তোমাতে বিভোর পর্ব ১৭ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৭
Sapna Farin

–সাজানো গোছানো ফুলসজ্জা ঘরে বসে আছে অধরা।তার মনের মধ্যে শুরু হয়েছে উতালপাতাল ঝড়।যে ঝড়ের প্রতিটা আঘাত অধরা কে ভেঙেচুরে শেষ করে দিচ্ছে।ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে তার হৃদয় কে।অজানা কোন ভয় উঁকি দিচ্ছে মনের মধ্যে।সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো মূহুর্তের মাঝে।স্বপ্ন গুলো মিথ্যা হয়ে গেলো।তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ভালোবাসা হারিয়ে গেলো দূরে কোথায়।যাকে নিয়ে স্বপ্নের বাসার সাজিয়েছিল অধরা।আজকে সে অধরা অন্য কারো বাসরে বসে আছে।অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করছে।তার স্বপ্নের সংসার মূহুর্তের মাঝখানে শেষ হয়ে গেলো।মনের মধ্যে ভালোবাসার মানুষের নাম লুকিয়ে রেখে অন্য কারো স্ত্রী হয়ে গেলো।

–কথা গুলো ভেবে অধরা ফুপিয়ে কেঁদে উঠ।কিছুক্ষণ পড়ে চোখের অশ্রু মুছে।নিজেকে সামলে নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
–“আমার সবটা জুড়ে তুমি ছিলে রুদ্র ভাইয়া।তোমাতে বিভোর হয়ে তোমাতে হয়েছে শেষ অধরা।কিন্তু জীবন বড় অদ্ভুত!তারজন্য আজকে তুমি অন্য কারো বাসরে।অধরা অন্য কারো অপেক্ষায়।আমার ভাগ্য আজকে আমার সাথে কোন খেলায় মেতে উঠলো বলতে পারবে?আমার হৃদয়ে জুড়ে তোমার অধিকার।কিন্তু আমার শরীরে জুড়ে অন্য কারো অধিকার।হেরে গেলো আমার ভালোবাসা।কারো হলো ভালোবাসার পরাজয়।কারো হলো মনের জয়।”

–অধরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।ঘোমটার আড়ালে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।তখন দরজায় কড়া নেড়ে রুমে কারো আসার শব্দ শুনে।অধরা ভয়ে কুঁকড়ে যায়।সে বুঝতে পারে তার সদ্য বিবাহিত স্বামী আসছে।তখন অধরা ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে।বিছানার মাঝখানে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
–রুদ্র রুমে এসে অধরা কে এমন অবস্থা দেখে বুঝতে পারছেনা কি বলবে।তার চোখ আটকে গেলো অধরার দিকে।তার মনের মধ্য ভালোবাসার রঙ গুলো উঁকি দিচ্ছে।খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছে সে।
কিন্তু মূহুর্তের মাঝে সব রঙ গুলো হারিয়ে যায় তার।আহানের কথা ভাবতে।আজকে তার প্লেন ঠিকমতো কাজে না দিলে কি হতো?আজকে অধরা কোথায় থাকতো!কথা গুলো ভাবতে রুদ্রের বুকের ভিতরে অজানা কোন ব্যাথা অনুভব করে অধরা কে হারানোর ব্যাথা।তখন রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“ভালোবাসার রঙ লেগেছে আমার হৃদয়ে,ভালোবাসার ছোঁয়া লেগেছে আমার মনে।তোমাতে বিভোর হয়েছে রুদ্র শ্যাম কন্যা।কোন মায়ায় জড়ালে আমাকে।তোমাকে ছাড়া রুদ্র নিজেকে কল্পনা করতে পারেনা।ভালোবাসা বুঝি এমন হয়।”
–রুদ্র গুটিগুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে অধরার দিকে।অধরার কারো পায়ের শব্দ শুনে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।তখন রুদ্র অধরার কাছে গিয়ে বসতে।অধরা গুটিশুটি মেরে নীরব হয়ে যায়।সে অধরার দিকে তাকিয়ে থেকে আলতো করে তার হাত দুটি ধরতে।অধরা ছটফট করতে থাকে নিজকে তার কাছে থেকে ছাড়ানোর জন্য।রুদ্র বিষয়টা বুঝতে পেরে।অধরা কে ছেড়ে দিয়ে অধরার ঘোমটা নামাতে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায় রুদ্র কে দেখে এবং রুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায় শ্যাম কন্যার রুপ দেখে।তাদের সময় যেন এখানে থেমে যায়।

–সাজানো গোছানো ফুলসজ্জা ঘরে বসে আছে আভা।ঘোমটার আড়ালে তার মুখে উজ্জ্বল হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।এতো অপেক্ষা প্রতিক্ষার পড়ে ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পেয়েছে।কিন্তু মনের মধ্যে আহান কে নিয়ে অজানা কোন ভয় উঁকি দিচ্ছে তার।যারজন্য এতো কিছু করলে সে।তার ভালোবাসা কে কেন অপেক্ষা করলো আহান।কি ভুল ছিল তার।কেন বিশ্বাসঘাতকা করলো তার সাথে?ভালোবাসা গুলো মূহুর্তের মাঝে হারিয়ে গিয়ে আহানের উপরে রাগ অভিমান ক্ষোভ গুলো ধলা পাকিয়ে যাচ্ছে আভার মনে।

