তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৯

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৯
জাবিন মাছুরা

-আম্মু তোমার ছেলেকে কিভাবে রাজি করাব? সে তো রাজি হচ্ছে না। (মেঘা)
আমার কথা শুনের আম্মু মিটমিট করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
– আমার ছেলেটা তোর কাছে যা চাইবে তাই দিবি। দেখবি তোর কথা শুনতে বাধ্য হবে। (ত্বকির মা)
আম্মুর কথা শুনে খুব হাসি পেল। জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললাম,
-উহু, তোমার ছেলে তো আমার কাছে পড়া ছাড়া আর কিছুই চায় না। একটু তো বলতে পারে, মেঘা আমার জন্য রান্না কর। (মেঘা)

-পাগলী মেয়ে, তোকে কি রান্না করার কথা কিছু বলেছি?(ত্বকির মা)
-তাহলে? (মেঘা)
আম্মু কিছু বলার আগেই ত্বকি ভাইয়া রুমে চলে এলেন। তাকে দেখে আমি উঠে বসলাম। ওড়নাটা ঠিক মতো করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।
-ত্বকি তোর কি কিছু লাগবে? (ত্বকির মা)
ত্বকি ভাইয়া আমার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-না, আমার কিছু লাগবে না। মেঘা রুমে আমার আয় একটু। (ত্বকি)
বলেই ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি আম্মুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
-আম্মু, আমি যাব না। ভয় লাগছে। (মেঘা)
-ভয় পাচ্ছিস কেন? (ত্বকির মা)
-যানিনা। (মেঘা)
-গিয়ে দেখ তোকে কি বলে। নিশ্চই ত্বকি কোন না কোন প্রয়োজনে তোকে ডেকেছে। (ত্বকির মা)
-না, যাব না। (মেঘা)

আম্মু হঠাৎ ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
-এখুনি যাবি। ঠিক আছে। (ত্বকির মা)
আমি আর দেরি করলাম না। আম্মুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। ভাইয়া দরজার সামনে এসে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ত্বকি মেঘাকে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,

-বাইরে দাড়িয়ে না থেকে, ভিতরে আয়। (ত্বকি)
আমি ভয় নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। মাটিতে দৃষ্টি রেখে চেয়ার ধরে দাড়িয়ে রইলাম।
-হুম, কি যেন বলেছিলি তখন। কোথায় যেতে চাস? (ত্বকি)
ত্বকি ভাইয়ার কথা শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
-মিমমা আপুর বিয়েতে। (মেঘা)
আমার কথার কোন মূল্য না দিয়ে সে শক্ত গলায় বলল,

-না। কোথাও যাওয়া হবে না। আমি তোকে একলা কোথাও ছাড়ব না। (ত্বকি)
-আমি একা না। আপনি গেলেই তো হবে। (মেঘা)
ভাইয়া ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
-আমি কোথাও যেতে পারব না। আন্ডারস্টান্ড? (ত্বকি)
ভাইয়ার এমন কথাই মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। চুপ করে ঠাই দাড়িয়ে রইলাম।
-অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়। সকালে দেখা যাবে। (ত্বকি)
ভাইয়া কথা মতো ঘুমানোর জন্য বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হাটতে শুরু করলাম। ঠিক তখনি ভাইয়া বলে উঠলো,

-কোথায় যাচ্ছিস? (ত্বকি)
-আম্মুর রুমে।(মেঘা)
-কেন? (ত্বকি)
আমি স্বাভাবিক ভাবে উওর দিলাম,
-ঘুমোনর জন্য। (মেঘা)
ত্বকি ভাইয়া নরম কন্ঠে বলে উঠলেন,
-এ ঘরে ঘুমোবি না। (ত্বকি)
ভাইয়া এমন কথা শুনে আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না।
-আপনি তো প্রতিদিন অন্য রুমে গিয়ে ঘুমোন। এখন তো আর পড়া নেই। তাই আমি বরং আম্মুর রুমে গিয়ে ঘুমোয়। আপনি এ ঘরে থাকুন। (মেঘা)
মেঘার কথা শুনে ত্বকি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঘার দিকে। কিন্তু মেঘা ত্বকির দিকে না তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ভাইয়ার মুখের উপর কথা বলে আম্মুর রুমে চলে এলাম। দরজা আটকে জরে জরে নিশ্বাস নিতে লাগলাম।
মেঘাকে অস্থির হতে ত্বকির মা বলে উঠলো,
-কিরে মেঘা কি হয়েছে তোর? চলে এলি কেন? (ত্বকি মা)
-আম্মু আমি আজকে তোমার কাছে থাকব। (মেঘা)
বলেই বিছানার এক পাশে বালিশটা রাখলাম। অনুমতি না নিয়েই আম্মুর কোলে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলাম।
ত্বকির মা মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন,
-ত্বকি রাজি হয় নি? (ত্বকির মা)

