তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৬ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৬
Suraiya Aayat

তাড়াতাড়ি করে আরিশদের বাড়িতে থেকে ফিরে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে গেল আরূ ৷ তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে ঢুকেই হড়হড় করে বমি করে দিল , চোখ মুখ সব জ্বালা করছে , সমস্ত শরীর জুড়ে বিক্ষিপ্ত এক অনুভূতি হচ্ছে, দুর্বল দুর্বল লাগছে নিজেকে ৷

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে কাঁপতে কাঁপতে ফ্লোরে বসে গেল আরু ৷
বাইরে ঘোর অন্ধকার , শীতের দিনের সন্ধ্যা তো সেই কারণে চারিদিকে ঘন কুয়াশা জমেছে ৷ ঘন কুয়াশার কিছু অংশ খুলে থাকা বেলকনির দরজা দিয়ে ঘরের ভিতরে এসে সমগ্র ঘরটা জুড়ে শীতল অনূভুতি জাগাচ্ছে ৷ ঠাণ্ডা ফ্লোরে বসে পড়ল আরু ৷ ক্রমে ক্রমে কেঁপে কেঁপে উঠছে আর অদ্ভুত এক বেদনায় জর্জরিত হচ্ছে ৷
হঠাৎ করেই হাউ হাউ করে কেঁদে দিল আরূ ৷ জীবনে প্রথম এমন এক অনুভূতি হচ্ছে যেখানে নিজেকে খুবই নিকৄষ্ট মনে হচ্ছে ৷এমনটা আগে কখনো হয়নি , আসলে সেইভাবে জীবনে কাউকে কখনো ভালোবাসার কথা ভাবেনি আরূ তাই হয়তো কষ্টটা আরো বেশি ৷
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে উঠলো,,,,

__” আমি কি এতটাই খারাপ যে উনার পক্ষে আমাকে বিয়ে করো সম্ভব নয় ৷”
পরখনেই বলে উঠলো,,,,
__” না না এটা আমি কি বলছি , উনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন ! কেন আমার সাথে এরকম হলো ? কেন উনি আমার জীবনে এলেন এবং ক্ষণিকের মধ্যে সমস্ত জীবনটাকে উথালপাথাল করে দিলেন ? আমি কি এতটাই খারাপ? আর যদি আমাকে ভালো নাই বাসেন তাহলে কেন বারবার আমাকে এতোটা নিজের কাছে টেনে নিয়েছেন , চাইলেই তো পারতেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে তবে কেন এমন আবেগে জড়ালেন আমাকে ? কেন ?কেন ?কেন? কেন? আমার সাথেই কেন এমন হতে হল… আমার জীবনের গল্পটা অন্য হলেও তো পারতো !”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাগুলো বলছে আর অনবরত আরূর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে, জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে ও যেখানে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছিল, একজনের হাত ধরে চলতে চেয়েছিল আর যেদিন বুঝেছিল তার অনুভূতি টা সামান্য কোন অনুভূতি নয় এটা একটা ভালোবাসার অনুভূতি , যার কারণে দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে , একজন কল্পনাবিলাসীর তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছে , আজ সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ৷
আরু কাঁদতে লাগল অনবরত ৷ চোখগুলো চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে টপটপ করে ৷ এমনভাবে কখনো কাঁদেনি ও…..
হঠাৎ দরজায় নক করতেই আরূর সমগ্র শরীর কেঁপে উঠল,,,,,,

__” আরু মা আমার , দরজা খোল ৷ দরজা বন্ধ করে কি করছিস তুই? দরজা খোল মা , দেখ আমি এসেছি , তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার ৷ আম্মূ দরজাটা খোলো ৷”(কাঁদোকাদো গলায়)
আরু বুঝতে,পারলো ওর আম্মু চলে এসেছে, এবার নিজের মুখ চেপে কাঁদতে লাগল ও , এখন জোরে জোরে কাঁদতে পারবে না তাহলেই ওর আম্মু শুনে ফেলবে আর তখন উনিও ওর সাথে কষ্ট পাবে ৷ নিজেকে সামলাতে মুখটা চেপে রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে ৷ নিজেকে ক্রমাগত সামলানোর চেষ্টা করছে তবুও যেন পারছে না , কিন্তু ওকে যে পারতেই হবে , এতটা অধিকার নিয়ে যখন কান্না করতে পেরেছে তখন সেই অধিকার দিয়ে আবার কান্না থামাতেও পারবে ও ৷ তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে জল দিল, নিজের মুখটা আয়নায় বারবার দেখছে তবুও যেন আগের মত স্বাভাবিক চেহারায় ফিরতে পারছেনা ৷ অনবরত চোখেমুখে জল দিয়েই চলেছে তবুও স্বাভাবিক হচ্ছে না দেখে আবার ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল ৷

