তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৯ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৯
Suraiya Aayat

মন খারাপ করে একমনে ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে আরূ, আজকাল মনটা এমনিই ভাল থাকে না তার পরই দুপুরবেলা কলেজ থেকে ফিরে মুডটা যেন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে…..আগের মতো যেন প্রান খুলে হাসতেও ভুলে গেছে,,,,এখন যেনো মুখের হাসিটাও অতীত ৷
পাশে ইনু খাঁচার মধ্যে রয়েছে আর আপন মনে পেয়ারা খাচ্ছে যেটা কিছুক্ষন আগে ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তিথি আরুকে দিয়েছে ইনুকে দেওয়ার জন্য ৷

একবার ইনুর দিকে তাকিয়ে সামনের বড়ো বড়ো বিলডিং গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল আরু,,,,,,সূর্যটা দূর থেকে যেনে আরুর সাথে লুকোচুরি খেলছে, কখনো জোরে কিরন দিচ্ছে আবার কখনো বা ধীমে ,তা দেখে রিতীমতো বিরক্ত আরূ ৷
দিন দিন আরিশের উপর অভিমানের পাহাড় টাও অতিব প্রশস্ত হয়ে চলেছে তবুও অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য মানুষটা ওর উপরে ওর কোন অধিকারে নেই যে তার সামনে গিয়ে আলতো করে তার শার্টের কলারটা ধরে তার বুকে মুখ লুকিয়ে সামান্য ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে নিজের অভিমানটা প্রকাশ করবে ৷
ভার্সিটিতে গিয়ে যা যা হয়েছে তাতে রীতিমতো বিরক্ত আর তার কষ্ট এখনো পাচ্ছে আরূ….

সবে ক্লাস শেষ হয়েছে, আরূর সাথে তিথি রয়েছে সানা আজকে আসেনি ৷ সন্ধ্যাবেলা প্রান্তর হলুদে যাবে বলে শপিং করতে গেছে , তাছাড়া সামনে নাকি ওর কাছের কারোর একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে সেইজন্য সেখানে জমজমাটি সাজবে বলে কেনাকাটা করছে , সেই কথা শুনে আরূ ও আর কিছু বলেনি ৷ ওর নিজের বিয়ের কেনাকাটা এখনো বাকি আছে তবে তা নিয়ে ওর মাঝে কোন উদ্বেগ কাজ করছে না,ও ওর আম্মুকে বলেছে যেন উনার পছন্দমত শপিং গুলো করে আনে , ওর চোখজোড়া নাকি সবসময় ভুল জিনিসকে নির্বাচন করে ৷
ক্লাস থেকে বেরিয়েছি আরূ আর তিথি ৷ দুজনের টুকটাক কথার মাঝে আরু তিথির হাতে ওর বিয়ের কার্ড টা ধরিয়ে দিলো ৷ তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কার্ড টার দিকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে কি হচ্ছে ৷
তিথি অবাক হয়ে বলল,,,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__” এটা কার বিয়ের কার্ড?
__” ওপরে আমার নাম লেখা আছে তারমানে নিশ্চই আমারই হবে নো ডাউট ৷”
__” হঠাৎ বিয়ে ? আর কার সাথে বলিস নাই তো !”
__” সে অনেক লম্বা কাহিনী, তোকে আমি অন্যদিন,,,,,,”
এই অবধি কথাটুকু বলে আরু আর কিছু বলতে পারলো না ,তার আগেই পাশ থেকে কেউ ঢেকে উঠলো , আরূ পাশ ফিরে দেখল তূর্য দাঁড়িয়ে আছে,,,,আরু শান্ত কন্ঠে বলল,,,,
__” ভাইয়া কিছু বলবেন?আই মিন কোন দরকার ?”
__” দরকার তো ছিলো তবে আমার না আরিশের ৷ বাই দা ওয়ে আ্যটম বোমা আজকে পটকা বাজি ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না ৷”

আরু এই মুহূর্ত তূর্যর কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না , আরিশ ওকে কি বলবে তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ওর কাছে ৷
__” আরিশ ভাইয়া কোথায় আছে সেটা বললে আই থিঙক বেশী সুবিধা হতো ভাইয়া ৷”
তুর্য খানিকটা অবাক হলো আরূর এরকম শান্ত রুপ দেখে , ও ভেবেছিল কথাটা বলতেই হয়তো আরূ রেগে যাবে কিন্ত তেমনটা হলোনা ৷ সে যাই হোক তবে তা নিয়ে তূর্যর কোনো মাথাব্যথা নেই ৷
__” ক্যান্টিনে আছে ৷ 2nd ফ্লোরে ৷(যেহেতু NSU এর বিরাট ক্যান্টিন তাই তূর্য আরুকে না বললে আরূর ওকে খুঁজেতে অনেক সময় লাগবে তাই )
আরূ তিথির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

