তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৮

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৮
জাবিন মাছুরা

ত্বকি মেঘার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-লুক এট মি। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে আমি নিচের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অপরাধীর মতোন তার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে উঠলো,

-নিজের জিনিসের অধিকার নেয় না বলে মনে করিস না, সবকিছু তোর। (ত্বকি)
ভাইয়া কি বলছে সত্যি আমি বুঝতে পারিছি না। সে আবারও বলে উঠলো,
-আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছিস। আন্ডারস্টান্ড?
কথাগুলো বলেই ভাইয়া রুম থেকে চলে গেলেন। তার কথাগুলো আমাকে ভাবাচ্ছে।
আমি আবার ভাইয়ার কোন জিনিস নিজের কাছে রাখলাম? তার কি এমন জিনিসকে আমি নিজের ভাবলাম? দূর, আমি তো কিছুই বুঝলাম না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অন্যদিকে,
মাগরিবের আজানের সুমধুর ধ্বনি কানের যেতেই তিথির অসময়ের ঘুম ভেঙে গেল। পিটপিট করে চোখ খুলে চারপাশে পর্যবেক্ষণ করল সে। পাশে তাকাতেই নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। রুশা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কিছুটা সময় রুশার দিকে মমতাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। রুশার কপালে চুমু খেয়ে আস্তে করে বলে উঠলো,

-রুশা মামুনি, উঠে পড়ো।(তিথি)
তিথির ডাকে রুশা কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো।
-সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আর কতো ঘুমোবে? এখন যদি ঘুম থেকে না উঠো তাহলে তো রাতের বেলা ঘুমোতে পারবে না। (তিথি)
তিথির আদর মাখা কন্ঠ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল রুশার। আস্তে করে উঠে তিথির কলে গিয়ে বসল সে। তিথিকে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো,

-লাভ ইউ মাম্মা। (রুশা)
রুশার কথা শুনে তিথি হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
-লাউ ইউ টু মামুনি। কি খাবে বলো? এখুনি বানিয়ে নিয়ে আসছি।(তিথি)
তিথির কথায় রুশা অভিমান শুরে বলতে লাগল,
-কিছু খাব না। তুমি আর পাপা আমার কোন কথাই শুনো না। (রুশা)
-কেনো মা? তোমার কোন কথা শুননি? বলো তো? (তিথি)
-তোমারা খুব পচা। রাতের বেলা আমার কাছে ঘুমোও না। (রুশা)
রুশার কথা শুনে তিথি বলে উঠলো,

-আমি তো তোমার কাছেই থাকি। তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোয়। তাহলে মন খারাপ করো কেন? (তিথি)
তিথির কথা শুনে রুশা কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-তোমরা আমাকে একটু বুঝো না। আমাকে একটু ভালোবাসো না। (রুশা)
রুশা কোন কথাই তিথি বুঝে উঠতো পারলো না। সে বোকার মতো চুপ করে রুশার কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগলো।
হঠাৎ রুশা কান্না করে দিয়ে বলল,

-মাম্মা, তুমি কী জান? আমার বন্ধুরা ওদের বাবা মায়ের সাথে এক রুমে থাকে। কিন্তু আমি জীবনে কোনদিনও তোমাদের সাথে ঘুমোতে পারলাম না। তোমার আর বাবার মাঝখানে শুয়ে তোমাদের আদর খেতে পারলাম না। তোমরা না অনেক পচা।(রুশা)
রুশার কথা শুনে তিথির বুকের মাঝে ব্যথা অনুভব হতে লাগল। রুশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠলো,

-সরি মামুনি। কান্না করে না সোনা। প্লিজ।(তিথি)
-আমি কান্না করব। বেশি বেশি করে কান্না করব। তুমি অনেক বেশি পচা। আমাকে ছেড়ে ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলে কেন? আমার কথা কি তোমার একটুও মনে পরে নি। (রুশা)
রুশার প্রত্যেকটা কথা যেন তিথির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। শুধু কানে ভেসে উঠছে, রুশার সেই প্রথম দিনের মাম্মা ডাকটা। রুশা কেন তাকে সেদিন মাম্মা ডেকেছিল?

-মাম্মা, আমাকে ছেড়ে আর চলে যেও না। প্লিজ। তুমি তো জান না, প্রতিদিন রাতের বেলা বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার জন্য কান্না করতো। তুমি আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছো। (রুশা)
রুশার কথা শুনে তিথি স্তব্ধ হয়ে গেল। সাদ কি সত্যি তার জন্য কান্না করতো? রুশার কান্না দেখে তিথিও কেঁদে দিয়ে বলে উঠলো,
-সরি মা। আমাকে মাফ করে দেও। আমি আর কোনদিনও তোমাকে কষ্ট দেব না। (তিথি)
-নিশ্চুপ (রুশা)

-কান্না বন্ধ করো সোনা। আজকে থেকে তুমি আমি আর তোমার বাবা একসাথে থাকব। তোমাকে একসাথে আদর করব। এবার তুমি খুশী তো?
তিথির কথা শুনে রুশা অনেক খুশি হয়ে উঠলো। এতোদিন সে বলেছিল, তিথিকে যে তারা তিনজন একসাথে একই বিছানায় ঘুমোবে কিন্তু তিথি রাজি হয় নি। কোন না কোন অযুহাত দিয়ে কথাটা এড়িয়ে গিয়েছে। তাই রুশা আজকে প্ল্যান করে কান্না করেছে। যেন তিথি সাদের সাথে এক বিছানায় ঘুমোতে রাজি হয়ে।

