তোমাতে বিভোর শেষ পর্ব || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর শেষ পর্ব 
Sapna Farin

–দীর্ঘ বিশ বছর কোন চেনাজানা মুখ দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় রায়মান সাহেব এবং আয়মান সাহেব।আজকের দিনে এমন কিছু হবে তাদের ভাবনার বাহিরে ছিলো।
তখন তারা দুজনের দিকে দু’জনে চোখাচোখি করে বোঝার চেষ্টা করছে তারা কোন কল্পনা দেখছে না তো।না তারা কোন কল্পনা দেখছে না!আসলে মিসেস আলেয়া তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মিসেস আলেয়া কে দেখে তাদের মনে প্রশ্ন জাগে।

–“তাহলে এতো বছর সে কোথায় ছিলো।এভাবে হুট করে আজকে ফিরে এলো?”
–তাদের মনে হাজারো প্রশ্ন গুলো উঁকি দিচ্ছে মিসেস আলেয়া কে নিয়ে।মিসেস আলেয়া তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে।দীর্ঘ বিশ বছর আগের আলেয়া এবং আজকের আলেয়ার মাঝখানে অনেক ব্যবধান।মিসেস আলেয়া কে এখানে দেখে মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় আহান।সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার।এসবের মাঝখানে সবকিছু তার মম কে খুলে বলতে পারেনি সে।ভেবেছিল সবকিছু মিটে গেলে তার মম কে সবকিছু খুলে বলবে।কিন্তু এভাবে হুট করে তার মমের আগমন ঘটবে আহানের ভাবনার বাহিরে ছিলো।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ।সে দাঁড়িয়ে যায়।তখন মিসেস আলেয়া ছেলের কাছে গিয়ে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“কেমন লাগলো মমের সারপ্রাইজ আহান।সোজা এয়ারপোর্ট থেকে এখানে চলে আসলাম।আমার পুত্রবধূ অধরা কে নিয়ে যেতে।”
–রায়মান সাহেবের পুরো ফ্যামিলি যেন বড়সড়ো ধাক্কা খেলো।তারা জানে আহান অনাথ কিন্তু এখানে আহান আলের ছেলে।তাহলে আহান নিজেকে নিয়ে কেন মিথ্যা বলেছিল।এবং আলেয়া সে কেন এমন করলো।হাজারো প্রশ্ন ধারা জর্জরিত হচ্ছে রায়মান সাহেব।
–তখন আহান স্তব্ধতা কাটিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
–“মম তুমি এখানে আসবে আমাকে জানাতে পারতে।”
–“হ্যাঁ পারতাম।কিন্তু সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম সকল কে।কেমন লাগলে আমার সারপ্রাইজ মি. রায়মান সাহেব?”
–মি. রায়মান সাহেব স্তব্ধ হয়ে আছে।তখন তার পাশে থেকে কোন অচেনা ব্যাক্তি বলে উঠে।
–“আজকে সকলে সারপ্রাইজের মধ্যে আছে ম্যাডাম।কিন্তু আপনি তো আসল সারপ্রাইজটা মিস করে গেছেন।এখানে তো বিয়ে হয়েছে আহান এবং আভার।রুদ্র এবং অধরার।”

–মিসেস আলেয়া বড়সড় ধাক্কা খেয়ে আহানের উদ্দেশ্যে বলে।
–“আহান এসব কি শুনি।এসব কি সত্যি?”
–আহান দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।তখন মিসেস আলেয়া স্তব্ধ হয়ে সোফায় বসে পড়ে।সে কিছু বলতে যাবে তখন রায়মান সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে।
–“আলেয়া সবকথা হবে তুমি নিজেকে আগে শান্ত রাখো।এখন বাড়িতে এতো মেহমান আমাদের ব্যক্তিগত কথা পড়ে বলা যাবে।এতো বছর যখন অপেক্ষা করেছো সামান্য সময় দয়া করে অপেক্ষা করো।মিসেস আলেয়া কিছু বলেনা।কিন্তু নিজের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে।যে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে দীর্ঘ বিশটি বছর তার শেষ হয়ে গেছে।তার ছেলের সামান্য ভুলের কারণে সবকিছু কেমন শেষ হয়ে গেলো।

