তোমাতে বিভোর পর্ব ১৫ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৫
Sapna Farin

-রুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায়।সে বুঝতে পারছেনা তার সাথে কি হচ্ছে?সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে।তাহলে কি তার চোখের দেখা এবং বোঝার মধ্যে কোন ভুল ছিলো।আভার সাথে আহানের কোন রিলেশন ছিলোনা?তাদের মধ্যে রিলেশন থাকলে আহান অধরা কে কেন বিয়ে করতে চাচ্ছে।এবং আভা কেন রুদ্রের সাথে বিয়েতে মতামত দিচ্ছে!এসব ভাবতে সবকিছু কেমন উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে রুদ্রের।সবকিছুর মধ্যে রুদ্র কেমন যেন ডুবে যাচ্ছে।কোন কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেনা।নিজের মনের মধ্যে অজানা কোন ঝড় শুরু হয়েছে।সে ঝড়ের ঝাপ্টা গুলো রুদ্র কে শেষ করে দিচ্ছে।সে সবার বিরুদ্ধ গিয়ে কোন কিছু বলতে পারেনা।তার কাছে কোন প্রমাণ ছিলো না।আহান এবং আভাকে নিয়ে।তারজন্য সে নীরব ছিল অপেক্ষা করছিল সঠিক সময়ের।তারমধ্য অবশেষে রুদ্রের সাথে আভার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।আগামী সপ্তাহে রুদ্রের সাথে আভার বিয়ে।বিয়ের দিন যতো এগিয়ে আসছে রুদ্রের মনে অনেক প্রশ্ন গুলো উঁকি দিচ্ছে।কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর রুদ্র জানেন।

–সাত দিন পড়ে।
আজকে রুদ্রদের বাড়িতে বিয়ে।একটি নয় দুটি বিয়ে।বাড়িতে বিয়ের তোরজোর শুরু হয়েছে রুদ্র এবং আভার,আহান এবং অধরার।সকলে বিয়ে নিয়ে ব্যাস্ত কিন্তু রুদ্র সে ভাবনার মাঝখানে ডুবে আছে।সে জানে সামান্য ভুল সীধান্ত সবার জীবনে অন্ধকার নিয়ে আসবে।কিন্তু এখানে যেন তার কোন কিছু করার ছিলো না।বিয়ের সামান্য কয়েক ঘন্টা বাকী।রুদ্র ভাবনা গুলো ভেবে ঘুমিয়ে যায়।তখন তার স্বপ্নে আসে কোন শ্যাম কন্যা।সে এসে তার কানে ফিসফিস করে বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া তোমার বুকের ভেতর কি আমাকে ছাড়া অন্য কারো জায়গা হবে?তোমার সবটা জুড়ে যে অধরার বসবাস।”
–এমন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে রুদ্রের ঘুম ভেঙে যায়।সে হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে।কোন কিছু না ভেবে সোজা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।তার মনে অনেক অজানা প্রশ্ন গুলো তাড়া করে বেড়াচ্ছে।সে প্রশ্নের উত্তর গুলো শুধু আভা দিতে পারবে।রুদ্র আভা দের বাসার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–রুদ্র আভা দের বাসায় আসতে।আভার বাবা তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“রুদ্র তুমি এমন সময় এখানে।কোন সম্যসা?”
–“আংকেল আমার আভার সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।আভা কোথায়?”
–“নিজের রুমে আছে।”
–“আচ্ছা আংকেল ধধন্যবাদ।”
–রুদ্র ছুটে সিড়ি দিয়ে উঠে আভার রুমে চলে যায়।সে এতো উত্তেজিত ছিলো যে নক না করে আভার রুমে যেতে দেখে।আভা কারো ছবির ফ্রেম বুকে জড়িয়ে রেখে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।তখন রুদ্র আভাকে ডাকতে।আভা চমকে গিয়ে ছবির ফ্রেম আড়াল করে চোখের অশ্রু মুছে রুদ্র কে বলে।

–“রুদ্র!”
–রুদ্র আভার কাছে গিয়ে বলে।
–“হ্যাঁ আমি।আভা তুমি ভুল করছো।কিছু সময় পড়ে তোমার বিয়ে আমার সাথে।এখানে তুমি অন্য কারো ছবির ফ্রেম বুকে জড়িয়ে নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছো।এসব কি আভা?এমন বিয়ে করে তুমি ভালো থাকতে পারবে আমার সাথে।আমাদের ভুল সীধান্ত আমাদের পুরো জীবন শেষ করে দিবে।তোমাকে এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে তুমি এড়িয়ে যেতে।কিন্তু আজকে দয়া করে বলবে সবকিছু আমাকে।”

