তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২০ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২০
Suraiya Aayat

কালকে প্রান্তর হলুদের পর থেকে আরিশের প্রতি আরূর রাগটা বেড়ে চলেছে ৷ আরিশ সবসময় ওর অনুভূতি নিয়ে মজা করে তার ওপর কালকে ও যা করেছে একদম ঠিক করেনি বলে আরূ মনে করছে তাই আজকে বিয়ে বাড়ি যাবে না বলে ঠিক করেছে ৷ দ্বিতীয়বার আবার আরিশের সাথে দেখা হবে ওর বিয়ে বাড়ি গেলেই আর আরু আর কোনভাবে আরিশের মুখোমুখি হতে চায় না ৷
রাত সাতটা থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু এখন বাজে 6:15, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নিল আরূ , তারপরে ঘুমানোর জন্য চোখটা বন্ধ করতেই ওর আম্মু এসে ওকে ডাকলো,,,,,

__” কিরে তুই এখনো ঘুমিয়ে আছিস? তুই আজকে বিয়ে বাড়ি যাবি না?”
আরূ বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,
__” ওই বিয়ে বাড়ি আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই যেখানে তোমাদের আরিশ আছে ৷ বিরক্তিকর মানুষ একটা ৷”
__” তা বললে তো শুনবো না যে আরিশের জন্য তুই বিয়ে বাড়ি যাবি না ৷ প্রান্ত এত আশা করে তোকে বলেছে যাওয়ার জন্য আর তুই না গেলে কেমন একটা দেখায় , আর তাছাড়া সানা একটু আগে ফোন করেছিল আমাকে ও বলেই দিয়েছে যে তোকে নিয়েই তারপর যাবে ৷ ও তো রেডি হয়ে গেছে অলরেডি , বাড়ি থেকেও বেরিয়েছে৷ ”
আরূ এবার উঠে বসে বলল,,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__” আম্মু আমি বললাম তো যাব না ৷”
__” সেই আমি অতশত কিছু জানিনা সানা যদি আসে তো তোকে নিয়েই যাবে সিওর থাক, এটুকুই জানি আমি ৷ ”
এই বলে উনি রূম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷
আরূ মুখে যতই বলুক যে ও আরিশকে দেখতে চাইনা বা ওর মুখোমুখি হতে চাই না কিন্ত ওর মন কখনো ওর মুখের কথার সাথে সায় দেইনি,,,,, ওর সামনে যদি আরিশকে অনন্ত কালের জন্য বসিয়ে রাখা হয় তাহলেও হয়তো ও দ্ধিধা বোধ করবে না
কাল ওর হলুদ তাই আজ অনন্ত প্রিয় মানুষটাকে মন ভরে দেখার কোন সুযোগ ও ছাড়তে চাই না , তাই ও আজ যাবে বলে মনে মনে ঠিক করলো ৷
বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে শাড়িটা নিয়ে ওর আম্মুর কাছে গেলো ৷
ওর আম্মু ওকে একটা টকটকে লাল শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন, তার সাথে আরু ম্্যচিং করে সব অরনামেন্টস পরেছে ৷ আরু হাতে চুড়ি গুলো পরতে পরতে ওর আম্মু বলে উঠল,,,,,

__” আই বেলি ফুলের মালাটা পরিয়ে দিই ৷”
কথাটা শুনতেই আরুর কালকের কথা মনে পড়ে গেল, শুকনো একটা ঢোক গিলে বলললো,,,
__” আমার বেলি ফুলের গন্ধ একদম সহ্্য হয় না, তাই আজকে আর পরবো না,,,,”
__” কালকেই তো বললি যে আজকেও বেলি ফুলের মালা দিবি খোপায় তাহলে ৷”
__” আম্মু রোজ রোজ তো সবার পছন্দটা একই থাকবে সেটা তো হতে পারে না তাই না ! আমার আজকে মন চাইছে না তাই পরবো না ব্যাস ৷”
__” কি জানি কি মতি গতি হয় তোর ৷”

