তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৪

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৪
জাবিন মাছুরা

তিথির বুকের ভিতর বেদম প্রহর শুরু হতে লাগল। সামনে থাকা মানুষটির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। বাচ্চা মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে সাদের কোলে গিয়ে উঠলো। সাদ বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো,
-রুশা মা, তুমি আমাকে না বলে চলে এসেছ কেন?(সাদ)
রুশা সাদের কথার কোন উত্তর না দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু খেয়ে খিলখিল করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,

-দেখো বাবা, মাম্মাকে পেয়ে গিয়েছি। (রুশা)
তিথি রুশার মুখে থেকে মাম্মা ডাক শুনে অবাক হয়ে উঠলো। তার কাছে সবকিছু যেন বিষাদ ময় লাগছে। তিথি এক মুহূর্তও এখানে থাকতে পারবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো সাদের কাছে থেকে দূরে চলে যাবে। কান্না মাখা কন্ঠে রুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-বাই, রুশা। ভালো থেকো। (তিথি)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই তিথি হাঁটতে শুরু করল। সাদ রুশাকে কোলে থেকে নামিয়ে আইসক্রিমের স্টলে বসিয়ে দিয়ে আসলো। তারপর দৌড়ে গিয়ে তিথির কাছে এসে খপ করে তিথির হাত টেনে ধরল।
হঠাৎ করে হাতে টান অনুভব করতেই তিথি ঠাই দাড়িয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করে প্রিয় মানুষটি ছোঁয়া অনুভব করতে লাগল। কিছুক্ষণ নিরব রইলো চারপাশ। নিরবতা কাটিয়ে সাদ মলিন কন্ঠে বলে উঠলো,
-তিথি, কথা বলবে না আমার সাথে? আজ ও কি আমাকে ক্ষমা করতে পারো নি? (সাদ)
পাঁচ বছর পর সাদের কন্ঠেস্বর কানে যেতেই তিথির বুকটা ধক করে উঠলো। সাদের দিকে মুখ করে নত দৃষ্টিতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,

-কেমন আছেন? (তিথি)
তিথির প্রতিউওরে সাদ ব্যথা যুক্ত কন্ঠে বলতে লাগলো,
-ভালো নেই। তোমাকে ছাড়া একদমই ভালো নেই। (সাদ)
সাদের মুখ থেকে এমন কথা আশা করে নি তিথি।নত দৃষ্টি সরিয়ে সারাসরি সাদের মুখ পানে চাইলো সে।অবাক দৃষ্টিতে কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
-আপনার ওয়াইফ থাকতে এমন কথা বলছেন কেন? রুশার দিকে তাকিয়ে এমন কথা বলতে লজ্জা লাগল না আপনার? (তিথি)

তিথির কথা শুনে সাদ মুচকে হেসে বলে উঠলো,
-তারমানে তুমি আজও আমাকে ভালোবাসো? (সাদ)
সাদের কথা শুনে তিথির বুকের ভেতর যন্ত্রণা শুরু করে দিল। চোখ দুটো জলে ছলছল করে উঠলো। যেকোনো সময় জলসাগর থেকে টুপ করে তিথির গাল বেয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়বে। তিথি অতিকষ্টে নিজেকে শক্ত রেখে ভাঙা গলায় বলে উঠলো,

-ছিঃ, আপনি বিবাহিত হয়েও এমন আজেবাজে কথা বলছেন কি করে? নিজের ওয়াইফের কথা একবারও মনে পড়ছে না আপনার ? (তিথি)
তিথির কথায় সাদ আট্ট হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
-বউ থাকলে তো? (সাদ)
সাদের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারল না তিথি। চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বিষ্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
-আপনার বউ নেই মানে? রুশা আপনার মেয়ে না? তাহলে রুশার মা কে? (তিথি)
তিথির প্রশ্নে সাদের চোখ দুটোতে এক নিমিষেই জলে ভরে উঠলো। রুশার দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগল,

-রুশা আমার নিজের মেয়ে না। আমার ভাইয়ের মেয়ে। (সাদ)
তিথি একটা ঢোক চেপে উওজিত হয়ে বলে উঠলো,
-তাহলে রুশা আপনাকে বাবা বলে ডাকল কেন? (তিথি)
তিথির কথায় সাদ মলিন হেসে বলে উঠলো,
-রুশার বয়স যখন ছয় মাস তখন ভাবি আর ভাইয়া একসাথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপরে থেকেই রুশা আমার কাছে থাকে। আমাকে বাবা বলে ডাকে।আমিই ওর বাবা আমিই ওর মা। (সাদ)
সাদের কথা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তিথি। নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারল না সে। ইচ্ছে মতো কান্না শুরু করে দিল।

তিথিকে কাঁদতে দেখে সাদ বলে উঠলো,
-পাগলী, তুমি কাঁদছ কেন? ( সাদ)
তিথির কানে কোন কথা ঢুকল না। সে নির্লজের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,
-আপনি এখনো বিয়ে করেন নি কেন? (তিথি)
সাদ মনে মনে এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুশি মনে বলতে লাগল,
-তোমাকে পাবার আশায়। তুমি কি জানো, যেদিন আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়ে চলে এসেছি, সেদিনের পর থেকে আমি তুমি নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। সময় যত পাড় হয়েছে আমি তত তোমাতে আসক্ত হয়ে পড়েছি। এমন কোন রাত নেই যে আমি তোমাকে নিয়ে ভাবি নি। (সাদ)
সাদ কিছুটা সময় চুপ থেকে আবারও বলতে লাগল,

-তুমি ভাবতে পারো, আমি কেন তোমার কাছে ফিরিনি? কেন তোমাকে বলিনি যে, আমিও তোমাকে ভালোবাসি? কারন আমি ভাবতাম তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছো। বাল্য কালের আবেগ কে কাটিয়ে উঠছো। কিন্তু আমি আজ তোমাকে দেখে বুঝতে পারলাম তুমি এখানেও আমাকে ভুলতে পারো নি।
তিথি সাদের কথা শুনে ঠাস্ করে মাটিতে পড়ল। সাদ তিথিকে বসে পড়তে দেখে, সেও তিথির পাশে বসে পড়ল। তিথির মায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,

-অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে তিথি। জানি না তুমি আমাকে কি ভাববে। তবুও আমি তোমাকে স্বার্থপরের মতো জিজ্ঞেসা করছি, তুমি কি আমার রোগের ঔষধ হবে। আমি যে ঔষধ ছাড়া দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছি। শুধু মাএ রুশার জন্য কনোমতে বেঁচে আছি। আমার জীবনে যদি রুশা না থাকত তাহলে কবেই হয়তো মারা যেতাম। (সাদ)

সাদের কথায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তিথি। চারপাশে শীতল হাওয়া বইছে। যার ফলে তিথি কেঁপে কেঁপে ওঠছে। সে গভীর চিন্তায় মত্ত। এত বছর পর নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটি শুনে বাকরুদ্ধ সে। কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে। সে নিজেও যে গভীর ভাবে সাদ নামক রোগী আক্রান্ত। যেই রোগটা তিথিকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।
এদিকে,

ত্বকি ভাইয়া আমার হাত নিজের হাতে মধ্যে নিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলো,
-সরি, তখন তোর উপর অনেক রাগ হয়েছিল। তাই নিজের রাগ কন্ট্রোল রাখতে পারি নি। (ত্বকি)
আমি মনোযোগ দৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া স্লাইড করাতে অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হচ্ছে। তার ছোঁয়া পেয়ে প্রচন্ড অস্থির লাগছে আমার।

ত্বকি গভীর দৃষ্টিতে মেঘার হাত পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। হঠাৎ ঘোর মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-তুই কি বুঝিস না, তোকে ব্যথা দিলে তোর চেয়ে দ্বিগুণ ব্যথা আমি অনুভব করি। (ত্বকি)
ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। একটু পরেই ভাইয়া আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-বই বের কর। রসায়ন বইটা বের করে রিভাইছ কর।(ত্বকি)
কথাটা বলেই ভাইয়া আমার থেকে দূরে সরে বসল। আমি বই বের করে ভাবতে লাগলাম, কি হলো ভাইয়া। রেগে গেলেন কেন।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৩

ত্বকির সারা শরীর ঘেমে গিয়েছে। তার কাছে কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। নিজের প্রতি বিরক্ত সে। সে ভাবছে, মেঘার প্রতি নরম হলে তাকে চলবে না। নাহলে মেয়েটা নিশ্চই পড়ালেখা ছেড়ে দিবে। ফলস্বরূপ মেয়েটা খারাপ রেজাল্ট করবে।
আমি পড়া শেষ করে ভাইয়া বললাম,
-শেষ। (মেঘা)

মেঘার কথায় ত্বকির ঘোর কাটল। সে পকেট থেকে ফোন বের করে মেঘার হাতে দিয়ে বলল,
-ফোনের এই রসায়ন প্রশ্নটা করে দে। বই দেখে লিখবি না কিন্তু। আমার একটু কাজ আছে তাই বাইরে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি সব করা শেষ। (ত্বকি)
বলেই ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি মোবাইলের স্কিনের প্রশ্নটা করতে শুরু করলাম। প্রশ্নটা খুব একটা কঠিন ছিল না। অনেক সহজ ছিল তাই করতে বেশি সময় লাগল না।

প্রশ্ন শেষ করে দশ মিনিট ধরে বসে আছি। এখনো ভাইয়া বাইরে থেকে আসে নি। চুপচাপ বসে ছিলাম। মনে মধ্যে ইচ্ছে হলো ভাইয়া ফোনের গ্যালারিতে ঢুকতে। তাই সাথে সাথে দেরি না গ্যালারিতে ঢুকে পড়েলাম। গ্যালারি লক থাকায় উল্টো পাল্টা পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু গ্যালারি খুলল না। ভাইয়া নিজের নামের পাসওয়ার্ড দেয় নি। খুলতে না পেরে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ উদাসীন মনে নিজের নাম পাসওয়ার্ডে বসাতে, গ্যালারি খুলে গেল। সাথে সাথে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৫