তোমাতে বিভোর পর্ব ৩ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ৩
Sapna Farin

–রুশা ছুটে যাচ্ছে তার পিছনে ছুটে যাচ্ছে আহান।আহান রুশার পিছনে ছুটতে গিয়ে।চিৎকার করে বলছে।
–“রুশা এভাবে ছুটে কোন লাভ হবেনা আজকে তোমার মজা দেখেবো।আহানের সাথে মজা নিতে আসো।দাঁড়িয়ে থাকো তুমি।”
–আহানের কথা শুনে রুশা দৌড়াতে দৌড়াতে মুখে ভেংচি কেটে বলে।
–“আমাকে ধরতে পারবেন না আহান ভাইয়া।পারলে আমাকে ধরে দেখান।”
–কথা গুলো বলে,রুশা ছুটে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো।তখন আহান রুশাকে আঁকড়ে ধরে।রুশার চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়া বলে।

–“কি ধরে ফেললাম তো আমার থেকে কোথায় পালানো হচ্ছে হুম।”
–রুশা আহান কে আঁকড়ে ধরে।তার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে।বিড়বিড় করে বলে।
–“আহান ভাইয়া আমাকে এভাবে সারাজীবন আঁকড়ে রেখো।রুশা যে এভাবে সারাজীবন তোমার মায়াতে নিজেকে জড়িয়ে রাখার স্বপ্ন দেখেছিল।কিন্তু সে স্বপ্ন গুলো মূহুর্তের মাঝে তুমি শেষ করে দিলে।আচ্ছা আমার মাঝে কি কম ছিলো?যে তুমি অধরা কে বিয়ে করার জন্য এতোটা দূরে থেকে দেশে ফিরে আসলে।”
–কথা গুলো বলতে রুশার চোখ অশ্রু ভেজা হয়ে যায়।সে আহান কে ছেড়ে দিয়ে ছুটে চলে যায়।আহান রুশার অবস্থা দেখে কিছু বুঝতে পারেনা সে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে।তখন আহানের ফোন বেজে উঠলো।আহান ফোন রিসিভ করে আড়ালে চলে যায়।

–তারপর মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“হ্যালো মম।গেম ইজ অন।আমরা আমাদের প্লেনে খুব তাড়াতাড়ি সফল হবো।তুমি কোন চিন্তা করোনা।আমাদের পুরো প্লেন সফল করতে অধরা আমার কাজে আসবে তারজন্য তো এতো প্লেন করে রুদ্র কে নিজের জ্বালে ফাঁসানো।অধরা কে ভালোবাসার মিথ্যা ন্যাকামি সব লোক দেখানো।অধরার সাথে আমার বিয়টা হয়ে গেলে সকলে আমার আসল রুপ ধীরে ধীরে দেখতে পারবে।”
–আহান ফোনে কথা বলতে বলতে বাহিরে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–রশা ছুটে ছাদে চলে আসে।ছাদের কোনায় বসে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।কিছু দিন পড়ে আহানের সাথে অধরার বিয়ে।আহান কিছু দিন পড়ে পুরোপুরি অন্য কারো হয়ে যাবে।কথা গুলো মনে পড়তে রুশার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।
রুদ্রের সাপেক্ষে সে আহান কে চিনে।আহানের সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক।সে সম্পর্ক গুলো কখন ভালোবাসার রুপ নিয়েছে রুশা নিজে জানানে।আজকে সে ভালোবাসা অন্য কারো হতে চলেছে।এসব ভাবতে তার মাঝে মধ্যে অধরা কে খুব হিংসে হয়।তবু নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের অশ্রু মুছে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে।
–“সামনে অধরার বিয়ে অনেক কাজ বাকী এখানে এভাবে বসে থাকলে চলে।”
–তখন রুশা নিজের অনুভূতি গুলো কে আড়াল করে চলে যায়।নিজেকে সব কাজের মধ্যে ব্যাস্ত রাখে।

–অধরার নীরবতা দেখে তিশা আবার বলে উঠে।
–“অধরা তুমিতো রুদ্র কে ভালোবাসো।আর রুদ্র সে কি তোমাকে ভালোবাসে।সে কি সবকিছু জানে?কি হলো অধরা বলো।এভাবে নীরবে বসে থাকলে কোন সম্যসার সমাধান হবেনা।”
–অধরা স্তব্ধতা কাটিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না ভাবি।আর সে তো জানানে না আমি তাকে ভালোবাসি।আমার গায়ের কালো রঙ আমাদের ভালোবাসার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বলো এখানে আমার কি করার আছে।এখন পর্যন্ত আমার গায়ের রঙের জন্য রুদ্র ভাইয়া সহ্য করতে পারেনা আমাকে।আর ভালোবাসা তো দূরের কথা।”

