তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৪ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৪
Suraiya Aayat

আরূর সম্পূর্ণ সাজ কমপ্লিট, একটা লেহেঙ্গা পড়েছে,হাতভর্তি চুরি , আর তারসাথে ম্যাচ করে অর্নামেন্টস পরেছে , একটু গাঢ় মেকআপ, সম্পূর্ন অপ্সরীর মত লাগছে আরূকে দেখতে, তবে সব কিছুর মাঝে একটা কমতি থেকেই গেছে, আর সেটা হলো ওর পায়ে থকা নুপুর , এক পায়ে নুপুর আছে আর এক পায়ে নুপুর নেই কারণ আরেকটা নুপুর তো আরিশের কাছে ৷ আরিশ বলেছে যে সন্ধ্যাবেলা যখন বিয়ের দাওয়াতে আসবে তখন নুপুর টা নিয়ে আসবে ৷

আরিশকে অনেকবার বললেও আরিশ নূপুরটা দেইনি ৷ আরু মনে মনে আরিশকে হাজারো বকা দিচ্ছে,
__” নির্লজ্জের মত আমার বিয়েতে আসবে , কতবার বললাম বিয়েতে আসবেন না তবুও আসবেই , বুঝেছি যতক্ষণ না আমাকে সম্পূর্ণ শেষ করে দেয় ততক্ষন তো না শান্তি নেই ৷ যখন আমার বিয়ে হয়ে যাবে তখন ঐ নুপুর টা দিতে আসবেন তার সাথে কাটা ঘায়ে এত নুনের ছিটা দিয়ে দেবেন,,,মনটা আর এক দফা ভেঙে চলে যাবেন….”
পার্লারের মেয়েটা আরূ কে সাজানো শেষে আরূকে বলে উঠলো,,,,
__” এ কি আপু তোমার পায়ে আর একটা নুপুর কই? আরেকটা কোথায় গেল?”
আরূ চমকে গিয়ে পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে থতমত খেয়ে মেয়েটাকে বলল,,,,

__” ওহ তাইতো , আসলে ওটা হারিয়ে গেছে ৷”
__” আপু তোমার নুপুর হারিয়ে গেছে তুমি এতক্ষণ খেয়াল করনি? একটা নূপুর পরে আছো , তুমি বরং নুপুর টা খুলে ফেল, একটা নুপুর পরার থেকে খুলে ফেলায় বেটার ৷”
আর যা কিছুই হোক আরিসের দেওয়া এই চিহ্নটা নিজের থেকে কখনো আলাদা করবে না আরূ তাই ও বলে উঠলো,,,,,
__” না থাক কোন সমস্যা নেই , একটাই পড়ে থাকি আর আরেকটা নুপুর ঘরে এদিকে ওদিকে কোথাও আছে হয়তো আমি খুঁজে নিচ্ছি ৷”
আরুর এরকম একটা কথা শুনে পার্লারের মেয়েগুলো আর কিছু বলল না, সম্পূর্ণ সাজটা একবার ঠিক করে দিয়ে ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরূ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল 6:15 বাজে, কিছুক্ষণ পরেই সাড়ে ছটা বাজবে আর তখনই ওর কাবিন ৷
সময়টা যত এগিয়ে যাচ্ছে বুকের ধুকপুকানিটাও ততই বেড়ে চলেছে মনে হচ্ছে যেন হৃদয়টা খুলে এক্ষুনি বাইরে বেরিয়ে এসে ছটফট করবে ৷ আজ নিজের প্রিয় মানুষের থেকে চিরকালের মতো আলাদা হয়ে যাওয়ার বেদনা টা বড্ড বেশি আঘাত করছে ওকে, বছরশেষের সাথে ওর জীবনের পূরোনো সব মূছে নতুন মুহূর্তভাবে সবকিছু শুরু হবে…..

