তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৩০ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৩০
Suraiya Aayat

হালকা মেঘাচ্ছন্ন দিনে সূর্যটা মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে ৷ সকাল আটটার সময় সূর্যিমামার এরকম অনিশ্চিয়তা দেখে আরূর মুখে ঘন মেঘের ছায়া পড়ে গেল যেন ৷ সূর্যমাযার অবস্থান দেখার জন্য একবার কম্বল থেকে মুখ বার করে মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখছে যে বাইরের কেমন অবস্থা , দেখেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর, দেখে আবার কম্বলের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে নিচ্ছে ৷
হাড় কাঁপুনি শীতেও যে এই বৃষ্টি নামক বস্তুটা অবাঞ্ছিত ভাবে যে কেন এসে শীতের মাত্রা টাকে আরো দ্বিগুন করে দেয় সেটা আরূ জানতে চাই ৷
আরূ এবার বিরক্তি নিয়ে বললো
__” সূর্যি মামা তুমি যে এখন আমাকে এভাবে ফাঁকি দেবে তা আগে বললেই হতো , আমরা না হয় কয়েকদিন আগেই আসতাম ৷”

তৎক্ষণাৎ আরু নিজের মাথায় একখান চাটি দিয়ে বলতে লাগলো
__” তুইও না একদম স্টুপিড আরু ৷ বিয়েই তো করলি একদিন আগে তাহলে কয়েকদিন আগে কেমনে আসতিস কক্সবাজার হানিমুন করতে! আজকাল তোর বুদ্ধি সুদ্ধি যে লোপ পাচ্ছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে , বয়স বেড়েছে কিনা !”
আরিশের ডায়লগ কপি করে ৷

আরিসের ডায়লগ টা কপি করে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে মিটিমিটি হাসছে ৷ আর মাঝে মাঝে আরিসের মিমিক্রি করে ওর বেশ মজা লাগে, যদিও আরিশের মত ঠিক তেমন টা হয় না তবুও চেষ্টা করে ৷ এই ভেবে যে যখন আরিশ অফিসে থাকবে বা বাইরে থাকবে আর আরিশের অনুপস্থিতি যখন খুববেশি অনুভব করবে তখন আরিশের মিমিক্রি করলে ওর মনে হবে যে আরিশ ওর সাথে আছে ৷ কথাটা ভেবে আরোশী এখন থেকেই প্র্যাকটিস করে ৷ মাঝে মাঝে প্র্যাকটিস করতে করতে আরিশের লাইক সিরিয়াসলি ডায়লগটাও যেখানে সেখানে ঝেড়ে দেয় ৷
আরু মুখ ভ্যাংচিয়ে বললো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__” উনার ডায়লগ কপি করার অধিকারটা শুধু আমার আর কারো নয় ৷’
বলে আবার কম্বলের মধ্যে মুখ লুকালো ৷
চোখটা বন্ধ করে আবার খানিকটা ঘুমোনোর চেষ্টা করলে দরজার প্যাচপ্যাচে আওয়াজে কম্বল থেকে পুনরায় মুখটা বার করে আরিশের দিকে তাকালো ৷
খানিকটা ফিকে কণ্ঠে বলে উঠলো
__”আপনি এত সকালে ঠান্ডার মধ্যে আবার গোসল করতে গেলেন কেন….?”
আরিশ টাওয়েলটা আরূর মুখের ওপর ফেলে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুল গুলো আলতো করে ঝাড়তে লাগলো ৷

__” কালকে রাতের কথা ভুলে গেলে ? কিছুই দেখছি আজকাল আর মনে থাকছে না তোমার ৷ পুনরায় প্র্যাকটিক্যালি সব করালে কি আবার সবকিছু মনে পড়বে ?”
কথাটা বলে আরূর দিকে চোখ মারলো ৷
আরু খানিকটা রেগে গিয়ে বলল
__” এই ভিজে টাওয়েলটা আমার মুখের উপর কি না ফেললেই হতো না !”
আরিস আরূর কাছে এসে আরূর মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল
__” একদম হ্যাঁ ৷ সকাল সকাল তোমাকে বিরক্ত না করলে যে আমার সকালটা অসম্পূর্ণ আরূপাখি ৷”
__”সেটাইতো প্যাচাল ৷ আমাকে যা খুশি করলেও তো আমি কিছু বলি না তাই জন্যই তো আপনি পার পেয়ে যান ৷”
বলে টাওয়ালটা আরিশের মুখে পুনরায় ছুড়ে মারলো ৷
আরিশ হাসতে হাসতে টাওয়েলটা মুখের উপর থেকে সরিয়ে হালকা কন্ঠে বলল কন্ঠে বলল