–ঘড়ির কাটায় রাত পনে এগারোটা বাজে।রায়মান সাহেবের পুরো ফ্যামিলি এবং মিসেস আলেয়ার পুরো ফ্যামিলি লিভিং রুমে বসে আছে।সকলের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ এবং সকলের স্তব্ধতা। তখন নীরবতা কাটিয়ে মিসেস আলেয়া বলে উঠেন।
–“মি. রায়মান সাহেব আপনার কাছে থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।কিভাবে ধোকা করতে হয় এবং কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করতে হয়।দীর্ঘ বিশ বছর আগে ধোকা করে সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলেন আমার।আজকে ঠিক তেমন কিছু করে আমার ছেলে কে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিলেন।আপনার মাস্টার প্লেনের কাছে বরাবর হেরে গেলাম আমি।আপনি জিতে গেলেন।আজকে আপনার জন্য আমাদের এমন অবস্থা?”
–রায়মান সাহেব উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“আলেয়া।”
–মিসেস আলেয়ার চোখ গুলো লাল বর্ন ধারণ করেছে।স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চোখে রায়ামান সাহেবর ফ্যামিলির উপরে ঘেন্না।প্রতিশোধর আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছে সে।তার এমন অবস্থা দেখে আহান করুণ কন্ঠে বলে উঠে।
–“মম তোমার কোন ভুল হচ্ছে।যে মানুষ গুলো কোন অচেনা মানুষ কে খুব সামান্য সময়ে এতো আপন করে নিতে পারে।নিজের ফ্যামিলি মেম্বার মনে করে।
তারা কিভাবে নিজের কাছের মানুষের সাথে ধোকা করবে।”

–“আহান তুমি কোন কথা বলোনা শেষ পর্যন্ত শত্রুদের সাথে ছিঃ।আমার ভাবতে অবাক লাগছে।যারা আমাদের সাথে ধোকা করে আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।যারা তোমার ড্যাডের মৃত্যুর জন্য দ্বায়ী তাদের সাথে তুমি।”
–তখন রায়মান সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠে।
–“আলেয়া আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা?তোমাকে দেখে তোমার কথা শুনে।যখন তোমাকে এতো বছর পড়ে দেখলাম খুশিতে মন ভরে গিয়েছিল।বিশ্বাস হচ্ছিলো না তুমি ফিরে এসেছো।তোমাকে কতো জায়গায় খুঁজে বেড়িয়েছি তোমার ভাবনার বাহিরে।কিন্তু তুমি সবকিছু মুহূর্তের মাঝখানে শেষ করে দিলে।আলেয়া রায়মান তোমাকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখতো এবং আমার বন্ধু আরমান কে আমার ভাইয়ের মতো।সেখানে তুমি আমাকে নিয়ে এসব ভেবে রেখেছো।আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।তুমি যদি বিশ বছর আগে আমার মুখোমুখি হতে।তাহলে সব প্রশ্নের উত্তর গুলো তখন পেয়ে যেতে।আমরা সাথে থাকতাম আজকে আমাদের মাঝখানে এতো দূরত্ব থাকতো না।”

–“হয়েছে মি. রায়মান সাহেব আপনার মিথ্যা কথা গুলো আমাকে শুনতে হবেনা।চলে যাচ্ছি এখান থেকে আমি।”
–“কোথায় যাবে তুমি?যখন ফিরে এসেছো নিজের ফ্যামিলির কাছে তাদের ছেড়ে চলে যাবে।তুমি ভুলে যাচ্ছো তুমি আমার বোন।ছোট বোন ভুল করতে পারে কিন্তু আমি বড় ভাইয়া হয়ে তোমাকে কি করে যেতে দিবো।”
–মিসেস আলেয়া স্তব্ধ হয়ে যায়।সে পিছনে ফিরে তাকায় তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।তখন রায়মান সাহেব বলতে শুরু করে।

–“বোন তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা।কিন্তু তোমার সত্যিটা জানা দরকার।ধোকা শুধু আরমানের সাথে না।ধোকা আরমান এবং আমার সাথে হয়েছিল।আমাদের ম্যানেজার আমাদের সাথে ধোকা করেছিল।নিয়তি তাকে শাস্তি দিয়েছে।ম্যানেজার ছিলো আরমানের খুব কাছের এবং বিশ্বাস যোগ্য লোক তার এমন ধোকা সে সহ্য করতে পারেনা।আমাদের ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু তারপর তোমাদের অনেক খুঁজেছি কিন্তু তোমারা তো দেশে ছিলেনা!কিভাবে খুঁজে পাবো।তখন আমাদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছিলো।পুরো ফ্যামিলির দ্বায়িত্ব আমার হাতে।চিন্তা করলাম ভেঙে পড়লে চলবে ঘুরে দাড়াতে হবে।তারপর আমার ভাই আয়মান এবং আমি বিজনেস শুরু করি।সেখান থেকে আমাদের আজকের অবস্থা।”