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিছানার ওপর বসতেই চোখ থেকে টপটপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল নিজের অজান্তেই , তাড়াতাড়ি করে হাত দিয়ে ঝটপট করে মুছে নিল , এখন ওকে কেউ কাঁদতে দেখলে তা নিয়ে হয়তো আবার হাজারো প্রশ্ন করবে , তা নিয়ে পুরো বিয়ে বাড়ি শোরগোল পড়ে যাবে ৷ আসলে এটাই হল সমাজের বাস্তবতা, কখনো একটা কোন খুত পেলে সেটাকে নিয়ে ছোট থেকে কিভাবে বড়ো কোন জটিল বিষয় বানাতে হয় তা এই সমাজের মানুষজন ভালোই জানে , তাই কাউকে কোন রকম কিছু বলে সুযোগ করে দেওয়াটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতোই ৷ তাই চুপচাপ স্থির হয়ে খাটের উপরে বসে রইল ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর কাজিন রা সবাই হাসতে হাসতে রুমের মধ্যে এলো ৷ ওরা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেছিল যখন চারিদিকে বর আসছে বর আসছে ধ্বনিতে ফেটে পড়ছিল তখন ৷ আর তিথি আর সানা দুজনের গিয়েছিল তবে ওর কাজিন রা ফিরলেও ওরা ফেরেনি দেখে আরূ খুব বিরক্ত হলো ৷
মনে মনে ভাবতে লাগল,,,,,

__” ওই ভ্যাবলা আশফিকে দেখার মাঝে এত উৎসাহ কিসের সেটাই বুঝিনা ৷”
আরু চুপচাপ বসে আছে তখনই ওর কাজিন দের মধ্যে থেকে একটা কাজিন বলে উঠলো,,,
__” জিজু কিন্তু আমাদের সেই লেভেলের মানে চরম লেভেলের হ্যান্ডসাম যাকে বলে ৷ আমি তো দেখেই ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি , ফেসবুকে রিকুয়েস্ট দিয়েছি দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে একসেপ্ট করেছেন ৷ ফেসবুকের ছবিগুলো পুরোই মার ডালা…”

কথাটা শুনে আরূর মধ্যে কিঞ্চিত খটকা লাগলো , তবুও এখনই ওদের সামনে অবাক হলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না তাই ক্রমশ স্বাভাবিক রাখল নিজেকে ৷ আশেপাশের ওর কাজিন রা প্রায় সবাই ওর হবু জামাইকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ৷ আরূ মনে মনে ভাবছে যে আশফির মাঝে এমন কি খুঁজে পেল ওরা যে এত প্রশংসা করেই চলেছে, কই ও নিজে তো কখনো আশফির প্রতি এতটা আকর্ষিত হয় নি, এর থেকে আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না আরূ কারণ তখন কাজী সাহেব ওর রুমে ঢুকে পড়েছেন….

কাজি সাহেবকে দেখেই ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল একদম ঠিক সাড়ে ছটা বাজে , উনি যেন এক মুহূর্তও দেরি করেননি ৷
এই মুহূর্তে আরূর মনে হচ্ছে যে এই বিয়েটা দেওয়াই যেন কাজী সাহেবের জীবনের মূল উদ্দেশ্য , এমনটাই লাগছে ওর কাছে এখন….
কাজী সাহেব এশে আরুর সামনে বসলেন , বসে চোখের চশমাটা সামান্য ঠিক করে নিয়ে আরূশিকে রেজিস্ট্রি পেপারের সই করার জায়গাটায় সই করতে বললেন ৷ আরূ আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সরাসরি সই করে দিল , পাশে মানুষটার করা সইয়ের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেনি ও,……
পেপারে সই করা হয়ে গেলেই কাজী সাহেব আরুশিকে বলে উঠলেন,,,,,,

__” বিনতে আরুশি রহমান আপনাকে ধানমন্ডি নিবাসী আফজাল খান এর পুত্র আবরার আরিস খান নগদ 25 লাখ টাকার দেনমোহর দিয়া আপনাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন আপনি কি কবুল, যদি কবুল হন তাহলে বলেন কবুল ৷”
কথাটা শোনামাত্র আরূর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো , এটা কি শুনল ও ! আরিশ ওকে বিয়ে করবে মানে ও যাকে ভালোবাসে সে ওকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে , বিয়ে করার জন্য বর সেজে সেখানে এসেছে, কথাটা ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না , এটা যেন অবাস্তবের মতো লাগছে ওর কাছে , এখন হয়তো বিয়ে বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কথাটা ওকে বুঝাতে চাইলেও ও বিশ্বাস করবে না যতক্ষণ না আরিশ নিজের মুখে আরূকে বলবে ৷