__” গোসলটা সেরে নেওয়া ব্রেকফাস্ট করতে হবে ৷”
আরু পুনরায় কম্বলের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বলল
__” এত সকালে গোসল করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় তাই আমাকে ক্ষমা করেন ৷”
আরিস ওর ঠান্ডা হাতটা কম্বলের ভিতরে ঢুকিয়ে আরুর পেটে আলতো করে স্পর্শ করতেই আরূর সারা শরীর কেপে উঠলো ৷আরিশের প্রতিটা স্পর্শ যেমন আরুর সারার শরীর জুড়ে শিহরণ জাগায় তেমনি ওকে আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা গুলো দেয় বারবার জানিয়ে দেয় ৷ যেমন এখন আরিশ ওকে ওর ঠান্ডা হাতের স্পর্শটা দিয়ে বোঝাতে চাইল যে
__” আরুপাখি এখন গোসল করে নাও , না হলে তোমার গোসল করার মতো কারনটা দ্বিতীয় আবার হবে ৷”
ঝটপট করে আরু উঠে-পড়ে হাঁটু ভাঁজ করে হাটুতে মুখ গুঁজে চোখ মুখ খিচে বলতে লাগলো

__” কেন সকাল সকাল এভাবে টর্চার করছেন বলুন তো !”
__”আমার তো মনে হচ্ছে তুমি এখনো চাইছে যে টর্চার গুলোই করি তার জন্যই তো এখনও উঠলে না আর গোসলও করতে গেলে না ৷ তুমি যদি বল তো আবার !”
কথাটা কানে পৌঁছতেই আরু আর একমূহূর্ত দেরী করলো না বিছানা থেকে নেমে যেতে, তাড়াতাড়ি নেমে গিয়ে বলল
__” আমি তো গুড গার্ল তাই না ! আমিতো সকাল সকাল কারণে-অকারণেই গোসল করি , কারন আমার মাথার তো তার ছিরা , বুদ্ধিহীন পাবলিক , তাই আর কি ! আর আমি তো অনেক লাকি যে আপনার মত এত জ্ঞানী একজন জামাই পেয়েছি আর আমি ধন্য হয়ে গেছে ৷”

বলে একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে পা টিপে টিপে আরিশকে বকতে বকতে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল……
আরিশ মুচকি হেসে সাদা রঙের পাঞ্জাবি টা পড়ে নিল…..
যতক্ষণ আরোশী গোসল করছে ততক্ষণ আরিশ খাবারটা অর্ডার করে দিয়েছে ‌ ৷ খাবার চলেও এসেছে একটু আগে ৷আরিশ ওর জামাটা নেওয়ার জন্য লাগেজ গুলোর দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল ৷ আরিশ একটু এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই তাকিয়ে দেখল আশফি আর ওর ওয়াইফ ৷

__” কি ব্যাপার তোমরা এতো সকাল সকাল !”(মুচকি হেসে)
রিতা : ভাইয়া আজকে আমরা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি , তাছাড়া আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব নিজেও জানিনা ৷ আপনি যেদিন আমাকে ফোন করে আশ্বস্ত দিয়েছিলেন যে বিয়েটা আমার আশফির সাথেই হবেই সেদিন মনে অনেকটা সাহস পেয়েছিলাম আর তার পরিণতিতে আজ আমাদের ভালবাসাটা সার্থক হয়েছে ৷ আপনার কৃতজ্ঞতা আমি কখনো ভুলব না ভাইয়া ৷”

