তোমাতে বিভোর || Sapna Farin || গল্পের লিংক

তোমাতে বিভোর পর্ব ১
Sapna Farin

-“কালো শাড়ি পড়েছিল কেন?কালো শাড়ি পড়ে তোকে কালো পেত্নীর মতো লাগছে।নিজেকে এভাবে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে ভালো করে দেখেছিস।যে তোর দুধে আলতা কালো গায়ের রঙ। তারমধ্য এমন কালো কুচকুচে শাড়ি পড়ে সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।তোকে এমন অবস্থায় আহান দেখলে উনিশ বিনিশ কিছু একটা খেয়ে উপরে চলে যাবে।তখন বিয়ের আগে বিধবা হয়ে যাবি সে খেয়াল আছে তোর।আর আহানের কথা কি বলবো বিলেত থেকে বিলেতি ম্যাম রেখে তোর মতো কালো কন্যা কে বিয়ে করার জন্য দেশে এসেছে।কি যে দেখেছে তোর মাঝে বুঝতে পারলাম না।ছোট থেকে তোর গায়ের কালো রঙ এটা মেনে নিতে পারলাম না।সে তোর ছবি দেখে কি এমন দেখলো যে কালো মেয়ের জন্য বিলেত ছেড়ে আমার সাথে দেশে চলে আসলো।তোকে বিয়ে করার জন্য।সকলে তো মহাখুশি এমন কালো মেয়ের জন্য এমন বিলেতের সাহেব পাচ্ছে।আহান সে তো খুব খুশি তার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে।তার যা ইচ্ছে করুক আমার কি?”

–কথা গুলো বলে রুদ্র দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করে।
–“দিলি তো কালো বিড়ালের মতো আমার শুভ রাস্তাটা কেটে।এতো দিন পড়ে দেশে ফিরেছি
ফ্রেন্ডরা মিলে আমার জন্মদিন পার্টি রেখেছে।সেখানে যাচ্ছিলাম কিন্তু তোর আমার যাবার রাস্তা কাটতে হলো।তার মধ্যে আবার আমার পছন্দের কালো রঙ কে এতো অবহেলা করেছিস।তোর কেন কালো রঙের জিনিস পড়তে হবে।আমার পছন্দের জিনিস গুলো থেকে দূরে থাকবি।তাড়াতাড়ি তোর বিয়ে হয়ে গেলে বেঁচে যায়।”

–রুদ্রের কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।সে অবাক ভাবে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখে অশ্রু চিকচিক করছে।অনেক কষ্টে নিজের চোখের অশ্রু আটকে রেখেছে।অধরার নীরবতা দেখে রুদ্র করা গলায় বলে উঠে।
–“অধরা এভাবে তাকিয়ে কি দেখিস।আমার রাস্তা কেটে তোর অবশ্যই এখন ভালো লাগছে।তুই জানিস না তোকে আমার ভালো লাগেনা বিরক্ত লাগে।আমার সামনে খুব কম আসার চেষ্টা করবি।যত্তসব ঝামেলা তারজন্য দেশে আসতে চাচ্ছিলাম না।এতো ঝামেলা আমার ভালো লাগেনা।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–রুদ্রের কথা শুনে অধরা রুদ্রের দিকে থেকে চোখ নামিয়ে নিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে মাফ করো!আমি বুঝতে পারেনি তুমি এখনো আমাকে সহ্য করতে পারোনা।ভেবেছিলাম মাঝখানে অনেক সময় কেটে গেছে।সময়ের সাথে অনেক কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে।”
–অধরার কথা শুন রুদ্র চোয়াল শক্ত করে বলে।
–“কিছু জিনিস কখনো স্বাভাবিক হয় না অধরা।তোর গায়ের রঙ কি কখনো সাদা হবে?”
–রুদ্রের কথা শুন অধরা ছলছল নয়নে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া।”
–রুদ্র অধরাকে পাত্তা না দিয়ে বলে।

