তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮
শান্তনা আক্তার

বিকেলের মধ্যে রিমিরা আহসানদের বাড়িতে চলে এসেছে। সেই সাথে রিমিকে রেডি করার জন্য পার্লারের লোকজনও চলে আসে। রিমি রেডি হচ্ছে আর আহসান নিজের রুমে বসে হসপিটালের কিছু কাজ করছে। খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে আহসান। তবে সে কাজে বাঁধাগ্রস্ত হলো কারো খেঁকিয়ে ওঠায়। আহসান মাথা তুলে চাইতেই স্রুতিতে দেখতে পায়। স্রুতি দুইহাত পিছনে বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি। আহসান রিমির থেকে স্রুতির কাহিনিটি শোনার পর থেকে স্রুতিকে দুই চোখেও সহ্য করতে পারে না। রিমি মানা করায় স্রুতিকে কিছু বলেনি। সেই সাথে স্রুতি কিছু বলতে চাইলেও পাত্তা দেয়নি। আহসানের টনক নড়ে স্রুতিকে দেখে। কপাল ঘুচিয়ে আসে। ইতোমধ্যে শরীরের রক্ত মাথায় চড়ে গিয়েছে আহসানের। আহসান ওর ল্যাপটপটি বন্ধ করে গরম চোখে চাইলো স্রুতির দিকে। তারপর বলল,

‘কি চাই? আমার রুমে আসতে নিষেধ করেছিলাম তোকে।’
স্রুতি দু কদম এগিয়ে গেল। তারপর স্মিত হেসে বলল, ‘আমি যে বেহায়া। তাই তোর কাছে বারবার আসি। কি করবো বল? বড্ড ভালবাসি যে!’
‘ভালবাসা! তুই কি সেন্স হারিয়ে উল্টো পাল্টা বকছিস নাকি?’
‘হুম, না। আমি সজ্ঞানেই আছি।’
আহসান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আজ আমার খারাপ ব্যবহার করার কোনো ইচ্ছে নেই। ভালোয় ভালোয় বলছি চলে যা। আমি এখন রেডি হবো।’
‘রেডি হতে কে মানা করেছে তোকে? যা রেডি হয়ে আয়। তারপর তোকে মন ভরে দেখবো আমি।’
আহসান প্রচুর রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর অনামিকা আঙুল জাগিয়ে বলল, ‘আমি কিন্তু মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না। তুই যদি নিজ ইচ্ছেতে না যাস, তাহলে আমি বাড়ির সকলকে তোর কুকীর্তির কথা জানাতে বাধ্য হবো।’
স্রুতি আহসানের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘আমি কাউকে ভয় পাই না আর। সবাই জানলে আমার কিছুই আসবে যাবে না। কারণ তুইতো এমনিতেও রিমিকেই বিয়ে করবি। তাহলে সবাই জানলেই বা কি?’

আহসান পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেকলো। স্রুতি একদম আহসানের কাছে গিয়ে পেছনে লুকানো হাত দুটো বের করলো। স্রুতির দু’হাতে হলুদ। স্রুতি ওর হাত আহসানের গালের কাছে নিয়ে বলল,
‘তোকে হলুদ লাগাবো নিজ হাতে। তুইও আমাকে লাগিয়ে দে। তুই রিমিকে বিয়ে কর। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমিও চাই তোর বউ হতে। দুটো বিয়ে করলে এমন কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। তুই রিমির সাথে আমাকেও বিয়ে কর। আমার ইচ্ছেটা রাখ প্লিজ।’

স্রুতির অদ্ভুত কথায় আহসান হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো। আহসান এতটাই রেগে আছে যে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। ওর মন চাচ্ছে এখনই স্রুতিকে গলা টিপে মেরে ফেলতে। কিন্তু সেটা না করে আহসান কোনভাবে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। তারপর বলল,
‘তুই বেশি বেশি করে ফেলছিস। আমি কিন্তু আর নিতে পারছি না।’
‘এভাবে বলিস না। আমি তোকে ছাড়া মরে যাব। আজ তোর আমার আর রিমির, তিনজনেরই গায়ে হলুদ হবে। তবে সবার আগে আমার আর তোর।’