–কথা গুলো বলে অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
–অধরার কথা শুনে তিশা অধরার গালে হাত রেখে করুন কন্ঠে বলে।
–“অধরা বোঝার চেষ্টা করো।আমার লক্ষী বোন সোনা বোন।ভালোবাসা কখনো গায়ের রঙ দেখে হয় না!ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার।তুমি ভুল মানুষ কে ভালোবেসে নিজেকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো।দেখো সামনে তোমার আহানের সাথে বিয়ে।আহান তোমাকে খুব ভালো রাখবে।খুব ভালোবাসবে সে তোমাকে।এসব ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে
তুমি আহান কে বিয়ে করো।”

–অধরা তিশার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে।
–“ভাবি।তুমি কি পারতে ভাইয়া কে ভালোবেসে অন্য কারো সাথে সংসার সাজাতে।তুমি তো বললে ভালোবাসা মনের ব্যাপার তাহলে কিভাবে রুদ্র কে ভুলে আহানের সাথে সংসার করবো।”
–অধরার কথা শুনে সে কিছু বলতে পারলো না।সে সেখান থেকে উঠে ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।আজকে আকাশ সমান ভাবনার মাঝখানে ডুবে গেছে সে।বিয়ে বাড়ি কতো আনন্দ কতো ছুটো ছুটি কতো কাজ বাকী সবকিছু যেন মূহুর্তের মাঝে উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো।অধরার কথা ভেবে তিশা বিছানার মাঝখানে ধপাস করে শুয়ে পড়ে।

–অধরার রুদ্রের ছবির ফ্রেম টা কোন রকম জোরা লাগিয়ে।ছবিটি লুকিয়ে রেখে।শাওয়ার নিতে চলে যায়।শাওয়ার শেষ করে রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করেছিল।তখন দরজায় করা নেড়ে আহান রুমে আসে।
–আহান কে দেখে অধরা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“কিছু বলবেন আহান ভাইয়া”
–“ওহ্ অধরা মনে হয় ভুল সময় চলে আসলাম।তুমি থাকো পড়ে কথা হবে।”
–কথা গুলো বলে আহান চলে যাচ্ছিলো।তখন অধরা তাকে পিছু ডেকে বলে।
–“আহান ভাইয়া বলেন।কি বলতে এসেছেন।”
–আহান করুন কন্ঠে বলে।

–“কালকে আমরা শপিংয়ে যাচ্ছি।তোমার কোন সম্যসা না থাকলে।কিছুদিন পড়ে আমাদের বিয়ে। আমার কে আছে বলো।সবকিছু তো আমাকে করতে হবে।তারজন্য সবকিছু গুছিয়ে রাখতে চাচ্ছিলাম।আজকে মম ডেড থাকলে হয়তো আমাকে এতো কিছু করতে হতো না।সবকিছু তারা করতো আজকে অনাথ বলে সবকিছু আমাকে দেখতে হচ্ছে।”
–কথা গুলো বলে আহান চলে যায়।অধরার রুম থেকে বেড়িয়ে আহান মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“অধরা তুমি নিজে ধীরে ধীরে আমার মায়া জালে জড়িয়ে যাবে।তুমি বুঝতে পারবে না কখনো।এমন বোকা চেহারার পিছনে কোন মুখ লুকিয়ে আছে।অধরা অল দ্যা বেস্ট।আর কিছুদিন তারপর তুমি হবে আমার ত্রুপের তাশ।”

–কথা গুলো বলে আহান।নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
–আহানের কথা শুনে অধরার বড্ড মায়া হয়।অধরা বলে।
–“আসলে সত্যি কি আহান এমন!না আমাদের আড়ালে আহানের অন্য কোন চেহারা লুকিয়ে আছে।সব সময় এমন বোকা সেজে কেন থাকে সে।সব সময় অতিরিক্ত ভালো সাজার চেষ্টা করো।”
–কথা গুলো বলতে অধরা নিজে নিজেকে প্রশ্ন করে।
–“অধরা তুমি গোয়েন্দা হয়ে যাচ্ছো।আহান কে দিয়ে তোমার কি?তুমি শুধু রুদ্র কে নিয়ে ভাবো।আর আহানের সাথে নিজের বিয়েটা কিভাবে ব্যাস্তে দিবে সে চিন্তা করো।হুম।”
–কথাটা বলতে অধরার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