–“তোর ন্যাকিমি অনেক হয়েছে।আমার রাস্তা আটকে।আহান যে কোথায়?সে তোর খেয়াল রাখতে পারেনা।এভাবে তোকে ছেড়ে রেখেছে আমার রাস্তা আটকার জন্য দিলি তো আমার দামী ব্যান্ডের শার্ট টা নোংরা করে।”
–অধরা পড়ে যাবার সময় রুদ্রের শার্ট টা আঁকড়ে ধরে ছিলো।সে কথা রুদ্র বলছে।রুদ্রের কথা গুলো তীরের মতো অধরার হৃদয়ে গিয়ে লাগে।তবু সে কোন শব্দ করেনা।নীরবে দাঁড়িয়ে রুদ্রের কথা গুলো শুনছে।
–কথা গুলো বলে রুদ্র চিৎকার করে আহান কে ডাকতে থাকে।তখন রুম থেকে আহান ছুটে এসে বলে।
–“কি হয়েছে রুদ্র কোন সম্যসা এভাবে ডাকছো কেন?”
–রুদ্র আহান কে দেখে হেসে ফেলে বলে।

–“এটা তোমার বিলেত না আহান?এরকম শর্ট প্যান্ট আর ট্রি শার্ট পড়ে আছো।এটা তোমার হবু শ্বশুর বাড়ি সো এখানে এভাবে থাকা কেমন দেখায় না।”
–রুদ্রর কথা শুনে আহান বেশ লজ্জা পায়।সে একবার নিজের দিকে তাকিয়ে।রুদ্র আর অধরার দিকে তাকায়।রুদ্র হেসে যাচ্ছে অধরা অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।রুদ্র নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
–“আহান সম্যসা আমার সামনে।নিজের হবু স্ত্রী কে সামলে রাখতে পারোনা?এভাবে সাড়া বাড়িতে ছুটে বেড়াচ্ছে।কখন কোন দূর্ঘটনা হয়ে যায়।শেষে না বিয়েটা ভেস্তে যায়।”

–রুদ্রের কথা শুনে আহান ভালো করে অধরার দিকে তাকিয়ে দেখে।অধরা কালো শাড়ি পড়েছে।চোখ মোটা করে কাজল দিয়েছে ঠোঁট হালকা গোলাপি লিপিষ্টক।কপালে ছোট টিপ দিয়েছে।চুল গুলো ছাড়া চুল গুলো অধরার কোমড় ছাড়িয়ে পড়েছে।বাতাসে অধরার মুখে এসে কয়েক টা চুল আবছে পড়ছে।সবকিছু মিলিয়ে শ্যাম পরী লাগছে অধরা কে।এসব দেখে আহান অধরার দিক থেকে চোখ সড়াতে পারছেনা।আহানের এমন অবস্থা দেখে রুদ্র হালকা কেশে বলে।
–“এভাবে দেখোনা আহান বাকী দিন গুলোর জন্য তো কিছু তো বাকী রাখবে।না এখুনি দেখে ফুরিয়ে ফেলবে এসব দেখাদেখি পড়ে হবে।আগে নিজের হবু স্ত্রী কে সামলে নিতে শিখো”

–রুদ্রের মুখে অন্য কারো হবু স্ত্রী কথটা শুনে অধরার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।ইচ্ছে সবকিছু বলে দিতে।কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে অধরা কিছু বলতে পারছেনা।
–রুদ্রের কথা শুনে আহান লজ্জা পেয়ে অধরা কে বলে।
–“চলো এখান থেকে অধরা এভাবে ছুটোছুটি করলে তোমার কিছু হলে আমার কি হবে চলো”
–অধরা কিছু না বলে।রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।আহান বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে।তখন রুদ্র হেসে দিয়ে বলে।

–“আহান লজ্জা পেয়েছে অধরা।তুমি অধরার খেয়াল রেখো।আমি একটু বাহির যাচ্ছি।পড়ে কথা হবে।”
–রুদ্র চলে যায়।আহান নিজের রুমে এসে অধরার কথা ভাবতে থাকে।
–“মায়াবতী শ্যাম কন্যা তোমার জন্য আহানের অফুরন্ত ভালোবাসা।যতো তোমাকে দেখি তোমাতে বিভোর হয়।তুমি শুধু আমার তোমাকে ছাড়া যে আহান শূন্য।তোমার ভালোবাসায় মগ্ন হবো।তোমার ভালোবাসায় মাতাল।তোমাতে যে হবো বিভোর”
–কথা গুলো বলতে আহানের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