-সত্যি তো? (রুশা)
-হুম। (তিথি)
রুশা কান্না বন্ধ করে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো। পাগলের মতো তিথির গালে চুমু খেতে লাগল।

রুশাকে সাদের মায়ের রুমে রেখে দিয়ে তিথি হেঁটে চলছে সাদের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্য। তিথির ভিতরে অস্থিরতা কাজ করছে।

অসস্থি নিয়ে সাদের রুমের ভিতরে ঢুকল তিথি। ওড়না ভালো করে ঠিক করে নিলো সে। বড়ো বড়ো চোখ দুটো দিয়ে খুঁজতে লাগল সাদকে। কিন্তু রুমের চারপাশে কোথাও সাদকে দেখতে পেল না। রুমে দেখতে না পেয়ে বেলকনিতে গেল সে। কিন্তু সেখানেও পেল না। বেলকনিতেও দেখতে না পেয়ে সাদের জন্য চিন্তা হতে লাগল তিথির। কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সে।

ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতেই বুঝতে পারল বাতরুমে শাওয়ারের শব্দ শোনে যাচ্ছে। তিথির আর বুঝতে বাকি রইল না যে, সাদ বাতরুমে রয়েছে। তাই গুটি গুটি পায়ে বাতরুমের দরজার সামনে দাঁড়াল সে। অস্থির মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-এই যে শুনছেন? তাড়াতাড়ি বের হন। (তিথি)
-নিশ্চুপ (সাদ)
সাদের কোন আওয়াজ না পেরে তিথির অস্থিরতা দ্বিগুন বেড়ে গেল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সে আবারও বলে উঠলো,

-আপনি তো ভারর্সিটি থেকে ফেরার সময় বৃষ্টিতে ভিজে ছিলেন। এখন বের হন প্লিজ। বেশিক্ষণ গোসল করলে আপনার জ্বর চলে আসবে কিন্তু । (তিথি)
তিথির অস্থিরতা বুঝতে পেরে সাদ আর বাতরুমের রইল না। ভেজা কাপড় নিয়েই দরজা খুলে তিথির সামনে এসে দাঁড়াল সে।

সাদকে বেরিয়ে আসতে দেখে তিথি সস্তির নিশ্বাস ফেলল তিথি। মাথা তুলে সাদের দিকে তাকাতেই তিথির খারাপ লাগতে শুরু করল। সাদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সাদ থরথর করে কাঁপছে। সারা শরীর ঠান্ডায় নীল বর্ন ধারন করে আছে। চোখ দুটো অতিরিক্ত লাল হয়ে রয়েছে। সাদর দিকে তাকিয়ে তিথি কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-আপনি কী বাচ্চা? নিজকে কি ছোট্ট বাচ্চা ভাবেন যে ইচ্ছেমতো ঘন্টার পর ঘন্টা গোসল করেছেন? (তিথি)

তিথির কষ্ট হচ্ছে দেখে, সাদের মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। আজ সে তিথির চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পারছে। তিথি যে আজও তাকে ভালোবাসে সাদের আর বুঝতে বাকি রইল না। সাদ তিথিকে আড়চোখে দেখতে লাগল আর মনে মনে বলতে উঠলো,
-আমি জানতাম, তুমি আমার কষ্ট দেখে দূরে থাকতে পারবে না। আমার সাথে ঠিকি কথা বলবে। তাই তো আজকে ইচ্ছে মতো বৃষ্টিতে ভিজেছি যেন আমার জ্বর চলে আসে। আমি ভালো করেই জানি, আমার জ্বর আসলে তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে না। ব্যাধ্য হয়ে হলেও তুমি আমার কাছে আসবে। আমার সেবা করবে। একটু হলেও তো তোমার হাতের ছোঁয়া পাবো।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৭

এদিকে,
আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। আম্মুর আমার মাথায় যত্ন সহকারে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর আমি চিন্তা করে যাচ্ছি ত্বকি ভাইয়ার কথা। একটু আগেই আমার বড়ো চাচা ফোন করেছিলেন। বলেছেন, তিনদিন পরে আমার চাচাতো বোন মিমমা আপুর বিয়ে। তাই চাচা আমাদের ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন যাতে আমারা বিয়েতে এ্যটেন্ড করি। কিন্তু ভাইয়া জাওয়ার জন্য রাজি হয় নি। তাই আমার মনটা ভালো নেই। ছোট বেলা ইচ্ছে ছিল মিমমা আপুর বিয়েতে খুব মজা করব। ইচ্ছে মতো আনন্দ করব। হঠাৎ আম্মু বলে উঠলো,

-মেঘা, কি এত চিন্তা করছিস?
-আম্মু গো।(মেঘা)
-হুম বল।(ত্বকির মা)
-আম্মু তোমার ছেলেকে কিভাবে রাজি করাব? সে তো রাজি হচ্ছেন না। (মেঘা)
আমার কথা শুনের আম্মু মিটমিট করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
– আমার ছেলেটা তোর কাছে যা চাইবে তাই দিবি। দেখবি তোর কথা শুনতে বাধ্য হবে। (ত্বকির মা)

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৯