-উহু।(মেঘা)
ত্বকির মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন,
-মন খারাপ? (ত্বকি মা)
-উহু (মেঘা)
-তাহলে চলে এলি কেন? (ত্বকির মা)
ত্বকির মায়ের কথার উওরে মেঘা অভিমান শুরে বলে উঠলো,
-তোমার ছেলে অনেক পচা। (মেঘা)
-কেন? আমার ছেলে কি করেছে? (ত্বকির মা)
-তোমার ছেলে আমাকে একটুও ভালোবাসে না। (মেঘা)
-তাই? (ত্বকির মা)
-হুম। (মেঘা)

-তুই চলে না এসে ওকে বুঝাতি। দেখতি ঠিকি রাজি হয়ে যেত। (ত্বকির মা)
আম্মুর কথা শুনে আমি ঠোঁট-ওল্টে বলতে লাগলাম,
-তোমার ছেলে আমাকে তো তার ধারের চাপতে দেয় না। তাহলে বুঝাবো কীভাবে? (মেঘা)
মেঘার কথা শুনে ত্বকির মা বিষ্মিত গলায় বলে উঠলো,
-তোরা এখনো স্বভাবিক হস নি। (ত্বকির মা)
-মানে? (মেঘা)
আম্মুর কথা আমি বুঝতে পারলাম না। সে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-কিছু না। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়।
অন্যদিকে,

ভিজা শরীর নিয়ে তিথির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সাদ। ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে সে ।
সাদের অবস্থা দেখে তিথির প্রচুর কান্না পাচ্ছে। তাও সে নিজকে শক্ত রাখায় ব্যাস্ত। সাদের দিকে একপল তাকিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
-শার্টটা চেন্জ করুন। এভাবে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে। (তিথি)
তিথির কথাই সাদ ঠোঁট-ওল্টে বাচ্চাদের মতো বলে উঠলো,
-করব না। (সাদ)
-কেন করবেন না। (তিথি)
-আমি পারব না। তুমি করে দেও। (সাদ)
সাদের কথা শুনে তিথি স্তব্ধ হয়ে রইল।
-প্লিজ, চেন্জ করে দেও। (সাদ)

এবার যেন তিথির বিরক্ত হয়ে উঠলো। কান্না মাখা কন্ঠে বলল,
-আমি পারব না। যদি দরকার হয় মাকে ডেকে দিচ্ছি। (তিথি)
তিথির কথা বোধহয় সাদের বুকে গিয়ে বিঁধল। মন খারাপ করে বলে উঠলো ,
-না থাক। আমি নিজেই করে নিচ্ছি। (সাদ)
বলেই সাদ শার্ট নিয়ে বাতরুমে ঢুকে পড়ল।
সাদকে বাতরুমে যেতে দেখে তিথি রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এলো।
কিছুক্ষণ পর সাদ চেন্জ করে বের হলো। তিথিকে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো,

-আমি খাব না। খাইয়,, (সাদ)
সাদের কথা শেষ করার আগে তিথি রাগী কন্ঠে আস্তে করে বলল,
-এখন বলবেন না যে, আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে। প্লিজ আমাকে দিয়ে এমনটা আশা করবেন না। আপনাকে বিয়ের আগেই বলেছিলাম আমার উপর অধিকার দেখাতে আসবেন না। (তিথি)
তিথির কথাগুলো সাদ মেনে নিতে পারল না। চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইল সে।

সাদকে খাবার খাইয়ে তিথি সাদের মায়ের রুমে এসেছে। রুশাকে সাদের রুমে নেওয়া জন্য। কিন্তু রুশা দাদির কোলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই তিথি রুশাকে নিল না। কোন কথা না বলে সাদের মায়ের পাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে পড়ল।
এদিকে,
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আম্মুর সাথে রান্না করেছি। নিজের হাতে সার্ভ করে ভাইয়াক খাবার বেড়ে দিয়েছি।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৮

তার মুখটা কেমন যেন শুকনো শুকনো লাগছিল। খাওয়ার সময় আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমি ইচ্ছে মুখ ভার করে রেখেছিলাম।
ভাইয়ার সাথে সকলে কোন কথা হয় নি। সে তো সবসময় ভাব স্কয়ার নিয়ে চলাফেরা করে। তাই হয়তো আমার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি। পরীক্ষা শেষ তাই ভেবছি, আম্মুর কাছে থেকে কাজ শিখব। মনটাও ভালো নেই। অনেক খারপ লাগছে, মিমমা আপুর বিয়েতে আর যাওয়া হবে না।

ভাইয়ার রুমে যাচ্ছি ফোন আনতে। আম্মুকে একটা কল করব। ভালো লাগছে না। আম্মুর সাথে কথা বললে অনেকটা ভালো লাগবে। ভয় করছে। মনের ভেতরে সাহস যুটিয়ে ঢুকে পড়েলাম ভাইয়ার রুমে। চোখ বন্ধ করে এক দমে বলে উঠলাম,
-ভাইয়া, আপনার ফোনটা একটু দিবেন? (মেঘা)
-নিশ্চুপ (ত্বকি)

ভাইয়া কোন উওর না পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম। সাথে সাথে বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। আর গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
-কে তোর ভাইয়া? স্টুপিড।(ত্বকি)

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২০