তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৯ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৯
Suraiya Aayat

আরিশ আরুকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় বসালো….
আরূ আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখল যে আরিশ কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ আরূ একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,
__” কি হলো আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
আরিশ এবার একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে আরূর চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো , এনে আরুর গলায় একটু বেশ জোরেই কামড়ে দিল….
ব্যথায় আরূর চোখে সামান্য জল চলে এলো ৷ মানুষটার মতিগতি বোঝা ওর পক্ষে অসম্ভব , কখন যে কি চাই কিছুই বোঝা যায় না ৷
আরিশ ওভাবে কামড়ে ধরে আছে আরূ আর সহ্য করতে না পেরে বললো,,,,

__” আমার লাগছে প্লিজ ছাড়ুন ৷”
আরিশ আরূর থেকে সরে এসে আলতো করে আরূর গলায় কামড় দেওয়ার জায়গাটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো ৷
আরূর চোখের কোনে জল গুলো চিকচিক করছে তা আরিশের চোখে বেশ দৃশ্যমান ৷ কামরটা একটু জোরেই দিয়েছে….
আরিশ এবার সামান্য দৃঢ় কণ্ঠে বলল,,,,
__” এবার চোখে জল আসছে তাই না ! খুব কান্না পাচ্ছে ?”
আরিসের এমন কথার মানে আরূ বুঝতে পারল না ৷ ওর এরকম ব্যবহার সাথে ওর কান্নার সম্পর্ক কি সেটা আরূর কাছে অজানা ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চোখ থেকে নোনা জল গুলো টুপ টুপ করে গড়িয়ে পড়ার আগেই চোখটা নামিয়ে নিল আরূ ৷
চোখটা নামিয়ে বেশ কয়েকবার পলক ঝাপকাতেই চোখের নোনা জল চিবুক দিয়ে গড়িয়ে পড়তেই বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলো আরূ ৷ ধাক্কা খেয়ে বিছানার উপর পড়ে যেতে যতক্ষণ এর মধ্যে ও নিজে হকচকিয়ে উঠলো তার আগেই দেখল আরূ ওর হাত জোড়া দিয়ে ওকে বন্দি করে রেখেছে , আর ওর মুখের সামনে ঝুঁকে আছে , মুখে রাগের আভা স্পষ্ট ৷
হঠাৎ করে মানুষটার মধ্যে এমন কি হয়ে গেল যে জন্য কখন থেকে ওর সাথে এরকম ব্যবহার করেই চলেছে ৷
আরিসের ব্যাপার-স্যাপার ও কিছুই বুঝতে পারছে না তবে ওর এমন ব্যবহার যে আরুকে বারবার কষ্ট দিচ্ছে সেই কষ্টটা অনুভব করতেই আরু এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷
আরিশ আরূর মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল,,

__” একদম চুপ , চোখ দিয়ে যেন এক ফোটা জল আর মুখ থেকে ফুপিয়ে কাদার আওয়াজ না আসে ৷”
ভয়ানক লাগছে আরিশকে ৷ আরু স্তব্ধ হয়ে গেছে , পারছে না ফুঁপিয়ে শব্দ করে কাঁদতে , তবে চোখের লোনা জল গুলো আর বাঁধ মানছে না , সেগুলো অনবরত টুপ টুপ করে গড়িয়ে পরছে ৷
আরিশ এবার আরুর গলায় আলতো করে স্পর্শ করে বলল
__” তোমার ওই চোখে যেন কখনো আর আমি জল না দেখি, আর মুখ থেকে জল যেন কখনো ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ না পায় , যদি পাই তো তোমার একদিন কি আমার একদিন ৷ তুমি এর আগে কখনো কাঁদো নি এমনকি কাদার প্রয়োজন পড়েনি কখনো ৷ আমি তোমার জীবনে আসার পর থেকে তোমার চোখ থেকে হাজারো অশ্রুকনা বেরিয়ে এসেছে আর সে প্রত্যেকটা অশ্রুবিন্দু যেন আমার বুকে পাথরের মত ভর করেছে সুতরাং তোমারে কষ্টের দায়ভার সম্পূর্ণ আমার ৷ আমি চাইনা আমার জন্য অন্তত তুমি কখনো কষ্ট পাও , আর না কারো জন্য ৷

তোমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরলে তোমার যতটা না কষ্ট হয় তোমার থেকে আমার আরো বেশি কষ্ট হয় আরুপাখি, তাই ভুলেও আর কখনো এই চোখ থেকে যেন আমি জল গড়িয়ে পড়তে না দেখি ৷ আমার উপর অভিমান রাগ যা-ই থাকুক প্রকাশ করবে আমার কাছে কিন্তু কখনো কাঁদবে না , এমনকি যেদিন আমি থাকবো না সেদিনও,,,,
কথাটা বলার সাথে সাথে আরু আরিসের মুখটা চেপে ধরল ৷ তাড়াতাড়ি আরিশকে জড়িয়ে ধরলো ৷ আরিশের বুকে মাথা রেখে বলল ,,,,