__” আমি যদি তোমার বড় ভাইয়া হতাম তাহলে একই কাজটা করতাম ৷ প্রত্যেক ভালোবাসা কে মিলানোর একটা সুযোগ যদি আমি পাই তাহলে সেই সুযোগটা কখনো হাতছাড়া করতে চাইনা আমি, তাই তোমাদের যখন সাহায্যের প্রয়োজন ছিল সাহায্য করেছি আর ভবিষ্যতেও করব তা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকো ৷”
__” সে তো জানি ভাইয়া যে অপনি পাশে থাকবেন , তাই আপনার কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ৷”
আরিশ কিছু বলল না মুচকি হাসলো ৷

__” আচ্ছা ভাইয়া তাহলে আমরা আসি ৷ একচুয়ালি সারে দশ টায় ফ্লাইট , আর এখান থেকে এয়ারপোর্ট যেতে প্রায় 45 মিনিট লাগবে তাই আরকি ৷ ঢাকা ব্যাক করলে আপনার সাথে দেখা হবে ৷”(আসফি)
__”ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই আবার দেখা হচ্ছে , সাবধানে যেও ৷”
আসফি আর রিতা দুজনেই চলে গেল ৷
আরিশ দরজার দিয়ে বিছানার গিয়ে বসতেই দেখল আরু থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে ওয়াশরুম থেকে বেরোচ্ছে ৷
আরিশ আরুর দিকে এক পলক তাকিয়ে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বলল
__” এখন ফ্রেশ লাগছে তাই না !”
আরু কাঁপতে কাঁপতে বলল
__” কে এসেছিল সেটা কি জানতে পারি?”
আরিশ একটু দুষ্টামি করে বলল

__” সেই ওই মেয়েটা এসেছিল যে মেয়েটা আমাকে ফুল দিতে চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে দিতে দাওনি ৷”
আরুশি আরিশের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আর খানিকটা রাগী কন্ঠে ঝাঝিয়ে বলল
__ “ওই মেয়েটা আবার কেন আসতে গেল? ওর সাহস তো কম নয় ! আজ ওর একদিন কি আমার একদিন ৷”
কথাটা বলে রেগে মেগে দরজা দিয়ে দিকে যেতে গেলেই আরিশ আরুকে আটকে নিল ৷ দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে ৷
আরূ রেগে গিয়ে বলল
__” আপনি ছাড়ুন আমাকে , আজকে ওর একটা ব্যবস্থা আমি করেই ছাড়বো , না জানি কত মেয়ের জামাইয়ের সাথে এরকম করেছে ও ৷”
আরিশ আরুর কাঁধে থুতনি রেখে বলল
__” আমাকে অন্য মেয়ের সাথে দেখলে জ্বলে তাই না?”

আরিশের বলার ধরন শুনে আরু বুঝতে পারল যে আরিস এবার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ব্যাপারটা নিয়ে মজা করবে তাই আরিশ এর দিকে ঘুরে ওর দুই হাত দিয়ে আরিশের গলাটা জড়িয়ে ধরে বলল
__” আজ্ঞে না মহাশয় , আমার জ্বলে না , আমার তো এটা ভাবলেই ভালো লাগে যে আমার জামাইয়ের ফেসবুকে কত ফ্যান ফলোয়ার , কত লোক তাকে ফলো করে , গোটা কলেজের ক্রাশ , আবার কক্সবাজারে হানিমুনে রিসোরটের এর মেয়েও তাকে দেখে ক্রাশ খায় তাই এমন একটা জামাই পেয়ে খুব প্রাউড ফিল হয় আমার আর মনে মনে খুব ইচ্ছা যায় যে এত ফেমাস জামাই আমি কি সামলাতে পারবো ! ওর থেকে বরং নতুন নরমাল একটা জামাই খুজি৷”
আরিশ এবার আরূর গলায় আলতো করে ঠোঁট বুলিয়ে বলল

