তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৫

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৫
জাবিন মাছুরা

সাথে সাথে আমার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। আমি মেনে নিতে পারছি না, যে ভাইয়া আমার নামে পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছে। তাহলে কি ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে? যদি আমাকে তার পছন্দ হতো, তাহলে কি কখনো আমার উপর রাগ করতে পারত? দূর আমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

ত্বকি রুমের মধ্যে ঢুকে মেঘাকে হা করে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখল। সে ধীরে ধীরে মেঘার পাশে গিয়ে বসল। মেঘা ব্যাপক পরিসরে চিন্তায় মগ্ন, ত্বকি রুমের মধ্যে আছে তা মেঘার ধারনার ভাইয়া। ত্বকি কিছুক্ষণ মেঘাকে পর্যবেক্ষণ করে ভালো করে খেয়াল করে দেখল তার ফোন নিচে পড়ে রয়েছে। নিজের ফোনটা নিচে পড়ে থাকতে দেখে ত্বকি প্রচন্ড রেগে গেল। মেঘাকে জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-স্টুপিড, কোথায় ঢুবে আছিস তুই? (ত্বকি)
ভাইয়ার হঠাৎ ধমকে আমি ছিট্টে উঠলাম। চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল। নিজেকে সামলে অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।

-আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? নিচে দিকে তাকিয়ে দেখ। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা মতো নিচে তাকাতেই ভয়ে আমার মাথার মধ্যে ব্যথা শুরু করে দিল। আজকে নির্ঘাত আমার কপালে দুঃখ আছে। তাড়াতাড়ি করে নিচে থেকে ফোন টা তুলে ভাইয়ার সামনে ধরলাম। আমর হাত কাঁপছে। সে আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
ত্বকি মেঘার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

-প্রশ্নটা সলভ করেছিস? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
মেঘাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ত্বকি বিরক্তি নিয়ে বলল,
-কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না? খাতা দে। (ত্বকি)
ত্বকি মেঘার কাছে থেকে খাতা নিয়ে দেখতে লাগল।
অনদিকে,

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। তিথির বান্ধবী উপমা তাকে রেখে বাসায় চলে গিয়েছে। তিথি স্থির হয়ে বসে আছে। পাশে বসে সাদ পলকহীন দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিছুটা সময় যেতে, তিথি সিদ্ধান্ত নিল, সে সাদর প্রস্তাবে রাজি হবে না। যে করেই হোক। মনকে শক্ত রেখে, তিথি আস্তে করে উঠে দাঁড়াল। একবারও সাদের দিকে তাকিয়ে দেখলা না সে। কোন কথা না বলে হাঁটতে শুরু করল।
তিথির হঠাৎ করে উঠে যাওতে সাদ ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে। চাপা কষ্ট নিয়ে তিথির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়েছে সে।

তিথি সামনে দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। আশেপাশে কোন দিকে একটি বার তাকিয়ে পর্যন্ত দেখছে না। হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। তার মনে হলো কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে শক্ত করে ধরে রয়েছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখল, ছোট রুশা তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। তিথি রুশাকে না চাইতে কোলে তুলে নিল। আদর মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-কি হয়েছে মামুনি? (তিথি)
রুশা শক্ত করে তিথির গলা জড়িয়ে ধরল। কান্না করে দিয়ে বলে উঠলো,
-মাম্মা, তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? আমার কাছে থাকবে না। আমি যে তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না, মাম্মা। (রুশা)

রুশার মুখে মাম্মা ডাকটা তিথিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কেন রুশা তাকে মাম্মা বলে ডাকল?
তিথির রুশার কথা কি উওর বলবে বুঝতে পারছ না। সে যে এতটুকু সময়ে রুশার মায়াতে আটকে গিয়েছে তা বুঝতে বাকি রইল না তার। তিথি রুশা কান্না সহ্য করতে পারছে না। আনমনে সে বলে উঠলো,
-আমি এখন থেকে তোমার কাছে থাকব। কেঁদে না সোনা। (তিথি)
রুশা কান্না থামিয়ে বলে উঠলো,

-সত্যি? (রুশা)
-হুম, তিন সত্যি। আজকে থেকে আমি তোমার কাছে থাকব। (তিথি)
তিথির আর রুশার কথা শুনে সাদ যেন প্রাণ ফিরে ফেল। এত সহজে যে, তিথি রাজি হয়ে যাবে তা ভাবতে পারে নি সে। সাদ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, আর কোনদিন ও সে তিথিকে কষ্ট দেবে না। এতদিনের সব কষ্ট ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবে।

তিথি রুশাকে কোলে নিয়ে ছোফাতে বসে আছে। তার ঠিক সামনে বসে আছে সাদ। সাদের মুখোমুখি বসে আছে ত্বকির বাবা। তিনি গম্ভীর মুখে সাদকে পর্যবেক্ষণ করছে। ঠান্ডা এসির হাওয়াতেও সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে সাদের। এভাবে প্রস্তুতি ছাড়া বিয়ে করতে এসে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে সে।
মেঘাকে পড়া দিয়ে, মায়ের ডাক শুনে বসার ঘরে এলো ত্বকি। ছোফাতে সাদ বসে থাকতে দেখে রাগে সারা শরীর গিরগির করে উঠলো তার। নিজের রাগ কন্ট্রোল রেখে কর্কশ গলায় বলে উঠলো,