এই বলে স্রুতি আহসানের গালে হলুদ লাগাতে যায়। কিন্তু সাথে সাথেই আহসান স্রুতির হাত ধরে ফেলে। আর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে স্রুতির গালে কষে এক চড় বসিয়ে দেয়। স্রুতি চড় খেয়ে কিছুটা দূরে সরে যায়। এরই মধ্যে জিসান চলে। এসে বলে,
‘কিরে ভাইয়া তুই এখনো রেডি হসনি কেন? ভাবি তো বসে আছে তোর জন্য।’
স্রুতি জিসানের আওয়াজ শুনে হলুদ মাখানো হাত দুটো গুটিয়ে নিল। তারপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলার চেষ্টা করল,
‘আমিও তো সেটাই বলতে এসেছিলাম রে। দেখ এখনো আহসান দাঁড়িয়ে আছে। কিরে আহসান! যা জলদি। রিমিকে আর কত অপেক্ষা করাবি?’

আহসান স্রুতির অকস্মাৎ পরিবর্তনে হতভম্ব হয়ে গেল। তবুও কিছু বলল না আহসান। বরং আহসান তড়িঘড়ি করে চেঞ্জ করতে চলে গেল।
রিমিকে হলুদ সাজে চেনাই যাচ্ছে না যেন। সকলে খুব সুন্দর বলে সম্মোধন করছে রিমিকে। তবে আহসানের এত সাজ পছন্দ না। যতই রিমিকে দেখতে ভালো লাগুক না কেন, আহসানের কাছে ন্যাচারাল রিমিই বেশি পছন্দনীয়। পাশাপাশি বসে আছে আহসান রিমি। আহসান বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে রিমির দিকে। রিমি তাকাচ্ছে না।

তার কারণ বেশ লজ্জা পাচ্ছে ও। বাড়ি ভর্তি লোক রিমি ও আহসানের পাশে এমন ভাবে ভীড় জমিয়েছে যে রিমি ভুল করেও আহসানের সাথে একটা কথাও বলছে না। বলতে চেয়েও পারছে না। আহসান বুঝতে পারলো রিমির না তাকানোর কারণ। তাই ইচ্ছে করে আহসান ওর ঘড়ির সাথে রিমির লেহেঙ্গা শাড়ির এক পাশ বাঝিয়ে নিল। তারপর টান দিল। ফলে রিমি আহসানের দিকে তাকাতে বাধ্য হলো। রিমি ইশারায় চোখ গরম দিলে আহসান ওর ঘড়িটা দেখালো। রিমি বুঝতে পেরে ওর শাড়ি থেকে আহসানের ঘড়িটা ছাড়িয়ে বলল,

‘স্যরি আমি আসলে খেয়াল করিনি।’
বলে আবারও চোখ সরিয়ে ফেলল রিমি। আহসান হার মেনে নিল। ও বুঝতে পারলো রিমির সাথে এখন কথা বলা যাবে না। তাই আর বৃথা চেষ্টা করলো না। কিছুক্ষণ পর প্রোগ্রাম শুরু হলো। একে একে সবাই আহসান ও রিমিকে হলুদ লাগাতে লাগলো। শেষে গিয়ে নাচ গানের প্রোগ্রাম শুরু হলো। আহসানের বাড়ি থেকে কেউ নাচবে না বলে দিয়েছে। তবে রিমির যেকয়টি কাজিন এসেছে, তারা সবাই নাচবে। সবার নাচা শেষে তিয়াসা ও মানিক স্টজে উঠল নাচবে বলে। জিসান ভেবেছিল তিয়াসা একা একাই নাচবে। কিন্তু তিয়াসা যে কোনো ছেলের সাথে নাচবে তা জানতো না। জিসান এক মুহুর্ত না বসে স্টেজে চলে গেল। তারপর মাইক হাতে বলল, ‘এটা কি কোনো কাজ হলো? ছেলে পক্ষের আমরা কেউই নাচলাম না। কিন্তু মেয়ে পক্ষরা গুনে গুনে ১০-১২ জন নেচে ফেলল।’

তখন তিয়াসা ভেংচি কেটে বলল, ‘আপনারা পারলে তো নাচবেন।’
জিসান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, ‘কে বলেছে পারিনা? তোমার থেকেও ভালো নাচি আমি।’
‘তাই? তো নেচে দেখান দেখি কেমন ভালো পারেন।’
‘সেটা তো তখনই বোঝা যাবে, যখন তুমি আর আমি একসাথে নাচ করবো।’
‘আপনার সাথে কে নাচবে হুম? আমি নাচবো না।’

