তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২০

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২০
জাবিন মাছুরা

ভাইয়ার কোন উওর না পেয়ে চোখ খুললাম। সাথে সাথে বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
-কে তোর ভাইয়া? স্টুপিড। (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-চুপ করে আছিস কেন? (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার এমন প্রশ্নে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ আবার কেমন প্রশ্ন? ভয় পেয়ে ভাইয়াকে উওর দিলাম,
-আপ প নি। (মেঘা)
আমার উওর পেয়ে ভাইয়া আমার থেকে দূরে সরে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন,
-আসলে তোকে বিয়ে করাটা আমার একদম উচিত হয় নি। (ত্বকি)
ত্বকি ভাইয়ার এমন কথা শুনে নিজের অজান্তেই খারাপ লাগতে শুরু করল। পরাপর দুটো নিশ্বাস ফেলে হঠাৎ অসহায় কন্ঠে বলে উঠলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-তুই কি কখনো আমাকে বুঝবি না? (ত্বকি)
বলেই ত্বকি ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ওনাকে বুঝার মতো যোগ্যতা এখনো আমি অর্জন করতে পারি নি। তার প্রতিটা কথাই আমাকে গভীর ভাবনায় ফেলে দেয়। মাথার মধ্যে তার বলা প্রতিটা কথাই ঘুরপাক খেতে থাকে। আমি তো তার কথা কিছুই বুঝতে পারি না।
আমি ভাইয়ার কাছে থেকে ফোন না নিয়েই আম্মুর রুমে চলে এলাম।

আম্মু বিছানায় বসে বই পড়ছিলেন। আমি দরজা বন্ধ করে আম্মু পাশে গিয়ে বসলাম। হাতে থেকে বইটা সরিয়ে চুপটি করে তার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলাম।
ত্বকির মা মেঘার কান্ড দেখে হালকা হেসে উঠলেন। মেঘার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলে উঠলেন,
-কি হয়েছে আম্মু? (ত্বকির মা)
-নিশ্চুপ (মেঘা)

-আমার ছেলেটা কি তোকে আবার বকেছে? (ত্বকি)
আম্মুর কথা শুনে চোখ মেলে তাকালাম। শুয়া থেকে উঠে আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরলাম। ভাঙা গলায় বলে উঠলাম,
-যান আম্মু, ভাইয়া না আজকে আমাকে কি বলেছেন? (মেঘা)
মেঘার কথা শুনে ত্বকির মা আল্লাদি কন্ঠে বললেন,
-কি বলেছে আমার ছেলে? (ত্বকির মা)

-আমি নাকি তোমার ছেলেকে বুঝি না। (মেঘা)
ত্বকির মা মিটমিট করে হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,
-কেন রে? আমার ছেলেটা কি বলিছিলি? (ত্বকির মা)
-বিশ্বাস কর আম্মু, আমি কিছুই বলি নি তাকে। শুধু বলেছিলাম যে, ভাইয়া ফোনটা দাও আম্মুর সাথে কথা বলব। (মেঘা)

ত্বকির মা মনযোগ দিয়ে মেঘার কথা শুনতে লাগলেন। হঠাৎ আবাক মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-তারপর ত্বকি কি বলেছে তোকে? (ত্বকির মা)
কিছুটা সময় চুপ করে থেকে আম্মুর গলা ছেড়ে দিয়ে আম্মুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-তারপরে ভাইয়া আমাকে বোকার মতো প্রশ্ন করেছিলেন, কে তোর ভাইয়া? (মেঘা)
মেঘার সম্পন্ন কথা শুনে ত্বকির মা চোখ বড়ো বড়ো করে মেঘার দিকে তাকালেন। ধমকের শুরে বলে উঠলেন,

-আমার ছেলে যা বলছে তাই ঠিক। তুই সত্যিই আমার ছেলেটাকে বুঝিস না। (ত্বকির মা)
আম্মুর ধমক শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
-কেন আম্মু আমি আবার কি করলাম? (মেঘা)
-নিশ্চুপ (ত্বকির মা)
কিছুটা সময় ত্বকির মা মেঘার দিকে গুরুত্ব দৃষ্টিতে তাকালেন। মেঘার বাহুদ্বয় চেপে ধরে গম্ভীর গলায় বলতে লাগলেন,