__”আমি কেনো পারছি না ! এবার আমি আম্মুকে কি বলবো? কি করে বোঝাবো যে আমি ওনাকে অনেক ভালবাসি , উনি যে আমার অদ্ভুত এক আসক্তি ৷”
পরমুহূর্তে আবার নিজের মনকে বোঝালো,,,,,
__” আরু তোকে যে পারতেই হবে, ইউ হ্যাভ টু ডু ইট ৷”
আরু বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে কোনক্রমে সামলে বেরিয়ে এলো, তবে মুখে একটা মিথ্যা হাসি নিয়ে ৷ মুখে হাসিটা এনে আয়নাতে মুখটা একবার দেখে নিল ৷
এমনটা হয়তো আগে কখনও করার প্রয়োজন হয়নি ওর ৷ ভালোবাসা ওর জীবন টাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে….
আরু দরজাটা খুলে নিয়ে শান্ত হয়ে ধীর পায়ে বিছানায় বসলো,,,,

মাথাটা নীচু করে আছে , মাথাটা উঁচু করে তোলার ক্ষমতা ওর নেই , ওর চোখ মুখ দেখলেই ওর আম্মু বুঝতে পারবে যে এতক্ষণ ধরে কান্না করেছে তখন আবার হাজারো প্রশ্ন করবে আর সেগুলোর সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতাটুকু আরুর মাঝে আর নেই , সবচেয়ে বড় কথা হলো কি উত্তর দেবে সেটাই ওর জানা নেই ৷
আরুর মা রূমে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে আরূর পাশে গিয়ে বসলেন , তারপর আরূর মুখে হাত রেখে বললেন,,,,,

__”দেখ মা যা হয়েছে ভুলে যা , আমাদেরই ভুল এইভাবে আগে থেকে তোদের বিয়েটা ঠিক করা ৷ আর এটাতো ঠিক তাই না যে একজনের অনুভূতিটা কোনভাবেই পাল্টানো যায় না , আমি যদি জানতাম যে এরকম দিনের মুখোমুখি হতে হবে তো কখনই এমনটা করতাম না ৷ কেবলমাত্র স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন যে আগে কখনো বাস্তবে পরিণত হবে কি সেটা নিয়ে কোনো রকম কোনো সংশয় রাখিনি কখনো, সেই জন্যই হয়তো আজ এরকম দিন দেখতে হলো ৷ “(উনিও কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন ৷ উনিও মন থেকে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছেন ৷ যখন থেকে আরূ আর আরিশ স্বাভাবিক জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন হয়েছে তখন থেকে ওদের বিয়েটা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে দুই পরিবার, তখন এটা ভাবেনি যে পরে কি হতে পারে ৷
আরু ক্রমশ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,,,,

__” আমি কিছু মনে করিনি আম্মু , আমার তো শরীর খারাপ লাগছিল বলে আমি চলে এলাম , আর এগুলো হতেই পারে, ইটস নরমাল ৷ আর তুমি কি ভাবলে আমি ওনাকে পছন্দ করি? একদম নয় ,আমি তো ওনাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারি না , ওনার সাথে যে কত ঝামেলা করি তার ঠিক নেই, আর উনি যা করেছেন ঠিক করেছেন , বেশ করেছেন , আমি কারোর যগ্্যই নই ৷”
কথাটা বলে আরু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, ও ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল হাউহাউ করে ৷ ওর কান্না দেখে ওর মাও ক্রমাগত কাদছেন ৷ উনি এটা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছেন যে যখন ওনার মেয়েটা ভালোবাসা আবেগ এই সমস্ত জিনিস গুলো কে বুঝতে শিখেছে তখনই ওর ভালোবাসায় ব্যর্থতার ছাপ ৷ উনি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছেন না ৷
__” তুই কাঁদিস না, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই চিন্তা করিস না…..”
আরু কাঁদতে কাঁদতে ওর আম্মুকে বলল,,,,,

__” আম্মু তুমি এ কথাটা বাপিকে জানিও না তাহলে বাপি খুব কষ্ট পাবে আর ভেঙে পড়বে , আমি চাইনা আমার কারণে কেউ কষ্ট পাক ৷”
_”তোর কারনে কিছুই নয়, যা হয়েছে সব আমাদের কারনেই হয়েছে , আমাদের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত ছিল ৷”
আরু আর কিছু বলছে না ,বলার আর কোন ভাষাও নেই ওর ৷ কেবলই কেদেই চলেছে ৷ এরপরে ওর জীবনে কি ঘটতে চলেছে হয়তো তার নিয়ন্ত্রণ আর ওর নিজের মধ্যেই নেই , হয়তো বিতৃষ্ণা চলে এসেছে নিজের প্রতি ৷ একটা মানুষ ওর জীবনে এসে ওর জীবনটাকে এভাবে পাল্টে দেবে সেটা ও কখনো ভাবেনি….

