তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত গল্পের লিংক || নুশা আহমেদ

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ১
নুশা আহমেদ

বিয়ে বাড়ি থেকে দৌড়ে পালাচ্ছি কারন যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আমার একমাএ মামাতো ভাই মাফিয়া প্লাস ডাক্তার সায়ান চৌধুরী । বিয়েটা আসলে আমার ছিলো না বিয়েটা ছিলো সায়ান ভাইয়ার সাথে আমারই একমাত্র বড় বোনের। কিন্তু বিয়ের দিন আপুকে রিজেক্ট করে আমাকে করতে চেয়েছেন তাই সাজার জন্য আমাকে আলাদা রুমে রেডি হওয়ার জন্য দিয়েছে আর আমি সেই সুযোগে আমার বেস্ট ফেন্ড ইমার সাহায্যে বাড়ি থেকে পালিয়েছি।

জানি না বাড়িতে এখন কি আলামত হচ্ছে, আমি দৌড়াতে দৌড়াতে কোথায় যাচ্ছি সেটাও জানি না আমি কিন্তু এটা জানি আমার এই গ্রাম থেকে যে কোনো মূল্যই বের হতে হবে তা না হলে ভাইয়ার কবলে পড়তে বেশি সময় লাগবে না আর যদি একবার ভাইয়ার কবলে পড়ি তাহলে আমাকে আর মনে হয় কেউ খুঁজে পাবে না। আমার প্রথমই সন্দেহ হয়েছে হঠাৎ করে আপু কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলো কেনো ভাইয়া তো জানতো আপু আরেকজন কে ভালোবাসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর রাজি হয়েও কেনো এখন আপুকে রেখে আমাকে বিয়ে করতে চায় কিছুই মাথায় আসতেছে না । বিকাল হয়ে আসছে আসরের আজান দিতেছে তা কানে আসছে তার মানে চারটা বাজে। কোথায় যাবো সেটা না ভেবেই কিছু টাকা আর দুই তিনটা কাপড় আর মোবাইল নিয়ে বের হয়ে গেছি বাড়ির পিছন দিক দিয়ে তেমন বড় করে হচ্ছে না তাই মানুষ কম আর ঝামেলাও কম।

কোথায় যাওয়া যায় চিন্তা করতে করতে হটাৎ আমার কলেজের এক বান্ধবীর কথা মনে পরেছে তার সাথে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে ভালোই সখ্যতা হয়েছিল আমার তাই তাড়াতাড়ি তার মোবাইলে ফোন দিতে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখি৷ মোবাইলে ভাইয়ার আট চল্লিশ টা ফোন সাতাইশ টা মেসেজ আবার এখনও বাজতেছে আমি মাএ বাড়ি থেকে চল্লিশ মিনিটের দূরে ব্রিজে আছি ভাইয়া বাইক দিয়ে আসলে এখনই আমাকে ধরে ফেলবে। আর ধরে ফেললে আমি শেষ তাই পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা মিশু আসছে তাই তাড়াতাড়ি হাত উঠালাম আমার হাত উঠানোতে মিশুক ওয়ালা দাড়ালে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

-মামা নরসিংদী যাবেন…?
-হে জামু উঠুন।
আমিও আর সময় নষ্ট না করে গাড়িতে উঠে বসলাম । এখনো ভাইয়ার ফোন বাজছে। যেতে যেতে পরিচয় টা দিয়ে দেই আমি নুশা আহমেদ আমরা দুই বোন এক ভাই বড় বোন নিশি তার পর ভাই নিশাত তার পর আমি নুশা। আমি এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ আর আপু অর্নাস চতুর্থ বর্ষ আর ভাইয়া দ্বিতীয় বর্ষ। আমি ছোট বলে সবার আদরেরই বটে। আর যার কথা এতো ক্ষন বলছি সায়ান চৌধুরী সে আমার একমাএ মামার একমাএ সন্তান তার কোনো ভাই বোন নাই সে একজন হার্ট সার্জন তার পরও আবার মাফিয়া ।

মাফিয়া এটা অবশ্য আমি অন্য মানুষের কাছ থেকে শুনেছি আমার বাড়ির কেওই এটা বিশ্বাস করে না একমাত্র আমার বাবা ছাড়া। আমার আম্মুর তো খুব আদরের ভাইয়ের ছেলে সায়ান ভাইয়া নিজের ছেলের থেকে বেশিই ভালো বাসে। আমি বরাবরই ছোট বেলা থেকে আর কাউকে ভয় না পেলেও জমের মতো ভয় পাই ভাইয়াকে। আপু ভাইয়ার এক বছরের ছোট ।

নিশাত ভাইয়া চার বছরের ছোট আর আমি সাত বছরের মানে উনি আমার সাত বছর বড় । বলতে বলতে নরসিংদী আর্শিনগর চলে আসছি বিশ টাকা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলাম মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি আরো বারোটা মেসেজ নিরানব্বই প্লাস মিসকল। আমার মোবাইলে দুইটা সিম আছে একটা সবাই জানলেও আরেকটা আম্মু আমি ছাড়া আর কেউ জানে না সিমে টাকা নাই তাই দোকান থেকে টাকা ভরে কলেজ বান্ধবী মরিয়মের কাছে ফোন দিলাম দুই বার রিং হতেই ধরে ফেললো,

-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম কে,,,?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। মরিয়ম আমি নুশা।
-অহ কেমন আছো নুশা।
-ভালো নাই গো বোইন একটু হেল্প করো প্লিজ দয়া করে।
-কেনো কি হইছে তোমার।
-সব বলবো আগে তুমি আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্তা করো।
-তুমি কোথায় আমি তো নরসিংদী আছি।
-কিহ তুমি নরসিংদি, নরসিংদী কোথায় আছো তুমি,,?
– জেলখানা মোর।