–অধরা ছুটে নিজের রুমের এসে বিছানার মাঝখানে ধপাস করে শুয়ে পড়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমি কখনো আমাকে বুঝতে পারবে না।তোমাতে বিভোর যে অধরা।তোমাকে ছাড়া ভুল করে অধরা অন্য কারো কথা ভাবতে পারেনা।অধরার সবটা জুড়ে যে শুধু তোমার নাম।অধরার ভাবনা কল্পনা জুড়ে শয়নে স্বপ্ন শুধু রুদ্র।যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তোমাকে নিয়ে মনের কোনো হাজারো স্বপ্ন গুলো কে সাজিয়েছি।তবু কেন তুমি আমার ভালোবাসা বুঝতে পারোনা।দীর্ঘ পাঁচটি বছর অপেক্ষার পড়ে তুমি যখন ফিরে এলে ভেবেছিলাম। তখন তোমাকে মনের কথা গুলো খুলে বলবো।কিন্তু তার আগে সকলের সামনে আহান কে তুমি তুলে ধরলে।হুট করে আহানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললে।সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো আমার কিছু করার ছিলো না।কিন্তু ভেবেছিলাম সবকিছু তোমাকে খুলে বলে।তারপর সব আহান কে বলে দিবো।তার আগে সবকিছু কেমন উল্টো পাল্টা হয়ে গেল।কেন রুদ্র কেন?”

–কথা গুলো বলতে অধরা ভাবনার মাঝখানে ডুবে যায়।অধরা জানে আজকে রুদ্রর জন্মদিন এবং তার কালো রঙ পছন্দ।তাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য অধরা কালো শাড়ি পড়ে সিড়ি দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলো রুদ্র কে দেখানোর জন্য।ভেবেছিলাম অনেক দিনের জমানো কথা অপেক্ষা গুলো রুদ্র কে জানাবে।তখন রুদ্র শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছিল।অধরা সিড়ি দিয়ে উঠছিল আর রুদ্র নামছিল।তখন আচমকা অধরা আর রুদ্রর ধাক্কা লাগতে।অধরা পড়ে যাচ্ছিলো তখন রুদ্র অধরা কে ধরে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে।
–অধরা রুদ্রের কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে।

—রুদ্র অধরার কাজিন।অধরার বড় আব্বুর ছেলে।রুদ্র দেখতে সুদর্শন যুবক।যেমন গায়ের রঙ।তেমন ব্যবহার।তার কালো রঙ খুব পছন্দ।কিন্তু কালো মানুষ না।অধরা ছাড়া সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে সে।রুদ্র দেখতে ফর্শা,লম্বা, চওড়া।সাদা চামড়ার মাঝে ছোট ছোট চাপ দাড়ি।পুরো হিরোদের মতো দেখতে।যে কোন মেয়ে রুদ্র কে দেখলে ক্রাশ খাবে স্বাভাবিক।

–অধরা ভালোবেসে রুদ্র কে হুলোবেড়াল বলে।অবশ্য রুদ্রের সামনে এসব বলার সাহস তার কখনো হয়ে উঠেনি।ছোট থেকে অধরা রুদ্র কে পছন্দ করে কিন্তু অধরার গায়ের রঙ কালো থাকায় রুদ্র অধরার সাথে তেমন মিশতো না।দূরে দূর থাকতো।কিন্তু অধরা যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তার কল্পনা জল্পনা সবকিছু রুদ্র কে নিয়ে সাজিয়েছে।অধরা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে রুদ্র তখন নিজের স্টাডি শেষ করতে।দূর দেশে বিলাতে চলে গিয়েছিল।স্টাডি শেষ করে সেখানে জব করতো।দেশের মায়া ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল।তাদের এতো বিজনেস সবকিছু দেশে তবু সে বিলাতের মায়া ছেড়ে দেশে আসতে চাচ্ছিলো না।অবশেষে তার বন্ধু আহান কে নিয়ে দেশে ফিরে।যার সাথে অধরার বিয়ে ঠিক হয়েছে।কিন্তু অধরা মন জুড়ে শুধু রদ্রের বসবাস।রুদ্র বলে সে বেহুস।কিন্তু সে ভালোবাসার কি পরিনিতি হবে অধরা জানেনা।তবু নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে সে রুদ্র কে।

–অধরা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে।আলমারি তে লুকিয়ে রাখা সেই রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা বুকে জড়িয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তোমাতে বিভোর যে অধরা।তুমি কেন বুঝতে পারোনা অধরার হৃদয়ের ব্যাথা?”

তোমাতে বিভোর পর্ব ২

1 COMMENT

Comments are closed.