আরু অবাক, এতটাই অবাক যে মুখ থেকে কোন আর কথা বের হচ্ছে না , যে মেয়ে আগে একটা মুহূর্তও কথা না বলে থাকতে পারতো না সেই মেয়েই আজ মুখের বুলি হারিয়ে ফেলেছে , সেটা ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না , কি বলবো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না , চোখের কোনে আনন্দে জল চলে এসেছে , এ আনন্দ ও কিভাবে প্রকাশ করবে সেটা ও জানেনা ও, আচ্ছা এটা কোন স্বপ্ন নই তো? এগুলোই ভাবছে ও…
আরূ এবার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,

__” এইটা আপনি কি বলছেন আমার তো !”
তখনই ওর চিরচেনা সেই পরিচিত কন্ঠটা থেকে কিছুটা উঁচু স্বরে আওয়াজ ভেসে এলো,,,
__” হ্যাঁ তোমার আবরার আরিশ খানের সাথেই বিয়ে হওয়ার কথা , আবরার আরিশ খানই তোমাকে বিয়ে করতে এসেছে ৷ আর নিজেই তো বিয়ে করার জন্য ইনভাইট দিলা , আর এখন বলছ যে অন্য কাউকে বিয়ে করবা, এটা কিভাবে মেনে নিই আরূপাখি বল ৷
এভাবে বিয়ে আসরে একটা ছেলেকে কথা দিয়ৈ তাকে প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া এটা কি একটা ছেলের জন্য অপমানের নই ? বল!
( ভ্রু জোড়া নিচিয়ে কথাগুলো বলল )

আরিশের কথাগুলো শুনে আরূর মনে হলো যেন আগে যেমনটা আরিশ ওর মনটা কে ভেঙেছে আজও ঠিক সেই পরিকল্পনাতেই আছে , তাই আরিশ কথাটা বললেও ওর আরিশের বলা কথাটা যেন এখন আর ওর কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না , এবার অভিমান আর রাগ নিয়ে কিছুটা দৃঢ়স্বরে কাজী সাহেব কে বলে উঠলো,,,,,
__” আমি ওনাকে বিয়ে করব না ,আর আমার সঙ্গে ওনার বিয়ের হওয়ার কথা নয় , আমার যার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা তিনি কোথায় ? উনাকে কেন এখানে আনা হয়নি! আর এই মানুষটাকে কেন এনেছেন, আমি কি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছি? আমি তাকে বিয়ে করতে চাই না , তাই যার সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাকে নিয়ে আসুন অন্যথায় আমি বিয়ে করবো না ৷”

আরুর কথা শেষে সানা আর তিথি বলে উঠলো,,,
__” এটা তুই কি বলছিস, তুই তো ভাইয়াকে ভালোবাসি তাহলে এখন এমন টা বলছিস কেন?”
আরূ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,,,,
__” ভালোবাসা জিনিসটা ঠিক উনার নামের সাথে গ্রহণযোগ্য নয় , সম্পূর্ণ বিপরীত শব্দ ওনার সাথে ৷ উনি ভালোবাসা পাওয়ারই যোগ্যতা রাখেন না কারণ কাউকে ভালোবাসলে ভালবাসার দাম দিতে হয় আর উনি তা দিতে শেখেননি ৷ ”
আরিশ এবার একটা টেডি smile দিয়ে কাজী সাহেব আর ঘরের মধ্যে থাকা সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,
__” আপনারা 5 মিনিটের জন্য একটু বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন , 5 মিনিট পর আমি যখন রুমে থেকে বেরিয়ে আসবো তখন কাজি সাহেব আপনি রুমে আসবেন আর এসে বিয়েটা পড়িয়ে দেবেন ৷”