__” কি হয়েছে তোমার আম্মু? তুমি এমন করছ কেন? আর আমার মনে যেটা আছে আমি সেটাই বলেছি, আমি ওনাকে বিয়ে করে মনে মনে অন্য একজনকে ভালোবাসতাম সেটা কি উনার প্রতি অন্যায় হতোনা তুমি বলো ?”
__” তোর সাথে আমার কোন কথা নেই, তুই বেরিয়ে যা ৷ আর এক মুহূর্তও আমার চোখের সামনে থাকবি না , বেরিয়ে যা….”
__” কিন্তু তুমি আমার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করছো না !”
__” বললাম না তুই চলে যা ৷”
কথাটা শোনামাত্র আরিশ আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না বেরিয়ে গেল ৷ ও জানে ওর আম্মুর এখন মাথার ঠিক নেই যা বলবে তাতেই রেগে যাবে , তাই আর বেশি কথা বাড়ালোনা আরিশ , যা হয় পরে দেখা যাবে ৷

কালকের অনেক কান্নাকাটি করার পর রাত্রে অত্যন্ত মাথা ব্যাথা করছিল আরুর তারপর ঘুমানোর পর ঠিক হয়েছে ৷ সকালবেলা উঠেও মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে ৷
__”কালকের ঘটনাটার পর অনিকা খান ফোন করে অনেক বার ক্ষমা চেয়েছেন ওনার ছেলের কার্যকলাপের জন্য, তবুও উনার যে কোন দোষ নেই , উনি নিজের মনের কথাটাই জানিয়েছেন , সত্যি উনি যাকে ভালোবাসেন সে সত্যিই অনেক লাকি ৷”

কথাটা বলে মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে যেতে গেলেই ওর ফোনটা বেজে উঠল ৷
আজকের দিনটা যদি অন্যরকম হতো তাহলে হয়তো কালকেই আরিশকে নিজের ভালবাসার কথাটা জানিয়ে দিত আর ফোনটা হয়তো এখন আরিসের ই হতো আর আরুও তখন ব্যস্ততা নিয়ে নিজেও ছুটে যেত ফোনটা ধরার জন্য ৷ কিন্তু তেমনটা তো চাইলেও আর হওয়ার নই ৷ধীরপায়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সানা কল করেছে , মুচকি একটা হাসি দিয়ে ফোনটা ধরতেই সানা বলে উঠলো,,,,,,

__” আর ইউ ওকে আরূ?”
__”ইয়াহ, আই এম ফাইন, আমার আবার কি হবে!”
__” নাহ মানে কালকে যেটা হলো সেটার জন্যই বলছি ৷”
__” আরে আমি কিছু মনে করিনি , এটাই নরমাল ৷ আর আমিতো জানি আমি কারো যোগ্য নয় সেই কারণেই হয়তো এমনটা,,,,,,,,
সে সব কথা বাদ দে , তুই আজকে ভার্সিটি যাচ্ছিস তো?”
__” আমি তো সেটা জানার জন্যই তোকে ফোন করেছিলাম ৷”( মনমরা হয়ে )আমি ভাবলাম তুই হয়তো যাবি না ৷”
__” হাস, আমিতো যাবোই আর তুইও যাবি ,না গেলে মার দিবো তোকে ৷”
__” আচ্ছা যাব ৷”
__” তাহলে ভার্সিটিতে দেখা হচ্ছে ৷ আর আন্টিকে বলিস যেনো ব্যাপারটা নিয়ে মন খারাপ না করে , আর ওনার উডবি বৌমার জন্য যেন সমস্ত ভালোবাসা তুলে রাখে যেগুলো এতদিন আমার জন্য রেখেছিলেন ৷ আর আরিশ ভাইয়ার উপর যেনো রাগ করে না থাকেন ৷”
__” আম্মু কথাটা মেনে নিতে পারছে না ৷”
কথাটা শুনে আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিল তার সাথে চোখ থেকে এক ফোঁটা জল ও গড়িয়ে পড়লো ৷

আরু ওর মায়ের সাথে কথা অনেক কাটাকাটি করে, অনেক আবেগের যুদ্ধ করে তারপর আজকে ভার্সিটিতে এসেছে ৷ উনি আরুকে বারবার আসতে বারণ করেছিলেন কারণ কালকে যা হয়েছে তারপরে আরূ অনেকটা অসুস্থ হয়ে গেছে , একদিনেই আরুর চোখ মুখ আর চেহারার পরিবর্তন ঘটে গেছে তা যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে…..

