তোমাতে বিভোর পর্ব ১৬ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৬
Sapna Farin

–কিন্তু এমন অবস্থায় আহান এখন কিছু করতে পারছেনা।শুধু অপেক্ষা ছাড়া।তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ এবং কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।বুকের ভেতর কেমন অস্থিরতা অনুভব করছে সে।সামান্য ভুলের জন্য তার পুরো প্লেন উল্টো পাল্টা হয়ে যায়।যে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে নিজের ভালোবাসা ত্যাগ দিলো।সে প্লেন কোন কারণে নষ্ট হলে আহান শেষ।

–তখন আহান বিড়বিড় করে বলে।
–“এসবের কি খুব দরকার ছিলো!দুটো বিয়ে একসাথে দেবার?সব ঝামেলা এখানে হচ্ছে।তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে গেলে চিন্তা মুক্ত হতে পারবো।শুধু অপেক্ষা কাজি সাহেবের।কাজি সাহেব এসে তাড়াতাড়ি বিয়েটা পড়িয়ে দিলে সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে।তারপর শুরু হবে আহানের আসল খেলা।”

–এসব বলতে আহানের মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।
–কিছুক্ষণের মধ্যে কাজি সাহেব এসে গেলো।এখন শুধু বিয়ে পড়ানোর অপেক্ষা।এসব শুনে আহান যেন চিন্তা মুক্ত হলো।কিন্তু আভার বুকের ভেতর কেমন ছটফট করছে।কোন অজানা ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।চিন্তায় ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।রুদ্রের সাথে বিয়েটা না হয়ে যায় অবশেষে।অন্যদিকে অধরা নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।তার সাজানো গোছানো স্বপ্নের সংসার মূহুর্তের মাঝে শেষ হতে চলেছে।শুরু হতে চলেছে জীবনের অন্য অধ্যায়।সে সবকিছু নিজের ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।এসবের মাঝখানে রুদ্র চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।তবু নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।সবকিছু ভালোভাবে মিটে গেলে হয়।প্লেন মতো কাজ হলে হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–রুদ্রের নীরবতা দেখে আভা রুদ্র কে ফিসফিস করে বলে।
–“রুদ্র তুমি এখনো এতোটা কুল কিভাবে আছো?
কাজি সাহেব এসে পড়েছে বিয়েটাতো হয়ে যাবে। কিছু করো!”
–রুদ্র ফিসফিস করে বলে।

–“ওহ্ আভা নিজেকে স্বাভাবিক রাখো।এখন এমন উত্তেজিত হলে হবেনা।মাথা ঠান্ডা রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।আমার প্লেন মতো সবকিছু হবে। সামান্য সময় অপেক্ষা করো।ওয়েটার এসে ইচ্ছে করে অধরার উপরে সামান্য ড্রিংক ফেলে দিবে।আহান তখন তার উপর বিরক্ত হবে।সে সুযোগ মতো তুমি এবং আমি এখান থেকে ভেতরে চলে যাবো।অধরা আহান কে থামিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যাবে।তারপর আমাদের আসল প্লেন শুরু হবে।তুমি অধরার জায়গায় এসে বসে পড়বে এবং আমি অধরা কে নিজের সাথে নিয়ে আসবো।তারপর কাজি সাহেব কে সবকিছু বলা আছে।”

–“রুদ্র তুমি এতো প্লেন কোথায় থেকে পেলে।আমার তো খুশিতে আত্নহারা হতে ইচ্ছে করছে।”
–“নিজেকে স্বাভাবিক রাখো আভা।সামনে অনেক সময় পড়ে আছে খুশিতে আত্নহারা হবার জন্য।এখন আমাদের প্লেন মতো কাজ করতে হবে।”
–“হুম।”

–তখন আহানের আচমকা চিৎকার চেচামেচি শুনা যাচ্ছে।সে কোন ওয়েটারের উপর ক্ষেপে গিয়ে তাকে কথা শোনাচ্ছে।
–“দেখে কাজ করতে পারোনা?তোমাদের মতো মানুষ কে কেন যে কাজে রাখা হয়।ঠিক মতো ড্রিংক স্রাফ করতে পারোনা?তাহলে এসব কেন করতে আসো।দিলেতো আমার মিসেসের উপর ড্রিংক ফেলে।”
–আহান রাগে পুরো ক্ষেপে আছে।বিয়ে নিয়ে এতো চিন্তা হচ্ছে তার।তারমধ্যে ওয়েটারটা কোথায় থেকে এসে অধরার উপরে ড্রিংক ফেলে দিলো।

–আহানের এমন উত্তেজনা দেখে।ওয়েটার করুণ কন্ঠে বলে।
–“স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে।এতো মানুষের ভিড়ের মাঝে সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।তারমধ্য দুটি বিয়ের সব কাজের দ্বায়িত্ব আমাদের উপরে এসে পড়েছে।স্যারি স্যার এমন ভুল আর হবেনা ক্ষমা করে দেন।”
–“কতো বড় সাহস তোমার।ভুল করবে আবার আমার মুখের উপর কথা শোনাচ্ছ?তোমার মতো মানুষ কে কে কাজে রেখেছেন?”