–মিসেস আলেয়া ডুকরে কেঁদে উঠেন।তখন রায়মান সাহেব মিসেস আলেয়া কে অশ্রু ভেজা চোখে বলে।
–“আমার কোন ভুল থাকলে মাফ করো আলেয়া।কিন্তু তোমার ভাইকে ছেড়ে চলে যাবার কথা চিন্তা করোনা।”
–মিসেস আলেয়া ছুটে গিয়ে রায়মান সাহেবের কে আঁকড়ে ধরে বলে।
–“ভাইজান আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।ঐ ম্যানেজার আমাকে এসব বলেছিল এবং আমাদের দেশ থেকে চলে যেতে বলেছিল।আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।”
–সকলের চোখে অশ্রু।তখন রায়হান সাহেব নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
–“আমাদের পুরো ফ্যামিলি পূর্ণ হলো।”
–তখন রুদ্র এবং আভা বলে উঠে।

–“আমাদের কিছু বলার আছে।সবকিছু যেহেতু ক্লিয়ার হয়ে গেলো।তাহলে কিছু আড়াল করে কি হবে।”
–তখন রায়মান সাহেব বলে উঠে।
–“হ্যাঁ বলো।আজকে সবকিছু ক্ষমা হয়ে যাবে।”
–তখন রুদ্র এবং আভা তাদের বিয়ের ব্যপারে সবকিছু খুলে বলে।সকলে তাদের কথা শুনে হেসে উঠে।কিন্তু অধরা এবং আহান তাদের কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে রুমে চলে যায়।
–তখন তিশা বলে উঠে।
–“এখন তাহলে সবকিছু মিটে গেলো।এসব নিজেদের মধ্যে মান অভিমান তারা মিটিয়ে নিতে পারবে।আমরা তাহলে নিজেদের রুমে যায়।”
–তারা সকলে চলে যায়।তখন রুদ্র এবং আভা মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে নিজেদের রুমে চলে যায়।

–আভা এসে দেখে আহান মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আভা আহান কে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে বলে।
–“ভালোবাসি যে খুব বেশি ভালোবাসি।তোমাকে অন্য কারো কিভাবে হতে দিবো তুমি বলো।”
–আহান আভার দিকে ঘুরে।তার কপালে আলতো করে চুম্মো খেয়ে।তাকে আঁকড়ে ধরে ফিসফিস করে বলে।
–“তোমাতে বিভোর আমি তুমি কি জানানো?”
–“ইস এভাবে বলোনা আমার লজ্জা করেনা বুঝি?তুমি কি জানোনা আমি তোমাতে বিভোর।”
–দুজকে দু’জন কে আঁকড়ে ধরে আছে।ভালোবাসার মাঝখানে বিভোর হয়ে যাচ্ছে তারা।

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৯

–রুদ্র রুমে এসে দেখে অধরা মন খারাপ করে বসে আছে।রুদ্র অধরার কাছে যেতে অধরা বলে।
–“হয়েছে তোমার এতো ড্রামা করতে হবেনা?আমাকে পোড়াতে তোমার খুব ভালো লাগে রুদ্র ভাইয়া।কেন এমন করো আমার সাথে যখন হারিয়ে যাবো তখন বুঝতে পারবে।”
–রুদ্র অধরা মুখোমুখি বসে।অধরার ঠোঁটের উপরে আঙুল রেখে তার কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বলে।
–“তুমি জানানো তুমি আমার জন্য কি।কি করে তোমাকে অন্য কারো হয়ে যেতে দিতাম বলো?ভালোবাসি শ্যাম কন্যা খুব বেশি ভালোবাসি তোমাকে।সারাজীবন সাথে থাকার স্বপ্ন দেখি।তোমাতে বিভোর হয়েছে রুদ্র জানানো প্রিয়তমা।”
–তখন অধরা রুদ্র কে আঁকড়ে ধরে ফিসফিস করে বলে।
–“তোমাতে বিভোর হলো অধরা তুমি কি বুঝতে পারোনা রুদ্র ভাইয়া।খুব বেশি ভালোবাসি এভাবে সাথে থেকো।”
–রুদ্র খুশিতে আত্নহারা হয়ে।অধরা কে আঁকড়ে ধরে বলে।
–“হ্যাঁ।

অধরা তোমার ভালোবাসার মাঝখানে হারিয়ে যাবে রুদ্র দূর বহুদূরে।তোমাকে নিয়ে সাজাবো স্বপ্নের সংসার।তোমাতে বিভোর হবে।”
–তারা নিজেদের ভালোবাসার মাঝখানে বিভোর হয়ে যায়।তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পায়।ভালোবাসা বুঝি এমন হয়।যার শুরু আছে শেষ কি আছে?ভালোবাসা তো অফুরন্ত কালের।

সমাপ্ত

(লেখাঃ Sapna Farin) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন