তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৬

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৬
জাবিন মাছুরা

আমি তিথি আপুর কোলে থেকে রুশাকে নিয়ে ভাইয়ার রুমে চলে এলাম। ঢুলতে ঢুলতে ভেতরে ঢুকে রুশাকে বিছানায় শুয়ে দিলাম। ভাইয়া আড় চোখে আমাকে দেখছেন। রুশাকে শুইয়ে দেওয়া পর হঠাৎ আমার সাথে বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে গেল। রুশার নিচে আমার সম্পন্ন ওড়নায় পড়ে গেল। ভাইয়ার সামনে এমন খারাপ পরিস্থিতি পড়ব কখনো ভাবিনি।

ভাইয়া আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালেন। আমি অস্তিত্বে পড়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে রুশার নিচে থেকে ওড়না নিয়ে দৌড়ে বাতরুমে ঢুকে পড়লাম।
প্রায় দশ মিনিট পরে মাথায় সুন্দর করে কাপড় দিয়ে বাতরুম থেকে বের হলাম। ভাইয়া ছোফায় বসে রয়েছেন। আমি ভাইয়ার দিকে তকাতে পারছি।প্রচুর লজ্জা লাগছে। দূর, কেন যে রুশাকে কোলে নিলাম। হঠাৎ ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-তুই রুশার সাথে ঘুমো। আমি অন্য রুমে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ, শোন একটু তাড়াতাড়ি বড়ো হ। স্টুপিড।(ত্বকি)
ভাইয়ার রাগ মাখা কথা শুনে আমার লজ্জা জানাল দিয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না।
অন্যদিকে,

বিছানার উপর গুটিশুটি হয়ে বসে আছে তিথি। প্রচন্ড অস্থির লাগছে তার। সে ভাবতেই পারছে না, সাদ নামক মানুষটি এখন তার স্বামী। যার উপর শুধুমাত্র তার অধিকার। তিথির এতদিনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো আজ। তার তো আজ খুশী হওয়ার কথা। কিন্তু না, তিথি খুশি হতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে তার, খুব অভিমান হচ্ছে সাদ নামক মানুটার উপর। চুপচাপ বিরক্ত নিয়ে বসে আছে সে। সাদ এখনো ঘরে প্রবেশ করে নি।

কিছুক্ষণ পর তিথিকে সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলো সাদ। সাদের কন্ঠ শুনে তিথির বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। নরম শুরে সাদের সালামের উওর নিল সে। আর কোন কথায় বললো না।
কিছুটা সময় নিরব রইলো চারপাশ। নিরবতা কাটিয়ে আস্তে করে সাদ বলে উঠলো,

-ধন্যবাদ তোমাকে। (সাদ)
-নিশ্চুপ (তিথি)
-এতগুলো দিন তোমাকে কষ্ট দেওয়া জন্য, সরি।পারলে আমাকে মাফ করে দিও। (সাদ)
-নিশ্চুপ (তিথি)
তিথি বাক প্রতিবন্ধীর মতো চুপ করে রইল। সাদের কথার কোন জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। সাদ আবার বলল,

-যাও ফ্রেশ হয়ে এসে, শুয়ে পড়ো। (সাদ) [লেখিকা:জাবিন মাছুরা]
সাদের কথা শুনে তিথি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। সাদের দিকে না তাকিয়ে নরম শুরে বলে উঠলো,
-আপনি বিছানাতে শুয়ে পড়ুন। আমি ছোফায় থাকছি। (তিথি)
তিথির কথায় সাদ করুন শুরে বলে উঠলো,
-কেন? তুমি বিছানায় থাকবে না? (সাদ)[লেখিকা:জাবিন মাছুরা]
-না। (তিথি)
-ওকে। তোমার যদি আমার সাথে থাকতে প্রবলেম হয় তাহলে, তুমি বিছানায় থাকো। আমি বরং ছোফাতে,,, (সাদ)

সাদকে কথাগুলো শেষ করতে না দিয়ে, তিথি কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
-আমার উপর বউ এর অধিকার দেখাতে আসবেন না প্লিজ। আজকে আম্মুর কথা রাখতে আপনার সাথে এক রুমে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। আমি কিন্তু শুধু মাএ রুশার জন্য আপনাকে বিয়ে করেছি। তাই দয়া করে আমার সিদ্ধান্তটা আমাকে নিতে দিন। (তিথি)
তিথির প্রতিটা কথা যেন কাটার মতো বিঁধলো সাদের বুকে। খুব কষ্টে হচ্ছে তার। সাদ নিজেকে সামলে নরম গলায় বললো,

-ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করবো না। তোমার সব কথা রাখতে চেষ্টা করব। (সাদ)
কথাগুলো বলেই বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পড়ল সাদ। মনে মনে বলতে লাগলো,
-খুব তাড়াতাড়ি তোমার রাগ ভাগিয়ে ফেলব বউ। তোমাকে কোন অভিযোগ রাখতে দিব না। শুধু একটু সময় প্রয়োজন। আমি যে অনেক ভালোবাসি তোমাকে তিথি। আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট দিব না। (সাদ)
সাদকে শুয়ে পড়তে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছোফয় চুপ করে শুয়ে পড়ল তিথি। সে ভেবে রেখেছে খুব কষ্ট দিবে সাদকে। সাদের কাছে থেকেও কাছে আসবে না।

পরের দিন সকালে সাদ তিথিকে নিয়ে তাদের বাড়িতে চলে এলো। তিথি রুশাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু রুশা সাদকে ছাড়া থাকতে পারে না তাই তিথি থাকতে পারি নি। সাদের সাথে সাদের ফ্লাটে চলে এসেছে।

