তোমাতে বিভোর পর্ব ১৯ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৯
Sapna Farin

–“আহান আমার মনে অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।সে প্রশ্নের উত্তর গুলো তুমি শুধু আমাকে দিতে পারবে। কিন্তু তুমি কি তেমন অবস্থায় আছো!যে আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিবে?আচ্ছা আহান আমার কি দোষ ছিলো বলতে পারবে।তোমাকে অন্ধের মতো ভালোবাসা এবং বিশ্বাস করা আমার ভুল ছিলো।যে ভুলের শাস্থি দিলে তুমি আমাকে।শেষ পর্যন্ত তুমি আমার ভালোবাসা নিয়ে ধোকা দিলে।মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু শেষ করে দিলে।আচ্ছা তোমার মতো তোমার ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো আভার প্রতি!কেন এমন করলে আমার সাথে!কিসের জন্য মি. আহান?।”

–আভা ডুকরে কেঁদে উঠে।আহান স্তব্ধতা কাটিয়ে বলে।
–“আভা তুমি আমাকে ভুল বুঝতে পারছো।আমার ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো না।দ্বায়িত্ব বোধের কাছে আমার ভালোবাসা হেরে গেছে।এখানে আমার দোষ কোথায়?তুমি বলবে আভা।”
–আভার চোখ গুলো লাল হয়ে যায়।সে উত্তেজিত হয়ে আহানের দিকে মুখ করে বলে।
–“কিসের দ্বায়িত্ব বোধ হ্যাঁ।নিজের ভালোবাসা কে ত্যাগ দিয়ে।অন্য মেয়ের সাথে বিয়ের পিরিতে বসা তোমার দ্বায়িত্ব বোধ মি. আহান।তুমি আমার সাথে ছলনা করা বন্ধ করো।তোমার আসল রুপ আভার সামনে এসে গেছে।”
–“হ্যাঁ আভা তুমি ঠিক বলেছো।নিয়তি আমাকে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে।যেখানে আমার বলা প্রত্যেকটা কথা তোমার কাছে মিথ্যা মনে হবে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“এমন ডায়লগ আমার সামনে দিয়ে কি লাভ হবে তোমার।নিজেকে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছো।তুমি আমার সাথে প্রতারণা করোনি।আমার ভালোবাসার সাথে ধোকা করোনি।নিজেকে ভালো করে আয়নার মাঝখানে দেখো মি. আহান সবকিছু বুঝতে পারবে।”
–আহানের হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে আভার প্রত্যেকটা কথা শুনে।সে আভার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থেকে।দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে,বারান্দায় চলে যায়।তখন আভা চিৎকার করে বলে।
–“এভাবে পালিয়ে কতো দিন বেড়াবে আমার থেকে মি. আহান।তোমাকে আমার মুখোমুখি হতে হবে কোন না কোন সময়।সব প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতে হবে।”

–আভা উবু হয়ে বিছানার মাঝে শুয়ে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।আহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্তব্ধ আকাশ দেখছে।মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।সে তার প্লেনে সাফল্য হতে পারলো না এবং তার ভালোবাসা আভা কে পেয়ে হারিয়ে ফেললো।সবকিছু মিলিয়ে আহানের আজকে আকাশ সমান কষ্ট হচ্ছে।তখন তার ফোন বেজে উঠলো।সে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে।ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসলো রুমে।রুমে এসে দেখে আভা ঘুমিয়ে গেছে।নিষ্পাপ ঘুমন্ত মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আহান ফিসফিস করে বলে।
–“আহান তোমার সব প্রশ্নের উত্তর গুলো দিবে আভা।তুমি সামান্য অপেক্ষা করো।আহান তোমাকে নিজের থেকে ভালোবাসা তোমার ঐ চোখে কখনো অশ্রু ঝড়তে দিবেনা।”
–আহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আড়মোড়া হয়ে বিছানার অন্য পাশে শুয়ে পড়ে।আজকে এতো কাছে হয়ে তারা অনেক দূরে।”

–সকাল বেলা অধরার ঘুম ভাঙে দরজার কারো নক করার শব্দ শুনে।সে মিটমিট করে চোখ মেলে তাকাতে দেখে সে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ।নিজেকে এমন অবস্থায় আবিষ্কার করে চমকে যায় সে।তখন মনে পড়ে কালকে রাতের কথা।সে এখন রুদ্রের সাথে আছে।কালকে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে।তখন রুদ্রের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলতে।তিশা ফিক করে হেসে দিয়ে।নিজেকে সামলে নিয়ে।অধরার দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলে।
–“কি ব্যপার অধরা!তোমাদের দেখছি সব সম্যসা মিটে গেছে।অন্যদিকে আমরা তোমাদের নিয়ে চিন্তা করে শেষ হয়ে যাচ্ছি।আচ্ছা সবকিছু মিটে গেলে ভালো।রুদ্র বুঝি কালকে তোমাকে ঘুমাতে দেয়নি?”