__” তুই গাড়িতে গিয়ে বস 2 মিনিটের ব্যাপার আমি এক্ষুনি চলে আসব ৷”
__” আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আই ৷”
এই বলে আরূ তুর্যকে আর কিছু না বলে সেকেন্ড ফ্লোরে চলে গেল ৷ আরিস সেখানে আড্ডা দিচ্ছে সাহেলের সাথে , প্রান্ত হয়তো বিয়ের চাপে আজকে কলেজে আসতে পারেনি ৷
আরু আরিশকে দেখেই থেমে গেল , একতরফা ভালোবাসর ঝড় বয়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে , এই মানুষটাকেই ও কত ভালবাসে, যার জন্য দিনরাত চোখের জল ফেলেই চলেছে ৷

যে ভালোবাসা পাই জীবনটা তার জন্য সুখের আর যে ভালোবাসাটা পাই জীবনটা তার জন্য দুঃখের ৷
এতটা রাস্তা আরু দৌড়ে দৌড়ে এসেছে আরিশকে দেখার উত্তেজনায়, তবে এখানে এসে যেন পা দুটো আর চলতে চাইছে না থেমে রয়েছে, ধীর পায়ে আস্তে আস্তে আরিশের কাছে গেল, নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আরু ৷ আরূ এগিয়ে যেতেই আরিশ সাহেলকে ইশারা করলো সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে ৷
সাহেল চলে যেতেই আরিশ আরূর দিকে তাকালো, আরূকে আসতে দেখে আরিশ ওর মুখের চওড়া হাসিটাকে ক্রমশ সংকুচিত করে একটা টেডি স্মাইল দিল…..

আরূ আরিশের কাছে গেছে , আরিশের চোখে চোখ মেলানোর সাহসটুকু ওর মধ্যে নেই , হয়তো তাকালেই বেশি আবেগাআপ্লুত হয়ে পড়বে , হয়তো আরিশের অগোচরে কয়েক ফোঁটা জল ও গড়িয়ে পড়বে চোখ থেকে…..
আরিশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে আরূর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো , খানিকটা ঝুকে গেল আরিশ আরূর দিকে ৷
আরূর বুকের ভিতর এখন টিপটিপ করছে, কি বলতে চাইছে আর কিই বা করতে চাইছে আরিশ তার কিছু বুঝতে পারছে না আরু , তবুও আগের মতোই মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রয়েছে ৷
__” এই যে আপনি তাকাচ্ছেন না যে আমার দিকে, মাথা নিচু করে আছেন কেন? তাকান !”
আরু কিছু বলছে না মাথা নিচু করেই আছে আগের মতো ৷
__” কি হলো তাকান !”

আরূর কোনো পরিবর্তন নেই , আরূ এবার মুখ ফুটে বলল,,,,
__” আপনার কি দরকার আছে তাড়াতাড়ি বললে আমার সুবিধা হয় ৷”
__” আচ্ছা , ম্যাডামের অনেক তাড়া দেখছি ৷ তা বিয়ের প্ল্যানিং চলছে বুঝি !”
__” আমার বিয়ের প্ল্যানিংটা আমি কিভাবে করছি সেটা কি আপনাকে জানাতে হবে ?”
__” ওকে সরি, ভেরি সরি ৷ সত্তিই তো তা কেনো আমাকে জানাতে যাবেন ! সে যাই হোক বিয়েতে ইনভাইট করলেন না তো , একা একাই বিয়েটা সেরে ফেলার ধান্দায় আছেন নাকি ? বিয়ের কার্ড এখনো পেলাম না তো !”
আরূ ভেবেছিল আরিশ অন্য কিছু বলবে তবে আরিশ যে এভাবে ওর কাছে ওর বিয়ের কার্ড চাইবে সেটা বুঝতে পারেনি ও , তাই রেগে গিয়ে বলল,,,,