–অভ্র অফিস থেকে ফিরে এসে।তিশা কে শুয়ে থাকতে দেখে বলে।
–“তিশা অসময় শুয়ে আছো কেন?কি হয়েছে কোন সম্যসা।”
–তিশা অভ্র কে দেখে উঠে বসে বলে।
–“কি হবে তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।”
–অভ্র তিশার কাছে গিয়ে তার সামনে হাটু গেরে বসে বলে।
–“কি হয়েছে আমার সোনা বউয়ের।মন খারাপ কেন?।
–তিশা অভ্র কে টেনে তুলে বলে।
–“তুমি আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ আসছে।”
–তিশার কথা শুনে অভ্র ভেবাচেকা খেয়ে বলে।
–“কি ঘামের গন্ধ।কোথায়?আজকে তোমার কি হয়েছে বলতো তিশা।”
–“এতো প্রশ্ন করো কেন ফ্রেশ হয়ে আসো।”
–“আচ্ছা যাচ্ছি বাবা।তুমিতো নাছোড়বান্দা।”

–অভ্র ফ্রেশ হতে চলে যায়।তিশার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
–“অভ্র কে সবকিছু খুলে বলতে হবে।”
–অভ্র ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বলে।
–“আজকে তোমার আদরের ননদিনি কে দেখতে পাচ্ছিনা কেন?অফিস থেকে ফিরে আসলে।সে তো সবার আগে ছুটে এসে বলে ভাইয়া আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ।অধরা কোথায়?তাকে যে দেখতে পাচ্ছিনা।”
–অধরার নামটা শুনে তিশার বুকের ভেতর টা কেমন কেঁপে উঠে।সে অভ্র কে কিছু বলতে গেলে।তখন কোথায় থেকে অধরা ছুটে এসে বলে।

–“ভাইয়া আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ।”
–বোন কে দেখে অভ্র হু হু করে হেসে উঠে বলে।
–“দেখেছো তিশা নাম নেয়া মাত্র সে এসে হাজির।”
–অভ্রের কথা শুনে অধরা গোমড়া মুখ করে বলে।
–“ভাইয়া তুমি এখানে দাঁড়িয়ে ভাবির সাথে কথা না বলে।আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ তাড়াতাড়ি দিবে।”
–“তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসেছি।দেখো ফ্রিজ রাখা আছে।”
–“ভাইয়া তুমি গিয়ে নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি।”

–“আচ্ছা যাচ্ছি অফিসে অনেক কাজ আবার বাসায় ফিরে তোমাদের হুকুম শুনতে হয়।”
–কথা গুলো অভ্র তিশার দিকে তাকিয়ে বলে।মিটমিট করে হেসে চলে যায়।
–তিশা অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“অধরা তুমি ঠিক আছো।এতোটা স্বাভাবিক আছো কিভাবে।সবকিছু সময় থাকতে অভ্র কে জানাতে হবে।”
–অধরা তিশার হাত দুটি ধরে বলে।
–“ভাবি প্লিজ তুমি ভাইয়া কে কিছু বলোনা।সবকিছু সকলে জানলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে।”
–“ঝামেলা হলে হোক।এখানে তোমার জীবনের প্রশ্ন অধরা।”
–“ভাবি প্লিজ কোন ঝামেলা করোনা।”
–তখন অভ্র পিছনে থেকে আচমকা বলে উঠে।
–“কি ঝামেলা হবে শুনি।আমার কাছে কি লুকানো হচ্ছে?হু।”
–অধরা ভেবাচেকা খেয়ে হেসে দিয়ে বলে।
–“আসলে ভাইয়া আমার আইসক্রিম নিলে ঝামেলা হয়ে যাবে।”
–অভ্র অধরার কথা শুনে অট্টহাসি দিয়ে বলে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ২

–“ঝামেলা করতে হবেনা।সবার জন্য আলাদা করে আইসক্রিম নিয়ে এসেছি।এটা তোমার আমার মিষ্টি বোনের।”
–অধরা অভ্রের থেকে আইসক্রিমের বাক্স টা নিয়ে ছুটে চলে।অভ্র অধরার অবস্থা দেখে হেসে উঠে।তিশা তাদের দেখে বিড়বিড় করে বলে।
–“অভ্রের মুখে এমন হাসি যেন সব সময় থাকে।তারজন্য অধরার কথা তো আমাকে শুনতে হবে।সামান্য কথা যে বাড়ির মধ্যে ঝর নিয়ে আসবে।”

–রুদ্রের ফ্রেন্ডরা,নাইট ক্লাবে রুদ্র কে নিয়ে পার্টি করছে।তখন রুদ্রের ফ্রেন্ড ইশান রুদ্র কে বলে,দোস্ত মেয়েটা কে দেখো।
–“পুরো পার্টি যেন তাকে নিয়ে ব্যাস্ত।”
–রুদ্র মেয়েটির দিকে তাকাতে তার চোখ আটকে গেলো।

তোমাতে বিভোর পর্ব ৪