তোমাতে বিভোর পর্ব ১৮ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৮
Sapna Farin

–অধরা রুদ্রের রুমে এসে বিছানার মধ্যে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ।মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে হাজারো অজানা প্রশ্ন গুলো।তার ভেতরে শুরু হয়েছে উতালপাতাল ঝড়।যে ঝড়ের আঘাত গুলো তাকে শেষ করে দিচ্ছে।সবকিছু কেমন গুলিয়ে ফেলছে অধরা।কি থেকে কি হয়ে গেলো?সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।রুদ্র এবং তার বিয়েটা হয়ে গেছে।এখন সে রুদ্রের স্ত্রী এবং রুদ্র তার স্বামী।তার কল্পনায় জল্পনায় আকাঁ স্বপ্ন গুলো সত্যি হলো আজকে।কিন্তু রুদ্র কি তাকে মেনে নিবে কখনো স্ত্রী হিসাবে?সে কি পারবে কখনো রুদ্রের জীবনে স্ত্রীর জায়গা করে নিতে!ভাগ্যের কি নির্মম খেলা কোন বন্ধনে আব্ধ হলো অধরা।যে রুদ্র সামান্য সময়ের জন্য অধরা কে সহ্য করতে পারেনা।সে রুদ্র সারাজীবন কিভাবে তাকে তাকে সহ্য করবে?আজকে এতো কাছাকাছি হয়ে তারা অনেক দূরে।কখনো কি মিটবে দূরত্ব।উঁকি দিবে কি ভালোবাসা মনের ভেতর।

–এসব প্রশ্ন গুলো অধরার হৃদয় কে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছিলো প্রতিটি মুহূর্ত।সবকিছু ভেবে অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।তার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে।নিজের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো সে।তখন রুদ্র রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিতে।অধরা মুখ তুলে তাকিয়ে রুদ্র কে দেখে।হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।তারপর রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া তুমি এখানে।তুমি এখানে কি করো? এতো রাতে!”
–রুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায়।তখন সে নিজেকে সামলে নিয়ে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে।
–“আমার রুমে আমার আসতে বারন অধরা?”
–অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“ওহ্ ভুলে গিয়েছিলাম তোমার রুম,হ্যাঁ তোমার।এখন তোমার রুম এবং তোমার জীবনে ভুল করে জায়গা হয়ে গেছে অধরার।এখন কি করবে অধরা, রুদ্র ভাইয়া তুমি বলো?তোমার অবহেলা সহ্য করে কি কাটিয়ে দিতে হবে তার সারাজীবন?মুখ বুঝে সবকিছু কি মেনে নিতে হবে তার।লোক দেখানো বিয়ে করে দূর দেশে পারি জমাবে তুমি অন্য দিকে আমি এখানে তোমার মিথ্যা অপেক্ষায় পড়ে থাকবো।তুমি মুক্তি হয়ে যাবে আমাদের মিথ্যা সম্পর্ক থেকে কিন্তু আমি!কেন আমার সাথে এমন হলো বলতে পারো।আমার গায়ের রঙ কালো বলে,তোমার কাছে থেকে যে অবহেলা সহ্য করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত আমাকে।তারপর ভাগ্যে আমাদের সাথে কোন খেলায় মেতে উঠলো।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–অধরার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।অধরার প্রত্যেকটা কথা রুদ্রের হৃদয়ে গিয়ে তীরের মতো লাগছে।রুদ্র অদ্ভুত ভাবে অধরার দিকে তাকিয়ে থেকে শীতল কন্ঠে বলে উঠে।
–“অধরা।”
–অধরা চোখের অশ্রু মুছে ছোট করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।আবার বলতে শুরু করে।

–“রুদ্র ভাইয়া তুমি আমাকে অনেক পুড়িয়েছো।আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।তুমি ভুলে যাচ্ছো সবকিছু।যখন থেকে বুঝতে শিখেছি অধরা তুমি বলতে বিভোর ছিলো।কিন্তু তুমি আমার ছায়া পর্যন্ত
সহ্য করতে পারতে না।অধরা তো দূরের কথা।আমার কি দোষ ছিলো আমার?আমার গায়ের রঙ কালো বলে।আচ্ছা কালো মেয়েদের স্বপ্ন দেখতে বারন,ভালোবাসতে বারন তুমি বলো?তুমি আমাকে এতো কষ্ট দিয়েছো না রুদ্র ভাইয়া তার হিসেবে বলার বাহিরে।তারপর আজকে যখন ভুল করে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।আমাদের বিয়ে নিয়ে কেন এতো আদ্যিক্ষেতা তোমার।আজকে তুমি এখনো অন্য কারো জন্য নিজের মধ্যে টান অনুভব করো।অধরা বড্ড বোকা ছিলো রুদ্র ভাইয়া।মিথ্যা স্বপ্ন গুলো মনের মধ্যে সাজিয়েছিল।কিন্তু রুদ্র ভাইয়া মূহুর্তের মাঝে সবকিছু শেষ করে দিলো?”

