তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬
শান্তনা আক্তার

দু বাড়িতেই তুমুল তোড়জোড়ে বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে রিমি তিয়াসার জন্য এক মিনিটও শান্তি মতো শ্বাস নিতে পারছে না। তিয়াসা একটার পর একটা লেহেঙ্গার ডিজাইন দেখাবে আর আগেরটা রিজেক্ট করবে। তিয়াসাকে আশেপাশে কোথাও না দেখতে পেয়ে সেই সুযোগে রিমি আহসানকে কল দেবে ভাবছিল ওমনি তিয়াসা ঘরোয়া ফেস প্যাক বানিয়ে হাজির হলো।

‘কি করছে ওয়েডিং গার্ল?’
রিমি হচকচিয়ে যায় তিয়াসার কথায়। তারপর মুখে বিরক্তির ভাব টেনে বলে ওঠে,
‘তুই কি একটু কথা বলতে দিবি না আহসানের সাথে?’
‘বিয়ের পর কথা বলতে পারবি অনেক। এখন শুধু সাজগোজের সময়।’
রিমি চিন্তিত মুখশ্রীতে বলল, ‘তুই কি করবি আমাকে দিয়ে?’
‘এই যে ফেসপ্যাক লাগাবো। দেখবি মুখ চকচকে হয়ে যাবে। বিয়ের এখনো দুই দিন বাকী। এর মধ্যে কাজ হয়ে যাবে।’
‘আমি এসব হাগুটাগু লাগাবো না। সর এখান থেকে।’
‘আচ্ছা! তাহলে বিয়ের দিন আমাকে জিজ্ঞেস করিস তোকে কেমন লাগছে। তখন আমি কিছুই বলবো না। তোর জন্য কাঁদবোও না দেখিস।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আচ্ছা কাঁদিস না তুই। আমিও আর এই বাড়িতে আসবো না দেখিস।’
রিমি কথাটা শেষ করলো কি তিয়াসা কান্না শুরু করে দিল। তা দেখে রিমির খুব খারাপ লাগলো। রিমি দু কদম এগিয়ে বলল,
‘আচ্ছা তোর ফেসপ্যাক লাগা তাহলে। আমি এইযে বসলাম।’
তিয়াসা নিমিষেই হেসে ওঠে। খুশি হয়ে বলে, ‘এইতো আমার ভালো আপু।’
‘তুই কখনো বড় হবি না রে তিসু।’

তিয়াসা রিমির মুখে ফেসপ্যাক লাগাবে কি আম্বিয়া এসে বলল, ‘রিমি তোর ননদ আসছে। তোর সাথে কথা বলতে।’
ননদের কথা শুনে রিমি ও তিয়াসা দুজনেই চমকে গেল। আর ভাবতে লাগলো এখন কেন আসলো! ওদের ভাবনার মাঝেই স্রুতি প্রবেশ করলো ওদের রুমে।
স্রুতি মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘হোয়াটস আপ গাইস? কি করছিলে তোমরা?’
রিমি ও তিয়াসা দুজন একসাথে বলল, ‘ফাইন।’

‘এভাবে বললে কেন? আমাকে দেখে খুশি হওনি তোমরা?’
‘খুশি হবো না কেন আপু? তুমি তো আমাদেরই আত্মীয় হলে এখন থেকে।’ তিয়াসা বলল।
‘ওহ,থ্যাঙ্কিউ লিটিল সিস্টার। আমাকে বসতে বলবে না?’
‘হুম বসো আপু।’
‘শুধু তুমি বললে হবে নাকি? রিমি তো বলছে না।’

রিমি এতক্ষণ ভাবছিল স্রুতির আসার কারণ। তাই স্রুতিকে তেমন কিছু বলেনি। কিন্তু এবার না বলে থাকতে পারলো না।
‘কি বলছো এসব? আমার থেকে পারমিশন নিতে হবে না। নিজের বাড়ি মনে করবে।’
রিমির থেকে অনুমতি পেয়ে স্রুতি তিয়াসা ও রিমির পাশে গিয়ে বসে।
‘তো বোনকে ফেসপ্যাক লাগানো হচ্ছিলো নাকি?’ জিজ্ঞেস করল স্রুতি।
‘হ্যাঁ, কিন্তু আপু লাগাতে চাচ্ছিলো না। আমিই জোর করি আপুকে।’

‘সো সুইট। তুমি তো ভারি মিষ্টি একটা মেয়ে। নাম কি গো?’
‘তিয়াসা।’
‘বাহ! যেমন মিষ্টি মুখ, তেমনই নাম। খুব কিউট।’
‘থ্যাঙ্কিউ আপু।’

