তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২৫

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২৫
জাবিন মাছুর

-অনেক সাহস হয়ে গেছে না তোর। বেশি পেকে গেছিস তুই। আজকে তোর সব সাহস একেবারে ঘুচিয়ে দেব। আন্ডারস্ট্যান্ড? (ত্বকি)
ভাইয়া কথা শুনে আমি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয় লাগছে প্রচুর। তার শান্ত কন্ঠ আমার ভয় আরো বাড়িয়ে দিল। বুঝতে বাকি রইল না যে, ঝড় আসার পূর্বে পরিবেশ শান্ত থাকে। এখন নিশ্চয়ই আমার উপর ঝড় আসতে চলেছে।

মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে ত্বকির রাগ দ্বিগুণ হয়ে গেল। দাঁত দাঁত চেপে মেঘার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,
-এই মেয়ে, শাড়ি খুল। কুইক,,(ত্বকি)
ত্বকি ভাইয়ার কথা শুনে আমর বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। প্রচুর কান্না পাচ্ছে, কেন সে আমার সাথে এভাবে কথা বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-স্টুপিড গ্যাল, এখুনি শাড়ি খুলে ফেলবি। (ত্বকি)
ত্বকির কথা সুনে মেঘার চোখ জলে ছলছল করে উঠেছে। মনে হচ্ছে যেকোন সময় চোখের কোণে লুকিয়ে থাকা জলসাগর থেকে টুপ করে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
-শাড়ি পড়েছিস কেন? বিয়াদপ। (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলাম। তার দিকে তাকিয়ে দেখার মতো সাহস আমার মধ্যে হচ্ছে না। ভয়ে হাঁত পা কাঁপছে।

-এই মেয়ে চুপ করে থাকিস কেন? ওহ, থাকিবই তো। তুই তো আবার শাড়ি পড়ে নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী প্রমাণ করতে চাস। (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
কথাগুলো বলে ত্বকি নিজের মাথার চুল মুঠো করে টেনে রাগ কমাতে চেষ্টা করছে। হাজারো চেষ্টা করেও রাগ কমাতে পারছে না। যত বার মেঘার দিকে তাকায় ঠিক তত বার তার রাগ দ্বিগুন হয়ে যায়। মেঘা কেন এত পাতলা শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়াবে? নিজেকে কন্ট্রোল করতে বার বার ব্যার্থ হচ্ছে সে। ত্বকির প্রতি টি নিশ্বাস ই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, সে কতটা রেগে আছে।

ত্বকি ভাইয়ার কথাগুলো শুনে আমার খুব খারাপ লাগতে শুরু করল। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। চোখ দুটো বন্ধ করে চেপে ধরেও পানি আটকে পারলাম না।
রাগান্বিত অবস্থা হঠাৎ মেঘার দিকে তাকাতে ত্বকির রাগ জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল। মেঘার চোখে পানি দেখে সে আপনাআপনি নরম হয়ে যায়। বাইরে থেকে নিজেকে শক্ত রেখে মেঘার একদম কাছে চলে আসল। কন্ঠের মধ্যে কঠোরতা রেখে মেঘার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে,

-পাঁচ মিনিট মধ্যে শাড়ি চেন্জ করে ভালো একটা ড্রেস পরবি। এক মিনিট ও বেশি সময় ব্যয় হলে তোর খবর আছে। আমি যাচ্ছি তোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে। এসে যেন এই শাড়ি পরিহিত অবস্থায় তোকে না দেখি। আন্ডারস্টান্ড? (ত্বকি)
কথাগুলো বলেই ত্বকি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

প্রায় মিনিট দুই এক ধরে চোখ বন্ধ করে আছি। তার সামনে চোখ খুলার সাহস হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর তার উপস্থিতি টের না পেয়ে ভয়ের সাথে পিটপিটিয়ে চোখ খুললাম। হ্যাঁ আমার ধারণাটা সঠিক। ঘরের কোথাও ভাইয়ার উপস্থিত নেই। তারমানে সে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। ভেবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম। হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িলাম। ব্যাগ থেকে একটা সাদা রংয়ের গোল ফ্রোগ বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

শাড়িটা চেন্জ করে রুমে এসে বিছানার উপর চুপটি করে বসলাম। ভাইয়া এখনো রুমে আসেন নি। বুঝি লোকটা এমন কেন? সবসময়ই সে গিরগিটির মতো রং বদলে ফেলে। যখনি তাকে রাগহীন ভালো মানুষ ভাবি ঠিক তার কিছু মূহুর্তে পরেই সে উল্টো রুপ ধারন করে। কেন যে এমন আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না। মানুষটা শুধু আমার সাথেই ওমন ব্যবহার করে। গম্ভীর মুখে কথা বলে।

বাজে ব্যবহার করে। বাইরে সবার সাথে কত সুন্দর হেঁসে হেঁসে কথা বলে আর আমার সামনে এলেই এমন একটা ভাব ধরে যে সে কোনদিনও হেঁসে পর্যন্ত দেখে নি। দূর এমন কেন সে? আমার সামনে হাঁসলে কি হবে। আমি কি তার হাঁসি চুরি করে নিয়ে যাব। পচা লোক একটা আমাকে শুধু শুধু কষ্ট দেয়।
মেঘা বসে বসে ত্বকির কথা ভেবে চলছে। ঠিক তখনই ত্বকি কোথায় থেকে যেন প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। আসেপাসে তাকিয়ে টেবিল খুঁজেতে লাগল। কোথাও টেবিল দেখতে না পেয়ে বিছানার উপর প্লেটটা রাখল। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