–আভা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে।
–“রুদ্র আমার ভুল হয়েছে।তোমাকে আমার সবকিছু আগে বলে দেয়া দরকার ছিলো।সেদিন ড্যাডের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েতে রাজী হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম আহানের সাথে কথা বলে সবকিছু ঠিক করে নিবো।কিন্তু আহান আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।সে আমাকে ভালোবাসে তোমার কাজিন অধরা কে বিয়ে করছে।এসব শুনে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।তারজন্য তোমার সাথে বিয়ে করার সীধান্ত নিয়েছিলাম।”

–রুদ্র অস্ফুটস্বরে বলে।
–“আভা?”
–আভা রুদ্রকে আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে।
–“রুদ্র আমার ভুল হয়েগেছে।এখন কি করবো বলো?সবকিছু কেমন শেষ হয়ে গেলো।”
–“আভা তুমি আহান কে ভালোবাসো এবং আহান তোমাকে।এখানে অধরা সাথে আহানের বিয়ে হলে এবং আমার সাথে তোমার তাহলে আমাদের সবার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।আভা আমার তোমাকে ভালো লাগে কিন্তু আমার ভালোবাসা অধরা।যে মেয়েটি কালো বলে তাকে সহ্য করতে পারতাম না।সে মেয়েটি কখন আমার মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বুঝতে পারিনি।”

–আভা চমকে গিয়ে রুদ্র কে ছেড়ে দিয়ে বলে।
–“অধরা সে কাকে ভালোবাসে?”
–“অধরা আমাকে ভালোবাসে।রুদ্র অন্ধ ছিলো তারজন্য অধরার ভালোবাসা বুঝতে দেরি করে ফেলেছে।কিন্তু এখনো আমাদের সময় আছে।”
–“রুদ্র তুমি কি করতে চাচ্ছো?সামান্য কয়েক ঘন্টা পড়ে বিয়ে এখন কি করতে চাচ্ছো।”
–“বিয়েতো হবে আমার সাথে অধরার এবং তোমার সাথে আহানের।”
–“মানে?”

–“আভা তুমি আহান কে ভালোবাসো।সে তোমাকে ভালোবাসে।তুমি পারবে আহান কে ঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে।এখন তোমার সীধান্ত তুমি কি করবে।”
–“কিন্তু অধরা এসব জানে?”
–“না!আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পড়ে অধরা।আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।সেখানে এসব কিছু নিয়ে কথা বলে।আমাদের প্লেন আহানের কাছে পৌছেঁ দিতে পারবো না।”
–“কিন্তু রুদ্র আমরা কোন ভুল করছিনা তো?”
–“ওহ্ আভা তুমি কেন এতো চিন্তা করছো।ভালোবাসার কাছে কোন ভুল হয় না।এখানে আমরা কোন ক্রাইম করছিনা।আমাদের ভালোবাসা গুলো কে জয় করতে যাচ্ছি।বুঝতে পারছো বোকা মেয়ে।”
–“হুম।”
–“তাহলে কাছে এসো।”
–“মানে?”
–“এতো নেগেটিভ চিন্তা কেন করো?আমার প্লেন গুলো শুনো কাছে এসো।”
–“হুম বলো।”
–রুদ্র আভার কানে সবকিছু ফিসফিস করে বলে।দ্রুত বেড়িয়ে পড়ে।

–রুদ্র কাজি অফিসে বসে আছে।তার সামনে বসে আছে কাজি।কাজি কে সবকিছু খুলে বলতে।সে সোজা না করে দিলো।রুদ্র তখন চেয়ার টেনে তার সামনে বসে।কচকচে হাজার টাকার নোট গুলো তার সামনে রাখতে।কাজির চোখ গুলো লোভে ভরে গেলো।এসব দেখে রুদ্র টাকার অংক বাড়িয়ে দিতে।কাজি সাহেব হাসি মুখে বলে।
–“তোমার কথা মতো সব হবে।কিন্তু বড় স্যার সবকিছু জানতে পারলে আমাকে শেষ রক্ষা হবেনা বাবাজী।আমার কি হবে বলো।”