–তখন রুদ্র ফিসফিস করে আভাকে বলে।
–“আভা ড্রামা শুরু হয়ে গেছে চলো এখন।”
–“হুম।”
–রুদ্র এবং আভা ভেতরে চলে যায়।আহানের উত্তেজনা দেখে অধরা বলে।
–“আহান ভাইয়া হয়েছে এখন থামেন।তার ভুল হয়েছে সে ক্ষমা চেয়েছে।লোকটা কে ছেড়ে দেন এখন।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
–“আচ্ছা তুমি বললে বলে।”
–আহান রাগে কটমট করে ওয়াটারের কে বলে।
–“এমন ভুল যেন দ্বিতীয় বার না হয়।মনে থাকে যেন।”
–“জ্বি স্যার।”

–লোকটা চলে যায়।অধরা ফ্রেশ হতে যায়।সে মূহুর্তে আহানের ফোন আসে।তখন সে ফোনে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
–কিছুক্ষণের মধ্যে অধরা জায়গায় আভা এসে বসে পড়ে।তখন আহান বলে।
–“তুমি এসেছো?”
–আভা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে ঘোমটার আড়াল থেকে।
–রুদ্র অধরার জন্য অপেক্ষা করছে।অধরা বেড় হতে।তার হাত ধরে নিজের সাথে নিয়ে আসে।অধরা অবাক হয়।কিন্তু সে নীরবে সবকিছু সহ্য করে নিচ্ছে।

–কিছুক্ষণ পড়ে কাজি সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করে।রুদ্র তাকে ইশারা করে সবকিছু বলে দিয়েছে।অবশেষে রুদ্র এবং অধরা।আহান এবং আভার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।তারপর সকলে সদ্য বিবাহিত বধূর মুখ দেখার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়লে।রুদ্র দ্রুত আহানের কাছে গিয়ে তার কানে ফিসফিস করে বলে।
–“মেরা জানে জিগার দোস্ত আমার ইচ্ছে ছিলো।ফুলসজ্জা রাতে আমরা আমাদের স্ত্রীর মুখ আগে দেখবো।তারপর অন্যরা দেখবে তুমি কি বলো?”

–আহানের ভিতরেটা যেন জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে রুদ্রের কথা শুনে।সে প্রতিশোধের নেশায় মাতাল হয়ে নিজের ভালোবাসা কে তো ত্যাগ দিয়ে ফেলেছে।কিন্তু এখন বুঝতে পারছে আভাকে হারানোর কষ্ট।এখন এমন মূহুর্তে সে কিছুতে আভাকে রুদ্রের স্ত্রীর রূপে দেখতে পারবেনা।তারজন্য রুদ্রের কথা মতো আহান তার সাথে তাল মিলিয়ে বলে।
–“মেরা পেয়ারা দোস্ত তুমি ঠিক বলেছো।তো দেরি কিসের আমাদের মতামত প্রকাশ করা যায় এখন।”
–“হুম।”

–তখন রুদ্র এবং আহান বলে উঠে।
–“এতো তাড়াতাড়ি কিসের?বিয়েতো আমাদের হয়েছে।এসব দেখাদেখি পড়ে হবে।আগে তো আমরা আমাদের স্ত্রীর মুখ দেখবো।”
–তাদের কথা শুনে সকলে স্তব্ধ হয়ে গেলো।হচ্ছেটা কি এখানে?সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।এটা কোন কথা হলো।তখন রুদ্র বলে সবার উদ্দেশ্যে।
–“সব হবে আগামীকাল।কালতো আমাদের বৌ ভাতের অনুষ্ঠান তখন এসব মুখ দেখাদেখি হবে কেমন।সকলে আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।”

–রুদ্র কে দেখে তার পুরো ফ্যামিলি স্তব্ধ হয়ে গেছে।যে ছেলের বিয়েতে কোন ইন্টারেস্ট ছিলোনা।তার এমন অদ্ভুত ব্যবহার কি করে হয়।রুশা এবং তিশা চোখাচোখি করে।রুশা বলে।
–“ভাবি আমার কিছু ঠিক লাগছেনা।মনে হচ্ছে ভিতরে কোন ঝামেলা আছে।এমন কেন করবে রুদ্র ভাইয়া এবং আহান ভাইয়া?”
–তখন তিশা বলে।

–“আমারো কেমন এলোমেলো লাগছে সবকিছু।মনে হচ্ছে কোন বিশাল বড় ঝামেলা করছে।কোন কিছু তো হচ্ছে আমাদের আড়ালে আমারা বুঝতে পারছিনা।”
–তাদের এভাবে ফিসফিসয়ে কথা বলতে দেখে অভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“সিরিয়াল দেখে তোমাদের এমন অবস্থা হয়েছে?মনে হচ্ছে তোমরা কোন সিরিয়ালের ননদ ভাবি।তোমাদের আলোচনা শেষ হলে।এখন বাড়ির উদ্দেশ্য বেড় হতে পারবো।”