–অনেক সময় হলো এভাবে ঘোমটার আড়ালে বসে আছে সে।আহান এখনো রুমে আসছেনা।তখন সে ঘোমটা নামাতে দেখে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখে মাঝরাত।তখন আহানের জন্য কেমন চিন্তায় অস্থির হয়ে যায় আভা।তখন সে ফিসফিস করে বলে।
–“আহান তুমি ঠিক আছো?আমরা অভিমান অভিযোগ,আমার রাগ ক্ষোভের আড়ালে তোমার জন্য যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে সেটা তুমি দেখতে পারলে না।আমাকে তোমার পোড়াতে খুব ভালো লাগছে না।সময় মতো সব হিসেবে তুলবো মনে রেখো।”

–নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে আভা।তখন দরাজায় কড়া নেড়ে আহান রুমে আসে।আভা তাকে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে।ঘোমটা টেনে বসে আছে।আহান রুমে এসে স্তব্ধতা কাটিয়ে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর মুখের ঘোমটা খুলতে।সে স্তব্ধ হয়ে যায় মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় করতে পারছেনা।তখন আভা ড্রামা করে চিৎকার করে।আভার সাথে আহান তালমিলিয়ে চিৎকার করে রুমে থেকে বেড়িয়ে আসে।

–অন্যদিকে রুদ্র কে দেখে অধরা চিৎকার করে।অধরার অবস্থা দেখে রুদ্র চিৎকার করে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে।করিডোরে এসে আহানের সাথে ধাক্কা লাগে।আহান কে দেখে রুদ্র বেশ বুঝতে পারছে।যে ধামাকার জন্য অপেক্ষা করেছিল সে ধামাকা হয়ে গেছে।আহান যেন কিছু বুঝতে না পারে।তারজন্য রুদ্র ড্রামা করে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“আহান এসব কি হচ্ছে এখানে?আমার মাথা ঘুরছে আমার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হচ্ছে।আমার মনে হচ্ছে আমাদের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী উল্টো পাল্টা হয়ে গেছে।আমার স্ত্রী তোমার রুমে ভুল করে চলে গেছে।তোমার স্ত্রী আমার রুমে ভুল করে চলে এসেছে।চলো ঠিক করে ফেলি।”

–আহান রীতিমতো ঘামছে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।তারমধ্য রুদ্র কি যা-তা বলে তার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।তখন সে উত্তেজিত হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“রুদ্র তোমার মাথা ঠিক আছে?তোমার সবকিছু কমেডি মনে হচ্ছে এখানে।সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কিভাবে উল্টো পাল্টা হয়ে যাবে।আমার মাথায় কিছু আসছেনা।”

–তাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে অধরা এবং আভা আসে এখানে।তাদের দেখে রুদ্র ড্রামা করে বলে।
–“আভা এখন আমার কি হবে?আমার ইচ্ছে করছে উনিশ বিশ কিছু একটা খেয়ে উপরে চলে যেতে।”
–আভা মিটমিট করে হেসে বলে।
–“রুদ্র তুমি শুধু তোমার কথা ভাবছো?এখন আমার কি হবে।আহানের মতো বোকাসোকা লোকের সাথে আভা ভাবাযায়।আমার ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে।”

–রুদ্র এবং আভার ড্রামা দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় অধরা এবং আহান।তখন অধরা চিৎকার করে বলে।
–“থামবে তোমরা এখন?এতো ড্রামা কেন করছো!এখানে আমার এবং আহান ভাইয়ার জীবন জড়িয়ে আছে।তোমরা শুধু তোমাদের নিয়ে ভেবে যাচ্ছো।”
–তারা নীরব হয়ে যায়।আহান রেগেমেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে।তার সব প্লেন যেন মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে।এসব নিয়ে বাড়িতে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যায়।মাঝরাতে সকলে ঘুম থেকে জেগে যায়।

–রাত তিনটা বেজে ত্রিশ মিনিট বাড়ির সকলে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।ব্যাপার টা ভাবা যায়?কিন্তু এখানে হচ্ছে বাড়িতে দুটি বিয়ে এক সাথে দিয়ে যেন অনেক বড় কান্ড বাধিয়ে ফেলেছে রায়মান সাহেব।সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে রায়মান সাহেব।মুখ দিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারছেনা।কিন্তু চোখ দিয়ে অনেক কিছু বলে যাচ্ছে।বিষয় গুলো রায়মান সাহেব বুঝতে পেরে বলে।

