তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬
শান্তনা আক্তার

চোখে গাঢ় করে কাজল সাথে মোটা করে আইলেনার পড়ে নিল রিমি। তারপর পিংক কালার লিপ্সটিক লাগাবে কি তিয়াসা বলে ওঠে,
‘আপু থাম। এসব পিংক রেড এখন চলেনা। তুই নুট কালারটা ইউস করতে পারিস।’
‘ভালো লাগবে নাকি আকাশী কালার শাড়ির সাথে নুট কালার লিপ্সটিক?’

‘বেশ লাগবে। ব্যাকডেটেট কোথাকার। এখন এসব কালারই চলে যত্রতত্র। তুই কথা না বলে এই ব্রাউন কালারটা লাগা তো ঠোঁটে।’ তিয়াসা একটা ব্রাউন লিপ্সটিক এগিয়ে দিয়ে আবার বলল, ‘শোন শাড়ি পড়তে কিন্ত প্রায় ২৭টার মতো সেপ্টিপিন লাগিয়েছিস। তো খেয়াল রাখিস। এক্সিডেন্ট হতে পারে বেখেয়ালি হলেই।’
‘তুই আমাকে ভয় দিচ্ছিস কেন? আমি তাহলে কিছু সেপ্টিপিন খুলে ফেলি। যেগুলো এক্সট্রা সেগুলো খুলে ফেলাই ভালো।’
‘না থাক। পরে আরও বিপদে পড়ে যাবি। এইজন্য মা বলে মাঝে মাঝে একটু শাড়ি পড়ে ড্যাংড্যাং করে রুমের পায়চারি করতে। কিন্তু তুইতো শুনিস না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘তুই শুনিস যে আমি শুনবো?’
‘কার সাথে কার তুলনা দিস আপু! তুই হলি গিয়ে বড়। আর আমি ছোট। তোর মতো কি আমার বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি যে আমায় বলবে?’
‘হয়েছে থাক আর বলতে হবে না। আমি বড় হয়ে যেন মস্ত এক পাপ করে ফেলেছি। তুই কিছু করলেও দোষটা আমার ঘাড়েই আসে। আম্মু আব্বুর বাণী,তুই বড় তুই কিনা ছোট বোনকে বোঝাবি। তা না করে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকিস। ছোট বোন গোল্লায় যাক তোর তাতে কিছু আসে যায়না। সব দোষ বড় মেয়ের। ছোট মেয়ে দুধে ধোঁয়া তুলসীগাছ।’

‘আপু ওটা তুলসীগাছ না তুলসীপাতা।’
‘পাতা তো ছোট হয়ে যায়। যাই হোক এসব নিয়ে পড়ে থেকে আমার সময় নষ্ট করিস না। ভালো করে দেখ আমাকে ভালো দেখাচ্ছে কিনা।’
‘ভালো দেখাচ্ছে তবে হিজাবটা সুন্দর করে বাঁধিসনি। মনে হচ্ছে ওড়না পেঁচিয়ে রাখছিস। ফালতু হয়েছে। এখন কেউ এভাবে হিজাব বাঁধে নাকি?’

‘বুঝলাম হয়নি। তুই বেঁধে দে। কিভাবে সুন্দর লাগবে সেভাবে বেঁধে দে। জানিসই আমি এসব পারি না। ব্যাকডেটেট মেয়ে আমি।’
‘পারিস না বলেই আম্মুর হাতে ধোলাই খাস। আর না পারলেও কি হুম? আমার আপু এমনিতেই অনেক সুন্দর। তোকে আলাদা কিছু দিয়ে সুন্দর হতে হবে না।’
‘উম্মাহ বোনু। এবার জলদি কর নইলে আহসান চলে যাবে অপেক্ষা করতে না পেরে।’
‘তো? সেদিন তোকে অপেক্ষা করিয়েছিল মনে নেই? আজ তুইও করাবি। ছেলেদের রেডি হতে হায়েস্ট ৫মিনিট লাগে। সেদিক তাকে বুঝতে হবে। বিউটি চাইলেই দেখা যায়না।’

‘মার খাবি এখন।’
‘আচ্ছা পড়িয়ে দিচ্ছি দাঁড়া।’
তিয়াসা রিমিকে উঁচু করে হিজাব বেঁধে দিল। তারপর বলল, ‘ওয়াও আপু তোকে খুব ভালো লাগছে।’
‘সত্যি ভালো লাগছে?’
‘হুম সত্যি। কিন্তু তুই এতো এক্সাইটেড কেন বলতো?’
রিমি ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কিসের জন্য এক্সাইটেড হবো আমি?’
‘সেটা তুই জানিস।’

