তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২৩

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২৩
জাবিন মাছুর

হঠাৎ পেটের উপর কারো ছোঁয়া পেয়ে আমি থমকে দাঁড়ায়ে পড়লাম। মনে হচ্ছে কেউ গুটি গুটি হাত দিয়ে আমার পেট চেপে ধরে আছে।
কিছুক্ষণ নিরব রইল চারপাশ। আমি মুচকি মুচকি হাসছি। পিছনে থেকে হাতের বাঁধনটা আরো শক্ত হয়ে এলো। আমি না দেখলেও বুঝতে পারলাম, যে এটা কার কাজ। সামনের দিকে ফিরে, হাতের বাঁধনটা ছাড়িয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়লাম। মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বললাম,

– কেমন আছো ভাইয়া? (মেঘা)
আমার কথার উত্তরে আমার সামনে থাকা সানাফ গাল ফুলিয়ে উওর দিল,
– ভালো নেই। (সানাফ)
-কেন ?
-কারন তুমি আমাকে রেখে বিয়ে করে ফেলেছ। তুমি পচা। (সানাফ)
-কে বলেছে যে আমি তোমাকে রেখে বিয়ে করে ফেলেছি?(মেঘা)
-আম্মু বলেছে। (সানাফ)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সানাফের অভিমান সুরে টেনে টেনে বলা কথাগুলো শুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। নিজের হাসি কন্ট্রোল রেখে সানাফের দিকে তাকালাম। সানাফ কান্না মাখা মুখ করে বলল,
-তুমি শুধু আমার বউ। আমার সাথে থাকবে। আমাকে আদর করবে। চলো না আমার সাথে। (সানাফ)
বলেই সানাফ কান্না শুরু করে দিল। আমি কি করে ওর কান্না থামাবে বুঝে উঠতে পারলাম না। সানাফের দিকে ঝুঁকে ওর মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললাম,

-কান্না করে না ভাইয়া। (মেঘা)
সানাফ আমার কথা শুনল না বরং জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। ওর কান্না দেখে একটু ও বিরক্ত লাগছে না। হাসি পাচ্ছে। সানাফ হলো আমার ছোট ফুপুর একমাত্র ছেলে। বয়স বেশি না মাত্র চার বছর। যখন থেকেই ছেলেটা কথা বলা শিখছে , তখন থেকেই আমাকে বউ বউ করে ডাকে। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় ও সর্বপ্রথম বউ ডাকাটাই ওর মুখে থেকে বেরিয়েছে। এই ছেলে যে বড় হয়ে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে।
সানাফ কাঁদছে আর বলছে,

-মেঘা আপু ,তুমি শুধু আমার বউ। (সানাফ)
সানাফের কান্না আমি থামাতে পারলাম না। হয়তো কোলে নিলে চুপ হয়ে যেত। কিন্তু আমি কোলে নিতে পারব না। কারন শাড়ির যে অবস্থা ,যে কোন সময় খুলে যেতে পারে। আর যদি ওকে কোলে নেই তাহলে বোধহয় এখুনি আমি শেষ।
অবশেষে উপায় না পেয়ে আস্তে করে ফুপিকে ডাক দিলাম। আমার ভাগ্য ভালো ছিল তাই ফুপিও চলে এলো। ফুপিকে দেখে সানাফ চুপ হয়ে গেল। ফুপি আমাকে দেখে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-কেমন আছিস মেঘু। (মেঘার ফুপি)
-আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো ?(মেঘা)
-আমি ও ভালো আছি। তুই তো দেখি অনেক অনেক সুন্দর হয়ে গিয়েছিস। একদম বড়োদের মতো লাগছে। (মেঘার ফুপি)
ফুপির কথা শুনে আমি হেসে দিলাম। ফুপি আমার নাক টেনে আফসোস শুনে বলল,
-ইশ, আমার যদি তোর থেকে বড়ো কোন ছেলে থাকত। তাহলে তোকে আমি আমার ছেলের বউ করে রাখতাম। (মেঘর ফুপি)
ফুপির কথা শুনে লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইলাম।
অন্যদিকে,

ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরিয়েছে তিথি। মিনিট পাঁচেক আগে সাদা ও ক্লাস থেকে বের হয়ে গিয়েছে। তিথি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এলোমেলো পায়ে হেঁটে চলছে। সে কোথায় যাচ্ছে নিজেই জানে। প্রচুর রাগ হচ্ছে নিলা নামের মেয়েটির উপর।
হঠাৎ করে তিথির পা থেমে গেল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। তার সামনে একদল মেয়ে দাড়িয়ে আছি। মেয়েগুলোর দিকে না তাকিয়ে সে আবার হাঁটতে শুরু করল। এমন অবস্থায় একটা মেয়ে এসে তিথির হাত টেনে ধরল।