কথাটা বলতে বলতেই নিচে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে আরুর মা বলে উঠলো,,,,
__” ওই দেখ সানা চলে এসেছে , তাড়াতাড়ি যা নাহলে আজকে কিন্তু তোকে বকা দেবে ও ৷”
আরূ আর কিছু না বলে সব জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ বিয়ের কার্ড নিয়েছে 4 টে ৷ একটা প্রান্ত , একটা তুর্য ,একটা সাহেল আরেকটা আরিশকে দেবে ৷”
আরিসের কার্ড টা তে আরিসের নামটা আরূ নিজের হাতে লিখেছে, থাক না একটা নাম না জানা উদ্দেশ্যেহীন বিয়ের কার্ডে ওর হাতের স্পর্শ ৷
কার্ডগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরু ৷ দেরি হলে সানা আবার কথা শোনাতে ছারবে না , তাছাড়া শীতের রাত তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে বলেই বেরিয়ে গেল ও ৷ কালকে থেকে আবার নতুন একটা জীবন ৷
ওদের আসার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে তাই বিয়ের পর্ব টা ওদের দেখার সুযোগ হয়নি ৷

__” ধূর আর একটু তাড়াতাড়ি আসলে বিয়েটা দেখতে পারতাম ৷”
আরূ সানার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,,
__” দোষটা কি আমার?”
__” হ্যাঁ ম্যাডাম অবশ্যই আপনারই, আপনি যদি আর পাঁচ মিনিট আগে থেকে রেডি হওয়া শুরু করতেন তাহলে হয়তো আমরা বিয়েটা একটুর জন্য মিস করার হাত থেকে বাচতাম ৷”
আরূ সানার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকাল, ও জানে সানার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে ওর কোন লাভ হবে না তাই ওর সাথে তর্ক করা মানে বৃথা….

__” তুই কি এখানেই দাড়িয়ে থেকে শোক পালন করবি নাকি প্রান্ত ভাইয়া আর মিথিলা আপুর সাথে দেখাও করবি কোনটা ?”
__” হমম চল,,,বাই দা ওয়ে আশফি ভাইয়া কোথায়? ওনাকে তো দেখছিনা ৷”
আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কিঞ্চিৎ জোরে বলে উঠলো,,,,,
__” আমি জানিনা উনি কোথায়…”
__” একটা ফোন করে দেখ ৷”
__” তার কোন প্রয়োজন নেই, ইচ্ছা হলে আসবে নাহলে আসবে না ৷”
সানা আরুর কথা শুনে মুচকি হসলো ৷
__” তুই কি এখনো দাঁড়িয়েই থাকবি নাকি ওদের কাছে যাবিও ৷”
__” হ্যাঁ চল…..”

ওখানে গিয়ে আরু দেখল ওদের দুজনকে, দেখে মনে হচ্ছে যেন মেড ফর ইচ আদার , দৃশ্যটা দেখে ওর চোখ জুড়িয়ে গেল…. আজ ওর জীবনটাও এমন হতে পারতো যদি আরিশ রাজি থাকতো ৷
আরু গিয়ে প্রান্তর হাতে গিফট টা ধরিয়ে দিল….
তার সাথে প্রান্তর হাতে ওর বিয়ের কার্ডটাও দিল ৷
__” ভাইয়া আমার বিয়েতে আসবেন কিন্তু , দাওয়াত রইলো , না আসলে রাগ করবো ৷”
প্রান্ত আরূর কাছ থেকে কার্ডটা নিয়ে বলল,,,,
__” কার্ডটা পেয়ে খুশি হলাম তবে বিয়েতে যেতে পারবো কি সেটা বলতে পারছি না ৷”
__” কেন ভাইয়া আপনি কি আমাকে নিজের ছোট বোনের মত মনে করেন না যে এমন কথা বলছেন ৷”
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,,,,,

__” আমি আর মিথিলা হানিমুনে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি কালকে তাই যেতে পারবো না ৷ আর আরিশ , তূর্য আর সাহেল ওরা তিনজনই আজকে কক্সবাজার যাচ্ছে, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ৷ তাই ওরাও হয়তো যেতে পারবে না ৷”
কথাটা শুনে আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো, হাতে থাকা ফোনটাকে শক্ত করে চেপে ধরল , হাতটা দরদর করে ঘামছে, শরীরের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে ৷ আরিশের প্রতি যতই রাগ করুক না কেন তবুও সবসময় ভেবেছে আরিশ নিশ্চই কিছু একটা করবে আর অবশেষে ও আরিশকে পাবে তবে আরিশের কক্সবাজারে যাওয়ার কথা শুনে আর কোন আশা ভরসা আরুর মাঝে নেই ৷

