তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৫ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৫
Suraiya Aayat

আরূর অনুভূতি বলছে যে আরিশ ওকে ভালোবাসে ৷ আর ও নিজেও ধীরে ধীরে তাহলে আরিশকে ভালোবাসতে শুরূ করেছে ৷
কথাগুলো ভাবতেই আরূর হার্টবিট আরো বেড়ে গেল, সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে , অদ্ভুত এক অনুভূতি ওর সমগ্র শরীরে শিহরন বইয়ে দিচ্ছে….
চোখ বন্ধ করে মুহূর্তগুলোকে পুনরায় ভাবার চেষ্টা করতেই হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই আরূ চমকে উঠলো….

__” কিরে তুই রূমের দরজা বন্ধ করে কি করছিস ? নিচে সবাই তোকে ডাকছে ৷”
আরূ তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলে দেখল সানা দাঁড়িয়ে আছে ৷
__” কি জন্য ডাকছে আমাকে?”
__” এটা আমি কি করে বলবো ! তাড়াতাড়ি চল এখন আবার আমাকে ভাইয়া কেউ ডাকতে যেতে হবে ৷”
__” কোন সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে কিছু?”
সানা মুচকি মুচকি হেসে বলল,,,,,,
__” নীচে গেলেই দেখতে পাবি ৷”
আরুর মনে এবার চিন্তাটা ঘন মেঘের মতো জমা হয়ে এলো ৷
প্রথমে তো ওর বাপি আর মা ও কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলো যা ওকে জানাইনি আর এখন আবার কোন একটা ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হবে ৷ চিন্তায় পড়ে গেল আরু ৷ ব্যাপারটা আসলে কি সেটা জানতে যতটা না উত্তেজনা কাজ করছে তার থেকেও বেশি ভয় কাজ করছে মনের মাঝে৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নীচে সবাই একত্রিত হয়ে রয়েছে আর আরূও সোফার এককোনে বসে আছে আর ওর সামনে বসে থাকা আরিশের দিকে মাঝে মাঝে সকলের আড়ালে আড় চোখে তাকাচ্ছে,,,,,,,
__” আম্মু তুমি কি আমাকে কিছু বলবে মানে হঠাৎ করে এভাবে ডেকে আনলে সেজন্য আর কি !”
__” হ্যাঁ তোকে ঢেকেছি তার মাঝে থাকা কারনটা হলো তোর বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই ৷”
আরিশের বিয়ের কথা শুনে আরুর সমগ্র শরীর জুড়ে যেন উথাল পাথাল হয়ে গেল, নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ৷ এইকদিন যার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভুতিতে জর্জরিত ছিল আর আজ যখন বুঝতে পারে যে সেটা ভালোলাগা নয় বরং দিন দিন ভালবাসায় পরিনত হচ্ছে তখন আজকেই তার বিয়ের সংবাদ সমগ্রটা ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে ওর ৷ শক্ত করে নিজের জামাটা খামছে ধরলো , আজানা এক ভয় ও কাজ করছে মনের মাঝে যে যদি আরিশ রাজি হয়ে যাই তাহলে তো সবটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে ৷আরিশের কথায় ঘোর ভাঙলো ওর ৷

__” লাইক সিরিয়াসলি আম্মু, আমার বিয়ের কথা ! আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে?”
__” দেখ আরিশ আব্বু আমরা মজা করছি না , ব্যাপারটা নিয়ে আমরা সিরিয়াস ৷(আফজাল সাহেব )
__” আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি ৷”(অনিকা খান)
__” আর ইউ কিডিং উইথ মি ?”(আরিশ)
__” আমরা আরূ মার সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করেছি ৷”

আরু ছলছল চোখে তাকালো, কথাটা শুনেই মনের মাঝে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে ওর , তাহলে ওর কাঙখিত আশা কি পূরন হতে চলেছে ! আরিশকে ও নিজের করে পাবে ৷ আরু আরিশকে নিয়ে ভাবতে চাই খুব বেশি করেই ভাবতে চাই ৷
আরূ চুপ করে আছে বলার ভাষাটাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে , কি বলবে ও কিছুই বলার নেই ওর ৷
কথাটা শোনমাএই আরিশ অদ্ভুদ এক দৄষ্টিতে আরুর দিকে তাকালো, দেখতে পেলো আরুর চোখ ছলছল করছে ৷
__” বাট আমি তো তোমাদের আরুকে বিয়ে করতে পারবো না আম্মু ৷”
কথাটা শুনে যেনো আরূর দুনিয়া ঘুরে গেলো ৷ এসব কি বলছে আরিশ , তাহলে কি ওর ধারনাটা ভুল, ওর আরিশের প্রতি ভালোবাসাটা একতরফা , আরিশ কি ওকে ভালোবাসেনা ?
কথাগুলো বারবার মনে আসছে আরূর ৷ চোখ ফেঁটে অঝোরে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে তবুও নিজেকে সংযত করে রাখতে হচ্ছে ৷

