তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪
শান্তনা আক্তার

স্রুতি নিজের রুমে এসে শাড়ি বদলে ফেললো। তারপর বসে রইলো এককোণে মনমরা হয়ে। জান্নাত ধীর পায়ে স্রুতির রুমে এসে বলল,
‘শাড়ি বদলে ফেললে কেন? ভাইয়া দেখেনি তোমায়?’
স্রুতি মাথা উঁচিয়ে তাকালো। তারপর পুনরায় চোখ নামিয়ে বলল, ‘তোর ভাই কখনো দেখেছে আমায়? যখন তোরা ফরেন ছিলি, তখন ভিডিও কল করলেও দু চার কথা বলে লাইন থেকে চলে যেত আহসান। ভাবতাম বিজি হয়তো। কিন্তু এখন বুঝলাম ইচ্ছে করেই ওমন করতো।’

‘ভাইয়াটা আসলেই কেমন যেন। মনে হয় ভিন্ন প্রকৃতির। মেয়েদের কাছে ঘেঁষতে দেয়না। তুমি মন খারাপ করো না।’
‘মন খারাপ কি ইচ্ছে করে হয়?’
‘তা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা একটা কথা বলবে আমায়?’
‘কি?’
‘ভাইয়াকে লাভ করো?’
স্রুতি হচকচিয়ে উঠে বলল,’কি?’
‘ভালবাসো আমার ভাইয়াকে?’
‘না আসলে’,,,, স্রুতি মৃদু হেসে ওঠে।
‘হুম বুঝে গিয়েছি।’
‘কি বুঝলি?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ওই চোখ দুটো যেন কিছু বলে যায়। হিহিহি।’
‘মানে? মার খাবি কিন্তু জান্নাত। বল কি বলবি।’
‘ভাবিজি হবে কি আমার?’
কথাটা শুনে শ্রুতির চোখ মুখ লাল হয়ে আসলো।তা দেখে জান্নাত আবার বলল, ‘লজ্জা পাচ্ছো! ওয়াও তার মানে রাজি?’
স্রুতি মাথা ঝাকিয়ে বলল, ‘হুম অনেক আগে থেকেই।’
‘তো বলে ফেল ভাইয়াকে। বিয়ের বয়স তো হয়েছে দুজনেরই।’
‘কিভাবে বলবো? বলার উপায় আছে কি? আহসান তো তাকায় না আমার দিকে।’
‘এমন কিউট একটা মেয়ের দিকে তাকায় না? ভাইয়াটা আসলেই বোকা। আমি ওর জায়গায় থাকলে চোখ বুজে বিয়ে করে নিতাম তোমাকে। নেহাত মেয়ে বলে।’

‘এখন বল আমি কি করবো? কিছু টিপস দে বড় বোনটাকে।’
‘বোন নয় ভাবি ওকে?’
‘আচ্ছা তো ভাবিকে টিপস দে।’
‘তুমি একটা কাজ করো।’
স্রুতি উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘কি রে?’
‘বড়দের জানাও। বিশেষ করে দাদিয়াকে।’

‘কি বলছিস? নানু খুব স্ট্রিক্ট। আমি তাকে এই নিয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমার সেই দুঃসাহস নেই।’
‘ভীতুর ডিম। ভালবাসতে পারো কিন্তু এতটুকু সাহস দেখাতে পারো না।’
‘ভয় লাগে তো। নানুর এটিটিউড জানিস না তুই?’
‘জানি তবে আমাদের বাড়ির মেইন মাথা দাদিয়া। তার কথাই শেষ কথা। তাই তাকেই পটাতে হবে।’
‘বলছিস?’
‘হুম গেট রেডি।’
‘আমি পারবো না বোন।’
‘পারতে হবে। নইলে হবে না।’
‘বাট হাও?’