‘তো তিয়াসা, তুমি কি একটু বাহিরে যেতে পারবে? মানে আমার রিমির সাথে কিছু কথা ছিল আরকি। একটু আলাদা ভাবে।’
তিয়াসা রিমির দিকে তাকাতেই রিমি বাহিরে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। তিয়াসা বাহিরে চলে গেলে স্রুতি দরজাটা লাগিয়ে দিল। তারপর রিমির দিকে এক পলক চেয়ে ব্যাগের চেইন খুলল। রিমি চেয়ে চেয়ে শুধু স্রুতির কান্ড দেখছে। স্রতি ব্যাগ থেকে বান্ডিল বান্ডিল টাকা বের করলো। তা দেখে রিমির চোখ প্রায় চড়কগাছ। রিমিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে স্রুতি বলল,

‘এতগুলো টাকা একসাথে দেখে খুব অবাক হচ্ছো তাইনা?’
‘তুমি এই টাকা,,, রিমিকে সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে স্রুতি আবারও বলল,
‘পুরো পাঁচ লাখ আছে। গুনে দেখতে পারো।’
‘আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি করতে চাচ্ছো। কাইন্ডলি বললে ভালো হতো।’
‘টাকা দেখে বুঝতে পারছো না আমি কি করতে এসেছি?’
‘না পারছি না।’ রিমি বলল।

‘ডিল করতে এসেছি। ইউ নো, গিভ এন্ড টেক।’
‘কিসের ডিল?’
‘আহসান আর টাকার।’
রিমি আশ্চর্যান্বিত মুখে বলল, ‘মানে!’
‘মানে আহসানকে দিয়ে টাকা নিয়ে যাবে।’
‘তুমি কি মজা করতে এসেছো?’
‘নো,স্রুতি কখনো মজা করে না। স্রুতি যা বলে স্ট্রিটকার্ট বলে।’
‘আমি তোমার হবু ভাবি। যদিও আমি তোমার থেকে বয়সে ছোট, তবুও সম্পর্কে বড়। তাই আমার সাথে অস্বাভাবিক কিছু বলতে আসবে না বলে দিলাম।’

‘হাহাহা, এখনো বিয়ে হয়নি ওকে?’
‘গুনে গুনে দুদিন বাকী মাত্র। হতে কতক্ষণ?’
‘আমি তো হতে দেব না। বিকজ আই লাভ আহসান।’
‘তো আমি কি করবো?’
‘বিয়েতে না করে দাও।’

‘কেন না করবো? যেখানে আমি আর আহসান একে অপরকে ভালবাসি, সেখানে না শব্দটা কোথ থেকে আসবে?’
‘বললাম না টাকা নিয়ে আহসানকে দেবে। আহসানের বদলে টাকা নাও। এইজন্যই তো আহসানকে ফাঁসিয়েছো। চিন্তা নেই আরও পাবে৷ প্রতি মাসে পাবে।’
‘ছি, তুমি খুব খারাপ মেয়েলোক দেখছি।’
‘হুম তবে খারাপ হতে বাধ্য করেছো।’

‘তুমি যদি এই কুৎসিত কারণে এসে থাকো তাহলে এখনই এখান থেকে বেরিয়ে যাও।’
‘আমি কাজ না হওয়া অবধি যাচ্ছি না। বলো রাজি কিনা?’
‘না রাজি না। তুমি কি ভেবেছো, আমি টাকার জন্য আহসানকে ভালবাসি?’
‘সন্দেহ নেই তাতে।’
‘আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার আগে চলে যাও এখান থেকে।’
‘যাব,তবে আহসানকে নিয়ে।’

‘আমি তো ধরে রাখিনি আহসানকে! তুমি তো আমার থেকেও আহসানকে বেশি দেখো, তাও আবার চোখের সামনে। তাহলে আমার থেকে কেন চাচ্ছো? আহসানকে গিয়ে বলো তার থেকেই চাও তাকে।’
‘খুব শেয়ানা তুমি। জানো যে আহসান তোমাকে চায় তারপরও,,,
‘থামো এখানেই। আহসান আমাকে চায় জানোই যখন, তখন এত কাঠখড় পুড়িয়ে লাভ কি?’
‘আই লাভ আহসান। আই ওয়ান্ট হিম।’ উচ্চস্বরে বলল স্রুতি।
‘আই অলসো লাভ আহসান। এন্ড উই ওয়ান্ড ইচ আদার।’

‘আমি শেষ বারের মতো বলছি সরে যাও আমার আর আহসানের মধ্যে থেকে।’
রিমি হো হো করে হেসে দিল। তারপর বলল, ‘তুমি সরে যাও। কারণ আমি নই, তুই আসতে চাচ্ছো আমাদের মধ্যে।’
‘আমি আহসানকে চাই।’
‘তুমি চাইলে কি? আহসান তো আর চায়না। তাহলে যেচে হ্যাংলামি করতে আসো কেন?’
‘তুমি কিন্তু বেশি বলে ফেলছো রিমি?’