–রুদ্র মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে।কচকচে হাজার টাকার দুটো বান্ডিল তার টেবিলে রেখে বলে।
–“কাজি সাহেব এগুলো রাখেন।শুধু মুখ বন্ধ রেখে আমার কথা মতো কাজ করবেন।এমন বান্ডিল আরো পাবেন।এখন বলেন কি করবেন।”
–কাজি সাহেবের মুখখানা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে যায়।সে টাকা গুলো নিয়ে বলে।
–“কোন চিন্তা করোনা বাবাজী।তোমার কথা মতো সব হবে।তুমি শুধু কাগজ কলমে লিখে দিয়ে যাবে সবকিছু।কার সাথে কার বিয়ে এবং বিয়ের সময় জুটিকে সাথে রাখবে।তাহলে সব হবে।”
–“জ্বি কাজি সাহেব অবশ্যই।সবকিছু আমার উপরে ছেড়ে দেন।”
–রুদ্র কাগজ কলমে সবকিছু লিখে দিয়ে বলে।

–“কাজি সাহেব সময় মতো কমিটি সেন্টারে চলে আসবেন।আমার অনেক কাজ আছে বিয়ের জন্য তো স্যাম পোশাক কিনবো।তাহলে তো সবকিছু খুব সহযে হয়ে যাবে।বধূর মাথায় ঘোমটা দিয়ে ডাকা থাকবে।বরের মুখ মুকুটে ডাকা থাকবে।কৌশলে বড় বধূ চেঞ্জ হয়ে যাবে।আপনি শুধু কাজটা ঠিক মতো করবেন।বুঝতে পারছেন।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।কাজি সাহেব রুদ্রের প্লেন শুনে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে।
–“আচ্ছা ঠিক আছে সবকিছু তোমার কথা মতো হয়ে যাবে বাবাজী।”
–“আচ্ছা দেখা হচ্ছে তাহলে আবার।”
–কথা গুলো বলে রুদ্র দ্রুত গতিতে সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

–রুদ্র শপিংয়ে এসেছে সাথে আভাকে ফোন করে নিয়ে এসেছে।সবকিছু কেনাকাটা হলে।আভাকে সবকিছু পুনরায় বুঝিয়ে দিয়ে।সে বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায় এবং আভা নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।

–রুদ্র বাসায় ফিরতে অনেক প্রশ্নের সামনে হতে হচ্ছে তাকে।আজকে বিয়ে কিন্তু তার কোন চিন্তা ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।সে সারাক্ষণ বাসার বাহিরে আছে।তখন রুদ্র সকল কে সামলে নিয়ে বললো।
–“বিয়ের ড্রেসের জন্য গিয়েছিলাম।তোমরা এখানে আমাকে প্রশ্ন করে আটকে দিচ্ছো।আমাকে বলার সুযোগ তো দিবে?বিয়েতে সবকিছু ম্যাচ হবে আজকে আমাদের।আমার ইচ্ছে ছিলো যেহেতু আজকে দুটি বিয়ে সেহেতু ড্রেস ম্যাচ করলে কেমন হয়।আর হ্যাঁ বিয়ের আগে বর বধূর মুখ ডাকা থাকবে।বিয়ের পড়ে সব দেখাদেখি হবে বুঝতে পারছো।”

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৪

–সকলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“এটা কেমন নিয়ম?”
–“এটা কোন নিয়ম না।সারপ্রাইজ বুঝতে পারছো।”
–“আচ্ছা ঠিক আছে।এখন তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য প্রস্তুত হবে।”
–“হুম যাচ্ছি।”
—রুদ্রের মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।সে আহান এবং অধরা দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে।মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে চলে যায়।

–সকলে কমিটি সেন্টারে এসে পড়েছে।দুটি জোরা বর বধূ সেজে বসে আছে।ঘোমটার আড়ালে বধূর মুখ ডাকা এবং মুকুটের আড়ালে বরের মুখ ডাকা। আহানের মনে প্রশ্ন জাগছে রুদ্রের এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে।তারমধ্য রুদ্রের সাথে আভার বিয়ে হচ্ছে।
–“তাহলে তারা মিলে কোন প্লেন করছে নাতো?”
–এসব ভাবতে আহানের বুকের ভেতর অজানা কোন ভয় উঁকি দিচ্ছে।”

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৬