ভার্সিটিতে এসে ভার্সিটির মাঠে সবুজ ঘাসের উপরে একমনে চুপচাপ বসে আছে আরু , সানা আর তিথি এখনো আসেনি ৷ অন্য দিন হলে হয়তো এতখন চুপচাপ না থেকে ফোনটা বার করে কার্টুন দেখতে আরম্ভ করে দিতো আরূ, কিন্ত অন্যদিনের তুলনায় আজকের দিনের পার্থক্যটা অনেক বেশি, অনেকটাই বেশি ৷ নিজেকে অনেকটাই পরিবর্তনশীল লাগছে ওর, এত নিরবতার মাঝে নিজেকে কখনো অনুভব করেনি ৷ ওর কাছে এখন মনে হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীটাই যেনো নিরব কিন্তু এটা যে ভুল ধারণা ! সারা পৃথিবী চলমান থাকলেও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে কেবল ও নিজেই , আর তা ও বুঝতে পারছে কিন্তু স্বীকার করছে না , স্বীকার করলেই যে দুর্বল হয়ে পড়বে, আর তা হলে কখনোই ওর পক্ষে আরিশকে ভোলা সম্ভবপর হয়ে উঠবে না……

হঠাৎ পিছন থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠস্বর পেয়ে সামান্য কেঁপে উঠলো আরু ৷ আরিশের গলার আওয়াজ না হলেও অন্য কোন একজন ছেলে যে ওকে ডাকছে এখন সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে৷ পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল একটা ছেলে দুই হাত পিছনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তাকে দেখে তৎক্ষণাৎ তারাতারি উঠে দাঁড়ালো আরূ ৷
আরূ উঠে দাঁড়াতেই ছেলেটা আমতা আমতা করে বলল,,,,,,
__” একচুয়ালি আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে, সেটা বলার জন্য তোমাকে ডাকলাম ৷
__” হমম ভাইয়া বলুন কি বলবেন ৷”

ছেলেটা এবার পিছন থেকে হাত দুটো সামনে এনে হাতে থাকা গোলাপ ফুলটা আরুর দিকে ধরল ৷
__” আই লাভ ইউ এন্ড আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ ৷ উইল ইউ ম্যারি মি ৷(একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ফেলল)
হঠাৎ করে এমন কিছু যে হবে সেটা ও ভেবে উঠতে পারেনি , আর এত কিছু কিভাবে হলো কিছুই বুঝতে পারছে না আরু ৷ ছেলেটাকে না ও কখনো দেখেছে আর না ওকে চেনে , ইভেন ভার্সিটিতেও কখনো দেখিনি আরু তাকে ৷ তবে অন্যদিন হলে হয়তো আরু এখনই গোটা কতক চড় বসিয়ে দিত তার গালে তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাই শান্ত স্বরে বললল,,,,,,
__” ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন? আর আমি আপনাকে চিনিও না, কিভাবে কি ?”

__” তুমি আমাকে চিনবে না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি তোমাকে চিনি প্রায় 2 মাস ধরে, এতদিন তোমাকে ফলো করেছি আর তোমাকে খুব ভালো লেগেছে , তাই আজকে অনেক সাহস নিয়ে বলতে এসেছি ,তাই প্লিজ না করোনা ৷”
আরু আর কিছু বলতে যাবে তখন হঠাৎই দেখল ভার্সিটির গেট দিয়ে আরিশ আর প্রান্ত ঢুকছে ৷
ওরা দু’জনই আরুর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আরুর নজর আরিশের দিকে আর আরিশের ও ৷আরিশকে দেখে কালকের সমস্ত কথা আবার মনে পড়ে গেল আরুর ৷ পুরনো কথাগুলো আবার যেন দগদগ করে উঠতে লাগলো আবার , তাই সামান্য আরিশের প্রতি রাগ আর অভিমান নিয়ে আরিসের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কাছ থেকে ফুলটা নিয়ে নিল, তারপরে সামান্য জোরেই বলল,,,,,