‘যেভাবে বউ শাশুড়ীর সেবা করে মন ভোলাতে চায়। ঠিক সেভাবে।’
‘তুই যে বলিস না? উনি আমার নানু। শাশুড়ী! ছি ছি।’
‘বোকা মেয়ে আমি কি তাই বলেছি নাকি?’
‘তো ভালো ভাবে বল।’
‘শোনো আপু, তুমি দাদিয়াকে পান বানিয়ে দিবে সামনে। রাতে পা টিপে দেবে। গল্প করবে বেশি বেশি।’
‘এসব করলে কাজ হয়ে যাবে?’
‘হুম হয়ে যাবে।’

‘কিন্ত যার সাথে জীবন কাটাতে চাই সেকি আমাকে মেনে নেবে? আহসানের দিক দিয়েও তো রেসপন্স পেতে হবে।’
‘দাদিয়া মেনে নিলে ভাইয়া এক পায়ে খাড়িয়ে মানতে বাধ্য।’
‘হুম তাও ঠিক। তাই হবে।’
‘তো আজই শুরু করে দাও মিশন নানু পটাও।’
‘মিশন বলছিস? অ্যাডভেঞ্চার বল এটাকে। আমার তো এখনি ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।’
‘ভয় পেওনা আপু। আমি তোমার পেছনে আছি।’
‘পেছনে!’

‘হুম পেছনে। তুমি সামলাতে না পারলে আমি আছি। তাই বললাম পেছনে। ধরো তুমি একটা ক্যাচ মিস করলে।’
‘হুম ধরলাম।’
‘ধরবে কিভাবে? তুমি তো ক্যাচ মিস করবে।’
‘তোর কথাটা ধরলাম। ক্যাচ না।’
‘ওহ, হুম তো ক্যাচ মিস করলে। তো এখন কি হবে?’
‘সিক্স হওয়ার চান্স অথবা ফোর। যা ইচ্ছা হতে পারে। তবে আমার উপর ক্ষেপে যাবে টিম এটা সিওর।’
‘উফ কোথায় চলে গেলে? আমি বলতে চাইলাম তুমি ক্যাচ মিস করলে তাতে কি আরেকটা চান্স তো আছে। মানে আমি তো তোমার পেছনে আছি। তাই আউট হওয়ার আরেকটা চান্সও আছে।’
‘ওও ওকে। কিন্তু তুইও যদি না পারিস?’
‘বি কনফিডেন্ট। সব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।’
‘এখন কি করবো?’
‘রাতের অপেক্ষা৷ এখন বসে থাকো।’

আহসান ফোনের মধ্যে করা কয়েক মিনিটের ভিডিও দেখছে। চোখ যেন সরছে ফোনের স্ক্রিন থেকে। খানিক বাদে আহসান ঘোর কাটিয়ে আচমকা বলে ওঠে, ‘আমি যে রিমির বৃষ্টি ভেজা দৃশ্যটা ওনাকে না জানিয়ে ভিডিও করেছি, এটা কি ঠিক হয়েছে? নিঃসন্দেহে ভুল করেছি। এখন কি করি? সরি বলবো? না বললে আমার আবার শান্তি হবে না। বলেই ফেলি।’ আহসান কল দিল। দু একবার রিং বাজার সাথে সাথেই রিসিভ হলো। আহসান ভেবে রেখেছে প্রথমে কিছু বলবে না। তবে চুপচাপ শুনবে। লাইনের ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো।

‘হ্যালো পাওনাদার ভাইয়া।’ আহসান কন্ঠ শুনেই আচ করতে পারলো এটা তিয়াসা।
‘কেমন আছো তিয়াসা?’
‘ভালো ছিলাম একটু আধটু কিন্তু আপনার ফোন আসায় অনেক ভালো হয়ে গেলাম।’
‘কারণ টা কি?’
‘ভালো মানুষের সাথে কথা বললে বা তাদের যেকোনো কিছুতেই ভালো লাগা থাকে।’
‘তুমি আমাকে ভালো বললে?’
‘সন্দেহ আছে?’
‘না জিজ্ঞেস করলাম তাও।’
‘বুঝেছেন যখন আর কি? আচ্ছা বলুন কি জন্য ফোন দিলেন? আপুকে লাগবে?
‘হুম লাগতো একটু।’