-মেঘা তুমি এখন আমার ছেলের বউ। আমার ত্বকি সবকিছু। ত্বকিকে একটু বুঝতে চেষ্টা কর। তুমি তো এখন আর ছোট্ট নেই। (ত্বকির মা)
আজ আম্মুকে সত্যি শাশুড়ির মতো লাগছেন। একদম শাশুড়ির মতো কথা বলছেন তিনি। কেন জানিনা আম্মুর কথা শুনে খুব কান্না পাচ্ছে।

-আমি জানতাম তুমি বুদ্ধিমতি মেয়ে। কিন্তু তুমি আসলেই একটা বোকা মেয়ে। (ত্বকির মা)
আম্মুর কথা আমি আর শুনতে পারলাম না। ঠোঁট-ওল্টে কান্না শুরু করে দিলাম।
মেঘাকে কাঁদতে দেখে ত্বকির মা ভয় পেয়ে গেলেন। মেঘাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
-আমার পাগলী মেয়ে। কাঁদছিস কেন? আমি কি তোকে বকেছি? (ত্বকির মি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)

-সরি সোনা। কাঁদে না। আমারই ভুল হয়েছে যে তোর উপর রাগ করা একদম উচিত হয় নি। (ত্বকির মা)
আম্মুর আদর মাখা সান্তনা পেয়ে আমার কান্না দ্বিগুণ বেড়ে গেল। আরো জরে জরে কান্না করতে লাগলাম ।
-আম্মু কাঁদে না। দেখ মা, তুই যদি ত্বকিকে না বুঝিস তাহলে কে বুঝবে? হুম? (ত্বকির মা)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
কিছুক্ষণ ইচ্ছে মতো কান্না করলাম। আম্মু চুপ করে আমার কান্না দেখতে লাগলেন। কান্না থামানোর পর আম্মু নরম গলায় বলতে লাগলেন,

– পাগলি রে, বিয়ে করলে কি স্বামী কখনো ভাইয়া হয়? (ত্বকির মা)
-উহু (মেঘা)
-এখন বল তো, ত্বকি তোর কি হয় ? (ত্বকির মা)
আম্মু এমন প্রশ্ন আমি ভরকে গেলাম। কেমন যেন লজ্জা লাগতে শুরু করল। লজ্জা মাখা কন্ঠে আম্মুকে বলে উঠলাম,
-স্বামী (মেঘা)
-তাহলে ত্বকি তুই ভাইয়া বলিস কেন? (ত্বকির মা)
-নিশ্চুপ (মেঘা)

আম্মুর কথা শুনে সত্যি লজ্জা যেন বেড়ে গেল। আসলেই ত্বকি ভাইয়া তো আমার স্বামী তাহলে আমি কেন তাকে ভাইয়া বলে ডাকব। লজ্জায় মাথা তুলে আম্মুর দিকে তাকাতে পারছি না।
মেঘার লজ্জা রাখা মুখ দেখে ত্বকির মা হেসে উঠলো। আদর মাখা কন্ঠে বলতে লাগলেন,
-হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছিস। (ত্বকির মা)
-নিশ্চুপ (মেঘা)

-যা রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রাখ। ত্বকি মিমমার বিয়েতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। সকালে আমাকে বলেছে যাতে তোকে রেডি করতে হেল্প করি। যা গিয়ে রেডি হ। (ত্বকির মা)
আম্মুর কথা শুনে মনটা নিমেষেই ভালো হয়ে গেল। খুশিতে বলে উঠলাম,
-থ্যাঙ্কু আম্মু। তুমি আমার কিউট আম্মু। আই লাভ ইউ। (মেঘা)
মেঘার আনন্দ দেখে ত্বকির মায়ের মনটাও খুশিতে ভরে উঠলো।