__” এসব তুমি কি বলছো আরিশ ৷ আর তোমাদের বিয়েটা যে আমাদের স্বপ্ন , তুমি এরকম বলতে পারো না ৷”(আরমান সাহেব )
আরিশ মুচকি হেসে আরূর দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,,,,,
__” সব স্বপ্নকে কি সবসময় পূরন হতে দেখেছেন?”
আরমান সাহেব চুপ হয়ে গেলেন, উনিও এতোদিন এটার ভয় পেয়েই চুপ ছিলেন ৷
__” কিন্ত আরু মকে বিয়ে করতে তোর সমস্যা কোথায়? ওকে দেখতে মাশাআল্লাহ, আল্লাহ এরকম মেয়ে কতজন কে দেই বলতো !আর আমাদেরকে যথেষ্ট ভালোবাসে ৷”(অনিকা খান )
__” বাট আমার পক্ষে ওনাকে বিয়ে করা পসিবল নয়!”
আরু আর চুপ থাকতে পারলো না, নিজেকে আজ বড্ড অপমানিত ফিল হচ্ছে ওর , এরকম টা আগে কখনো হয়নি ৷ তাই না পেরে কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো,,,,,,

__” পারবেন না ঠিক আছে তবে কারনটা জানালে খুশি হতাম আর নিজের মধ্যে থাকা ক্রটিগুলোকে ভালো করে উপলব্দি করতাম যাতে দ্বিতীয়বার আর এরকমটা না হয় ৷”
__” কারনটা অবশ্যই জানাবো ,আর এমনিতেও আমার exam শেষ আমি বাড়িতেও জনাতাম ৷ আমি একজন কে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই ,তাই আমার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয় ৷”
কথাটা শুনে আর কিছু না বলে আরিশের মা রেগে ওখান থেকে উঠে গেলেন হয়তো কান্নাটা আর আটকে রাখতে পারছেন না ৷
__” তুই কি এগুলো ভেবে বলছিস!”(আফজাল সাহেব)
__” হমম বাবা ৷”

আরুর মা র চোখেও জল, এবার উনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না ৷ আরুর দিকে একবার তাকাতেই দেখলেন আরুর চোখ থেকে টপটপ করে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ৷ এই প্রথম উনি ওনার মেয়কে এমন নিশ্চুপ ভাবে কাদতে দেখলেন , এর আগে আরু যতবার কেদেছে তখন সারা বাড়ি মাথায় করে রেখেছে ৷ মানুষ যখন ভীষনভাবে কষ্ট পায় তখন হয়তো এমনভাবেই নিশ্চুপ হয়ে যাই ৷ মেয়েকে এভাবে কাদতে দেখে ওনার মনটা জ্বলে উঠছে বারবার ৷আরূ যে ব্যপারটাই এতটা আঘাত পাবে ত হয়তো উনি ওনার ধারনাতেও আনেননি ৷ এটা একটা মেয়ের জন্য কতটা অপমানের তা উনি বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন ৷
আরূ আর পারছে না ওখানে সবার মুখোমুখি বসে থাকতে , ওর আলাদা ভাবে একটা জায়গায় প্রয়োজন যেখানে ও মন ভরে কাদবে ৷ তাই না পেরে বলে উঠলো,,,,,,

__”আম্মু আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, ভীষন বমি বমি পাচ্ছে, আমি বাসায় যাচ্ছি, তোমরা পরে চলে এসো ৷”
__” সে কি , আমিও যাচ্ছি তোর সাথে, আর আমাদের ও তো ফিরতে হবে ৷”
__” না না আম্মু আমি পারবো, তোমরা বরং নিজেদের স্বপ্নটাকে নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে আবার এসো, যাতে পুনরায় স্বপ্নভঙেগর বেদনায় কাতরাতে না হয় ৷”(আরিশের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে)
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে আরূ তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেলো, হয়তো ওদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস ওর আর নেই ৷ নিজেকে আজ ডানাবিহীন পাখির মতোই নিশ্চল লাগছে ৷
আরুর মা চোখের জলটা মুছে আরিশের দিকে মুচকি হেসে বললেন,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৪

__”আমি তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি বাবা, আমরাও ভালোবেসে বিয়ে করেছি তাই সবটা বুঝি যে ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার আকাঙখাটা ৷ তুমি সুখী হও বাবা , আল্লাহ ভালো করূক ৷ আশাকরি সেরা জিনিসটাই তুমি পছন্দ করবে তাই চয়েজ নিয়ে বলার আর কিছুই রইলো না ৷ আর অবশ্যই খারাপো একটু লাগছে তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে হয়তো সবটাই,ঠিক হয়ে যাবে আর থেকে যাবে খারাপ সমৄতিগুলো ৷ আর আল্লাহ হয়তো আরূকে অন্য একজনের জন্যই পাঠিয়েছেন তাই হয়তো স্বপ্নটা এখানেই থেমে রইলো ৷”

__”আমি সত্তিই খুব দুঃখিত আন্টি বাট আমার চাওয়া পাওয়ার ও তো দাম থাকে তাইনা ৷”
__” অবশ্যই থাকে ,আর আল্লাহ তোমার ভালো করূক এটাই চাই ৷”
__”দোয়া করবেন যেনো জীবনের সঠিক সময়ে সঠিক মানুষটাকেই পাই ৷”(মুচকি হেসে)

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৬