‘পারবে না সেটা বললেও পারো। আগে থেকেই বুঝে গেছো এই জিসানকে হারাতে পারবে না।’
‘কিহ! আমি আপনাকে হারাতে পারবো না?’
‘না পারবে না। তাইতো বাহানা করছো।’
তিয়াসার নাক মুখ লাল হয়ে গেল। বেশ রেগেমেগে তিয়াসা বলল, ‘ঠিক আছে আমি রাজি। চলুন তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক কে ভালো নাচে।’

জিসান ঠোঁট চেপে হাসলো। পরমুহূর্তে মিউজিক বেজে উঠলে জিসান শুরু হয়ে গেল।
‘আসসালামু আলাইকুম বিয়ান সাব।’
তিয়াসা কপালে হাত ছুঁইয়ে বলল, ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম বিয়াই সাব।’
‘কেমন আছেন বিয়ান সাব?’
‘বুকে বড় জ্বালা।’
‘কিসের জ্বালা বিয়ান সাব?’
‘নয়া প্রেমের জ্বালা।’
‘এই জ্বালাতে জ্বলে না, কোন শালি শালা।’

জিসান ও তিয়াসা নাচছে আর এদিকে জান্নাত রাগে, হিংসায় জ্বলছে শুধু। জান্নাত মোটেই জিসান আর তিয়াসাকে একসাথে দেখতে পারছে না। নাচ শেষ হলে সবাই করতালি দিল। জিসান তিয়াসাকে চোখ মেরে বলল, ‘কি আমি নাচতে পারি না?’
তিয়াসা কিছু না বলে আবারও ভেংচি কেটে নেমে গেল স্টেজ থেকে। তিয়াসার পিছনে পিছনে জিসানও নেমে গেল। তারপর সকলের অগোচরে তিয়াসাকে টেনে নির্জন একটা জায়গায় নিয়ে আসলো। গানের শব্দে তিয়াসার সাড়া শব্দ কারো কান অবধি না যাওয়ায় জিসানের সুবিধা হলো তিয়াসাকে টেনে আনতে। জিসান তিয়াসাকে নিয়ে একটা খালি রুমে এসে বলল, ‘তুমি আমাকে খারাপ ভেবো না। আমি আসলে তোমায় কিছু বলতে চাই।’

তিয়াসা কিঞ্চিৎ চিৎকার করে বলল, ‘আপনি এত সাহস কোথায় পেলেন? আমি আজই সবাইকে বলব আপনার চরিত্র কতটা খারাপ।’
‘তুমি ভুল ভাবছো তিয়াসা। আসলে আমি তোমাকে ভালবাসি। প্রথম দেখাতেই তোমাকে আমার ভালো লাগে। প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।’
‘আশ্চর্য! আমি সবেমাত্র কলেজে উঠেছি। আপনি আমাকে এসব কিভাবে বলতে পারলেন? লজ্জা করলো না? শুনুন, আমি আপনাকে মোটেও পছন্দ করি না। আমার এখন এসবে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাই আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করুন দয়া করে।’
‘এভাবে বলো না প্লিজ। আমি জানি তুমি ছোট কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি তুমি যা বলবে তাই শুনবো৷ আমরা নাহয় কয়েকবছর পর বিয়ে করবো।’

জিসান ওর কথাটা শেষ করতেই কেউ চিৎকার দিয়ে উঠল। জিসান ও তিয়াসা পেছনে চেয়ে জান্নাতকে দেখতে পেল। জান্নাত জিসানের দিকে একবার চেয়ে দৌঁড়ে চলে গেল সেখান থেকে। তা দেখে জিসানও জান্নাতের পেছনে গেল। জান্নাত ওর ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে ফেলল। জিসান অনেকবার ধাক্কা দিল কিন্তু জান্নাত খুলল না। জিসান জান্নাতের এরূপ আচরণের কারণ খুঁজে না পেয়ে বাড়ির সকলকে ডাক দিল। বাড়ির সবাই খুব টেনশনে পড়ে গেল জান্নাতকে নিয়ে। প্রায় ২০ মিনিট হয়ে গেল জান্নাত দরজা খুলল না। তাই দেখে আহসান ও জিসান দরজা ভেঙে ফেলল। তারপর,,,,

জান্নাত হাত কেটে ফ্লোরে পড়ে আছে। জান্নাতের হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে অনবরত। আহসান তড়িঘড়ি করে জান্নাতের কাছে চলে যায়৷ হাত মুখ চেক করে বুঝতে পারে জান্নাত সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। মুনতাহা ও অপা ভয়ে আতংকে কান্না শুরু করে দিয়েছে। সকলেই বেশ ভয় পাচ্ছে জান্নাতের এরূপ অবস্থা দেখে৷ আহসানদের বাড়িতে সবসময় বাড়তি মেডিসিন,ফ্রাস্ট্রেড বক্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত সামগ্রী উপস্থিত থাকে। যেহেতু আহসান ও রঞ্জিত দুজনেই ডক্টর, সেহেতু জান্নাতকে হসপিটালে নেওয়া হয়নি। জান্নাতের অবস্থা তেমন ক্রিটিকাল নয় বলে নেওয়ার প্রয়োজনবোধও করেনি। ঘন্টা খানেক পর জান্নাতের জ্ঞান ফিরে। জান্নাত আস্তে আস্তে ওর চোখ খুললে চারিপাশে সকলের ভীড় দেখতে পায়। জান্নাতের মাথার দুই পাশে অপা ও মুনতাহা বসে আছে। জান্নাত যখনই জিসানের দিকে তাকালো, তখনই ওর সব মনে পড়ে যায়। আর উচ্চস্বরে কেঁদে ওঠে। জান্নাতকে কাঁদতে দেখে মুনতাহা বলে ওঠে,

‘কাঁদছিস কেন? আর এসবের মানে কি? এত সাহস কোথ থেকে পেলি তুই?’
জান্নাত কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল, ‘দাদিয়া আমি তোমাদের কাছে একটা জিনিস চাই। তোমরা যদি না দাও, তাহলে কাল সকালে আমার মরা লাশ দেখবে বলে দিলাম।’
‘চুপ বেয়াদব মেয়ে। অতিরিক্ত খারাপ হয়ে গিয়েছিস তুই। কিছু বলি না বলে তাইনা?’ অপা বেশ ধমকের সুরে বললেন। তাই মুনতাহা অপাকে থামাতে বললেন,

‘তুই চুপ কর অপা। আমি কথা বলছি তো! অপা জান্নাতকে আবারও জিজ্ঞেস করল, ‘বল তুই কি চাস। আমরা আগে শুনি।’
‘না আমি কিছুই জানি না। আমার ইচ্ছে পূরণ করতেই হবে তোমাদের। নইলে আমি যা বলেছি তাই করেই ছাড়বো। তোমরা কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। ধমকা ধামকি করেও না।’
মুনতাহা বিচলিত হয়ে বলল,
‘আচ্ছা বল। তুই যা বলবি তাই শুনবো। তাও এমন পাগলামি করিস না বোন।’
‘আমি জিসান ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাই।’

জিসানের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল জান্নাতের কথায়। সাথে সকলেই আশ্চর্য হয়ে গেল।
মুনতাহা জান্নাতের কপাল ডলে বলল, ‘এই কথা! এর জন্য পাগলামি করতে হয় নাকি? ভালো ভাবে বললেও আমি শুনতাম। ঠিক আছে তোর সাথে জিসানেরই বিয়ে হবে।’
‘কিন্ত নানু আমি জান্নাতকে বিয়ে করতে পারবো না।’
জিসান সাফ সাফ মানা করে দেওয়ায় জান্নাত আবারও কেঁদে দিল। তা দেখে মুনতাহার ভীষণ রাগ হলো। তিনি গরম চোখ করে জিসানের দিকে তাক করলেন।

তারপর বললেন, ‘আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস কোথায় পাস তুই?’
‘নানু আহসান ভাইয়া যেমন স্বাধীনতা পেল, তেমন আমি কেন পাবনা? আমার বেলায় জোরজবরদস্তি কেন?’
‘আহসান তো কাউকে পছন্দ করতো তাই ওর ইচ্ছেমতো হয়েছে। কিন্তু তুই কেন বিয়ে করবি না? আমার জান্নাত কি দেখতে খারাপ?’