ওর সবসময় মনে হয় যে আরিশ ভালোবাসে কিন্তু ওর সঙ্গে মজা করে সবসময় , আর দেখতে চাই যে ও আরিশকে কতটা ভালোবাসে ৷ এই কথাগুলো সবসময় ওর মাথায় ঘোরে তবে বাস্তবে তার সত্যতা ওর জানা নেই ৷
আরূ মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে বলল,,,,,

__” খুব খুশি হতাম যদি আপনারা সবাই আসতেন, তবে আপনাদের হানিমুনটাও অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট, আপনারা নিউলি মেরিড তাই একসাথে সময় কাটালে নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে জানতে পারবেন , আর বুঝবেন নিজেকে ৷ আল্লাহ আপনাদের বিবাহিত জীবন সুখী করুক ৷ ”
__” তুমিও সুখী হয়ো তবে বিয়ের পর তোমার জামাইয়ের থেকে সাবধানে থেকে ও কিন্ত তোমাকে খুব ভালোবাসে মানে পাগলের মতো , তাই ওর ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে দিও না ,…..”
আরু অবাক হয়ে বলল,,,,,
__” আপনাকে এগুলো কে বলেছে ?”
__” মানুষের হাবভাব দেখলেই বোঝা যায় যে কে কেমন ৷ তাই বেশি ভালোবাসা দিলেও হয়তো তুমি কখনো ফেরাতে পারবেনা ৷”
বারাবরের মতই আরু কিছু বুঝলো না ৷

__” এতো রহস্য করে বলার কী আছে, সহজ ভাবে বললেই হয় ৷ যেমন উনি তেমনই উনার ফ্রেন্ড গুলো ৷ ওনাদের কথার মারপ্যাঁচ আমি কিছুই বুঝিনা ৷ অবশ্য আমার বুঝেও কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না ৷(মনে মনে)
মিথিলার সাথে কিছুখন কথা বলে আরু ওখান থেকে চলে এল….
__” কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
__” তূর্য আর সাহেল ভাইয়াকে বিয়ের কার্ড দিতে যাচ্ছি ৷ যতই হোক তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না হলেও একপ্রকার দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কে তাদের সাথে জড়িত ছিলাম তাই এটুকু তো করতে পারি…”
__” চল আমিও যাচ্ছি তোর সাথে?”
__” না তার দরকার হবে না , আমি একাই যাচ্ছি তুই এখানে থাক আমি একটু পরেই ফিরে আসছি…..”

আরু বেশ কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে সাহেল আর তুর্যকে খুঁজতে লাগলো, অবশেষে দেখতে পেল ওদেরকে ৷ সাহেল ক্যামেরা হাতে তূর্যর কয়েকটা ছবি তুলে দিচ্ছে , তাই ওর আর অসুবিধা হলো না ওদের দুজনকে একসাথৈ খুঁজে নিতে ৷
সামনে এগিয়ে যেতে সাহেলের কাছে গিয়ে বলল,,,,,, __” ভাইয়া আপনার সাথে কি দুই মিনিট কথা বলতে পারি যদি আপনার কোন সমস্যা না থাকে!”
সাহেল আরূর দিকে তাকিয়ে আরূকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,,,,
__” সিওর ৷বাট এনি প্রবলেম?”
তূর্য ও ওদের দিকে এগিয়ে গেল ৷ ওরা দুজনেই আরুর দিকে তাকিয়ে আছে যে আরূ কি বলবে ওদেরকে তা শোনার জন্য……

আরু ওদের দুজনের দিকে দুটো বিয়ের কার্ড এগিয়ে দিল ৷
__” ভাইয়া কাল আমার গায়ে হলুদ , আর পরশু বিয়ে, আপনাদের দুজনের দাওয়াত রইলো, আসবেন কিন্তু ছোট বোনের বিয়ে করে মনে করে ৷”
__” ধন্যবাদ বিয়েতে দাওয়াত দেওয়ার জন্য , যেতে পারবো কি সেটা বলতে পারছিনা, আজকে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি ৷”
আরু এক চিলতে হাসি নিয়ে বললো ,,,,,
__” মনে হলো দাওয়াত দেওয়া উচিত তাই দিলাম বাকিটুকু আপনাদের উপরে ৷”
কথাটা বলে আরূ ওখান থেকে চলে এলো…..