–অধরা বোকার মতো মুখ করে বলে।
–“মানে ভাবি তুমি কি বলতে চাচ্ছো?সকাল সকাল তোমার ফাজলামি শুরু করে দিলে।”
–“ওহ্ অধরা তোমার দেখছি কালকে রাতের ঘোর কাটেনি এখনো।কাটবে কিভাবে তুমি তো এখনো রুদ্রের পোশাক পড়ে আছো।ঘড়ির কাঁটায় দেখেছো বারোটা বেজে পনের মিনিট।”
–অধরার বেশ লজ্জা পায়।সে ভুলে গিয়েছিল সে রুদ্রের পোশাক পড়ে আছে।তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলতে তিশা তাকে এমন অবস্থায় দেখে ফেলেছে।অধরা লজ্জামাখা মুখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তখন তার নীরবতা দেখে তিশা বলে উঠে।
–“হয়েছে এতো লজ্জা পেতে হবেনা।এখন আমাদের বারোটা বেজে যাবার আগে।রুদ্র কে নিয়ে রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি আসো।আজকে তোমাদের বৌ ভাতের অনুষ্ঠান ভুলে যাচ্ছো।”

–“হুম।”
–তিশা মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে চলে যায়।অধরা দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে।লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।তখন সে ভাবে।
–“সবকিছু ঐ রুদ্র ভাইয়ার জন্য হয়েছে।তার কথা শুনে কেন যে তার পোশাক পড়েছিলাম।এখন তাড়াতাড়ি সে জেগে উঠার আগে চেঞ্জ করে নিতে হবে।কিন্তু আমার ড্রেস গুলো আমার রুমে এখন কি হবে।এভাবে যেতে পারবো না।”
–তখন রুদ্র আড়মোড়া হয়ে ঘুম থেকে উঠে বলে।
–“এতো চিন্তা করতে হবেনা।আমি নিয়ে আসছি তোমার ড্রেস গুলো।”
–রুদ্রর কথা শুনে অধরা চমকে গিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমি?”

–“হ্যাঁ আমি আমাকে দেখে এতো চমকে যাবার কি আছে?”
–“তুমি কখন জেগে গেলে?”
–“তোমার আগে,আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।যখন উঠতে যাবো তখন দেখলাম আমার অধরা আমার বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।তারজন্য শুয়ে ছিলাম।তোমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করছিলাম”
–অধরার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।আজকে যেন নিজের সামনে অন্য রুদ্র কে দেখছে।যে রুদ্রের জন্য অপেক্ষা করেছিল সে।তার স্বপ্ন গুলো সত্যি করে তার ভালোবাসা উঁকি দিচ্ছে তার হৃদয়ের মাঝে।তখন রুদ্র উঠে গিয়ে অধরার চোখের অশ্রু মুছে দিয়ে বলে।

–” তোমার ঐ চোখে রুদ্র কখনো অশ্রু দেখতে পারবে না অধরা।তুমি অপেক্ষা করো।আমি পুরো লাগেজে করে তোমার ড্রেস গুলো নিয়ে আসছি।কেমন।”
–অধরা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।রুদ্র চলে যায়।মূহুর্তের মাঝখানে অধরার সব রাগ অভিমান গুলো হারিয়ে।মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে ভালোবাসা গুলো।অধরার অনুভব করে রুদ্র তাকে ভালোবাসে।অধরা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।সে ছুটে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে।ফিসফিস করে নিজের প্রতিবিম্ব কে বলে।
–“রুদ্র অধরা কে ভালোবাসে।রুদ্র অধরা কে ভালোবাসে।”
–অধরার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।কিছু অশ্রু আনন্দের হয়।