‘একটু লাগতো? পুরোটা না?’
‘হা হা, হুম পুরোটাই লাগতো। কোথায় উনি?’
‘আম্মুর কাছে রুটি বানানো শিখছে। পারে না তাই।’
‘তাহলে বিজি। ওকে আমি পরে ফোন দিব তাহলে।’
‘এই না আপু চলে এসেছে।’
রিমির ফোন তিয়াসার হাতে দেখামাত্রই রিমি রেগে ফায়ার।
‘ওই তোকে মা ডাকছে। আর আমার ফোন তোর হাতে কেন? কার সাথে কথা বলছিস?’
‘পাওনাদার ওরফে আহসান ভাইয়া।’ বলে রিমির হাতে ফোন গুজে দিয়ে চলে যায় তিয়াসা। রিমি আহসানের নাম্বার দেখে মৃদু হেসে ফোন কানে ধরে বলল,

‘হ্যালো!’
আহসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘সরি।’
‘সরি বলছেন কেন?’
‘আপনি রাগ করবেন নাতো?’
‘না করবো না। বলুন আপনি।’
‘আমি আজ আপনার ভিডিও বানিয়েছিলাম। যখন বৃষ্টিতে ভিজছিলেন তখন।’
‘কিহ! কেন? কি দরকার ছিল?’ বাজখাঁই কন্ঠে।
‘সরি আমার ভুল হয়েছে। আমি জানি না কেন করেছি। বাট আপনাকে দেখতে খুব ভালো লাগছিল তখন। তাই সিনটা বন্দী না করে পারলাম না।’
‘খুব খারাপ করেছেন।’
‘আমি ডিলিট করে দেব।’

‘ওকে তবে আমাকে পাঠিয়ে তারপর। আমার মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিয়েন। আমি আমার আইডি নেম টেক্সট করছি কিছুক্ষণ পর।’
আহসান প্রাণখোলা এক হাসি দিয়ে বলল, ‘কখন?
‘ফোন কেটে তারপর।’
‘ওকে।’
‘শুনুন!’
‘জ্বি বলুন।’
‘আপনি আমার কাছে যে টাকা পান তা কাল দিতে না পারলেও পরশু দিন দিয়ে দেব।’
‘লাগবে না বলেছিলাম তো?’
‘ইশশ! আমি দিয়ে দেব। আর একটাও কথা নয়।’
‘ওকে। ভালোই হবে আপনার সাথে আবার দেখা হবে তাহলে।’
‘যদি বিকাশে দেই?’
‘আমি যেভাবে দিয়েছি সেভাবেই দিতে হবে।’
রিমি ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে বলল, ‘আচ্ছা তাই হবে।’
‘আরেকটা জিনিস চাইলে দেবেন?’

‘কি?’
‘শাড়ি পড়বেন?’
কথাটা শুনে রিমির চোখ বড় হয়ে গেল। এমন একটা কথার সম্মুখীন হয়ে রিমি লজ্জায় পড়ে গেল। অপ্রস্তুত হলে যা হয়।
আহসান আবারও বলল,’বলুন পড়বেন তো?’
‘জ্বি না, কি কালার?’ রিমি না চাইতেই বলে ফেলল। তারপর নিজের মাথাতেই চাটা মারলো।
‘স্কাই ব্লু। আমার পছন্দের।’
‘আচ্ছা আমি ফোন রাখলাম।’ রিমি ফোন কেটে দিল। ওদিকে আহসান মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিচ্ছে রিমিকে নিয়ে। যার প্রকাশ তার হাসিতে ফুটে উঠছে।
পরদিন বিকেলে রঞ্জিতের রুমে অপা আর হাফসা মিলে গল্প করছিল। গল্পের এক পর্যায়ে হাফসা বলে ওঠে,
‘অনেকদিন হয়েছে এসেছি। স্রুতির বাবা বারবার ফোন দিচ্ছে। দিনে অন্তত ১০ বার হবে। ভাবছি আগামীকাল বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাব।’