–আজকে রুদ্র কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অধরার প্রশ্ন ধারা জর্জজরিত।সে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে অধরার প্রত্যেকটা কথা শুনে।অধরার মনের মধ্যে অনেক জমানো কষ্ট রাগ ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছিল।নিমিষে সবকিছু উগড়ে ফেলছে রুদ্রের উপরে।রুদ্র অধরার অভিযোগ গুলো নীরবে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছিলো এবং নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছিলো তার।যে মেয়েটি কে এতো পুড়িয়েছে তার কথা কি কখনো ভেবে দেখেছে সে।আজকে তার সাথে বিয়েটা না হলে অবশ্যই অনেক অজানা কথা জমানো কষ্ট গুলো মেয়েটা বুকের ভেতর ধমিয়ে রেখে দিব্যি সংসার করে যেতো।রুদ্রের চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে চোখের অশ্রু আড়াল করে নীরবতা কাটিয়ে বলে।

–“অধরা তুমি অনেক কথা বলতে শিখে গেছো।
আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে অধরা।তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী।এখন তোমার দ্বায়িত্ব আমার।তোমাকে ছাড়া রুদ্র কিভাবে শুধু নিজেকে নিয়ে ভেবে যাবে।”
–অধরা বড় সড়ো ধাক্কা খেলো।ঠোঁট দুটি ভাজ করে চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া আমার সাথে এসব ড্রামা করতে এসোনা।অধরা বাস্তবতা কে মেনে নিতে পারে এবং জানে।অধরা তোমার তুমি হলো কখন?তুমি আমাকে বড্ড হাসাচ্ছো?তুমি আমাদের বিয়ে স্বীকার করো আমাকে স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করো?দেখো তোমার অবস্থা আমি বুঝতে পারছি ভালো করে।বিয়েটা ভুল করে হয়ে গেছে।সবার কথা চিন্তা করে তুমি নীরব ছিলে।তোমার কাছে আমাদের বিয়েটা বোঝা।আমার কাছে তোমার মিথ্যা ড্রামা বোঝা।যে রুদ্র ভাইয়া আমাকে সহ্য করতে পারেনা।তার আচমকা কি হলো তার এমন রূপ।তুমি আমাকে ঘেন্না করো আমার চলবে।আমাকে করুণা করো না।”

–রুদ্র কি বলবে বুঝতে পারছেনা।আজকে সে বলতে চেয়েছিল,সে অধরা নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে। শুধু বুঝতে দেরি করে ফেলেছে।এখন সে সারাজীবন অধরার সাথে থাকার স্বপ্ন দেখে পাশাপাশি চলার স্বপ্ন দেখে।কিন্তু অধরার অবস্থা রুদ্র কে ভাবাচ্ছে।অধরা এখনো অতীতে পড়ে আছে।তার দেয়া প্রতিটি আঘাত মনে আছে তার।এখন ভালোবাসার কথা বললে।সে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে রুদ্র কে ফিরিয়ে দিবে।তখন রুদ্র সীদ্ধান্ত নিলো যখন সে নিজে থেকে বুঝতে পারবে রুদ্র তাকে কতো ভালোবাসে।তখন তার ভালোবাসার কথা গুলো অধরা কে জানাবে।

–রুদ্রের নীরবতা দেখে অধরা বলে উঠে।
–“রুদ্র ভাইয়া এতো কি ভাবছো?আমাদের মিথ্যা সম্পর্কে তোমার উপরে কোন অধিকার দেখাতে আসবেনা অধরা।তুমি কোন চিন্তা করোনা।তুমি তোমার মতো থাকো।”
–অধরার ভেতরেটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।সে বুঝতে পারছিলো না তার সাথে কি হচ্ছে।নিজের ভালোবাসার মানুষ আজকে তার স্বামী তবু মনের মধ্যে রয়েছে অজানা হাজারো প্রশ্ন গুলো।রুদ্র অধরার অবস্থা দেখে সবকিছু সামলে নিতে গুটি গুটি পায়ে অধরার দিকে এগিয়ে এসে ভ্রুকুচকে বলে।
–“বিয়েটা হয়ে গেছে অধরা।আজকে আমাদের ফুলসজ্জা রাত।এভাবে তোমার কথা শুন সবকিছু কেন শেষ করবো।তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী।সো…”

–অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
–“মানে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছো রুদ্র ভাইয়া?তুমি আমার থেকে দূরে থাকো।আমার কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি।আমার কাছে আসলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো!”
–রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে বলে।
–“আমার স্ত্রীর কাছে আমি আসবো তারজন্য তোমার কি অধরা?তুমি চিৎকার করে ঠিক আছে।দেখি তোমার কাছে আসা থেকে কে আমাকে আটকাতে পারে।”

–রুদ্র মিটমট করে হেসে যাচ্ছে।অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।রুদ্রের ভাবসাব ঠিক লাগছেনা তার।তখন রুদ্র অধরার কাছে যেতে।অধরা পিছিয়ে যাচ্ছিলো তখন স্লিপ কেটে ধপাস করে বিছানার মধ্যে পড়ে যায়।তখন রুদ্র টাল সামলাতে না পেড়ে সে পড়ে যায়।দুজনের চোখ যেন দুজনের মধ্যে আটকে গেছে।রুদ্রের নিশ্বাস ফুঁকে পড়ছে অধরার মুখে।অধরার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়।রুদ্র অধরার কাছে যেতে সে চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আছে।রুদ্রের ইচ্ছে করছে অধরার সাথে মিশে যেতে তার ভালোবাসার মাঝখানে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে।কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিয়ে অধরার কপালে আলতো করে চুম্মো একে দিয়ে।তার পাশের বালিশটা নিয়ে উঠে আসতে অধরা বোকা হয়ে গেলো।রুদ্র অধরার অবস্থা দেখে অট্টহাসি দিয়ে বলে।

–“অধরা তুমি এতো নেগেটিভ চিন্তা কেন করো?”
–“হুম আমার নেগেটিভ চিন্তা করতে বয়ে গেছে।তুমি বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে?”
–“ঘুমাতে যাচ্ছি।এখানে তুমি আমার পুরো রুম দখল করে নিয়েছো।সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।”
–“তোমার রুম মানে?আজকে থেকে এটা আমাদের রুম।তোমার এতো ড্রামা করতে হবেনা।বিছানায় এসে ঘুমাতে পারো।আমার পুরো বিছানা লাগবে না।”
–“সত্যি।”
–“হুম।এতো ড্রামাটিক কবে থেকে হয়েছো তুমি?”

–রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে।ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে বিয়ের পোশাক চেঞ্জ করে একটি ট্রি শার্ট এবং টাওজার পড়েছে।সে রুমে এসে অধরা কে বলে।
–“এখনো এতো ভারী পোশাক কেন পড়ে আছে তুমি?ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসো।”
–অধরা রুদ্রের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলে।
–“এখানে আমার কোন ড্রেস এনেছি?যে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করবে।”
–“আচ্ছা তোমার রুমে থেকে তোমার ড্রেস নিয়ে আসবো?”

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৭

–“আমার জন্য তোমার এতো আদিখ্যেতা করতে হবেনা।তুমি তোমার মতো থাকো।?
–তখন রুদ্র আলমারি থেকে নিজের ট্রি শার্ট এবং টাওজার বেড় করে দিয়ে বলে।
–“এগুলো পড়তে পারো।সম্যসা কি স্বামীর কাপড় তো।”
–“কি তোমার কাপড় পড়বো।নিজেকে কি মনে করো হুম?”
–“কিচ্ছুনা মনে করিনা মেরা সুইটহার্ট।কাপড় গুলো রেখে দিলাম ইচ্ছে হলে পড়ো।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র বিছানার অন্য পাশে এসে শুয়ে পড়ে।অধরা একবার রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে আবার রুদ্রের দেয়া কাপড়ের দিকে।অবশেষে রাগে কটমট করে রুদ্রের কাপড় গুলো নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
–অধরা ফ্রেশ হয়ে রুদ্রের কাপড় গুলো পড়ে রুমে আসতে।রুদ্র আড়চোখে তাকিয়ে অধরা কে দেখছে।কাপড় গুলো অবশ্যই তার সাইজে না।কিন্তু দেখতে খুব ভালোলাগছে তার।তখন অধরা আড়চোখে রুদ্রের দিকে তাকাতে রুদ্র ঘুমের ভাব করে চোখ বন্ধ করে ফেলে।তখন অধরা মিটমিট করে হেসে রুদ্রের কাপড় থেকে ঘ্রাণ নিয়ে।বিছানার অন্য পাশে এসে শুয়ে পড়ে।

–বন্ধ রুমে বিছানার দুপাশে বিপরীত মুখ করে
আহান এবং আভা বসে আছে।দুজনের স্তব্ধতা।তখন নীরাবতা কাটিয়ে আভা বলে উঠে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৯