হাতে টান অনুভব করতেই তিথি চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ল। পিছনে দিকে ঘুরে নত দৃষ্টি সরিয়ে মেয়ে গুলোর দিকে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখল। একজন ব্যতীত কাউকেই সে চিনতে পারল না। বিরক্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল সেই চেনা মেয়েটি অর্থাৎ নিলার দিকে।
নিলা তিথির দিকে পৈশাচিক হাসি দিয়ে তাকাল। সবগুলো মেয়েই তিথির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ, মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে সাদা জামা পড়া একটা মেয়ে জোর গলায় তিথি কে বলে উঠলো,

-এই মেয়ে তোর নাম কি রে ? (মেয়েটি)
তিথি মেয়ে টির কথায় ভদ্র ভাবে উওর দিল,
-জী আমার নাম তিথি। আপনারা আমাকে ডেকেছেন কেন? আমাকে কি আপনাদের প্রয়োজন?(তিথি)
তিথির কথা শুনে মেয়েটি জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
-হ্যা দরকার। তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।(নীলা)
তিথি বিরক্ত নিয়ে বলল।

-জি বলুন কি কাজ? যদি সম্ভব হয় তাহলে করার চেষ্টা করব।(তিথি)
তিথির কথা শুনে সাদা জামা মেয়েটি রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
-চেষ্টা করবি মানে? কান খুলে শুনে রাখ আমারা তোর সিনিয়র তাই আমারা যা বলব তোকে তাই করতেই হবে। বুঝেছিস?
সিনিয়র নামক শব্দটা শুনে তিথির বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো। তার আর বুঝতে বাকি রইল না যে ,সে আজকে রে্গ এর স্বীকার হতে চলেছে। তিথি ভয় পেয়ে চুপ করে রইলো। এই প্রথম সে রে্গের স্বীকার তাই ভয়ে কান্না চলে এলো তার।

সাদা জামা পড়া মেয়ে টি তিথির দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,
-এই মেয়ে এই প্রেম পত্র টা ধর। (তিথি)
তিথি কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি টি নিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে মেয়ে টির দিকে তাকলো।
মেয়েটি তিথি কে কাঁপতে দেখে হাসতে লাগল। কিছুক্ষণ হেসে কঠিন গলায় ধমকের সুরে বলল,
– জানিস এই চিঠি টা তোকে কাকে দিতে হবে?(মেয়ে টি)
-নিশ্চুপ (তিথি)

-ওহ সরি,তোর তো জানারই কথা না। আমিই বলছি।(মেয়েটি)
তিথি মেয়ে টির দিকে ভীত দৃষ্টিতে তাকাল। মেয়েটি তিথিকে বিনা দ্বিধায় বলে উঠলো,
-আমাদের ভার্সিটির সাইকোলজির টিচার সাদ স্যার কে। ক্লিয়ার? (মেয়েটি)
তিথি মেয়ে টির কথা শুনে অবাক হয়ে উঠলো। শেষমেশ কিনা সাদকে প্রেম পত্র দিতে হবে তার। এক বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও যেই মানুষটার সাথে দরকারের বেশি কথা হয় না। এখন কিনা সেই মানুষটি কে প্রেম পত্র দিতে হবে। ভেবেই তিথির সারা শরীর শিউরে উঠলো।

-এই মেয়ে কি এত ভাবছিল? এত ভেবে কোন লাভ নেই। যখন সাদ স্যার আসবে তখন আমাদের সামনে তুই স্যার কে প্রপোস করবি। আর যদি না করিস তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে বুঝতে পেরেছিস? (মেয়েটি)
এদিকে,
একা একা রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছিল না ত্বকির তাই সে কিছুটা সময় মেঘার চাচাদের কাজে সাহায্য করেছে। ত্বকির হেল্প ফুল ব্যবহার দেখে সবাই মুগ্ধ। তার ব্যবহারে সবাই তো আবাক। ছেলেটা যে এত মিশুক হতে পারে তা সবার ধারনার বাইরে। সাবাই খেতে বলেছিল কিন্তু ত্বিক খাইনি।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২২

খিদে পেটে মেঘাকে খুঁজে চলছে ত্বিক। কিন্তু কোথাও মেঘাকে দেখতে না পেয়ে রেগে গেল সে। মেয়েটার সত্যি সাহস বেড়ে গিয়েছে। ত্বকি কানে ফোন নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলছে।
মিমমার খালাতো বোন সারা নামের মেয়েটা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ স্তব হয়ে থেমে গেল। নীল পাঞ্জাবি পরিহিত ত্বকিকে দেখে থমকে দাঁড়ায়ি পড়ল সে। আজকে সারা শেষ হয়ে গিয়েছে। ত্বকিকে দেখে মনে মনে বলে উঠলো,

-আমার এই কিউট লোখটাকে চাই। প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে গম্ভীর কিউটি বয়। আই মাস্ট নিড ইউ। (সারা)

শাড়ি পড়ে ভাইয়াকে খুঁজে চলেছে। রুমে গিয়েও তাকে পায় নি। তাকে না দেখতে পেয়ে কেমন যেন লাগছে। ভালো লাগছে না। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে। হাঁটার সময় হঠাৎ মেঘার পায়ের সাথে শাড়ি বেঁধে গেল। মেঘা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল। শাড়ির পিন খুলে,,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২৪