‘সেকি কেন? আর কটা দিন থাকো। তোমার ভাই শুনলে রাগ করবে।’
‘না ভাবি অনেক হয়েছে। আমার তো ভালো লাগছে এখানে। তবে স্রুতির বাবা যে বাড়িতে একা। রোজ রেস্টুরেন্টের খাবার খাচ্ছে। জামা-কাপড় খুঁজতে তার ঘন্টা খানেক সময় লাগে। আমি আজ যাব কাল যাব করে যাওয়াই হচ্ছে না। স্রুতি আর জিসানও যেতে চাচ্ছে না। আমি বুঝতে পারছি না এখন আমার কি করণীয়।’
‘আমার তো তোমাকে যেতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবে মাকে জিজ্ঞেস করতে পারো। মা যদি বলে তাহলে চলে যেও।’
‘মা ই আমাকে যেতে বলেছে। মা বলল তার জামাই যেন আর অশান্তিতে না ভুগে। তার সমস্যা হচ্ছে। মহিলা মানুষের কাজ কি পুরুষরা পারে নাকি? তারা কাজ সামলাবে নাকি নিজেকে? বাহিরের খাবার আর কতদিন খাবে? এক প্রকার ধমকে বলেছে কথাগুলো।’

‘ও তাহলে তো আর কিছু বলার নেই। আগামীকালই তাহলে যেতে হচ্ছে তোমাদের। মা নইলে আরও রাগ দেখাবে।’
‘ঠিক ভাবি। মা বলেছে যেহেতু যেতেই হচ্ছে।’
‘হুম তবে জিসান স্রুতি থাক আরও কয়েকদিন।’
‘তাই করতে হবে। ওদের রেখেই যেতে হবে। ওরা তো যেতে চাচ্ছে না এখান থেকে।’
‘ভালো বলেছো। আমার তো ভেবেই খারাপ লাগছে তুমি ছিলে ভালোই গল্প গল্পে দিন যাচ্ছিলো। চলে গেলে আবারও একা হয়ে যাব আমি।’

‘সেম আমিও ভাবি।’
‘তবে বাচ্চারা খুব আনন্দে আছে। সেই ছোট বেলার মতো ঝগড়াঝাটি, খুঁনসুটি,হাসি ঠাট্টায় মেতে আছে। বিশেষ করে জান্নাত আর জিসান। আমার আহসান তো একটু চুপচাপ তাই সেভাবে কথা বলে না। আসলে আহসান ছোট থেকেই ওমন।’
‘ভাবি আহসানকে আমায় চেনাতে হবে না। আমি ওকে ভালো করেই চিনি। শুধু আহসানের কথা বললে হবে? আমার মেয়েটাও তো একই ধাঁচের। চুপচাপ থাকে। কথা কম বলে। একদম আহসানের মতোই। দুজন এক জলের মাছ।’
‘বেশ বলেছো। ভালো মানাবে দুজনকে।’
‘তুমি কি বোঝালে ভাবি?’