–“আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকলে সব সম্যসার সমাধান হবে।কে জানে এমন হবে।কাজি সাহেব এবং আমার বন্ধ কে ফোন করে আসতে বললাম।কাজি সাহেব আসুক সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।এখন এতো উত্তেজিত হয়ে কি লাভ।”
–তখন অভ্র বিরক্তি নিয়ে বলে।
–“বড় আব্বু এমন বিয়ে কখনো দেখিনি?দুটি বিয়ে হয়েছে বাড়িতে কতো কাজ কতো দ্বায়িত্ব ছিলো আমার।সারাদিন কতো কিছু করতে হলো।রাতে আরাম করে ঘুমাবো।কিন্তু এখানে রাত জেগে ড্রামা দেখতে হচ্ছে।”
–রায়মান সাহেব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।যে রায়মান সাহেবের উপরে বাড়ির কোন মানুষ কথা বলেনা।সেখানে অভ্র বোকার মতো কথা গুলো বলে ফেলে।অভ্রের কথা শুনে বাড়ির অন্য সদস্যরা ফিক করে হেসে ফেলে।তখন তিশা অভ্র কে চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলে।

–“তোমার জ্ঞান হবেনা কখনো।কোথায় কি বলতে হবে?দেখেছো বাড়িতে এমন অবস্থা তারমধ্য তুমি তোমার ঘুম নিয়ে পড়ে আছো।”
–“কি করবো হ্যাঁ।জীবনে কখনো দেখেনি এমন বিয়ে।যেখানে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী উল্টো পাল্টা হয়ে যায়।”
–“এখন দেখো।তোমার কোন চিন্তা হচ্ছেনা বোন কে নিয়ে রুদ্রের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে কেমন হবে?”
–“অনেক বেশি ভালো হবে।আমার বোন সারাক্ষণ আমাদের চোখের সামনে থাকবে।”
–তিশা বিরক্ত হয়ে বলে।
–“কাকে কি বোঝাচ্ছি?মাথা মোটা লোকটার সাথে কিভাবে যে সংসার করি।”
–“কেন কি হয়েছে।এখন বিয়ে দেখে তোমার কি বিয়ে করার ইচ্ছে করছে আবার।”
–“তোমার মতো মানুষের সাথে কথা বলা আমার ভুল হয়েছে।”
–তিশা রাগে কটমট করে চলে যায়।

–কাজি সাহেব এবং অয়ন সাহেব এসেছি।কাজি সাহেব ভয়ে কেমন গুটিয়ে যাচ্ছে।তখন রুদ্র তাকে ইশারা করে বলে।সবকিছু সে সামলে নিবে।
–রায়মান সাহেব এবং মিসেস রিমিঝিম,আয়মান সাহেব এবং মিসেস মানহা,রুশা,অভ্র এবং তিশা।অধরা এবং আহান সবার মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।তারা শুধু অপেক্ষা করছে কাজি সাহেব বলে তারজন্য।কিন্তু রুদ্র এবং আভা ধামাকা দেখে মজা নিচ্ছে।তখন নীরবতা কাটিয়ে কাজি সাহেব নিজের খাতা বেড় করে।কাঁপা কাঁপা গলায় সকল কে পড়ে শোনালেন কার সাথে কার বিয়ে হয়েছে।

–“রুদ্রের সাথে অধরার এবং আহানের সাথে আভার।”
–কথা গুলো শুনে সবার চোখ গেলো কাজি সাহেবের দিকে।তখন রুদ্র তার সামনে গিয়ে বলে।
–“আসলে তার কি দোষ এভাবে দুটি বিয়ে হয়েছে।যে কোন মানুষ গুলিয়ে ফেলবে।দোষ তার যে এভাবে দুটি বিয়ে দিয়েছে।এখন কি তোমরা পুরো মিডিয়া কে জানাতে চাচ্ছো আমাদের এমন উল্টো পাল্টা ঘটনার কথা।তাহলে আমাদের মান সম্মান কি থাকবে।আমার মাথায় একটা প্লেন আছে।কালকে তো বৌ ভাতের অনুষ্ঠান কালকে আমারা আমাদের বিয়েটার কথা বলে দিবো।তখন বলবো সারপ্রাইজ। সবকিছু ঠিক থাকবে ভেবে দেখো এখন তোমাদের ইচ্ছে।।”

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৬

–রায়মান সাহেব কি করবে বুঝতে পারছিলোনা।তখন সে বলে।
–“রুদ্র ঠিক বলেছে।এখন এসব নিয়ে কথা বাড়ানো মানে অনেক প্রশ্নের সামনে আসতে হবে আমাদের।ভুল হয়ে গেছে।কিন্তু সবকিছু ভাগ্য রুদ্রের সাথে অধরার বিয়ে মেনে নিচ্ছি এবং আহানের সাথে আভার।কারো কোন কিছু বলার আছে?”

–তার কথা শুনে সকলের নীরবতা।কাজি সাহেব এবং অয়ন সাহেব চলে গেলো।এখন সবকিছু মেনে নেয়া ছাড়া কিছু দেখতে পারছিলো না অয়ন সাহেব।তখন রায়মান সাহেব বলে।
–“সবকিছু তো মিটে গেলো।কালকে বৌ ভাতের অনুষ্ঠান।এখন তোমারা নিজেদের রুমে যাও।”
–রায়মান সাহেব চলে গেলো।সকলে নিজেদের রুমে চলে গেলো।কারো মন খুশিতে আত্নহারা হচ্ছে।কারো মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে হাজারো।

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৮