গাড়িতে বসে আছি এক ঘন্টা হলো। ভাইয়া গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালাচ্ছেন। এরমধ্যে একবারও আমার সাথে কথা সাথে কথা বলেন নি। চুপ করে থাকতে থাকতে আমার মুখ ব্যথা হয়ে গিয়েছে। বিরক্ত নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। সকালের কথা মনে পড়লেই লজ্জা লাগছে। লজ্জায় ভাইয়ার দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছি না। তাকালেই কেমন বুকের ভিতর অস্থির করে উঠছে। কারন আজকে তাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। সাদা রং এর পানজাবি পড়েছেন তিনি। দেখতে খুব স্মার্ট লাগছে। একদম রাগী কিউটিপাই। একটু হাসলে বোধহয় আরো বেশি সুন্দর লাগত। আমি বুঝি লোকটা এত ভাব নেই কেন? একটু হাসলে কি দুনিয়া অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

অন্যদিকে,
সন্ধ্যা পরে সাদ বাসায় ফিরেছে। সারাদিন ভারর্সিটি করে প্রচুর ক্লান্ত সে। তিথি অনেক আগেই ক্লাস করে ভারর্সিটি থেকে চলে এসেছে। আজকে সাদের ক্লাস ছিল না তাই তিথির সাথে একবারও তার দেখা হয় নি।

রাতের বেলা রুশাকে ঘুম পাড়িয়ে সাদের রুমে এসেছে তিথি। সারা দিন একবারও ভালবাসার মানুষিকে না দেখে পেয়ে এখন তার চিন্তা হচ্ছে। তাই তিথি একপল সাদকে দেখতে এসেছে।
পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার বিজার করছে। তিথির চোখে সাদ নামক ব্যাক্তির কোন দেখা মেলি নি। অন্ধকার ভিতরে সে এগুতে লাগল। গুটি গুটি পায়ে সাদের বিছানার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ল। বেলকনি থেকে আলো এসে পড়ছে খাটের উপর। তাই হয়তো তিথি বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে থাকা মানুষটিকে দেখতে পেল। সাদ ভারর্সিটি থেকে এসে শার্ট না খুলেই শুয়ে পড়েছে।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৯

সাদের অবস্থা থেকে তিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস মাখা ফেলল। আস্তে আস্তে সাদের দিকে এগিয়ে গেল। বিছানায় একেবারে কাছে গিয়ে সাদকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। কিছুটা সময় পার হওয়ার পর তিথি বুঝতে পারল সাদ গোঙ্গাছে। সাদের অবস্থা দেখে তার বুকের ভিতর ব্যথা অনুভব হতে লাগল। তিথির আর বুঝতে বাকি রইল না যে, সাদের জ্বর এসেছে। প্রচুর জ্বর এসেছে।
দেরি করে হলেও সাদের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। কালকে জ্বর না এলেও আজকে এসেছে। হয়তো আজ সে তার ভালোবাসার মানুষটার হাতের ছোঁয়া পাবে।

এদিকে,
গ্রামের বাড়িতে এসেছি একটু আগে। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই তেমন কারো সাথে দেখা হয়নি। মিমমা আপুর সাথেও দেখা হয় নি।
আমাদেরকে থাকার জন্য একটা ছোট্ট রুম দেওয়া হয়েছে। রুমটার খাটটাও অনেক ছোট।
ভাইয়া খাটের উপর শুয়ে পড়েছেন।আমিও জামা পালটে ফ্রেশ হয়ে এসে দূরত্ব বজায় রেখে ভাইয়ার পাশে শুয়ে পড়লাম। ভাবতেই অবাক লাগছে ভাইয়া আর আমি এক বিছানায় ঘুমোব। বুকের ভেতর কেমন যেন ধুপ ধুপ করছে।

গভীর রাতে শরীরে শীত অনুভব করতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। কেমন যেন অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে। ভালো ভাবে খেয়াল করে বুঝতে পারলাম আমার গায়ে ওড়না নেই।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২১