এবার আরিশকে বিয়েতে দাওয়াত দিলেই ওর কার্য সম্পন্ন হবে তবে প্রায় একঘন্টা হলো বিয়ে বাড়িতে এসেছে এখনো কোথাও আরিশকে দেখেনি ৷ ভাবলো কার্ডটা আরিশের রূমে দিয়ে আসবে ৷ সেই জন্য আরিসের রুমের দিকে গেল ৷
আরিশের রূমের দরজাটা হাট করে খুলে রাখা আছে তাই আরূ ভাবলো আরিশ হয়তো রুমেই আছে, বলে রুমের দরজাটা খুলে দেখল রুমে কোনো মানুষ নেই, আর আরিশের কোন চিন্হ নেই , বিছানার পাশে ট্রলিটা দেখে যেন আরেক দফা কেপে দিয়ে উঠলো আরু ৷ সত্যিই হয়তো আর কোনো আশা নেই ওর ৷ আরূর চোখের কোনে জল চলে এলো ,এখন চোখের কোনে জল জমে আশা ওর কাছে নিত্ত দিনের ঘটনা , আর তা মুহূর্তের মধ্যে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে টা তেও যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে ও ৷

অন্ধকার রুম, আলো জ্বালালোনা আর ৷ প্রথম দিনে ঘরটাকে এতো পর্যবেক্ষণ করেছিল যে ঘরের প্রত্যেকটা কোনা কোনা ওর মনে আছে ৷ আরিসের বিছানার উপরে বিয়ের কার্ডটা রেখে চলে আসতেই কানে দরজা খোলার শব্দ ওর কানে ভেসে আসতেই আরূ সারা শরীর কেঁপে উঠলো ৷ এক সুগন্ধ ভেসে আসছে ওর নাঁকে, পারফিউমটা আরিসের, আরিশ সবসময় এই পারফিউম ব্যবহার করে সেটা আরূ জানে আর তাছাড়া আরিশের উপস্থিতি কখনো ওর বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না ৷ তবে এখন মানুষটার মুখোমুখি হবে কি করে সেটাই ভাবছে আরু , তবুও এটা ভেবে খুশি হল যে বাড়িতে ফেরার আগে অন্তত মানুষটাকে একবার দেখতে পাবে ৷

আরূ স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছে, আরিশের এর দিকে এখনো ঘুরে তাকায় নি ৷
ধীর পায়ে আরিস আরূর কাছে গেল , আরুর চুলে মুখ ঢুবিয়ে দিল আরিশ আর ওর চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগলো ৷
হঠাৎ আরিশের এমন কাজে আরূর সমগ্র শরীর থরথর করে কাঁপছে, বুঝতে পারছে না যে আরিশ কি করতে চাইছে , আরিশকে বোঝা ওর পক্ষে কখনোই সম্ভব হয়নি আর আজো হচ্ছে না ৷
আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,
__” আপনি কি করছেন এটা ! প্লিজ সরে যান ৷”

আরিশ এবার ওর ঠাণ্ডা হাত জোড়া আরূর গলায় স্পর্শ করতেই আরূ আরিশের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল ৷
__” প্লিজ সরে যান, এতটা কাছে আসবেন না ৷”
এবার আরিশ ওর আরেক হাতটা আরুর কোমরে শক্ত চেপে ধরে আরূকে ওর নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ৷ আরূর পিঠটা আরিশের বুকে ঠেটে রয়েছে ৷ আরূ আরিশের এক হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আছে…..
আরূ যেন এক ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে ক্রমশ, নিজেকে আর আরিশের থেকে সরাতে ইচ্ছা করছে না ৷ হঠাৎ আরিশ ওর কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে উঠলো,,,,,
__” বিয়ের কার্ডটা এখনো পেলাম না ৷”