সবাই একে অপরের দিকে তাকা তাকি করতে লাগলো , এর আগে কখনো এমনটা বিয়ে হয়তো কেউ দেখেনি ৷ কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না যে আরিশ ঠিক কি করতে চাইছে ৷ আরুর কাজিসহ সবাই অবাক হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল , সানা আর তিথি মুচকি মুচকি হাসছে , রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিথি আরূর দিকে ইশারা করে বললো,,,,
__” সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা যখন ব্যাকাতে হয় তখন এরকমই হয় ৷”
সানা আরিশকে কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
__” ভাইয়া বেস্ট অফ লাক , জানি যদিওবা এই পাঁচটা মিনিট সময় তোর জন্য একটা বছরের মতো বড় হবে , সো এনজয় ইউর টাইম ৷”
আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,

__” তোর ভাবিকে বলে দিস যে তার জামাই তেমন একটা সুবিধার নয়, চাইলেই অনেক কিছুই করতে পারে ৷”
কথাটা শুনে সানা আর তিথি মুখ টিপে হেসে চলে গেল বাইরে…..
বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে কখন 5 মিনিট হবে সেই অপেক্ষায় , আর তারপরে কখন কাজি বিয়েটা পড়াবেন ৷ পাঁচ মিনিট পরে কি সেটা দেখার জন্যই সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে ৷ নিচে সবার কানে খবরটা পৌঁছে গেছে , আরূর মা আর অনিকা খান দুজন দুজনের হাত ধরে বসে আছেন ভয়ে ৷

__” তুই এত চিন্তা করছিস কেন?”
__” চিন্তা এমনি আর হচ্ছেনা , আমার মেয়েটা খুব জেদী, ও যদি এখন বিয়ে টা না করে তাহলে কি হবে?”
অনিকা খান মুচকি হেসে বললেন ,,,
__” আমার ছেলেটা কে কি তুই চিনিস না?”
আরুর মা মুখৈ কিঞ্চিৎ হাসি নিয়ে বললেন,,,,
__” মেয়ের মা তাই চিন্তা টাও বেশি তবে তোর কথা শুনে এখন খানিকটা রিলেক্স লাগছে ৷”
__” চিল বেয়ান সব ঠিক হবে ৷”
কথাটা বলে দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলেন ৷ এটা হচ্ছে সেই সময়কার খুশি যখন দুই বেস্ট ফ্রেন্ড গভীর একটা সম্পর্কে পরস্পরের সাথে আরো গভীর সম্পর্কে যুক্ত হয়ে যায় ৷
সেকেন্ডের কাঁটাটা 12 টার ঘরে পৌঁছতেই সবাই আগ্রহ নিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখল আরিশ দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে
আরিশ কাজী সাহেব কে বললেন,,,,

__” এবার আপনি জান ৷’
কাজী সাহেব খানিকটা থতমত খেয়ে রুমে ঢুকলেন, ওনার পিছনে সবাই ঢুকলো এর পরে কি হয় তা দেখার জন্য ৷
উনি আবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন,,,,
__” বিনতে আরূশি রহমান , ধানমন্ডি বাসী আফজাল খান এর পুত্র আবরার আরিশ খান নগদ 25 লক্ষ টাকার দেনমোহর ধার্য করিয়া আপনাকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে, আপনি কি এ বিবাহে কবুল?”
__” জ্বী আমি কবুল ৷”
__” তাহলে তিনবার বলেন কবুল,,,,,”
__” কবুল , কবুল , কবুল ৷”
__” সকলে বলেন আলহামদুলিল্লাহ ৷”
সবাই একসাথে মুচকিহেসে বলল,,,
__” আলহামদুলিল্লাহ ৷”

সবাইতো অবকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, মানে যে আরূশি এতক্ষণ ধরে বিয়ের জন্য আমত করছিল সেই আরূশি এখন সম্মতিতে বিয়ে করছে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল…
বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে কাজী সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন, উনি বেরিয়ে যেতেই সবাই আরুশিকে ঘিরে ধরল জানার জন্য যে কি এমন হলো যে আরূ বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল ৷
আরূ বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,