__” এভাবেই ভালোবেসো আমায় সবসময় ৷”
আরু আরিশের চোখে চোখ রেখে বলল
__” আজকে কামড়ে নিলেন না যে !”
__” কামড়ানো ছাড়াও ব্যথা দেওয়ার অনেক উপায় থাকে আরুপাখি , আশা করি তুমি সেগুলো খুব ভালো করেই জানো ৷”
আরু আরিশকে ধাক্কা মেরে বিছানায় বসে পড়ল
__” সবসময় আজাইরা কথা না বললে আপনার যে শান্তি হয় না সেটা আমি জানি , তবে এখন কি আমরা ব্রেকফাস্ট করতে পারি মহাশয়?”
__” অবশ্যই তবে এখনো যে একটা কাজ বাকি আছে আরুপাখি ৷”
আরোশী অবাক চোখে তাকিয়ে বলল

__” এখন আবার আরো কি কাজ?”
__” তুমি কিন্তু আমাকে এখনো বললে না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো ৷”
আরু মনে মনে ভাবছে
__” এই ছেলে বলে কি ! যাকে ভালোবেসে আমি পাগল প্রায় ,আর এর আগেও অনেকবার বলেছি ভালবাসি ,তাহলে আবার কেন শুনতে চাইছে ! সত্তিই মন থেকে বলছে নাকি বরাবরের মতো ফাজলামি করতাছে আল্লাহ মালুম ৷”
__” আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা সেটা আপনি কি জানেন না?”
__” জানি তবে আমি চাই দিনের শুরুতে তুমি আমাকে বলো ভালোবাসি আর অবশ্যই সেটা অত্যন্ত রোমান্টিক মুডে হতে হবে ৷ এটা তোমাকে রোজ সকালে বলতে হবে, বলবে তো তুমি?”
__” না বলে উপায় আছে, বলতেই হবে আমি জানি ৷”(বাকা চোখে তাঅআয়ে)
__” প্রমিস করো বলবে ৷”

__”আরে বাবা বললাম তো যে বলবো রোজ সকালে যে আমি আপনাকে ভালোবাসি ৷ আর এটা বলতে আমার প্যারা লাগে না বরং ভালই লাগে ৷এটা বলে যদি আপনার ওই পাত্থার দিলে আমার জন্য একটু ভালবাসার উদয় হয় তাহলে লাভ টরচার গুলো কম সহ্য করতে হয় আরাকি ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
__”তাহলে প্রমিস করতেছে কিন্তু তুমি আমাকে যে রোজ সকালে বলবা যে তুমি আমাকে ভালোবাসো ৷”
আরু বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
__” বললাম তো যে বলবো ৷”
আরিশ একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
__” তাহলে এখন থেকে পানিশমেন্ট এর জন্য রেডি হও আরুপাখি ৷”

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৯

আরুশির হাতে যে খাবারটা ছিল সে খাবারটা অবাক এর চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়াতে হাত থেকে পড়ে গেল , আর আরু আরিশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
__” এই তো বললাম আমি আপনাকে ভালোবাসি এখন আবার কিসের পানিশমেন্ট? আজিব তো!”
__” তুমি কি ভুলে গেছো আরুপাখি , যে তুমি নিজেই বলেছিলে যে তুমি আমাকে যখনি বলবে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো তার পরিবর্তে পানিশমেন্ট পাবে ৷ তারমানে তুমি রোজ সকালে যখন আমাকে বলবে ভালোবাসি তখনই আমি রোজ তোমাকে আমার পানিশমেন্ট গুলো দেবো ৷ “(চোখ মেরে)
আরোশী মনে মনে
__” এমন বজ্জাত ছেলে আমি আগে কখনো দেখি নাই ,সব সময় আমার কথার মারপ্যাঁচে আমাকেই ফাসায় ৷”
আরুশি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
__”বয়েই গেছে আমার আপনার পানিশমেন্ট নিতে ৷”
__” সে তো পরে দেখা যাবে যে নেবে নাকি নেবেনা ৷”

বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে , বৃষ্টির কারণে দুজনেই আজকে বাইরে বের হতে পারেনি ঘুরতে ৷ আরিশের বুকে মাথা রেখে আরু ঘুমিয়ে আছে , আর আরিশ এক দৄষ্টিতে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ বাইরে বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দটাও যেন আরো বেশি রোমাঞ্চকর করে তুলেছে আরিশের অনুভূতিটাকে ৷
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতে আরিশ ফোনটা ধরলো ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৩১