কথাটা শুনতেই আরূ একদফা চমকে গেল , এই মুহূর্তে ওর ইচ্ছা করছে আরিশের গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারতে তবে চাইলেও মানুষ টাকে মারতে পারবেনা ৷ আরূ আরিশের যে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছিল সেই হাতটা এক ঝটকায় ফেলে দিল ৷ আরিশের কাছ থেকে সরে এল আরু ৷
__” বিয়ের কার্ড চাইতে গেলে তার এতটা কাছে আসতে হয় জানতাম না মিস্টার আরিশ ৷”
আরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরূর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,,,
__” সবটাই যে আপনার নলেজে থাকা ডিকসানারির মতো হবে তার কোনো মানে হয় না মিস আরূ ৷ i’m ইউনিক ইউ নো ৷ ”
আরূ তাচ্ছিল্যের স্বরে একটা হাসি দিয়ে বলল,,,

__” কোন মানুষ যে এতটা যঘন্্য হতে পারে তা জানতম না ৷ বাই দা ওয়ে কাল আমার হলুদ আর পরশুদিন বিয়ে আসবেন কিন্তু, তাহলে খুশি হব ৷”
__” আমি না গেলে কি কোন কাজই পূরন হবে মিস আরুশি ? আমার কিন্ত মনে হয় না তা ৷”
__” নিজেকে অন্যের জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন ভাবেন?”
__” না ভাবলে যে আপনি আজীবন নিরামিষ ই থেকে যাবেন থেকে যাবেন আর আপনাকে আমিষ বানানোর দায়িত্বটা যে,,,,!”
কথাটা আর পুরো বললো না আরিশ ৷
__” মজা করছেন তো, বেশ ! সে যাই হোক, আমি নিরামিষ নাকি বা আমিষ তা আপনার না ভাবলেও চলবে বাট বিয়েটা নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন যে আসতে পারবেন কি ৷”

__” আলবাদ ভাববো , আপনি না বললেও যে দায়িত্বটা আমারই ৷”
আরিসের বলা কথাগুলো আরূ কিছুই বুঝতে পারছে না তাই কথাগুলো যেন ওর কাছে মজা বলে মনে হচ্ছে ৷আরূ বিরক্ত হয়ে চলে যেতে গেলেই আরিশ ওর হাতটা ধরলো,,,,
__” বিয়ের দাওয়াত দিলেন অথচ গিফটটা নেবেন না?”
আরূ শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,
__” আপনার থেকে যা পেয়েছি সেটুকু মনে রাখতেই যেনো কষ্ট টা বেশি হচ্ছে তাই নতুন করে আপনার দেওয়া কিছু স্মৃতি করে রাখার মত ক্ষমতা আমার নেই ৷”

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৯

__” কিন্তু আমি যখন চেয়েছি গিফটটা আপনাকে দেবো তো আপনাকে নিতেই হবে ৷”
বলে আরূর কাছে গিয়ে আরুকে কোলে তুলে নিল,,, __” আরূ শক্ত করে আরিসের পাঞ্জাবির কলারটা চেপে ধরল ৷”
__”নামান আমাকে, কি করছেন আপনি ?”
আরুর কোন কথা না শুনে আরিশ আরূকে বিছানায় বসিয়ে দিল,,,,
ও নিজৈ মেঝেতে বসে আরূর পা থেকে জুতা জোড়া খুলে দিয়ে পকেট থেকে একজোড়া নুপুর বার করে আরূর পায়ে আলতো করে পরিয়ে দিলো ৷

আরূ ভাবেনি যে আরিশ এভাবে ওকে উপহার টা দেবে ৷
নুপুর পরানো শেষে আরিশ আরুর পায়ে আলতো করে ঠোট ছোয়ালো , আর আরু তাতে কেপে উঠলো ৷
__” এখন নুপুরেই সন্তুষ্ট হন, পরে ভালোবাসা গুলো যত্ন সহকারে নিলেই খুশি ৷”
__”মানে?”(কাদোকাদো হয়ে)
আরিশ আরূর কথা পাত্তা না দিয়ে বললল,,,,,
___” কক্সবাজার যাচ্ছি, ফিরে এসে হানিমুনে যাবো ইনশাআল্লাহ ৷ আমীন !”
বলে আরুর দিকে চোখ মেরে ট্রলিটা হাতে করে বেরিয়ে গেলো ৷
__” উনি এমন কেনো?কেনো আমার অনূভূতি গুলো বোঝেন না !কেনো?”
আরুর চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২১