তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২
জাবিন মাছুরা

বলেই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার তো ভয়ে বমি পাচ্ছে।
শত চেষ্টা করেও কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। চোখ বন্ধ করে কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম,
– ভাইয়া আ, আমি আম্মুর কাছে যাব। আমাকে আম্মুর কাছে দিয়ে আসেন। (মেঘা)
ত্বকি মেঘাকে কাঁদতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। বিরক্ত ভর্তি কন্ঠে বলে উঠলো,
– স্টপ,, কান্না বন্ধ কর।(ত্বকি)

ভাইয়ার ধমক শুনে আমি আর জোরে কেঁদে ফেললাম। কান্না দেখে ভাইয়া আরো জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
– এই মেয়ে, কান্না বন্ধ করবি? নাকি কানের নিচে একটা দিব? (ত্বকি)
ভয়ে আমি মুখ চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
– আমার দিকে তাকা। লুক এট মি। (ত্বকি)
আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম না। চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম।
– কান্নাকাটি বাদ দিয়ে, যা মুখ ধুয়ে আয়।(ত্বকি)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাইয়ার পারমিশন পেয়ে আর এঅ মূহুর্ত্যও দেরি করলাম না। দৌড়ে গিয়ে বাতরুমে ঢুকে পড়লাম।
পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলাম। ভাইয়ার সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে ভাইয়ার সামনে না গিয়ে বাথরুমে শুয়ে থাকি। কিন্তু না তা একেবারেই সম্ভব না। কারন ভাইয়ার বাথরুমটা অনেক ভুতুরে। মুখে পানি দেওয়ার সময়ে মনে হচ্ছিল, কেউ পিছনে দাড়িয়ে আছে। তাই আর বাথরুমে দেরি করলাম না।

রুমে এসে দেখলাম, ভাইয়া ছোফার উপর বসে লেপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছে। মনের ভয়কে সাইডে রেখে বলে উঠলাম,
– ভাইয়া আমি আম্মু কাছে যাব। আমি তো আম্মুকে ছাড়া ঘুমতে পারি না।(মেঘা)
মনে হয় ভাইয়া আমার কথা শুনে বিরক্ত বোধ করলেন। গম্ভীর চাউনিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
– কোথাও যাবি না তুই। যা বিছানায় যেয়ে চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো শুয়ে পড়।(ত্বকি)
– না ভাইয়া, আমি আপনার রুমে থাকব না। আমি আম্মুর কাছে থাকব, (মেঘা)

– আসলেই তোকে বিয়ে করা আমার একদম ঠিক হয়নি। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তুই একটা বাচ্চা। তোর চেয়ে জাইমাকে বিয়ে করলেই বোধহয় ভালো হতো। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে আমার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো। কোন কথা না বলে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে পড়েলাম। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। কারো উপকার করতে যেয়ে যে নিজের পায়ে কুড়াল মারলাম তা ভালো করেই বুঝতে পারছি। কান্না করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল বেলা তিথি আপুর ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেল।
– মেঘা,, তাড়াতাড়ি উঠে পড়। (তিথি)
আপুর ডাকে উঠে বসলাম। কিছুটা সময় আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম ভাইয়া রুমে নেই। তাই আস্তে করে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।
– কিরে ভাবি মনি? তুই তো দেখি এক রাতে আরো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছি, রহস্য কি?(তিথি)
আপুর মুখে ‘ভাবি মনি’ ডাকটা আমার কাছে সুবিধাজনক লাগল না। ঠোঁট-ওল্টে বলে উঠলাম,
– তারমানে আমি আগে সুন্দর ছিলাম না। (মেঘা)

– আরে না রে পাগলী, আজকে তোকে একদম নতুন বউ এর মতো লাগছে। তা রাতে কি হয়েছে রে? (ত্বকি)
– মানে?(মেঘা)
– ভাইয়া কি তোকে,, (তিথি)
আপু কথা শেষ করার আগে ভাইয়া রুমে ঢুকে পড়ল। সাথে সাথে আপু চুপ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর বলে উঠলো,
– চল, সবাই তোকে খেতে ডাকছে।(তিথি)
বলেই আপু আমার হাত ধরে খাবার রুমে নিয়ে এলে।

