তোর নামের বৃষ্টি গল্পের লিংক || জাবিন মাছুরা

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১
জাবিন মাছুরা

-ভাইয়া গো, আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি। আর তুমি আমাকে ফেলে অন্য কাউকে বিয়ে করছ ! এমনটা হতে পারে না। তুমি আমাকে ঠকাতে পার না।(মেঘা)
কথাগুলো একদমে বলে, হাঁপাতে লাগলাম। আমার কথা শুনে উপস্থিত সবাই ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে।বিয়ে বাড়ির সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে ত্বকি ভাইয়ার মুখটা একদম দেখার মতো। নিজের নামে এত বড়ো অপবাদ পেয়ে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। আমি একপল ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার কান্না করতে করতে বললাম,

– ত্বকি ভাইয়া, তুমি আমাকে ঠকাতে পারো না। তুমি কি ভুলে গিয়েছো আমাদের বিয়ের কথা?(মেঘা)
আমার কথা শুনে ত্বকি ভাইয়ার আম্মু অর্থাৎ আমার মামি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
– সত্যি বলছিস মা, আমি কী সত্যিই দাদি হতে চলেছি?(ত্বকির মা)
– হ্যাঁ মামি।আমি সত্যি বলছি। কিন্তু তোমার ছেলে স্বীকার করেছে না কেন? কেন আমার সন্তানকে স্বীকার করছে না। ও মামি, আমার বাচ্চার কি হবে? আমি ওকে নিয়ে কোথায় যাব?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

[আমি মাহিমা জেবিন মেঘা। সবেমাএ ক্লাস টেন এ পড়ি। এখনো আমার বয়স আঠারো বছর হয় নি। আর যাকে আমি স্বামী বলে দাবি করছি, তার নাম হলো আবিদ রাহমান ত্বকি। সম্পর্কে আমার মামাত ভাই। দেখতে মাশাআল্লাহ যেমন সুন্দর ঠিক তেমন তার বাজে ব্যবহার। ভাইয়া একজন ডক্টর। মানুষের সেবা করে তার মন ভরা না, তাই প্রতিদিন আমাকে পড়াতে যাই।তাকে দেখলে আমার অনেক ভয় লাগে।]
আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে ভাইয়ার হবু স্ত্রী জাইমা আপু বলে উঠলো,

– আমি এই মেয়ের কথা বিশ্বাস করি না। আমার প্রমাণ চাই। (জাইমা)
আমি জাইমা আপুর কথা শুনে ব্যাগ থেকে রেজিস্ট্রার পেপের বের করে তার হাতে দিলাম। পেপের টা দেখার সাথে সাথে জাইমা আপু চিৎকার করে বলতে লাগল,
– এটা হতে পারে না।ত্বকি তুমি এমটা কেন করলে? মেঘার মতো একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করলে? এমনটা কেন করলে তুমি?(জাইমা)
ত্বকি ভাইয়া এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

– জাইমা চল,, (জাইমার বাবা)
– না বাবা। আমি যাব না। (জাইমা)
– কোন কথা না। চল, এরকম ছেলের সাথে আমি তোর বিয়ে দেব না। ত্বকি তুমি একদম ঠিক করলে না। দেখে নেব সবাইকে। (জাইমার বাবা)
রাগী কন্ঠে কথা কথাগুলো বলেই তিনি জাইমা আপুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ত্বকি পলকহীন দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ফর্সা মুখটা একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে সে প্রচুর রেগে গিয়েছে।
মামা শান্ত কন্ঠে ভাইয়াকে বলে উঠলো,
– ত্বকি, ভুল যেহেতু করেছ তাই তোমাকে শাস্তিও পেতে হবে। (ত্বকির বাবা)
– হুম। (ত্বকি)

– এই মূহুর্তেই তুমি মেঘাকে বিয়ে করবে। আজ থেকে মেঘা আমাদের বাড়িতে থাকবে। (ত্বকির বাবা)
বিয়ের কথা শুনে আমার ভেতরটা ধক করে উঠলো।আমি এই রাগী লোকটাকে বিয়ে করলে পাগল হয়ে যাব।আমার মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। বুঝতে চাইলাম যে আমি ভাইয়াকে বিয়ে করব না।
কিন্তু আমাকে কেউ বুঝল না।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়া নামক প্রানী আমার স্বামীতে রুপান্তরিত হলো। সবাই অনেক খুশি ।বিশেষ করে মামি তো আমার হাত ধরে রেখেছে।
মামিকে আস্তে করে বলে উঠলাম,

– মামি গো, আমার না প্রচুর ভয় লাগছে। (মেঘা)
– আরে পাগলী ভয়ের কিছু নেই।তুই নিশ্চিতে থাক। (ত্বকির মা)
– কীভাবে? আজকে ভাইয়া নিশ্চই আমাকে শেষ করে ফেলবে। (মেঘা)
– আমি থাকতে তোর কিছু হবে না। আমার ছেলে ওতোটাও খারাপ না। (ত্বকি মা)
মামি কথা শেষ করেই ভাইয়া বোন তিথি আপুর সাথে আমাকে ভাইয়ার রুমে পাঠিয়ে দিল।আপু খুবই খুশির সাথে বলে উঠলো,

– জানিস মেঘা, আমি তোকে ভাইয়ার বউ হিসেবে চাইতাম। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারতাম না কারন তুই ভাইয়ার চেয়ে অনেক ছোট। আজকে না আমি অনেক খুশি।(তিথি)
– সত্যি?(মেঘা)
– হ্যাঁ রে বোন। আজকে থেকে তুই আমার ভাবি।আচ্ছা আজকে যে তুই প্রেগনেন্ট এর কথা কেন বললি? তুই কি প্রেগনেন্ট?(তিথি)
আপুর কথা শুনে আমি খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললাম,
-হুম। (মেঘা)
– তুই থাক।ভাইয়া আসার সময় হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখলে আবার বকা দিবে। আমি চলে যাই।তোর থেকে অনেক কিছু জানার আছে।সকালে জেনে নিব। (তিথি)
বলেই আপু চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আমি খপ করে আপুর হাত ধরে বলতে লাগলাম,

– আপু যেও না। আমি তোমার সাথে থাকব। প্লিজ, তোমার সাথে নিয়ে চল। (মেঘা)
– কেন রে? (তিথি)
– দেখ আপু, আমার আনইজি ফিল হচ্ছে। আগে যখন তোমাদের বাসায় তখন তো তোমার সাথে থাকতাম। তাহলে এখন কিভাবে ভাইয়ার সাথে থাকব? আমি ভাইয়ার সাথে থাকব না।(মেঘা)
– মেঘা মনি, তুই তো এখন ভাইয়ার বউ। এখন থেকে তোর ভাইয়ার সাথে থাকতে হবে। বুঝেছিস?(তিথি)
বলেই আপু আর দেরি করলা না। আমাকে একা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

এক ঘন্টা ধরে বিছানায় বসে আছি। এখনো ভাইয়ার আসার নাম নেই। ভয়ে আমার হাত পা অবস হয়ে আসছে।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার রাগ মাখা গম্ভীর কন্ঠে শুনে আমি বুঝতে পারলাম ভাইয়া চলে এসেছে,
– কিরে তোর তো দেখি, সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছে?(ত্বকি)
– নিশ্চুপ (মেঘা)
-প্রেগনেন্ট এর মানে কি জানিস? (ত্বকি)
– নিশ্চুপ(মেঘা)
– এই মেয়ে, কথা বলছিস না কেন? (ত্বকি)
ভাইয়া ধমক দিয়ে বলে উঠলো।

– মনে আছে, আজকে সকালে যখন তকে প্রশ্ন করে ছিলাম ‘প্রজনন কি’, তখন তুই বলতে পারিস নি।বলেছিলাম কালকে তোকে শাস্তি দিব।
কিন্তু কালকে না, এখন তোকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেব,(ত্বকি)
বলেই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার তো ভয়ে বমি,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২