-আচ্ছা অপেক্ষা করো আমি আসতেছি বলে পিছনে ফিরে গাড়ি খুজতে লাগলাম অটু দিয়ে যাওয়া যাবে না কারন অটুতে সব ভরে তার পর যাবে তাই ভালো করে তাকিয়ে দেখছি মিশুক আছে নাকি । ডানে তাকিয়ে দেখি সেই মিশুক টা যেই মিশুক দিয়ে আমি ঐসময় আসছিলাম। আমাকে কিছু খুজতে দেখে প্রশ্ন করলো,

-আফা আমনে কি কিছু খুজতেছেন।
-আসলে মিশুক খুজছিলাম জেলখানা মোর যাবো।
-তো উঠে বসেন আমি দিয়ে আসি।
-আচ্ছা বলে উঠে পরলাম বিশ মিনিটের মধ্যে জেলখানা মোরে এসে নেমে বাড়া জিজ্ঞেস করলাম কতো,,,?
-যা বাড়া তাই দিবেন।

-আমি এদিকের বাড়া জানি না আসলে আমার এদিকে আসা হয় না।
– বিশ টাকা দিয়ে দেন।
আমিও কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে সামনে এগিয়ে মরিয়ম কে ফোন দিলাম আর বললাম,
-কই তুমি।
-তুমি কই।
– আচ্ছা আমি আসছি দাঁড়াও ।

কিছুটা সামনেই দাড়ানো ছিলো মরিয়ম আর একটা ছেলে দেখেই বুঝতে পারছি এটা তার মামা । তাই সামনে গিয়ে মামাকে সালাম দিয়ে বললাম,
-মামা ভালো আছেন,,?
-হুম ভালো আছি তুমি কেমন আছো।
-ভালো খারাপ দুটাই নিয়ে আছে।
-ওমা তা কেনো।

-মামা সব বলবো আপনাকে আগে প্লিজ একটু সাহায্য করেন আমাকে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান।
-আচ্ছা আচ্ছা আসো বাড়িতে গিয়ে শুনবো তুমি ভালো খারাপ দুইটা নিয়ে কেনো আছো।
তারপর বাসস্টেনে গিয়ে দাড়িয়ে বাসে উঠে পরলাম মরিয়ম দের বাড়ি যাওয়ার জন্য । মামা সামনে বসেছে আর পিছনের সিটে আমি আর মরিয়ম । আমার পচন্ড খারাপ লাগছে হাত পা ব্যাথা করছে অনেক দিন পর অনেকটুকু দৌড়াইছি।

এদিকে সায়ান,
– নুশার সাহস হলো কিভাবে আমাকে এভাবে ধোঁকা দেওয়ার,আমার কথার অবাধ্য হওয়ার।
-দেখ সায়ান এভাবে চিল্লাচিল্লি করো না এটা তোমার নিজের বাড়ি না , এটা তোমার ফুপির শ্বশুর বাড়ি। আর ভুলটা তো আমি নুশা মামনির দেখছি না ভুলটা তো আমি তোমার দেখছি। বলে উঠলেন সায়নের আব্বু সাজ্জাত চৌধুরী ।
-দেখো বাবা একদম কিছু না বোঝার মতো থাকবে না। নুশা ছাড়া তোমরা সবাই জানো যে আমি কাকে বিয়ে করতে চাই।
-তাহলে তুমি নিশি কে বিয়ে করার কথা কেনো বললা। এখন নিশি মানুনি অতো কষ্ট পাচ্ছে। ( নিশির দিকে তাকিয়ে দূরে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে)

-এটা সবটাই সাজানো নিশি আর আমার , আর নিশির অলরেডি পছন্দের মানুষ আছে আর আমি নিশি কে বোনের মতো দেখি যেটা আমি কোনো কালেই নুশাকে দেখি নাই।
-এতো নাটকের কি আছে সোজাই তো বলে দিতে পারতে যে নিশি কে নয় তুমি নুশাকে বিয়ে করবে।
-বাবা তুমি কিছু না বুঝে প্রশ্ন করো না, ফুপি তো কিছু দিন আগে একটা কথা বলেছিলো ভুলে গেছো তুমি।
-কোন কথা ।

– জেমির জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসায় জেমি কি করেছিলো মনে আছে।
-হুম মনে আছে। তো কি হইছে ঐটা দূরের মানুষ ছিলো তাই হয়তো এমন করছে আর আমরা তো কাছের মানুষ আমরা বললে হয়তো কিছুই হতো না কারন সব সময় আমাদের সাথেই থাকতো ।
-বাবা তোমার কথা ভুল, তুমি কি দিনে দিনে ছোট হয়ে যাচ্ছো। যে কিছু বুঝো না, নুশার যদি বিয়ে করার ইচ্ছে থাকতো তাহলে সে আগেই বলতো সে যে বিয়ে করলে কাছে করবে দূরে করবে না কিন্তু নুশা তো বিয়েই করতে চায় না ।
-নুশা মামনি এখন ছোট তাই এমন করছে।

-বাবা তুমি আর দয়া করে আর একটা কথাও বলবে না আমার মাথা এখন প্রচুর গরম হয়ে আছে । নুশা তো বিয়ে করতে চায় না কিন্তু রিলেশন তো আর একটা করে নাই দশ বারোটার কম হবে না। যেটা আমার একদমই সহ্য হয় না। এটুকুই বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো আর বাইকের কাছে গিয়ে বাইকের উপরে বসে একজন কে ফোন দিলো আর আর জিজ্ঞেস করলো,

-কি খবর,,?
এপাশ থেকে কেউ কিছু একটা বললো আর এপাশে থেকে সায়ান ডেভিল মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললো,
– i am coming my Black daimond..!!

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ২