবশ হয়ে গিয়েছে।বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছে না সে শরীরে।

শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে অথৈ নিজের দেহের ভাড় ছেড়ে দিলো রুদ্রিকের উপর।সেখানটায় পরে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।রুদ্রিক আলগোছে অথৈকে দুহাতে আবদ্ধ করে নিলো।ওর শক্ত-পোক্ত বলিষ্ঠ দেহের মাঝে অথৈয়ের ছোট্টো নরম,তুলতুলে দেহটা ভালোভাবে আঁকড়ে নিলো।

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২৪

রুদ্রিকের উষ্ণ আলিঙ্গন পেয়ে অথৈ একেবারের বিড়াল ছানার ন্যায় আরও গুটিয়ে গেল রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক অথৈয়ের চুলের ভাজে চুমু খেয়ে বিরবির করল,
‘ তুমিই আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর,আদুরে একটা মেয়ে। যাকে আমি সারাজীবন ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চাই অথৈ।’

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ২৬