__” আমিও আপনাকে বিয়ে করতে চাই….”
__” সত্যি !”
__” হমমম ৷”
__” থ্যাঙ্কস আ লট , তুমি এত তাড়াতাড়ি আমাকে মেনে নেবে আমি সেটা কখনো ভাবি নি , বাই দ্যা ওয়ে আমি আশফি ৷”
__” আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই খুব তাড়াতাড়ি আই মিন এক সপ্তাহের মধ্যেই তাই আমি চাই আপনি আজকেই আমার বাড়িতে গিয়ে আমার বাড়ির লোকের সাথে কথা বলবেন বিয়ের ব্যাপারে ৷”
__” সিউর ৷ আমিতো তোমাকে বিয়ে করতেই চাই তাই যত তাড়াতাড়ি হোক ততই ভালো তবে কালকে গেলে তুমি কি রাগ করবে?”
__” আপনার প্রতি রাগ করলে আমার চলবে না, ভালোবাসা দিয়ে সবটা শুরূ করতে হবে তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন তত ভালো হয় ৷”( আরিশকে শুনিয়ে)

কথাগুলো প্রান্তর কান অবধি পৌছালো তবে খুব একটা হজম হলো না তাই তাড়াতাড়ি করে ওদের সামনে এগিয়ে গেলো আরিশ আর প্রান্ত ৷ দুজনে এগিয়ে আসতেই আরু আর আশফি দুজন সামনের দিকে তাকালো….
প্রান্ত সামনে আরিশের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে , পকেটে হাত রেখে দেখছে যা যা হচ্ছে ৷ ওকে এখন দেখে মনে হচ্ছে যে ওর থেকে নিশ্চিত আর কুল মানুষ এই পৃথিবীতে নেই, টর্নেডো ঝড় ওর ওপর দিয়ে গেলেও ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে, পুরো চিল মুডে আছে ৷
__” তোমরা কি খুব বিজি? আসলে একটা দরকার ছিল ৷”(প্রান্ত)
আশফি আরূর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
__” উনাকে তো ঠিক চিনলাম না, কে উনি?”
আরু আশফির কথার উত্তর না দিয়ে প্রান্তকে বলে উঠলো,,,,,
__” জ্বী ভাইয়া ৷ আপনি কি কিছু বলবেন , মানে জরুরী কিছু?”
__”হ্যাঁ দরকারি কিছুই ৷”
কথাটা বলে প্রান্ত ওর হাতে থাকা কার্ডটা আরুর হাতে দিল ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৫

__” পরশুদিন আমার বিয়ে, তুমি এসো প্লিজ ৷ বিয়ের প্রথম কার্ড এটা , তোমাকেই দিলাম ছোট বোন মনে করে ৷ এসো কিন্তু ভালো লাগবে আসলে…..”
__” প্রথম কার্ডটা আমাকে দিলেন ! বেশ ভালো , তবে আমাকে একা দিলেন যে আমার উডবিকে দেবেন না?”
প্রান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,,,,
__” তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?”
__” হ্যাঁ ভাইয়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের বিয়ে ৷ দোঁয়া করবেন ৷”
প্রান্ত এবার হতভম্ব হয়ে আর খানিকটা রাগী চোখে পিছন ঘুরে আরিশের দিকে তাকালো, আরিশ এখনো আগের মতই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
ওর হাবভাব দেখে কিছুই বুঝতে না পেরে আরূর দিকে তাকিয়ে মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

__” আসলে সরি আমি জানতাম না তো তাই ৷ বাই দ্যা ওয়ে তুমিও এসো আশফির কাঁধে হাত রেখে ৷”
__” নিশ্চয়ই যাবো ভাইয়া , ভালো লাগলো আপনাদের সাথে পরিচয় হয়ে ৷”
__” আসবেন কিন্তু , আমার খুব ভালো লাগবে আপনারা বিয়েতে আসলে ৷”
__” নিশ্চয়ই যাবো , আপনার যখন এত কষ্ট করে ইনভাইট করেছেন তখন তো যেতেই হয় ৷”
প্রান্ত আর দাঁড়ালোনা, আরিশের দিকে সামান্য রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলো ৷
আরিশ যেতে গিয়ে আবার পিছন ঘুরে আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
__” মিস আরুশি যা করার একটু তাড়াতাড়ি করবেন,আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম বেশিদিন ওয়েট করতে পারিনা ৷ ”
আরু হতভম্ব হয়ে রইল আরিসের কথাটা শুনে ৷ ও কিছুই বুঝল না আরিশের কথার মানে টা ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৭