‘না নানু। কিন্তু আমার তো একটা ইচ্ছে আছে।’
‘সেটাই শুনতে চাই। তুই বল তুইকি কাউকে পছন্দ করিস?’
জিসান ভাবলো তিয়াসার কথা এখন সে বলতে পারবে না। কারণ তিয়াসা তাকে পছন্দ করে না বলে দিয়েছে। এমতাবস্থায় তিয়াসার মর্জি ছাড়া জিসান তিয়াসাকে ভালবাসার কথা বলল না। সব দিক বিবেচনা করে জিসান বলল,
‘না, আমি কাউকে পছন্দ করি না।’

‘তাহলে সমস্যা কি?’ প্রশ্ন করলো মুনতাহা।
‘আমি মাত্র গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করেছি। এখনো বেকার। তাই আমি জান্নাতকে বিয়ে করতে চাইনা।’
‘সেটাও আমি বুঝে নেব। নিলয়?’ মুনতাহা জিসানের বাবা নিলয়কে ডাকলো।
‘জ্বি মা?’

‘তুমি তোমার কোম্পানির দায়িত্ব জিসানকে বুঝিয়ে দাও। কত করবে আর? ছেলে বড় হয়ে গিয়েছে। এখন একটু চাপমুক্ত হও।’
‘জ্বি মা। আমি তো ওকে কত বলি কোম্পানির হাল ধরার জন্য। কিন্তু আমার কথা কানেই নেয়না।’
‘এবার থেকে নেবে। শুনেছিস জিসান? এবার বল কি করবি?’
‘কিন্ত নানু আমি এখন প্রিপেইড নই বিয়ের জন্য?’
‘আমি কিছুই শুনতে চাই না। আমি যা বলেছি তুই তাই শুনবি।’

‘বাহ নানু বাহ! আমার বেলায় তো এই ডিসিশন নিলে না তুমি, কিন্তু জান্নাতের বেলায় ঠিক তোমার দরদ উতলে উঠলো? ভালো তো।’
স্রুতি ব্যঙ্গ করেই বলে ফেলল কথাটি।
পরমুহূর্তেই মুনতাহা জিজ্ঞেস করে বসল,
‘তুই কি বলতে চাস স্রুতি?’

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬

‘এটাই যে ছেলের সন্তানেরা চোখের মণি। আর মেয়ের সন্তানেরা হাতের পুতুল! তুমি আহসান আর জান্নাতকেই ভালবাসলে সারাজীবন, আমাকে আর জিসানকে না।’
‘তুই এত বড় কথা বলতে পারলি? কোন মুখে তুই এই কথাটা বললি আমাকে?’
মুনতাহা যখন কথা বলে তখন কেউ একটা টু শব্দও করেনা। এমনকি রঞ্জিতও ভেজা বেড়াল হয়ে শুনে শুধু। এখনো তাই হচ্ছিলো। কিন্তু স্রুতির নাক গলানোটা নিলয়ের পছন্দ হলো না। তাই নিলয় গিয়ে স্রুতির গালে সপাটে চড় মেরে বলল,
‘মায়ের সাথে তর্ক করার দুঃসাহস দেখানোর জন্য এই চড়টা। এখান থেকে যাও। আমার ছেলের বিয়ের কথা হচ্ছে এখানে। তাই তুমি নাক না গলালেও চলবে।’

স্রুতি গালে হাত রেখেই বলল, ‘তোমার ছেলে আর আমার কি কিছুই না? ভুলে যেওনা আমার আপন ভাই হলো জিসান। তুমি আর মা যেমন ওর গার্জিয়ান৷ ঠিক সেভাবে আমিও। তাই আমারও মত প্রকাশের অধিকার আছে বাবা।’
‘না নেই। যেখানে আমি আর তোমার মা বেঁচে আছি, সেখানে তুমি কেউনা। যেদিন আমরা থাকবো না, সেদিন তুমি গার্জিয়ান। এখন কথা না বলে চুপ করে থাকো। আর সহ্য না হলে চলে যাও। নইলে আরও কয়টা পড়বে তোমার গালে।’
‘হ্যাঁ তোমরা এটাই পারো শুধু। ঠিক আছে তোমরা যা খুশি তাই করো।’ এই বলে চলে যায় স্রুতি।

স্রুতি চলে গেলে মুনতাহা রঞ্জিত ও অপা এবং নিলয় ও হাফসার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কি আমার সিদ্ধান্তে রাজী?’
তারা সকলেই সম্মতি জানালো। ফলে জিসান আর কিছু বলতে পারল না। মুনতাহা আহসান ও রিমির সাথে জিসান ও জান্নাতের বিয়ে হবে বলে জানিয়ে দিল। সাথে জিসান ও জান্নাতেরও গায়ে হলুদ পড়ানো হলো।

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৯+৩০