তোমাতে বিভোর পর্ব ২ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ২
Sapna Farin

–“আমার সবটা জুড়ে যে তোমার বসবাস।তুমি ছাড়া অধরা যে নিঃস্ব। তুমি কেন বুঝতে পারোনা আমার মনের কথা।আকুল হৃদয়ের কথা!শয়নে স্বপ্নে শুধু যে তোমার নাম।যে তোমাকে ছাড়া নিজের জীবনে অন্য কারো ছায়া সহ্য করতে পারেনা।সেখানে তুমি নিজের ফ্রেন্ড আহানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলে কিভাবে?এখন তার সাথে আমার বিয়ের তোরজোর শুরু করে দিয়েছো।এসব করার আগে তুমি ভেবে দেখলে না অধরার মনের কথা।আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া তোমার কি আমার জন্য সামান্য মায়া হলো না।যে অধরা তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসে।সে কিভাবে অন্য মানুষের সাথে সংসার সাজাবে।আমিতো তোমাকে নিয়ে আমার মনের মাঝে জল্পনা কল্পনার সংসার সাজিয়েছি তার কি হবে।তুমি কেন এতো নির্দয়?তোমার বুকের বাম পাশে কি কখনো আমার জন্য সামান্য ব্যাথা অনুভব হয় না।কিন্তু বিশ্বাস করো রুদ্র আমার বুকের বাম পাশে যেখানে হৃদয় আছে সেখানে শুধু তোমার নাম।তাহলে তোমার বুকের বাম পাশে কি অন্য কারো নাম?”

–কথা গুলো বলতে অধরার গলার আওয়াজ ভারী হয়ে আসে।তার চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝড়ছে।সে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে,রুদ্রর ছবির ফ্রেম বুকের মাঝে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।ছুটে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে ক্ষুতিয়ে ক্ষুতিয়ে দেখছে আয়ানার মধ্যে।আজকে আয়নার মধ্যে যেন অন্য কোন অধরা কে দেখতে পাচ্ছে সে।সাজানো গোছানো শ্যাম কন্যা।এসব দেখে অধরার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে কিন্তু মুহূর্তের মাঝে রুদ্রের বলা করা কথা গুলো মনে পড়তে।নিজের গায়ের রঙ দেখে মূহুর্তের মাঝে অধরার চেহারারটা মলিন হয়ে যায়।সে রুদ্রের ছবির ফ্রেম ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে।রেগে গিয়ে অস্থির হয়ে চোখের কাজল গুলো মুছে ফেলে,ঠোঁটের লিপিস্টিক মুছে,চুল গুলো এলোমেলো করে।মুখে অদ্ভুত হাসির রেখা টেনে অধরা বিড়বিড় করে বলে।

–“যার জন্য এতো কিছু সে রুদ্র ভালো করে দেখলো না অধরা কে।তাহলে এসব সাজগোজ কিসের জন্য রাখবো আমি।সবকিছু মুছে ফেলবো!সবকিছু শেষ করে ফেলবো।”
–কথা গুলো বলতে,অধরার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।চোখের কাজল গুলো লেপ্টে আছে তার।ঠোঁটের লিপিস্টিক ছড়িয়ে আছে।চুল গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে।নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে অধরা।নিজেকে সামলে নিয়ে অট্টহাসি দিয়ে আয়নার মধ্যে নিজের প্রতিবিম্ব কে রুদ্র ভেবে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“রুদ্র ভাইয়া আমাকে এমন অবস্থায় দেখে তোমার নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগছে।তুমি আমাকে দেখে মিটমিট করে হাসছো।কিন্তু তুমি বুঝতে পারছো না।আজকে আমার এমন অবস্থার জন্য তুমি দ্বায়ী।যখন তুমি আমার হতে পারবে না?তখন আমার মনে নিজের জন্য কেন এতো ভালোবাসা জন্মালে!কেন রুদ্র ভাইয়া কেন?আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া গায়ের রঙ কি সব?আজকে সাদাকালোর মাঝে তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছো।আজকে আমার গায়ের রঙ কালো বলে তুমি আমাকে এতোটা দূরে তাড়িয়ে দিচ্ছো।ভালোবাসা কি গায়ের রঙ দেখে হয় রুদ্র ভাইয়া।তুমি শুধু গায়ের রঙ দেখলা মনের রঙের খবর কি রেখেছো কখনো।তোমাতে বিভোর হলো অধরা।”