‘যেটা তুমি বুঝলে। যে যেমন তার কপালে তেমনই থাকা ভালো। মানে অ্যাডজাস্টমেন্ট,আন্ডার্স্ট্যান্ডিং সব কিছুই থাকে তাহলে।’
‘তার মানে তুমি আহসান আর স্রুতির বিয়ের কথা বলছো তাহলে? এমন কিছু কি?’
‘ঠিক ধরেছো। আমি মনে করি আহসানের জন্য আমাদের স্রুতি পারফেক্ট।’
‘পারফেক্ট না ছাই। স্রুতি একটা কাজও পারেনা। হুকুম করতে পারে শুধু। সামান্য ডিম ভাজতে দিলেই নাজেহাল হয়ে যায়। সে কিনা পারফেক্ট! আমার মেয়েকে আমি খুব ভালো করেই চিনি ভাবি। ওর দ্বারা পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।’
‘এভাবে বলছো কেন? সব শিখে যাবে আস্তে আস্তে। তুমি কি তোমার কাহিনী ভুলে গিয়েছো? তুমি ওতো পারতে না কিছু। তোমার শ্বাশুড়ি হাতে ধরে শিখিয়েছিল তোমাকে।’

‘আমার শ্বাশুড়ির কথা আর কি বলবো? উনি যেমন ভালো কুক,তেমন ভালো রান্নার শিক্ষক বটে। আমাকে যেভাবে ভালবেসে শিখিয়েছিল না, আমি না চাইতেও শিখে ফেলেছি। তাও এক মাসেই। আফসোস স্রুতি বোঝার আগেই উনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। বেঁচে থাকলে আজ এই দিন দেখতে হতো না আমাকে। উনি আমার মেয়েটাকেও রান্না শিখিয়ে ছাড়তেন কোমড়ে কাপড় গুজে।’
‘আমি বুঝি ভালো কুক নই?’ অভিমানী গলায় প্রশ্ন করে অপা।
‘খুব ভালো কুক তুমি।’

‘তো আমিও আমার একমাত্র ছেলের বউকে রান্না শেখাতে পারবো।’
‘সত্যি ভাবি? তুমি আমার মেয়েকে রান্না শেখাবে?’
‘হুম, তবে একটা শর্তে।’
‘কি ভাবি?’
‘আগে আমার বাচ্চাদের বিয়ে তো হবে, তারপর রান্না শেখাবো। তার আগে নয়। বলো রাজি কিনা?’
‘হুম কিন্তু ভাই কি বলে না বলে? আমি শ্রুতির বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবো নাহয়। কিন্তু ভাই?’
‘আমিও তোমার ভাইকে মানিয়ে নিতে পারবো। তবে একটা প্রবলেম আছে।’
‘কি?’
‘মা।’

‘ও হ্যাঁ, মা যদি মেনে না নেয় প্রস্তাব টা?’
‘তাইতো। মাকে মানাতে হবে। নইলে কিছুই হবে না।’
‘তো মাকে মানানোর দায়িত্বও তোমার।’
‘আমার কি ওতো সাহস আছে নাকি? আমার খুব ভয় লাগে মাকে। কি বলতে কি বলবো! হয়ে যাবে বিপদ খাড়া।’
‘তো মাকে কে মানাবে?’
‘তোমার ভাই আছে না? আহসানের বাবা আসুক আমি তাকেই বলবো মাকে আহসান আর স্রুতির কথা বলার জন্য।’
‘তাই ভালো হবে। কিন্তু এসব যে আমাদের প্লান তা বলবে না কিন্তু।’
‘মাথা খারাপ নাকি আমার? আমি আমাদের কথা বলতে না করে দেব।’
‘তাই ভালো হবে।’