__” যেচে নিমন্ত্রিত হতে চাইছেন?”
__” যদি বলি হ্যাঁ , আর বিয়েতে ইনভাইট না করলে তো আর বিয়ে করতে যাওয়া যায়না আইমিন কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া যায় না সেটাই বলতে চাইছিলাম আরকি ৷”
রাগে-দুঃখে অভিমানে আরূর চোখের কোনে জল জমে এল , অশ্রু ভরা চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” নিশ্চয় ইনভাইট করব , একদম নিশ্চিন্ত থাকবেন….আর হ্যাঁ আসবেন কিন্ত নাহলে কষ্ট পাবো ৷আর দোয়া করবেন যেন নতুন জীবনে সুখী হয় ৷”
__” আমিন !” (কথটা একটু টেনেই বলল)
আরূ চলে যেতে লাগল , চোখের কোনে জমে থাকা জলটা জামার হাতা দিয়ে কোনক্রমে মুছে নিল….
আরূ ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে আরিসের নজর থেকে অনেক দূরে , দরজার শেষপ্রান্তে যেতেই আরু পিছন ঘুরে আরিশকে বলল,,,,,
__” আই হেট ইউ ৷”(জোঁরে চেচিয়ে বলল)
আরিশ শুধু মুচকি হাসছে….

কথাগুলো ভাবছে আর আরুর মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে,যাকে বিয়ে করে সংসার করতে চেয়েছিল আজ তাকেই নিজের বিয়েতে ইনভাইট করতে হবে এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না….
আরু অনেকক্ষণ ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, নিস্তব্ধ সম্পূর্ণ , ইনুও হয়তো এমন আরুকে এর আগে কখনো দেখিনি তাই এবার
জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
__” আরু কথা বল, আরু কথা বল ৷”
আরু না পেরে এবার ফুঁপিয়ে ওঠে ইনুকে বলল ,,,,

__” সমস্যাটা কি তোর ? আমার নিস্তব্ধতা কি তো সহ্য হচ্ছে না ? এতদিন ধরে সবাই বলতো আমি খুব কথা বলি, খুব চঞ্চল , বেখেয়ালি ! এখন যখন সমস্ত বেখেয়ালিপনা, সমস্ত চঞ্চলতার স্বাধীনতাকে ছেড়ে দিয়ে যখন শান্ত হয়ে গেছি তখন কেন বিরক্ত করছিস আমাকে ? বুঝেছি তোর ও সবার আমার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না তাই, তো তুইও চলে যা , আমি তো তোকে আটকে রেখেছি তাই না ! যা তুই মুক্ত ৷”
এই বলে আরুর ইনুর খাঁচার দরজা খুলে দিল ৷
খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছে তবুও ইনু খাঁচা থেকে বার হচ্ছে না, ওউ হয়তো চায় আরূর দুঃখের শামিল হতে কিন্তু আজ ও নিজের সমস্ত কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না বলে হয়তো আরুও ওকে মুক্তি দিতে চাইছে ৷
ইনূ আরূর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে খাঁচার অপর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷
__” কিরে আরু মা এত চেচামেচি কিসের?”
আরূর মা বলতে বলতে আসলো,,,,,
আরু একবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগল,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৮

__” তুমিও চলে এসেছে? বুঝেছি তোমরা চাও না আমি একটু একা থাকি তাইনা….?”
__” তুই খামোখা আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেন ? আমি কি করলাম? আর কি হয়েছে বল!”
__” না তোমরা কিছুই বোঝোনা আর কিছুই করোনি, শুধু আমিই করি সব দোষ , আমি ৷”
আরুর মা এবার কেঁদে ফেললেন তা দেখে আরূর এবার নিজের মধ্যে অনুশোচনা হতে লাগল ,
নিজেকে ক্রমশ শান্ত করে বলল,,,,
__” না আই এম রিয়েলি সরি আম্মু , আমার মাথার ঠিক নাই ৷”

ঈনি আর কিছু না বলে কাদতে কাদতে বললেন,,,, __” আমিতো শুধু তোকে বলতে এসেছিলাম যে আজকে তোর বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই , ওখানে আরিশ ও যাবে গেলেই তোর মন খারাপ হবে ৷”
__” এখানে আরিশ আছে, ওখানে আরিশ আছে, এই ঢাকায় আরিশ আছে, এই পৃথিবীতে আরিশ আছে, সব জায়গায় তোমাদের আরিশ আছে ৷ আর এই আরিশের জন্য আমি পৃথিবী ছেড়ে দিই !”
আরূর কথা শুনে উনি আর সেখানে দাঁড়াতে পারলেন না, চলে গেলেন ওখান থেকে ৷ এই কদিনে মেয়েটার মধ্যে এত পরিবর্তন হয়েছে যে উনি উনার সারা জীবনেও দেখেননি ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২০