–কথা গুলো বলে অধরা রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা বুকে জড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।তখন আচমকা পিছনে থেকে কে যেন অধরা কে জড়িয়ে ধরে বলে।
–“কি অধরা?এখন থেকে নিজের হবু বরের ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছো।দরজায় নক করলাম তবু তোমার সারা শব্দ পেলাম।রুমে এসে দেখি আমার আদরের ননদিনী ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছে।ভাবলাম চমকে দিলে কেমন হয়।এখন বলো এতো কি ভাবা হচ্ছে?হুম।”
–তিশার কন্ঠ শুনে অধরা ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।এভাবে এখানে তিশা কে দেখে সে চমকে যায়।সে কোন রকম শাড়ির আঁচলের নিচে রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা লুকিয়ে।তিশার দিকে ঘুরে।তোতলাতে তোতলাতে বলে।

–“ভা বি তু মি এ খা নে।”
–অধরা কে দেখে তিশা চমকে যায়।সে অধরা কে ছেড়ে দিয়ে।অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“অধরা নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো।আহানের সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে কি?আর শাড়ির আঁচলের মধ্যে কি লুকিয়ে রেখেছো হচ্ছে কি এসব ?”
–তিশার প্রশ্ন শুনে অধরা ঘাবড়ে গিয়ে বলে।
–“ভাবি প্লিজ থামো আস্তে কথা বলো”
–তিশা অধরা কে ধাক্কা মেরে ঝাকিয়ে বলে।

–“আস্তে কেন কথা বলবো অধরা?নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো।খেয়াল করেছো?কিছুক্ষণ আগে তো সবকিছু ঠিক ছিল সেজেগুজে শাড়ি পড়ে সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে কিছুক্ষণের মধ্যে কি হলো।তোমার এমন রুপ।”
–তিশার কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝড়ছে।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় করতে পারছেনা।ইচ্ছে করছে সবকিছু তিশাকে খুলে বলতে।কিন্তু অজানা কোন দ্বিধা, কোন অজান বাধা যেন তাকে আটকে দিচ্ছে।

–অধরার নীরবতা দেখে তিশা আবার বলে উঠে।
–“অধরা তুমি কি সবকিছু খুলে বলবে আমাকে।না আমার জোর করে দেখতে হবে শাড়ির নিচে কি লোকাচ্ছ তুমি?”
–অধরা তিশার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে।
–“ভাবি।”
–“দেখো অধরা তোমার এমন অবস্থা যে তিশা দেখতে পারবেনা।আমাকে মাফ করো”

–কথাটা বলে তিশা,আচমকা অধারর শাড়ির আঁচলের নিচে লুকানো ছবির ফ্রেম টার দিকে হাত বাড়েতে।অধরা ছবির ফ্রেমটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।তখন তিশা এবং অধরার দুজনের টানাটানি এবং জোরাজুরি জন্য শেষ পর্যন্ত রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা ফ্লোরে পড়ে ভেঙে যায়।তখন অধরা ফ্লোরে ধপাস করে বসে অস্থির হয়ে রুদ্রের ছবির ফ্রেমটা ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে।

–“ভাবি তুমি এটা কি করলে।আমার রুদ্র।”
–রুদ্রের ভাঙা ছবির ফ্রেমটা অধরা তাড়াহুড়ো করে স্পর্শ করতে গিয়ে তার হাত কেটে যায়।সে দিকে অধরার কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে অস্থির হয়ে রুদ্রের ছবি আঁকড়ে ধরেছে।অধরার অবস্থা দেখে তিশার পৃথিবীটা যেন উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো।সে কোন অজানা ঝড়ের আবাস পাচ্ছে।সে ধপাস করে ফ্লোরে অধরার পাশে বসে।অধরার কে স্পর্শ করে অশ্রু ভেজা চোখে বলে।