আহসান গতকাল রিমিকে ভিডিও পাঠানোর পর রিমি জাস্ট সিন করেই লাইন থেকে বেড়িয়ে এসেছিল। তারপর আর অ্যাক্টিভ হয়নি। বারবার ফোন চেক করছে আহসান। কিন্তু প্রতিবারই ওকে হতাশা ভরা মুখ নিয়ে ফেরত আসতে হয়েছে। ঘড়ির কাটা ১২টা ছুঁই ছুঁই। আহসানের চোখে ঘুম আসছে না। মন খারাপ। ভেবেছিল রিমি একটা টেক্সট অন্তত করবে ওকে। এই ভেবে পুরো দিন চলে গেল। এখন আশা ছেড়েই দিয়েছে প্রায়। তাই ফোনটা বুকের উপর রেখে চোখ দুটো অফ করে ফেলল। ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না তার। সহসা মেসেঞ্জারের টুংটাং ধ্বনি গিয়ে ঢুকে আহসানের কানে। আহসান তৎক্ষণাৎ চোখ খুলে ফেলল। ফোন হাতে নিতেই হৃদস্পন্দনের বেগ বেড়ে গেল। রিমির মেসেঞ্জারে নক দিয়েছে। লেখা, এখনো অ্যাক্টিভ আছেন যে? রিমির এতোটুকু ম্যাসেজ আহসানের হৃদয় কাঁপিয়ে দিল। আহসান রিপ্লাই দিল,

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১১+১২

‘ঘুম পাচ্ছিলো না। আজ দিনটা বেশ অস্থিরতার মাঝে কেটেছে। দোষটা অবশ্য আপনার।’
‘আমার! কিভাবে জানতে পারি?’
‘এইতো কোনো এক ভাবে।’
‘সেটাই জানতে চাচ্ছি আমি।’
‘লেট ইট পাস্ট। আপনি অনলাইন থাকেন না কেন?’
‘মোটামোটি থাকি৷ তবে আজ ওয়াইফাই একটু প্রবলেম দিচ্ছিলো বলে আসা হয়নি।’
‘ওহ, তো কাল তাহলে দেখা হচ্ছে?’
‘হুম, তবে আপনি তো একটা ঝামেলায় ফেলে দিলেন আমাকে।’
‘কেন? কি করলাম আবার?’
‘শাড়ি পড়তে বলে।’
‘পারেন না?’

‘পারি,তবে সামলাতে পারি না। এক গাদা সেপ্টিপিন লাগিয়েও পারি না। পরে যাওয়ার ভয় পাচ্ছি।’
‘সমস্যা নেই আমি ধরে ফেলবো পড়ার আগেই।’
আহসানের শেষের ম্যাসেজটা দেখে রিমির গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠল। অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হলো। যা আগে কখনো হয়নি। রিমি পরিস্থিতি সামলাতে বলল, ‘আমি তাহলে অফলাইন গেলাম। গুড নাইট।’
‘ওয়েট। আরেকটু কথা বলা যায়না? বেশি ঘুম পাচ্ছে?’
‘হুম পাচ্ছে। আর আপনার সাথে এমন কি কথা বলবো বলুন তো?’
‘অনেক কিছু বলা যায়।’
‘কি বলা যায়? আপনি আমার কি হন, যে কথা বলতে হবে?’
‘কি হতে হবে রোজ একটু টাইম পাওয়ার জন্য? তাই হবো।’

রিমি যেন একটু একটু করে দুর্বল হয়ে পড়ছে আহসানের অদ্ভুত সব প্রশ্নে। রিমি এবার বলেই ফেলল, ‘আমি চোখ মেলে রাখতে পারছি না। কাল কথা দেখা দুটোই হচ্ছে। বায়। শুভরাত্রি বলে অফলাইন চলে গেল। ওদের এতোটুকুই কথোপকথন হলো মেসেঞ্জারে। আহসান চেয়েছিল আরও কিছুক্ষণ কথা বলবে কিন্তু রিমির জন্য পারলো না। তবে রিমির যে খুব ঘুম পাচ্ছে এই ভেবে কিছু মনে করলো না আহসান। কিন্তু আহসান যে জানে না রিমির ঘুম পাচ্ছে না। যেটুকু পেয়েছিল তাও উবে গেল আহসানের কথায়। রিমি রাতে কতবার যে আহসানের করা ম্যাসেজগুলো পড়েছে তা গুনে হিসাব করা যাবে না। এভাবেই এক সময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল রিমি।

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