__” আপনি সবসময় এমনটা কেন বলেন ? আপনি জানেন না যে আপনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমার কষ্ট হয় ! প্লিজ কখনো এমন বলবেন না , আর আমি কাঁদলে আপনিতো কান্নার থেকে হাজার গুন বেশি ভালবাসা আমাকে ফিরিয়ে দেন তাই এটুকু কান্নাতে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি কারণ আপনি কান্নার পরিবর্তে একরাশ ভালোবাসা এনে দেন আমার কাছে ৷ এর থেকে বড় চাওয়া-পাওয়ার আমার কাছে কিছুই হতে পারে না…”
আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,
__” তবুও বুকের বাম পাশটায় বড্ড আঘাত করে আরূপাখি তা যদি তুমি বুঝতে…”
আরু এবার আরিশের থেকে সরে এসে চোখের জলটা মুছে বলল
__” তাই বলে আপনি এভাবে কামড়ে দেবেন? জানেন আমি কত ব্যথা পেয়েছি !”
আরিশ আরুর দিকে চোখ টিপে বলল ,,,
__” একদিন এই সমস্ত কাজ কর্মের প্রতিই তুমিও আশক্ত হবে , সেদিন বুঝতে পারবে এই সমস্ত কাজ কর্মের গভীর তাত্পর্যতা ৷”
আরু চোখের জল মুছে বলল,,,

__” বুঝতে আমার বয়েই গেছে , আর বাই দ্যা ওয়ে আমি কিন্তু জানি আমার মিস্টার অভদ্রটা আমাকে কতটা ভালবাসেন , তবে তিনি যদি এখন আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমাদের লাঞ্চের জন্য যেটা এনেছেন সেটা যদি আমাকে খাইয়ে দেন তাহলে আমি বেশি খুশি হতাম ৷”
আরিশ আরুর দিকে মুচকি হেসে বলল,,
__” আমার বউটা যে অনেক বোঝে ৷”
আরু দাঁত বার করে হেসে বললো
__” এটুকু তো বুঝতেই হয়……”

দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে একে অপরের হাতে হাত রেখে আর সমুদ্রের নোনা জলটা পা দুটোকে ভিজিয়ে দিচ্ছে বারবার, আর এই মুহূর্তের সাক্ষী রয়েছে পশ্চিম দিগন্তে অস্ত্রগামী সূর্যটা ৷
আরূ আরিসের দিকে তাকিয়ে বলল
__” চলুন নিজেদের ভালোবাসার নামটা সমুদ্রের খাতায় লিপিবদ্ধ করি ৷”
__” কিভাবে আরুপাখি ?”
কথাটা বলার সাথে সাথে আরূ আরিশের হাতটা ধরে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখান থেকে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে তীরের কাছে এসে দাঁড়ালো , তারপরে খানিকটা ঝুকে সমুদ্রের বালিতে ভালোবাসার চিহ্নটা অঙ্কন করতে গেলেই সমুদ্রের জল এসে সেটাকে ভাসিয়ে লন্ডভন্ড করে দিল ৷
আরু কাচুমাচু ফেস আরে আরিশের দিকে তাকালো ৷
আরিস মুচকি হেসে আরুর কাছে গিয়ে বলল

__” নাও এবার শুরূ করো ৷”
আরু লাভ সাইন এর এক দিকটা অঙ্কন করতেই অপর দিকটা আরিশ অঙ্কন করে দিল ৷ দুজনের আঙুল দুটো পরস্পর স্পর্শ করতেই ভালোবাসা দুটো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল ‌৷”
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” ভালোবাসাটা এক হলো ৷”
__” একাকি ভালোবাসিটা সর্বদা অসম্পূর্ণ থেকে যায় কিন্ত যদি ভালোবাসাটা দুজনের পক্ষ থেকেই হয় তাহলে সেই ভালোবাসার পূর্ণতা পায় ৷ এটাই প্রকৃতির নিয়ম ৷”
আরিশের দিকে আবেগআপ্লুত চোখে তাকিয়ে বলল __” আপনি এত কিছু কি করে বোঝেন?”
আরিশ খানিকটা মজার ছলে বলল

__” বয়সটা কম নাকি ? 26 বছর বয়স হলো তাইনা !”
কথাটা বলে আরুশির দিকে চোখ মারলো ৷
আরূ জিভ ভাঙচিয়ে সামনের দিকে দৌড়ে গেল গিয়ে দেখল কয়েকজন মিলে আসর বসিয়েছে একটা আড্ডার, সেখানে একজনের হাতে গিটার দেখে আরুশি তাদের মাঝে গিয়ে বলে উঠলো
__” ভাইয়া গিটারটা একটু পাওয়া যাবে?”
আড্ডার মধ্যে থাকা ছেলেমেয়েগুলো আরূশির দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকাল ৷ তার মধ্যে থেকে একটা ছেলে আরুশিকে উদ্দেশ্য করে বলল

__” আপনি কি গিটারটা নিবেন আই মিন গান করবেন বলে চাইছেন কি ?”
আরুশি হাত নাড়িয়ে বোঝালে যে গান করবে না ৷
__” আরে ভাইয়া যে গান করবে আমি তাকে আনছি ৷”
বলে আরিস এর কাছে গেল ৷
__”আপনি এখন একটা গান উপহার দেবেন আমাকে ৷”
আরিশের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,,,
__” গান আবার কিভাবে উপহার দেয় আরুপাখি?
আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি আমাকে ?”