–“অধরা এসব কি?”
–অধরা তিশাকে আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।অধরার এমন অবস্থা দেখে তিশার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।
–তিশা অধরার ভাবি।তার বড় ভাইয়া অভ্রের স্ত্রী।আজকে ছয় মাস হলো অভ্রের সাথে তিশার বিয়ে হয়েছে।তিন বছরের ভালোবাসার ইতি টেনে ছয় মাস আগে ফ্যামিলির মাধ্যমে অভ্র আর তিশার বিয়ে হয়।তিশা মেয়েটা খুব মিশুক সময়ের সাথে সকল কে খুব আপন করে নিয়েছে।তিশার আর অধরার রিলেশন
বোনের মতো বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো।সবকিছু তিশার সাথে শেয়ার করে অধরা কিন্তু রুদ্রর বিষয় গুলো শেয়ার করতে পারেনি ভেবেছিল রুদ্র কে সবকিছু খুলে বলে তারপর অন্য কে বলবে।কিন্তু রুদ্র কে কিছু বলার আগে সবকিছু কেমন উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো।

–অধরা তিশাকে ছেড়ে দিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে।
–“ভাবি আমি যে রুদ্র ভাইয়া কে খুব ভালোবাসি।তাকে ছাড়া নিজেকে অন্য কারো সাথে কল্পনা করতে পারিনা।কিন্তু কিছু দিন পড়ে আহানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এখন আমি কি করবো তুমি বলো?আমি যে রুদ্র কে খুব ভালোবাসি।”
–অধরার কথা শুনে তিশা ছলছল নয়নে অধরার দিকে তাকিয়ে বলে।
–“আর রুদ্র?”
–তিশার কথা শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।হয়তো এমন প্রশ্নের উত্তর অধরার অজানা।

–আহান অধরার ভাবনার মাঝখানে মগ্ন হয়ে আছে।সে ফোনের স্ক্রিনে অধরার ছবি গুলো দেখছে।ব্যাকগাউন্ডে মিউজিক বাজছে।অধরার কথা গুলো ভাবতে তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।তখন আহানের দরজায় দাঁড়িয়ে দূর থেকে দুটো চোখ আহান কে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে।আহানার ভাবনার মাঝখানে ডুবে যাচ্ছে।তার ইচ্ছে করছে মুখ ফুটে বলতে।আহান আমি যে তোমাকে খুব ভালোবাসি। প্রিয় তুমি কি আমার হবে।কিন্তু কিভাবে সে এমন কথা বলবে।যার কিছু দিন পড়ে তার কাজিন অধরার সাথে বিয়ে তাকে এমন কথা বলা বড্ড বেমানান।নিজের অনুভূতি গুলো নিজের মধ্যে পুষে ফেলে।আহানারের রুমের দরজায় ঠকঠক শব্দ করে।হালকে কেশে রুশা আসে আহানের রুমের মধ্যে।রুশা কে দেখে আহান তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে বসে।নিজে ভাবনা থেকে বাস্তবে এসে বলে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ১

–“রুশা কিছু বলবে।”
–রুশা মুখে মিথ্যা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“হুম।আহান ভাইয়া দেখতে আসলাম আপনার বিয়ের প্রস্তুতি কেমন চলছে।তো বিয়ের সময় কি এমন শর্ট প্যান্ট আর ট্রি শার্ট পাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাকি।”
–কথা গুলো বলে হেসে উঠে রুশা।
–রুশার কথা শুনে।আহান লাজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে।
–“কি যে বলোনা রুশা।তুমি তোমার ভাইয়া রুদ্রের মতো হয়েছে সব সময় আমাকে নিয়ে মজা করো।”
–রুশা মুখ টিপে হেসে বলে।
–“কি যে বলেন না আহান ভাইয়া?আপনার এমন বোকা বোকা চেহারা দেখলে তো সব মেয়েরা আপনার প্রেমে পড়ে যাবে।”

–রুশার কথা শুনে।আহান অট্টহাসি দিয়ে বলে।
–“রুশা তুমি আবার আমার সাথে মজা নিচ্ছো।দাঁড়িয়ে থাকো তোমার মজা দেখাচ্ছি।”
–রুশা মুখ ভেংচি কেটে বলে।
–“দেখান কি মজা দেখাবেন।”
–কথাটি বলে রুশা ছুটে চলে যায়।আহান বিছানা থেকে উঠে রুশার পিছনে ছুটে যায়।

তোমাতে বিভোর পর্ব ৩