তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৭

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৭
জাবিন মাছুরা

অতিরিক্ত রাগ নিয়ে সাদে চলে এলো ত্বকি। ভালো করে তাকিয়ে দেখল সত্যিই মেঘা ভিজছে। তাও বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে।
ত্বকি পলকহীন দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকিয়ে রইলো। সাদা ড্রেসটাতে মেয়েটাকে যেন একদম সাদা পরির মতো লাগছে। ড্রেসটা একদম গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। ত্বকি যেন ঘোরের মধ্যে চলে যেতে লাগল। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘার দিকে।

হঠাৎ বজ্রপাতের আওয়াজে ত্বকির ঘোর অনেকটা কেটে গেল। সে নিজের প্রতি বিরক্ত নিয়ে, পরপর দুটো নিশ্বাস ফেললো। মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখল, মেয়েটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে। ত্বকি ধীর পায়ে মেঘার কাছে এগিয়ে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-মেঘা ,(ত্বকি)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ত্বকির আওয়াজ এখনো মেঘার কানে যায় নি। সে তার মতো চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি বিলাস করছে। ত্বকি অনেকটা বিরক্ত হয়ে পড়ল। তার পরেও চুপ থেকে মেঘাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।
আবারও ত্বকির দৃষ্টি আটকে গেল মেঘার উপর। সে দ্বিতীয় বার মেঘা নামক ঘোরে ডুবে যাচ্ছে। ত্বকি বুকে হাত দিয়ে, মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকিয়ে বির বির করে করে বলে উঠলো,
– তুই তো আমাকে নির্ঘাত পাগল করে ফেলবি। আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাব। আসলেই তুই একটা পিচ্চি। নিজের একটু খেয়াল রাখতে পারিস না। (ত্বকি)

সময় যেন থেমে গেছে ত্বকির কাছে। হঠাৎ করে ত্বকির চোখ গিয়ে পড়ল পাশের ছাদে। পাশের বাসার ছাদের উপর কয়েকটা ছেলে হা করে মেঘার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রাগ যেন তার মাথায় চেপে বসল। ত্বকি আর কোন কথা না বলে, পিছন থেকে শক্ত করে মেঘার হাত ধরে টান দিল।

হাতে টান অনুভব করতেই আমি চোখ খুলে পিছন দিকে ঘুরলাম। সাথে সাথে ভয়ে আমার বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো। ভাইয়া আমার দিকে প্রচন্ড রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। আমি কোন কথা বলার আগেই ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে তার সাথে করে নিয়ে যেতে লাগলেন।
রুমের মধ্যে এনে হাত ছেড়ে দিলেন। ঠান্ডায় আমার পুরো শরীর শীতল হয়ে আসছে। একপল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আমার দিকে এগিয়ে আসছেন তিনি। তাকে দেখে ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করল। সে আমার দিকে ফুসতে ফুসতে এগিয়ে আসতে লাগছেন।

একপর্যায়ে ত্বকি মেঘার একদম কাছে এলো। মূহুর্তেই অদ্ভুত কান্ড করে বসলো সে। এক টান দিয়ে মেঘার গায়ে লেগে থাকা ভেজা ওড়নাটা মেঝেতে ফেলে দিল। চিৎকার করে, কর্কশ গলায় জোরে জোরে বলতে লাগলো,

-বিয়াদপ মেয়ে, ওড়না যখন ঠিক মতো পড়তেই পারিস না তাহলে গায়ে রাখিস কেন? (ত্বকি)
ত্বকি ভাইয়ার এমন কান্ডে আমার প্রচন্ড কান্না পেল। কম্পমান ঠোঁট- দুটো দাত দিয়ে চেপে ধরে কান্না আটকে রাখতে চেষ্টা করলাম।
-এই মেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজেছিস কেন? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
ত্বকি ভাইয়া ঘর কাঁপানো ধমক দিয়ে আবারও বলে উঠলো,
-ওহ বুঝেছি, ছেলেদের শরীর দেখেতে তোর ভালো লাগে। তাই তো ছাদে গিয়েছিলি নিজের রুপ দেখাতে। (ত্বকি)

ভাইয়ার এমন উল্টো পাল্টে কথা আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। শত চেষ্টা করেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। অবাধ্য চোখ দুটো থেকে টুপটুপ করে গড়িয়ে পড়তে লাগল।
মেঘার চোখের পানি দেখে ত্বকির রাগ কিছুটা হলেও কমে গেল। নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করল সে। নরম গলায় মেঘাকে বললো,
-যা ড্রেস চেন্জ করে আয়। কুইক। (ত্বকি)

ভাইয়ার অনুমতি পেয়ে এক মূহুর্ত দেরি না করে, কাপড় নিয়ে বাতরুমে ঢুকে পড়লাম। ঝরনা ছেড়ে দিয়ে, হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসলাম। অনেক কাঁদতে মন চাইছে। মনের কথা শুনে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম। ত্বকি ভাইয়া এমন কেন? আমার সাথে কি একটু ভালো ভাবে কথা বলতে পারেন না? কেন সারাক্ষণ রাগ করে থাকেন আমার উপর? আমি কি খারপ মেয়ে? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না? বৃষ্টিতে ভিজে কি আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি?