–তিশা অভ্রের দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বলে।
–“অভ্র মেয়েদের সমাবেশে তোমার এখানে কি?তোমার কি কোন কাজ আছে?আমাদের পিছনে লাগা ছাড়া।”
–“কাজ আছে বলে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছি।দয়া করা আলোচনা বন্ধ করে এবার চলো।আমাকে উদ্ধার করো।”

–“হয়েছে আমার সামনে এতো ড্রামা করতে হবেনা।দেখলাম তো চোখের সামনে সবকিছু।তুমি এমন লুচ্চা!বিয়েতে যে মেয়েগুলো এসেছিল তাদের দেখে কিভাবে দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছিলে।তুমি কি মনে করেছিলে সবকিছু আমার চোখের আড়াল হয়েছে।তুমি একটা লুচ্চা আগে জানা ছিলো না।হু।”
–“কি আমি লুচ্ছা?তুমি এভাবে বলতে পারলে তিশা।”
–তাদের দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া দেখে।রুশা ফিক করে হেসে ফেলে বলে।
–“এবার চলো।বাকি ঝগড়া বাসায় গিয়ে করো।”
–তিশা অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“হুম ঠিক বলেছো।সব হিসাব তোলা থাকবে।”
–“আচ্ছা এতো ভয় দেখাতে হবেনা।”
–কথা গুলো বলে।অভ্র সবার উদ্দেশ্যে বলে।

–“বাহিরে গাড়ি এবং ড্রাইভার আছে।তাহলে আমরা বেড়িয়ে পড়ি।ওহ্ হ্যাঁ ভুলে গিয়েছিলাম,সদ্য বিবাহিত দের জন্য আলাদা করা গাড়ি রাখা আছে।তোমরা চলে এসো।”
–অভ্রদের ফ্যামিলির লোকজন বেড়িয়ে পড়ে বাসার উদ্দেশ্য।

–অধরা নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে ঘোমটার আড়ালে।তখন রুদ্র আচমকা অধরার হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।অধরা স্তব্ধ এমন অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা সে।কিন্তু তার কেন যেন মনে হচ্ছে কোন চেনা স্পর্শ পাচ্ছে সে।কিন্তু মূহুর্তের মধ্যে মনে হলে তার।সবকিছু ভুল ভাবছে সে তার বিয়েতো আহানের সাথে হয়েছে।এখানে রুদ্র কিভাবে আসবে।আসলে রুদ্রের ভাবনার মাঝখানে এতো বিভোর ছিলো যে সবকিছু তে রুদ্র কে খুঁজে পাচ্ছে।
–আহান স্তব্ধ হয়ে আভার ভাবনার মাঝখানে বিভোর হচ্ছে।তখন আভা আচমকা আহানের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।আহান চমকে যায় অধরার এমন অবস্থা দেখে।কিন্তু আহানের মনে হচ্ছে কোন চেনা স্পর্শ।তখন সে ভাবে এখানে আভা কি করে আসবে?আহান তো নিজে হাতে তার ভালোবাসা কে মেরে ফেলেছে।আসলে আভার ভাবনার মাঝখানে এতো বিভোর ছিলো যে আভাকে সব সময় অনুভব করছে।

–নিজের গতিতে গাড়ি চলছে।রুদ্র এবং অধরা,আহান এবং আভা।দুটি গাড়ির মধ্যে ব্যাক সিটে বসে আছে।অধরা ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছে রুদ্র অপেক্ষা করছে ধামাকা কিছুর।তখন অধরার স্তব্ধতা দেখে ভাবে।
–“আমাকে ভালোবেসে আহান কে বিয়ে করা।অধরা তোমার সাহস কি করে হয়।আমার ভালোবাসা কে এতোটা অপমান করা?এতোদিন রুদ্রের ঘেন্না দেখেছো এখন দেখবে রুদ্রের ভালোবাসা সহ্য করতে পারবে তো অধরা।”
–কথা গুলো ভাবতে রুদ্রের মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৫

–আহান আভার ভাবনার মাঝখানে বিভোর হয়ে আছে।প্রতিশোধের আগুনে গুলোর থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে ভালোবাসা হারানোর কষ্ট।সে কখনো বুঝতে পারেনি আভাকে হারানোর পড়ে এতো কষ্ট হবে তার।আভা ঘোমটার আড়ালে খুশিতে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছে।সে তখন ভাবতে থাকে।

–“আমার ভালোবাসা কে অপেক্ষা করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করা।এতোদিন আভার ভালোবাসা দেখেছো।এবার দেখো আভা তোমার কি অবস্থা করে মি.আহান।গেম শুরু করেছিলে তুমি শেষ করবে আভা।”
–কথা গুলো বলতে আভার মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।
–রুদ্র এবং আভা ধামাকা কিছুর অপেক্ষা করছে।অন্যদিকে আহান এবং অধরা নিজের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে।কারো ভালোবাসার হয়ে জয় কারো মনের হয়েছে পরাজয়।এসবের মধ্যে তারা তোমাতে বিভোর হচ্ছে।

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৭