‘আমি জানি না। গেলাম। আল্লাহ্ হাফেজ। আর আব্বু আম্মুকে বলবি না বলে রাখলাম। কিছু বললে,,
‘আমি কিছু একটা বলে দেব। তুই ভাবিস না। হ্যাভ এ সুইট ডেট।’
‘লাথি খাসনা বলে রাখলাম।’ এই বলে রিমি বেড়িয়ে আসলো।
রিমি দূর থেকে আহসানকে দেখে হাত নাড়ালো। আহসান ওর গাড়ির গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। রিমিকে দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তারপর মুখের হাসিটা প্রশস্ত করে বলল, ‘এতো লেট করলেন যে?’
‘সরি আমি রেডি হতে গিয়ে লেট হয়ে গিয়েছি।’

‘ওও।’
‘শুধু ও?’ রিমি বলল।
‘মানে?’
‘কিছু না।’ রাগী চেহারা ফুটিয়ে।
আহসান মুচকি মুচকি হাসছে রিমির রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে।
‘আপনি কি শাড়ি পড়েছেন?’
‘হুম। কেন মনে হচ্ছে না?’
‘হচ্ছে তবে এটা শাড়ি কম সেপ্টিপিন বেশি লাগছে।’
‘ওহ। আচ্ছা আপনার টাকা নিন আমার তাড়া আছে।’ রিমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে আহসানের সামনে তুলে ধরে। আহসান টাকাটা হাতে নিয়ে বলল,
‘পুরো ১৫ আছে তো?’

‘গুনে নিন দাঁড়িয়েই তো আছি। পালিয়ে তো যাচ্ছি না।’
আহসান সত্যি সত্যি গুনতে শুরু করে। তা দেখে রিমির রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
‘আমাকে বিশ্বাস হয়না আপনার? আমি কি হিসেব পারি না নাকি? ছোট মন আপনার। নামমাত্র বড়লোক। হুহ!’ রিমি কথাগুলো প্রকাশ করলো না। ও বলল, ‘ঠিক আছে তো টাকা?’
‘ঠিক আছে তবে এগুলো তো পুরানো টাকা। আমি আপনাকে নতুন চকচকে টাকা দিয়েছিলাম। নগদ ব্যাংক থেকে তোলা টাকা ছিল।’
রিমি মুখে বিস্মিত ভাব টেনে বলল, ‘তো কি হয়েছে?’

‘আমি পুরোনো টাকা নেব না। আমাকে নতুন টাকা দিতে হবে।’
‘আশ্চর্য। টাকা তো টাকাই। আপনি দেখুন কম আছে কিনা। নতুন পুরান দেখেন কেন?’
‘দেখবোই তো। আমি যতটা দিয়েছি, যেভাবে দিয়েছি, ঠিক সেভাবেই দিতে হবে। আমি ধার দিয়েছি কেন?’
‘আমি বিপদে পড়েছিলাম বলে।’
‘তো আমি আপনাকে বিপদ থেকে রক্ষা করলাম, আর আপনি আমাকেই ঠকালেন এভাবে পুরান নোট দিয়ে?’
‘আপনি যা বলছেন ভেবে বলছেন?’
‘হুম ভেবেই বলেছি।’

‘আপনি যদি ১০ টাকার একটা নতুন নোট নিয়ে দোকানে গিয়ে বলেন আপনাকে একটা বাটার বন বা বিস্কিট দিতে। তাহলে দোকানদার কি আপনাকে বিশ টাকা দামের বাটার বন বা বিস্কিট দিবে?’
‘না ১০ টাকা দামের টাই দিবে।’
‘এটাতো বুঝেছেন?’
‘হুম তো?’
‘তো সেই আপনি যদি পুরাতন একটা ১০ টাকার নোট নিয়ে দোকানে গিয়ে বিস্কিট চান তাহলে কি আপনাকে ৫টাকা দামের বিস্কিট ধরিয়ে দেবে?’
‘না ১০ টাকার টাই দেবে।’

‘তো প্রবলেম কি হুম? আপনি নতুন পনেরো হাজার টাকায় যা করতে পারবেন, পুরাতন টাকা দিয়ে তাই তাই পারবেন। তাহলে নতুন পুরান ভেদাভেদ কেন?’
‘আমার ইচ্ছে। আমি পাওনাদার। তাই আমি যা বলবো তাই হবে।’
‘উফ, কেমন আপনি হুম?’ রিমি নাক কান ঘুচিয়ে বলল। তা দেখে আহসান পেট চেপে হাসতে লাগলো।
‘আপনি হাসছেন কেন?’
‘আপনি আসলে ভীষণ ইনোসেন্ট। আমি মজা করছিলাম।’
‘উফ আমার সাথে মজা করবেন নাতো। আমি গেলাম বায়।’
‘দাঁড়ান। একটা কথা ছিল।’
‘কি?’