অনেকক্ষণ মেঘাকে বাতরুমে থেকে বের হতে না দেখে, ত্বকি ভিতরে ভয় হতে শুরু করল। তাই ত্বকি বাতরুমের সামনে গিয়ে জোরে করে বলে উঠলো,
-মেঘা, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হবি নাহলে তোর খবর আছে। (ত্বকি)
ত্বকি ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে আমি ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আমাকে তাড়াতাড়ি রুমে যেতে হবে। প্রচুর শীত লাগছে। আয়নায় সামনে গিয়ে নিজের দিকে তাকালাম।

সাথে সাথে আমার কান্না আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। গায়ের জামাটা শরীরের সাথে একেবারে লেগে গিয়েছে। ছিঃ, দেখতে প্রচুর বাজে লাগছে। ভাইয়ার রাগের কারন এখন অনেকটা বুঝতে পারলাম। তার রাগ করাটাই স্বাভাবিক। এখন তো ভাইয়ার সামনে মুখ দেখাতেই প্রচুর লজ্জা লাগছে।

কিছুটা সময় পর মাথায় ওড়না দিয়ে বাতরুম থেকে বের হলাম। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
বৃষ্টিতে ভেজার কারনে প্রচুর শীত লাগছে। তাই কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় গিয়ে বসলাম। ত্বকি ভাইয়া আমাকে দেখে গরম চাউনিতে আমার দিকে তাকালেন। এক বার ভাইয়া দিকে তাকিয়ে, ভয়ে আমি মাথা নিচু করে রইলাম।

মেঘাকে কাঁপতে দেখে, ত্বকি আলমারি থেকে কম্বল বের করে,, নিজের হাতে মেঘার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিল। তারপর কোন কথা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ত্বকি ভাইয়ার এমন কাজে আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না। গায়ে কম্বল জড়ানোর পরেও আমি কাঁপতে লাগলাম।

কিছুক্ষণ পরে ভাইয়া রুমে এসে ঠাস্ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আস্তে করে বিছানার এক পাশে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
-এই নে, তোর সেই বিখ্যাত ফুচকা। খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি নত দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকালাম। সে প্লেটে ফুচকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না যে, ভাইয়া আমার জন্য ফুচকা এনেছেন। নিমিষেই মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাঁসি ফুটে উঠলো।
দেরি না করে ভাইয়ার হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে খেতে শুরু করলাম।
ত্বকি এক দৃষ্টিতে মেঘার খাওয়া দেখতে লাগলো। মেঘার বাচ্চামো দেখে ত্বকির রাগ চলে গেল। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মেঘার পাশে বসল সে।

পাঁচ মিনিটে সম্পন্ন ফুচকা শেষ করলাম। প্রচুর ঝাল হয়েছে। খাওয়া শেষ করেই ভাইয়ার হাত থেকে পানির গ্লাস নিলাম। পুরো পানি শেষ করে গ্লাসটা পাশে রেখে মিষ্টি গলায় ভাইয়াকে বললাম,
-ভাইয়া, আপনি না অনেক ভালো। (মেঘা)
ত্বকি মেঘার কথা শুনে মনে মনে হাঁসতে লাগলো। কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ করল না। মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে রাখল।

ফুচকা খাওয়ার পর, এখন অনেক গরম লাগছে। তাই বিছানা থেকে নেমে ওড়না ঠিক করে দাঁড়ালাম। ঠিক তখনই ভাইয়া ছোফা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমার একদম কাছে এসে হঠাৎ ভাইয়া আমার ওড়না আঁচল ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,
-কান খোলে শোনে রাখ, আর কখনো আমাকে না বলে ছাদে যেয়ে বৃষ্টিতে ভিজবি না। আন্ডারস্টান্ড?(ত্বকি)

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৬

-নিশ্চুপ (মেঘা)
ভাইয়া আমার ওড়নার আঁচল ধরাতে আমার ভিতরে অস্থির লাগতে শুরু করল। চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইলাম। হঠাৎ করে ভাইয়া রেগে গেলেন কেন, বুঝতে পারলাম না।
ত্বকি মেঘার অস্থিরতা উপলব্ধি করতে পেরে ওড়না ছেড়ে দিল। মেঘার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে উঠলো,

– আমার জিনিস, অন্য কাউকে দেখানো অধিকার তোর নেই। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না। তার এমন অদ্ভূত কর্মে আমার হৃদয় স্পন্দন বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।
ত্বকি মেঘার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-লুক এট মি। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি নিচের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অপরাধীর মতোন তার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
-নিজের জিনিসের অধিকার নেয় না বলে মনে করিস না, সবকিছু তোর। (ত্বকি)
ভাইয়া কি বলছে সত্যি আমি বুঝতে পারিছি না। সে আবারও বলে উঠলো,
-আশা করি আমার,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৮