__” কিছু হয়নি উনি বললেন রাজি হয়ে গেলাম আর কিছু না ৷”
আরূকে আর কেউ বেশি ঘাটালো না তবে সবার মধ্যে এখন চরম কৌতুহল এটা নিয়ে যে এত সহজে আরূ কিভাবে রাজি হয়ে গেলো , যৈখানে আরূ এতটা একগুয়ে আর জেদি ৷ আরূ কেমন তা সকলেরই কমবেশি জানা….
বেশ কিছুক্ষণ পর ওর কিছু কাজিন রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর সানা আর তিথি আরূর পাশে বসে আছে , আর আরূ এখন ওর রাগি দৃষ্টি ওদের দিকে নিক্ষেপ করছে ৷
আরূকে এভাবে দেখে সানা আর তিথি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,,,
__” আমরা তো কিছুই জানিনা ৷”

আরূ আর কিছু বলতে যাবে তখনই সাথে সাথে আরুর ফোনটা বেজে উঠতেই ফোনের স্ক্রিনে মিস্টার অভদ্র নামটা ফুটে উঠতে তিথি বলে উঠল,,,,
__” নে তোর মিঃ অভদ্র জামাই ফোন করেছে , বাসরের আগে কিছুক্ষণ প্রেম আলাপ করে নে ৷আমরা আর থেকে কি করবো? তুই কথা বল ৷”
কথাটা বলে ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরু ফোনটা কানে নিয়ে ধরে আছে কিছু বলছে না রাগে , অপর দিক থেকে আরিশ বলে উঠলো ন,,,
__” কি বলেছিলাম মিসেস আবরার আরুশি যে আমি যা চাই তাই পাই ৷ আর বিয়েটা সবাইকে কেমন চমকে দিয়ে করলাম বলুন, যতই হোক আইএম ইউনিক ইউ নো ৷”
আরিশের কথা শুনে আরূ রেগে বলে উঠলো,,,,,

__” আপনাকে আমি দেখে নেব , আপনাকে আমি ছাড়বো না বলে দিলাম ৷”
আরিস আরূকে রাগানোর জন্য বলল ,,,,
__” আমি ও তো চাই আপনি আমাকেই দেখুন শুধু, আর শুধু আমাকেই কেন সম্পূর্ণ আরিশ খানকেই দেখুন, তার মাথা থেকে পা অবধি দেখুন ভালো করেই দেখুন আর আমাকেই ছাড়বেন কেন পারলে আরও জোরে চেপে ধরে রাখবেন ৷ তবে অবশ্যই আপনার পানিশমেন্ট টা কিন্ত পাওনা রইল, সময়ের সাথে সাথে পানিশমেন্ট পেয়ে যাবেন ৷ আর বাই দ্যা ওয়ে আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত ৷ বাসর রাত মানে বুঝেন তো? মানে কি কি হয় ! আই মিন শুধু আমি আর তুমি কেউ থাকবে না সেখানে , তাই বি প্রিপেয়ার ফর দ্যাট ৷”

আরিশের কথা শুনে আরূ রেগে গিয়ে ফোনটা কেটে দিলো,,,, মানুষটার সাথে তর্ক করাই বেকার, তবে মনের মধ্যে এখন হাজারো রাগের মাঝেও এক প্রকার প্রশান্তি অনুভব করছে, এত মান-অভিমান দুঃখ কষ্টের পর নিজের মনের মানুষটাকে নিজের করে পেয়েছে সারা জীবনের মতো , তার সাথে সারাটা জীবন কাটাবে তাকে একান্ত নিজের করে পাবে , মানুষটা যে শুধু তারই , কথাটা ভেবে আরুর মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল…