-দুপুরে কিছু খেয়েছিস? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
মেঘাকে চুপ করে থাকতে দেখে ত্বকির চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে চেপে বলল,
-জানি তো কিছু খাস নি? তাই তো? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
মেঘাকে এখনো নিশ্চুপ থাকতে দেখে ত্বকি বিরক্ত হয়ে উঠলো। পরাপর দুটো নিশ্বাস ফেলে, বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,

-দেখ মেঘা, তোর এই সময়ে অসময়ের নিরবতা আমাকে বিরক্ত করে তোলে। প্রচুর রাগ হয় তোর উপর। (ত্বকি)
ভাইয়ার যা বললেন তা শুনে আমি নত দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকালাম। সে বিরক্ত মাখা কন্ঠে আবারও বলল,
-খেয়েছিস কিছু? এখন অত্যন্ত চুপ করে থাকিস না। (ত্বকি)
আমি এখন আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। কাঁপা কাঁপা গলায় ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,
-না। এখনো কিছু খাই নি। (মেঘা)
মেঘার উওর পেয়ে ত্বকি রাগলা না। বরং শান্ত গলায় বলল,
-তুই আমাকে দেখে এত ভয় পাস কেন? আমি কি তোকে মারি? আমার সাথে কি কখনো ভালো ভাবে কথা বলতে পারিস না? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)
-হয়েছে তোকে আর কোন কথা বলতে হবে না। এখন তোর শাস্তি শুরু হবে। সো রেডি হয়ে নে। (ত্বকি)
শাস্তির কথা শুনেই আমার গলা শুকিয়ে এলো। ভয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকালাম।
মেঘার লুকোচুরি তাকানো দেখে ত্বকির খুব হাসি পেল। বহুত কষ্ট করে হাঁসি চেপে রেখে গম্ভীর গলায় বলল,
-এই যে প্লেট দেখছিস, এই প্লেটের সম্পন্ন খাবার তোকে একা খেতে হবে। একটু বাদ রাখলে চলবে না। (ত্বকি)

ত্বকির কথা শুনে বোধহয় মেঘার মুখে বুলি ফুটে উঠলো। আতঙ্ক ভর্তি কন্ঠে ত্বকিকে বলল,
-না, আমি এত খাবার খাব না। প্লিজ আপনি আমাকে এমন শাস্তি দেবেন না। (মেঘা)
-চুপ। কোন কথা না। খাওয়া শুরু কর। (ত্বকি)
একপল খাবারের দিকে তাকিয়ে আমার বমি চলে এলো। ইশ, কি খাবার। একে তো পুরো প্লেট ভর্তি দ্বিতীয়ত আমার অপছন্দের খারাব। এগুলো আমি খেতে পারব না তাই ভাইয়া দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
-আপনি তো জানেন আমি এসব পোলাও, রোস্ট খেতে পারি না। আমার খেতে কষ্ট হয় তো। আমি,, (ত্বকি)
মেঘাকে কথা বলা শেষ করতে না দিয়েই ত্বকি ধমক বলল,

-কোন কথা নয়। চুপচাপ খেয়ে ফেল। নাহলে অন্য উপায় বের করতে বাধ্য হব। (ত্বকি)
ত্বকির কথাই ভয় পেয়ে গেল মেঘা। তাই কোন কথা না বলে ভদ্র মেয়ের মতো খাওয়া শুরু করল।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২৪

খুব কষ্টে অর্ধেক খাবার পানি দিয়ে জোর করে গিলে খেলাম। এখন আর পারছি না। প্রচুর বমি আসছে। না খেতে ওয়াক করে উঠতে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-হয়েছে আর খেতে হবে না। পুরোটা খেতে পারিস নি তাই তোর শাস্তি এখনো বাকি আছে। আপাতত আর বর্তমানে আর শাস্তি দিতে চাইছি না। সো রিলেস্ক। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে এখন অনেকটা শান্তি লাগছে। কিন্তু মনে মনে খুব ভয় হচ্ছে। খাওয়া শেষ তাই ভয়মাখা কন্ঠে ভাইয়াকে বললাম,

-ভাইয়া, একটু মিমিমা আপুর কাছে যাই। (মেঘা)
মেঘার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে ত্বকি মোবাইল থেকে চোখ তুলে রাগী দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকাল। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-না কোথাও যাওয়া হবে না তোর। এখন চুপচাপ আমার সামনে এই রুমে বসে থাকবি। (ত্বকি)
ভাইয়ার রাগ মাখা কথা শুনে আমি অস্পষ্ট শুরে বললাম,

-কেন?(মেঘা)
মেঘার কথার জবাবে ত্বকি উঠে দরজা আটকে দিল। মেঘার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,
-কারন তুই শাড়ি পড়ে ছেলেদের সামনে গিয়েছিস। তাই এখন তোকে শাস্তি পেতে হবে,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ২৬