__” আপনাতে আসক্ত হওয়ার একটা উপায় খুঁজে বার করছি , না করতে পারবেননা ৷”
কথাটা বলে আরূ আরিশকে ওদের মাঝখানে নিয়ে গেল ৷
সামান্য ভ্রু কুঁচকে আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,
__” মানে কি আরুপাখি ?”
আরুশি মুচকি হেসে সেই ছেলেটি কে উদ্দেশ্য করে বলল ,,,
__” ভাইয়া এই যে ইনি আমার জামাই, খুব ভালো গান করেন ৷”
আরিশ আরূর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
__” লাইক সিরিয়াসলি আরূপাখি, আমি এখন বিচের ধারে রোমিওর মত গিটার হাতে গান গাইবো?”
আপনার আরূপাখির জন্য এটুকু করতে পারবেন না?
বলে গিটারটা আরিশের হাতে ধরিয়ে দিল ৷

__” আমার সানশাইন যখন বলেছে তখন আর না করে উপায় আছে কি ! তার কথা যে শিরোধার্য…”
বলে গিটার টা হাতে নিয়ে গান ধরল,,,,,,,
__” ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা ৷
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা ৷
এই জীবন ছিল নদীর মত গতিহারা,
এই জীবন ছিল নদীর মতো দিশেহারা,
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা ৷”
আরিশ আরূর চোখে চোখ রেখে গানটা গাইলো ৷ আরিশের গলায় গানটা শুনে আরুর মনে একটা প্রশান্তির ঝড় বয়ে চলেছে ক্রমাগত ৷

গান শেষ হতেই চারিদিকে সবাই হাততালিতে দেওয়াতে মেতে উঠলো ৷ আরূ যেন এতখন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল, সকলের হাত তালির আওয়াজ শুনে ঘোর ফিরলো ওর, খানিকটা চমকে উঠে ও নিজেও হাততালি দিল ৷
চারিদিক থেকে সবাই ভলছে,,,,
__” ভাইয়া আরেকটা, প্লিজ ভাইয়া আরেকটা ৷”
আরিশ গিটারটা ওদের একজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল ,,,
__” আর না, আমার সানশাইন চেয়েছিল তাই ওর কথা রাখতেই গাইলাম ৷”
ওই ভিড়ের মধ্যে বসে থাকা একটা মেয়ে বলে উঠলো,,,,
__” ভাইয়া আপনি এত সুন্দর গান করেন আপনাকে টিভিতে কখনো দেখিনি তো !”
কথাটা শুনে আরিশ হো হো করে হেসে উঠে বলল,,,,

__” গানটা আমার ভালবাসা, আর এটাকে কখনো পেশা হিসাবে ভাবেনি ৷”
ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো,,,,,
__” আপনি এতো ভালো গান করেন আপনার একটা অটোগ্রাফ তো নিতেই হয় ভাইয়া , প্লিজ না করবেন না ৷”
আরিশ হেসে ওঠে বলল,,,,
__” আচ্ছা ঠিক আছে দাও ৷ এটা ভেবে দিচ্ছি যে পরে মনে রাখবে যে ভাইয়াটার সাথে কক্সবাজারে গিয়ে দেখা হয়েছিল ৷”
__” আচ্ছা ৷”(ছেলেটা মুচকি হেসে)
আরিশ ছেলেটার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে তাতে ওর অটোগ্রাফ দিল ৷
আরু শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে সকলের কান্ড ৷ সত্যিই ওর নিজেরও খুব ভালো লাগছে আজ ৷
আরিস অটোগ্রাফের শেষে ছেলেটা একবার অটোগ্রাফের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৮

__” ভাইয়া আপনার নাম কি আরশিয়ান?”
আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” এটা আমি আর আমার সানশাইনের একসাথে নাম ৷”
আরু অবাক চোখে আরিশের দিকে তাকালো ৷ আরিশ ওকে নিয়ে কত ভাবে এ সমস্ত কথা ভালো লাগে ৷
ছেলেটা আরিশের সাথে হাত মিলিয়ে বলল,,,,,
__” আপনার সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া, আর ভাবী আপনি অনেক লাকি , ভাইয়া আপনাকে অনেক ভালোবাসে ৷”
ছেলেটার কথা পরিবর্তে আরূ কেবল মুচকি হাসলো৷

আরুপাখি এবার যাওয়া যাক?
হমম ৷
আরু আরিশের হাতে হাতে রেখে চলে গেল ৷ দলবদ্ধ হয়ে থাকা মানুষগুলোকে অবাক হলো আজ একটা দম্পতির ভালোবাসা দেখে , সত্যি ভালোবাসাটা কে কত ভাবে সাজানো যায় তাই এ আরশিয়ান দম্পতি হরো তার একটা প্রকৃত উদাহরণ ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৩০