-সাদ সাহেব, কেমন আছেন? (ত্বকি)
ত্বকির কথার ধরন মোটেও পছন্দ হলো না সাদের। সে ছোফা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। হাল্কা হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
-ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? (সাদ)
ত্বকি সাদের কথার কোন উত্তর দিল না। চুপ করে ছোফায় যেয়ে বসল। ত্বকির মা ত্বকির পাশে এসে বসল। ত্বকির হাতটা ধরে অনুরোধ শুরে বলে উঠলো,
-ত্বকি বাবা, তোকে একটা কথা বলার ছিল। (ত্বকির মা)
-হুম। (ত্বকি)

-বাবা, আমি চায় আজকে সাদ আর তিথির বিয়েটা করিয়ে দিতি। আমার শেষ ইচ্ছে মনে করে রাজি হয়ে যা। (ত্বকির মা)
ত্বকি তার মায়ের এমন কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। নত দৃষ্টিতে আস্তে করে বলে উঠলো,
-তোমারা যা ভালো মনে কর। (ত্বকি)
বলেই ত্বকি নিজের রুমে চলে এলো। রুমে এসেই গম্ভীর কন্ঠে মেঘাকে বলে উঠলো,
-তোকে আর পড়তে হবে না। মায়ের কাছে যা। (ত্বকি)
ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি অবাক। এত তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করতে বলছে। আম্মুর কাছেই বা যেতে বলছেন কেন? হয়তো আমাকে দরকার। তাই আমি ভাইয়ার কথা মতো আম্মুর কাছে চলে এলাম।
বসার ঘরে এসে, ছোফার উপর অপরিচিত মানুষ দেখে আমি রুমে ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতেই আম্মু বলে উঠলো,

-মেঘা, (ত্বকির মা)
-জী। (মেঘা)
-এখানে আয় তো। (ত্বকির মা)
আমি মাথা নিচু করে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি শুরে বলে উঠলো,
-সাদ বাবা, এই যে এটা হচ্ছে আমার ত্বকির বউ। (ত্বকির মা)
সাদ একপল মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর তিথির দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল।
ত্বকির মা মেঘাকে আড়াল করে নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

-মেঘা, আজকে তোর তিথি আপুর বিয়ে। যা গিয়ে তিথির রুমটা একটু গুছিয়ে দিয়ে আয় তো। (ত্বকির মা)
আম্মুর কথা শুনে আমি থমথম হয়ে। আজকে নাকি তিথি আপু বিয়ে। আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমি আম্মুর কথা মতো তিথির আপুর রুম গুছিয়ে দেওয়া জন্য আপুর রুমে এলাম।

মেঘাকে তিথির রুমে পাঠিয়ে ত্বকির মা ত্বকির রুমে এলো। সে দেখল, ত্বকি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
-ত্বকি, তুই কি আমার সিদ্ধান্তে রাগ করেছিস? (ত্বকির মা)
হঠাৎ মায়ের কন্ঠ শুনে ত্বকি চোখ মেলে তাকাল। ত্বকির মা আবারও বলে উঠলো,
-দেখ বাবা, আমি মা হয়ে তিথি কষ্ট মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি তো বুঝি, আমার মেয়েটা যে সাদকে খুব ভালোবাসে।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৪

-নিশ্চুপ (ত্বকি)
-তুই দেখিস বাবা তোর বোন সাদের সাথে সুখে থাকবে। (ত্বকির মা)
ত্বকির নিজের মায়ের কথা রাগী গলায় বলে উঠলো,
-সাদ যদি আবার আমার বোনকে কষ্ট দেয় তাহলে ওকে আমি কি করব আমি নিজেও জানি না। (ত্বকি)
ত্বকির মা ত্বকির কথার ধরন দেখে বুঝতে পারল যে, ত্বকি রাজি হয় গিয়েছে।

আজকে রাতেই সাদ আর তিথির বিয়ে সম্পন্ন হলো। সাদ যে পোষাক পড়ে ছিল তাই পড়ে আছে। কিন্তু তিথিকে জোর করে তার মা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছি। তিথির বাবা ডিসিশন দিয়েছে, যে মেঘার পরীক্ষার পর বড়ো করে অনুষ্ঠান করবে। সাদের পরিবারের সবারও এতে কোন আপত্তি নেই। সাদের পরিবার বলতে, তার মা আর রুশা। দু-দিন হলো সাদের মা তার বড়ো খালার বাড়ি ঢাকার উওরেতে গিয়েছে। তাই সাদ তার মাকে বিয়েতে উপস্থিত রাখতে পারল না।

আমি তিথি আপুর কোলে থেকে রুশাকে নিয়ে ভাইয়ার রুমে চলে এলাম। ঢুলতে ঢুলতে ভেতরে ঢুকে রুশাকে বিছানায় শুয়ে দিলাম। ভাইয়া আড় চোখে আমাকে দেখছেন। রুশাকে শুইয়ে দেওয়া পর হঠাৎ আমার সাথে বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে গেল। রুশার নিচে আমার সম্পন্ন ওড়না চলে গেল। ভাইয়ার সামনে এমন খারাপ পরিস্থিতি পড়ব কখনো ভাবিনি। লজ্জায় আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগল। ভাইয়া দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে,,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৬