–আহান রুমের দরজা খুলতে দেখে তিশা দাঁড়িয়ে আছে।তখন তিশা ভ্রুকুচকে আহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“আহান ভাইয়া আপনেরা কি শুরু করেছেন বলেন তো?কয়টা বাজে দেখেছেন!আজকে আপনাদের বৌ ভাতের অনুষ্ঠান ভুলে যাচ্ছেন।এখনো বিয়ের পোশাক পড়ে আছেন।কারো কোন চিন্তা ভাবনা দেখতে পাচ্ছিনা।ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হচ্ছে আমাকে।বুঝতে পারছি কালকে অনেক ঝামেলা গেছে।কিন্তু মেমহান আসতে শুরু করবে কিছুক্ষণ পড়ে থেকে।লোকে নানা কথা বলবে।তারজন্য তাড়াতাড়ি আভা কে নিয়ে রেডি হয়ে চলে আসেন।আজকে সবার সামনে আপনাদের বিয়ের কথা বলা হবে।”

–আহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তিশার কথা শুনে যাচ্ছে এবং ভেবে যাচ্ছে।
–“যাদের বিরুদ্ধে আমার প্রতিশোধ নেবার প্লেন ছিলো।সে মানুষ গুলো আমাকে কতো আপন করে নিয়েছে।আমাকে তারা নিজের ফ্যামিলির মেম্বার মনে করে।সেখানে আমি প্রতিশোধের নেশায় তাদের বিরুদ্ধে চলে গেলাম।তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতক করার প্লেন করলাম।আমি কি মানুষ?নিজের প্রতি নিজের ঘেন্না হয়।আচ্ছা আমার কোন ভুল হচ্ছেনা তো।”
–আহানের নীরবতা দেখে তিশা বলে উঠে।
–“এতো কি ভেবে যাচ্ছেন আহান ভাইয়া?তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসেন।”
–“আচ্ছা”

—তিশা চলে যায়।আহান এসে আভার সামনে বসে আছে।আভার ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখ দেখে আহানের অনেক মায়া হচ্ছে।আহান নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে আভাকে কিন্তু সময় এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে সে দুটানাতে পড়ে সবকিছু গুলিয়ে ফেলছে।আহানের ভেতরে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।সে ডুকরে কেঁদে উঠে।তার কান্নার শব্দ শুনে আভা জেগে গিয়ে আহানের এমন অবস্থা দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“আহান তুমি ঠিক আছো?দেখো আমার দিকে। এভাবে কেন কেঁদে যাচ্ছো।তুমি এমন করলে আমার কি হবে।কেন তুমি বুঝতে পারছো না আভা তোমাকে খুব ভালোবাসে।”
–আহান আচমকা আভা কে আঁকড়ে ধরে বলে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৮

–“আভা আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করো।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি নিজের থেকে বেশি।কিন্তু প্রতিশোধর নেশায় পড়ে সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম।তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।”
–আভা আহান কে ছেড়ে দিয়ে তার মুখোমুখি হয়ে বলে।
–“কিসের প্রতিশোধ আহান?”
–“আভা তোমাকে সব বলবো।আমাকে সামান্য সময় দিবে।তুমি দয়া করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।আজকে আমাদের বৌ ভাতের অনুষ্ঠান।”
–“আচ্ছা।”

–বিকেল বেলা।
রুদ্র এবং অধরা।আহান এবং আভার বৌ ভাতের অনুষ্ঠান পালন হচ্ছে।দুটি জুটি পাশাপাশি বসে আছে।তাদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির রেখা।সব লোকজন নিয়ে বিয়ে বাড়ি জমে উঠেছে।তখন সকল কে চমকে দিয়ে রায়মান সাহেব রুদ্র এবং অধরা।আহান এবং আভার বিয়ের কথা জানিয়ে দেয়।সে কথা শুনে অনেকে চমকে গেলে।রুদ্র এবং আহান মিলে বিষয় গুলো কে সামলে নেয়।
–সবকিছু মিলিয়ে আনন্দ উৎসবে ভড়ে উঠেছিল তাদের সন্ধ্যা।তখন আচমকা কোন পুরনো চেনাজানা মুখের আগমন ঘটে সেখানে।তখন মূহুর্তের মাঝখানে সেখানে আনন্দ উৎসব থেমে যায়।স্তব্ধ হয়ে যায় সামান্য সময়ের জন্য তারা।

তোমাতে বিভোর শেষ পর্ব