সবাই একসাথে বসে গল্প করছিল। কিন্তু আমাকে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল। একপল আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মুকে দেখে মন খারপ করে, চেয়ারে বসলাম।
– কিরে মা, ঘুম কেমন হলো? (মেঘার আম্মু)
আমি আম্মুর কথার কোন উত্তর দিলাম না। থম মেরে বসে রইলাম। হয়তো আম্মু বুঝতে পা
পেরেছে যে আমি রেগে আছি। তাই আমার দিকে তাকিয়ে মামাকে বললেন,

– ভাইজান দেখ, আমার মেঘা কত বড়ো হয়ে গিয়েছে।
আম্মুর কথায় মামা হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
– হ্যাঁ সত্যিই। মামনিটা বড়ো হয়ে গিয়েছে। কালকে আমাদের কত বড়ো বিপদ থেকে বাঁচাল। অন্য কেউ হলে পারত না।
মামার মুখে নিজের প্রশংসা শুনে আমি গর্বিত বোধ করছি। মনটা নিমেষে ভালো হয়ে গেল।

একটু পর ভাইয়া এসে চেয়ার টেনে টেবিলে বসলেন। মন হয় শাওয়ার নিয়েছেন। তার ছোট ছোট চুল দিয়ে পানি পড়ছে।
হঠাৎ করে ভাইয়া আম্মুকে বলে উঠলো,
– ফুপি, (ত্বকি)
– জী বাবা বল। (মেঘার মা)
– তোমাদের ফ্ল্যাটের চাবি দেও। আমি মেঘার বউ গুলো নিয়ে আসব। (ত্বকি)
– ঠিক আছে। (মেঘার মা)
বই এর কথা শুনে পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। তারমানে আজকে থেকেই আমাকে পড়তে হবে। আমি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম।

মামির কথায় আমার চিন্তার ব্যাধাত ঘটলো। মামি ভাইয়াকে বলেতে লাগলেন,
– ত্বকি,, (ত্বকির মা)
– হুম। (ত্বকি)
– তুই যে রেডি হয়েছিস, কোথাও যাবি? (ত্বকির মা)
– হসপিটালে যাব। একটু আর্জেন্ট কাজ আছে।(ত্বকি)
– আচ্ছা শোন, তাড়াতাড়ি চলে আসবি। তোর নানুমনিরা আসছে মেঘাকে দেখতে। (ত্বকির মা)
– আচ্ছা। (ত্বকি)
খাওয়া শেষ করে ভাইয়া চলে গেল।তারপরে মামি আমাকে খাইয়ে দিলেন।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১

যোহরের আযান দিয়েছে, মিনিট পাঁচেক আগে। একটু আগে শাওয়ার নিয়েছি। চুলগুলো থেকে পানি পড়ছে। ভাইয়া এখান হসপিটাল থেকে আসেনি।
একটু পরেই হয়তো নানুমনিরা চলে। তাই আম্মু আমাকে শাড়ি পড়তে বলেছে। লাল রংয়ের একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছি। কীভাবে পড়ব ভাবছি। তিথি আপু আমাকে বিপাকে ফেলে কোথায় যেন চলে গিয়েছে।
আমি চুপ করে বসে ভাইয়ার রুমটা পর্যবেক্ষণ করছি। এত পরিপাটি মানুষ কিভাবে হয়, তাই ভাবছি।

হঠাৎ হনহন করে ভাইয়া রুমে প্রবেশ করল।তাকে দেখে আমি ছিঁটটে উঠলাম।
ভাইয়া ক্লান্ত চাউনিতে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে ফেললেন।তার তাকানোর ধরন দেখে আমি লজ্জায় শেষ। অস্থিরতা শুরু হয় গেল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলাম,
– ভাইয়া আআপনি বেরিয়ে যান। আমি শাড়ি পড়ব,
আমার কথা শুনে ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
– আমার রুম, আমি কেন বের হব?প্রয়োজন হলে,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৩