‘আপনাকে শাড়িতে খুব ভালো মানিয়েছে। নারীর মতো নারী লাগছে।’
রিমির রাগ কিছুটা কমে গেল আহসানের কথায়। আহসান আবারও বলল, তবে একটা কমতি আছে।’
‘কি কমতি?’
‘হাতে চুড়ি নেই কেন? শাড়ির সাথে হাত ভর্তি চুড়ি মানায়।’
‘আমার এই রঙের চুড়ি নেই বলে পড়িনি। অন্য রঙ কেমন যেন লাগছিল। তাই পড়া হয়নি।’
‘ও, চুড়ি কোথায় পাওয়া যায় এখানে?’
‘কেন? আমার চুড়ি লাগবে না।’

‘আপনার জন্য বলিনি। অন্য কারো জন্য নিতাম।’
রিমি লজ্জা পেয়ে গেল আহসানের কথায়। সাথে অপমানিত বোধ করলো। পরক্ষণেই রিমি গম্ভীর হলায় বলল, ‘আমি জানি না কোথায় পাওয়া যায়। আমার কাছে সময় নেই।’
‘কি দিনকাল! মানুষ মানুষেরই জন্য। এই কথাটা ভুল ছিল। আসল কথা মানুষ নিজেদের জন্য।’
‘আপনি এভাবে বলছেন কেন?’
‘সাহায্য না পেলে কি আর বলবো? আমি জানতাম না উপকারীর উপকার ভুলে গিয়ে মানুষ অপকার করতে দু মিনিটও লাগায় না।’

‘চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি চুড়ির দোকানে।’
‘জ্বি ধন্যবাদ।’
চুড়ির দোকানে গিয়ে আহসান শপ কিপারটাকে বলল,
‘আপনার দোকানে যত কালার বা ভ্যারাইটির চুড়ি আছে সব বের করুন।’
শপ কিপার প্রায় ৫০ আইটেম বের করে।
‘আপনি এতো চুড়ি দিয়ে করবেন টাকি? আর কাকেই বা দিবেন?’ রিমি জিজ্ঞেস করে।
‘দেব একজনকে।’

‘মাপ জানেন কি হাতের?’
‘আপনার মতোই রোগা। তাই আপনার মাপে নিয়ে নেন সকল আইটেম থেকে।’
‘আমার হাতের মাপে নিলে হয়ে যাবে?’
‘আমি সিওর।’

রিমি ৫০ রকমের চুড়ি নিল নিজের হাতের কালারের। সাথে হরেক রকম কালার মিশ্রিত। মোট ৮৫টা চুড়ির গোছা হলো। আহসান দাম জিজ্ঞেস করলে শপ কিপার বললো ৮হাজার টাকা। আহসান রিমির দেওয়া টাকা থেকে বিল পরিশোধ করে দিল।’
‘আপনি এতগুলো চুড়ি নিয়ে নিলেন!’ হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল রিমি।
আহসান হালকা স্মিত হেসে বলে, ‘হুম তো?’

‘তো আর কি? যার জন্য নিয়েছেন সে ভীষণ লাকি। জানতে পারি কার জন্য নিচ্ছেন? না থাক বলতে হবে না। আপনার পারসোনাল ব্যাপার এটা।’
‘তেমন কোনো পারসোনাল নয়। বলতে সমস্যা নেই আমার। তবে আপনি ইম্যাজিন করতে পারেন। দেখি আপনার ইম্যাজিনেশন কতটা সঠিক হয়।’
‘আমি কিভাবে বলবো? তবে এতগুলো চুড়ি যেহেতু নিয়েছেন। তাহলে নিঃসন্দেহে বলতে পারি এটা আপনার প্রিয় মানুষটির জন্য নিয়েছেন হয়তো। মানে এটাই ভাবা স্বাভাবিক। আমি কেন, যেকেউ এটাই বলবে।’
‘হাস্যকর না হলেও হাস্যকর লাগছে।’
‘কেন?’

‘আপনার কাছে মনে হচ্ছে আমি আমার প্রিয় মানুষ অর্থাৎ প্রিয়তমার জন্য চুড়িগুলো কিনেছি! তাই যদি হয়, তাহলে আপনি আমার প্রিয় মানুষ হলেন। মানে প্রিয়তমা।’
‘মানেএএএএ!’
‘এভাবে চোখ উল্টে বলার কি আছে মানে?’
‘আপনি কি বলতে চাইছেন?’
‘আমি নয় আপনি বলেছেন।’
‘আমি কি বলেছি?’

‘আপনিই তো খানিক আগে বললেন, আমি আমার প্রিয় মানুষের জন্য চুড়ি কিনেছি। বলেননি কি?
‘হুম বলেছি। তো আমি আপনার প্রিয় মানুষ কিভাবে হলাম?’
‘আপনি আমার প্রিয় মানুষ আমি কি সেটা একবারও বলেছি মিস রিমি?’
‘আপনি বলেননি যে তাহলে আপনি আমার প্রিয় মানুষ হলেন?’
‘হুম কিন্তু সেটা কেন বলেছি?’

‘কেন বলেছেন?’ পাল্টা প্রশ্ন করে বসে রিমি।
‘আপনার কথার জের ধরে বলেছি। আপনি যেভাবে বললেন আমি আমার প্রিয় মানুষটির জন্য চুড়ি কিনেছি, সেভাবে আমিও বললাম আপনি আমার প্রিয় মানুষ। না বোঝার কি আছে? ভালোই বোঝার বয়স হয়েছে আপনার।’
‘এক মিনিট! আপনি আমার জন্য কিনেছেন নাকি চুড়িগুলো?’
‘এখনো বোঝার বাকী আছে নাকি?’
‘আপনাকে কি আমি বলেছি চুড়ি কেনার জন্য?’
‘আমি অনুমতি নিয়ে কিনবো নাকি?’
‘আপনি তো বড্ড ইয়ে টাইপের লোক।’

‘শুনুন আপনি যে কোন ইয়ে টিয়ে বলেন, আমার সেটা বুঝতে প্রবলেম হয়।’
‘খুব অদ্ভুত একজন লোক আপনি।’
‘জানি সেটা। নতুন করে বলতে হবে না।’
‘আসলেই অদ্ভুত। এতগুলো চুড়ি কেনার মানেই হয়না। টাকার কদর করতে জানেন না দেখছি। অবশ্য বেশি টাকা থাকলে কিভাবেই বা থাকবে?’
‘আপনি ঠিক বলেছেন। তবে আমি শুধু শুধু টাকা নষ্ট করিনি। আর আপনার জন্য তো এটা কিছুই না। খুবই কম হয়ে গেল হিসেব করলে।’

‘তাই নাকি? তা কিভাবে শুনি?’
‘শুনতে হবে না। বুঝতে হবে। যাই হোক, আপনি কিন্তু চুড়িগুলো নিবেন। আমি কিন্তু কোনো বাহানা শুনবো না।’
‘কিন্ত এতগুলো! আমার কেন যেন ইতস্ততবোধ হচ্ছে।’
‘কেন হচ্ছে?’
‘সেটাই তো জানি না।’
‘আপনি সেই বাহানাই করছেন। আচ্ছা আপনাকে নিতে হবে না। আপনি এক কাজ করবেন শুধু।’
‘কি কাজ?’
‘কষ্ট করে চুড়িগুলো তিয়াসার হাতে তুলে দিয়েন। সে খুব ভালো। আপনার মতো এতো সমস্যা নেই তার।’
‘কিহ! মানে আপনি বলছেন আমার সমস্যা আছে?’
‘সন্দেহ নেই তাতে।’

‘আচ্ছা আমি গেলাম তাহলে। এই ধরুন আপনার চুড়ির প্যাকেট আমি আর টানতে পারলাম না। আপনার ইচ্ছে হলে তিয়াসাকেই গিয়ে দিয়ে আসবেন। আমি দুঃখিতা।’
‘আরে শুনুন, রাগ করছেন কেন? আচ্ছা সরি আমার ভুল হয়েছে।’
‘আমি আপনার একটা কথাও আর শুনছি না। সো সরি।’
‘আমি কি করলে আপনার রাগ কমবে শুনি?’