আরিশ বসে আছে আরূর পাশে আর তূর্য আর সাহেল ও বসে আছি ওদের সাথে , মাঝে মাঝে এটা ওটা নিয়ে আরিসের সাথে মজা করছে ওরা ৷ তখনই হঠাৎ সামনে পরিচিতি কণ্ঠ ভেসে আসতেই আরিশ চমকে গিয়ে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে ৷
__” তুই কি ভেবেছিলি যে তোর বিয়ে আর আমি আসবো না এটা কখনো হতে পারে ! ওরে তোরাই তো আমার সব , তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো ৷ নিজের প্রিয়জনের খুশির সময় যদি শামিল না হতে পারি তাহলে আমরা তার কেমন প্রিয়োজন ৷”
আরি শক্ত করে প্রান্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,
__” অনেক ধন্যবাদ তোকে, তুই এসেছিস এটাই অনেক ৷”
প্রান্ত আরিসের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল ,,,,
__” ধন্যবাদ কিসের রে শালা, তোকে এক্ষুনি মেরে বৃন্দাবন পাঠাবো , যদি thank u বলিস ৷
আর আমার থেকে তো তোর ভাবীর এক্সাইটমেন্ট আরো বেশি , সেই বিকাল থেকে সাজতে বসেছে যতোই হোক একমাত্র দেবরের বিয়ে বলে কথা ৷”

কথাটা শুনে আরিস মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,,, __” থ্যাংক ইউ ভাবি ,থ্যাংক ইউ সো মাচ ৷”
প্রান্ত আরিশকে বলে উঠল,,,,
__” তোর জন্য আমার হানিমুন cancel হলো, তা হানিমুনে একসাথে যাচ্ছি তো নাকি ? নাকি ওটাও তুই একা একাই যাবি?”
__” আমার হানিমুনে কাউকে এলাও না, ইভেন তোকেউ না , তাই আমি আর আমার আরূপাখি একাই যাব ৷ তোরা অন্য জায়গায় যা পরে যখন খোকা-খুকি হবে তখন ভেবে দেখা যাবে ৷”
কথাটা শুনে প্রান্ত আর মিথিলা দুজনেই হেসে উঠলো , তার সাথে আরিশ তুর্য আর সাহেল ও ওদের সাথে যোগ দিল ৷ সত্যি ভালোবাসার পূর্ণতা কতই না আনন্দদায়ক তা বাস্তব জীবনে না ঘটলে কখনো বোঝা যায় না….

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৩

আরূ ওর বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অনেক কান্নাকাটি করেছে , অবশ্য এটা সব মেয়ের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত দুঃখের একটা মুহূর্ত , আর সেই মুহূর্তেও আরিশ ওকে নিয়ে মজা করতে ছিড়েনি ৷ সেই মুহূর্তে আরিশ আরুর কানে কানে বলেছে,,,,
__” এখনে যত পারো কাদো, পরে আর কাদার সুযোগ পাবে না , কারণ ভালোবাসা পেয়ে আর কিছুই মনে থাকবে না ৷”
সেই মুহূর্তের আরিশের কথাটাকে গুরুত্ব দেয়নি আরূ তবে এখন আরিশের পাশে বসে থেকে ওর কথাটার গুরুত্ব টা বুঝতে পারছে ৷ গাড়িতে আরিশ আর ও সম্পূর্ণ একা , গাড়িতে উঠার আগে অলরেডি ওকে অল দ্যা বেস্ট জানিয়েছে আরিশের ফ্রেন্ডরা ৷ ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আরিশো বলেছে যে,,,,

__” সুখবর নিয়েই আসবে ৷”
ওরা সবাই ই একই পরযায়ের ৷
হঠাৎ গাড়িটা অন্য রাস্তায় দিকে ব্যাক করতেই আরু বলল,,,
__” কি হল এ রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেন , এটা তো আপনার ধানমন্ডির বাসার রাস্তা ৷”
আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বলল,,,,
__” একলা বাড়ি , ফাঁকা ঘর , চারিদিকে নিস্তব্ধতা, পর্দার আড়ালে জোছনা রাতে হালকা চাঁদের আলো, আর শুধু তুমি আর আমি , আর আমাদের বাসর রাত , ওহ আলাদাই ফিলিংস , আই এম সো এক্সাইটেড, তআর তুমি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড, না বললেও বুঝি? ৷”
আরিসের কথা শুনে আরুশির ইচ্ছে করছে এখুনি আরিশকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মারতে,তবে চাইলেও তা সম্ভব নয় ৷
__” আপনার ড্রিম এগুলো,,,বাস্তবে সব প্ল্যানে আমি পানি ঢেলে দেবো ৷”
__” দেখা যাবে আরূপাখি ৷”

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৫