সময় চলমান। সবকিছু থামিয়ে রাখা গেলেও সময়কে থামিয়ে রাখা যায় না। মাঝখানে কেটে গিয়েছে অনেক দিন।
আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষর দিকে। আর মাএ একটা পরীক্ষা বাকি আছে। এ কয়টা দিন, রাত দিন দিয়ে পড়তে হয়েছে আমাকে। ত্বকি ভাইয়া আমাকে একটু ফাকি দিতে দেয় নি। হসপিটালের কাজ ফেলে সারাদিন আমাকে সময় দিয়েছেন। আমাকে সময় দিয়েছে বললে ভুল হবে সে তো আমার পড়াকে সময় দিয়েছে। সব সময় চোখে চোখে রেখেছেন। প্রতিদিন আমাকে পরীক্ষা হল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন। যতক্ষণ পরীক্ষা শেষ না হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত গাড়িতে অপেক্ষা করেছেন। এই কয়দিনে তার কেয়ার দেখে আমি মুগ্ধ। কিন্তু রাগ আগের মতোই আছে। সারাক্ষণ রেগে থাকেন। অনুভূতিহীন মানুষ একটা।

গাড়িতে বসে আছি, পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। আজকেই শেষ পরীক্ষা। ভাইয়া মনোযোগ দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করছেন। আমি বই হাতে নিয়ে পড়ছি। আজকে খুব ইচ্ছে করছে ফুচকা খাব। এতোদিন ভাইয়াকে ফুচকা খাওয়ার কথা বলার সাহস পায় নি। কিন্তু আজকে আমি খাবই। ফুচকা কথা ভেবেই মনটা খুশি হয়ে গেল। ইশ, কতদিন পরে খাব। ফুচকা খাওয়ার পর ভাইয়াকে বলব আইসক্রিম কিনে দিতে। চিন্তা করতে করতে পরীক্ষার হলের সামনে চলে এলাম। ভাইয়া আমাকে এগিয়ে দিলেন চলে গেলেন।

অন্যদিকে,
সময় পার হয়ে গিয়েছে ঠিকি কিন্তু এখনো তিথি আর সাদের সম্পর্কে আগের মতোই আছে। তিথির সাথে রুশার সম্পর্কটা আরো গভীর হয়ে গিয়েছে। এক মূহুর্তও তিথি রুশাকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। সবসময় রুশাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে। কিন্তু সাদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। সবসময় সাদের কাছে থেকে দূরে দূরে থাকে। রাতের বেলা তিথি আর রুশা এক রুমে থাকে আর সাদ আলাদা রুমে থাকে।

পরীক্ষা শেষ করে, হল থেকে বাইরে বের হলাম। এখন নিজকে স্বাধীন লাগছে। এ কয়দিন পড়তে পড়তে আমি তো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।[লেখিকা:জাবিন মাছুরা]
কিছুটা দূরে চোখ যেতেই দেখলাম ভাইয়া গাড়িতে বসে আছেন। আমিও চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
ভাইয়া কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছেন। মুখে তার গম্ভীর ভাব। হঠাৎ গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন,

-পরীক্ষা কেমন হয়েছে? (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে আমি আস্তে করে বলে উঠলাম,
-ভালো। (মেঘা)
আর কোন কথা বললেন না তিনি। কিছুক্ষণ পরে আমি বুক ভরা সাহস নিয়ে ভাইয়াকে বলে উঠলাম,
-ভাইয়া।(মেঘা)
-হুম, বল। (ত্বকি)
-ভাইয়া, আমি ফুচকা খাব। প্লিজ, এনে দিন। (মেঘা)
ভাইয়া আমার কথা শুনে ধমকের সাথে বলে উঠলো,
-এসব বাইরের জিনিস খাওয়ার কথা একদম বলবি না। আমি এই রাস্তার আজেবাজে খাবার এনে দিতে পারব না। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে খুব কান্না পেল খুব। তাও কিছু বললাম না। খুব অভিমান হলো তার উপর।
মনে মনে বললাম, আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসে না। আপনার কাছে আমার পছন্দের মূল্য নেই। আপনি খুব পচা।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৫

ভাইয়া আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন। মনে হলো হসপিটালে গিয়েছেন। আমি বাসায় গিয়ে আম্মুর সাথে দেখা করে রুমে এসে ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে পড়লাম। খুব কান্না পাচ্ছে।
ইচ্ছে মতো কিছুক্ষণ কান্না করে মন হালকা করলাম। হঠাৎ বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি রুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে এলাম। মন ভরে বৃষ্টি বিলাস করতে লাগলাম।

বৃষ্টির মধ্যেই হসপিটাল থেকে বাসায় চলে এলো ত্বকি। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে। রুমে কোথাও মেঘাকে দেখতে পেল না। তাই সারা বাড়ি মেঘাকে খুঁজতে লাগল। কোথাও না পেয়ে রাগ নিয়ে সাদে চলে এলো। ত্বকির খুব রাগ হচ্ছে মেঘার উপর। মেয়েটা নিশ্চই বৃষ্টিতে ভিজছে।
অতিরিক্ত রাগ নিয়ে সাদে চলে এলো ত্বকি। ভালো করে তাকিয়ে দেখল সত্যিই মেঘা ভিজছে। তাও বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে।

ত্বকি পলকহীন দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকিয়ে রইল। সাদা ড্রেসটাতে মেয়েটাকে যেন একদম সাদা পরির মতো লাগছে। ড্রেসটা একদম গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। ত্বকি যেন ঘোরের মধ্যে চলে,,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৭