‘কিছু না। আমি এখানে থাকতে চাচ্ছি না। বায়।’ এই বলে রিমি চলে যাচ্ছিলো কি আহসান এক টান দিল রিমির হাত ধরে। সাথে সাথে রিমি গিয়ে পড়ে আহসানের বুকে। পরক্ষণেই সরি বলে রিমিকে ছেড়ে দিল আহসান। আহসান ভেবেছিল রিমি রিয়েক্ট করবে। কিন্তু রিমি কিছুই বলেনি। চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আহসান আবারও বলল, ‘আমি সরি। আপনি প্লিজ চুড়িগুলো নিন নইলে খুব খারাপ লাগবে আমার। রিমি বাধ্য মেয়ের মতো হাত বাড়িয়ে দিল। আহসান খুশি হয়ে রিমির হাতে ব্যাগটা দিয়ে দিল।
‘আর কিছু বলবেন?’ রিমি বলল।

‘হুম, আপনি রাতে একটু কথা বলতে পারবেন আমার সাথে?’
‘চেষ্টা করবো।’
‘থ্যাংকস।’
‘আচ্ছা বায়।’
‘আমি পৌঁছে দেই? না মানে যদি রাগ না করেন। আসলে ততক্ষণ আপনার সাথে থাকতে পারবো তাই।’
রিমি মাথা কাত করে সম্মতি দিল।
রঞ্জিত অনেক রাতে আসায় অপা আহসান ও স্রুতির কথাটা বলতে পারেনি। তবে সকালে উঠেই বলে দিয়েছে। রঞ্জিত সাথে সাথে উত্তর দিয়েছে যে আগে মায়ের পারমিশন, তারপর সব। দুপুরে লাঞ্চ করতে সবাই টেবিলে গোল হয়ে বসেছে। আহসানও ছিল। তখন রঞ্জিত বলে,

‘মা খাবার শেষে আমি সকলের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই। তোমার সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলবো আরকি। মানে তোমার পারমিশন লাগবে।’
মুনতাহা গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
‘আচ্ছা আগে শেষ হোক।’
সকলের খাবার শেষ হলে রঞ্জিতের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।রঞ্জিত মুনহাতার উদ্দেশ্যে বলে, ‘এখন বলবো কি?’
মুনতাহা বলে, ‘হুম বল।’
‘আসলে মা আমি একটা মতামত পেশ করতে চাই। তুমি যদি সম্মতি দাও তাহলেই এগোবে। নইলে এখানেই শেষ।’
‘বল শুনি।’

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪

‘আমরা সকলে চাই আহসান আর স্রুতির বিয়ে হোক। তুমি কি বলো?’
কথাটা শুনে সবাই খুশি হলেও আহসান আর মুনতাহা হলেন না।
‘সকলে বলতে কে কে?’
‘আমি,অপা,হাফসা,নিলয় আমরা সকলেই।’
‘তোরা চাইলেই হবে? যাদের বিয়ে হবে তাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করিসনি?’ তাদের মতামতই তো আসল। ওরা চাইলে আমার কোনো সমস্যা নেই।’

আহসান কিছুটা স্বস্তি পেল মুনতাহার কথায়। মুনতাহা প্রথমে স্রুতিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘স্রুতি! তুই কি চাস?’
‘জ জ্বি নানু! আমি কি বলবো? আহসানকে জিজ্ঞেস করো আগে।’
‘আচ্ছা তো আহসান তুই বল তুই কি চাস?’
‘আমি স্রুতিকে বিয়ে করতে চাইনা দাদিয়া। আমি কাল থেকে হসপিটালের কাজে হাত দেব। আমার পুরো ফোকাস সেখানেই রাখতে চাই। এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই। তবে আমি স্রুতিকে বোন ভাবি। বেশি কিছু ভাবার ইচ্ছে হয়নি। যদি কখনো কাউকে ভালো লাগে তাহলে তাকেই বিয়ে করবো। এখন আমাকে এসবে জড়াবে না।’

‘স্রুতি কোন দিক দিয়ে খারাপ আহসান?’ রঞ্জিত বলল।
তার পর পরই মুনতাহা বলল,’সেটা আহসানের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার মতামত প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। স্রুতি আহসানের বিয়ে হচ্ছে না। এটাই শেষ কথা। যে যার কাজে যাও। এ নিয়ে আর একটা কথাও যেন নাহয়। আর রঞ্জিত তুই বা তোর বউ যেন আহসানের সাথে কোনো প্রকার ঝামেলা না করিস। তাহলে সব কটাকে দেখে নেব আমি।’
এরপর আর কেউ কোনো কথা বলেনা। যে যার রুমে চলে যায়।

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