‘শুনতে কেন এসেছো? কান খুলে শুনে রাখো, আমি ওতটা উদার নই যে নিজের ভালবাসা বিলিয়ে দেব। আর সিনেমার নকল করা বন্ধ করে টাকাগুলো নিয়ে বেরিয়ে যাও। এই টাকাগুলো তোমারই কাজে লাগবে। আমাদের বিয়েতে পড়ার জন্য ভালো একটা ড্রেস কিনে নিয়ো এই টাকাগুলো দিয়ে। যাও পার্লার থেকে ফেসিয়াল টেসিয়াল করো গিয়ে। বিয়ের দিন ছবিতে যেন ভালো দেখা যায় তোমাকে। আমার ফ্রেন্ডসরা আসবে বিয়েতে।’
‘রিমি,,,!’

‘গলা ও আঙুল দুটোই নামিয়ে কথা বলবে ননদিনী। ভাবি হই তোমার। এখন রাস্তা মাপো।’
‘আমি কিন্তু এর শোধ নেব!’
‘যা ইচ্ছে করো। আই ডোন্ট কেয়ার।’
‘আহসান শুধু আমার বলে রাখলাম।’
রিমি ওর কান চেপে ধরে বলল, উফ কত চিল্লাতে পারো তুমি! মেয়েদের এত গলাবাজি করতে নেই। আহসান যদি তোমাকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করে এতে আমার কিছুই করার নেই। সব কিছু আহসানের মধ্যে। তাই পারলে আহসানকে রাজি করাও। সময় তো ফুরিয়ে যায়নি। দুইদিন আছে তোমার হাতে।’
‘সেটা পারলে তো করতামই।’

‘বুঝি না এই মেয়েগুলো এক তরফা ভালবাসায় কি খুঁজে পায়? তোমার জায়গায় আমি থাকলে হেসে হেসে ভালবাসাকে বলি দিয়ে দিতাম। ভেবো না বলি মানে খুন। আমি ভালবাসার বলি দিতাম,ভালবাসার মানুষকে নয়।’
‘আমি তো পারবো না বলি দিতে। কারণ আমি কোনো দোষ করিনি। তাহলে ত্যাগ,বলি কেন দেব?’
‘তোমাকে বোঝানো আমার সাধ্যি নয়। আমি আহসানকে ছাড়ছি না। তুমি অন্য কোনো ভাবে ট্রায় করে দেখতে পারো।’
এরই মাঝে আহসানের কল আসে। রিমি ওর ফোনের স্ক্রিন দেখিয়ে বলল, ‘আমার হাবি কল দিয়েছে। আমি এখন কথা বলবো। তুমি থার্ড পারসন। সো সসম্মানে বের হয়ে যাও।’

স্রুতি আর কিছু না বলে রাগে গিজগিজ করতে করতে চলে গেল টাকাগুলো নিয়ে। তিয়াসা বাহিরে নাস্তার ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। স্রুতির মুখে তীব্র রাগের ছাপ স্পষ্ট। তিয়াসা স্রুতিকে কিছু বলার আগেই স্রুতি ভাবলেশহীন ভাব করে চলে গেল।
সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম। আহসানদের বাড়িতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে। ড্রইং রুমে প্যান্ডেল সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে। ওইদিকে রিমিদের গোছগাছ প্রায় শেষ। আহসানদের বাড়ি থেকে গাড়ি আসলেই চলে যাবে তারা। তিয়াসা নাচ প্রাক্টিস করছে। তিয়াসা ওর পার্টনার হিসেবে ওর খালাতো ভাই মানিককে রেখেছে। যে যার যার কাজে ব্যস্ত। এদিকে রিমি বোর হচ্ছে। তাই মুড অফ করে বসে আছে খাটের কোণে। নিমিষেই রিমির মন ভালো হয়ে যায় ফোনের স্কিনে আহসানের কল দেখে। রিমি কল রিসিভ করে বেশ অভিমানী সুরে বলল,

‘এখন সময় হয়েছে? কল না দিলেও পারতেন।’
‘তাই? ওকে বায় তাহলে।’
‘বায়! সারাদিন গেল একটা কল তো দূর,একটা ম্যাসেজ অবধি দিলেন না। এখন আবার বায় বলছেন?’
‘আপনিই তো কথা বলতে চাচ্ছেন না। তাইতো বললেন কল না দিলেও পারতেন। আমি ভাবলাম বিজি হয়তো।’
‘আমি বিজি? সারাদিন বসে বসে একঘেয়েমি চলে আসছে৷ আর আমি নাকি বিজি!’
‘আমি তো মজা করছিলাম। আপনি এখনো আমাকে বোঝেন না দেখছি। বউটা আমার কত অবুঝ!’
‘আপনি যে কেমন সব মজা করেন! যাজ্ঞে, স্রুতি কি আপনাদের বাড়িতেই আছে এখনো?’

‘হুম আছে।’
‘ও আচ্ছা। স্রুতি আপনাকে কিছু বলেছে কি? মানে সেদিনের ঘটনার পর কোনো কান্ড বাধিয়েছিল?’
‘না আমার সাথে তেমন কিছুই বলেনি। আপনিও তো আমাকে কিছু বলতে দিলেন না।’
‘আপনি কেন কিছু বলবেন? আপনাকে কিছুই বলতে হবে না। উনি যদি আপনাকে বলতে আসে তাহলে বলবেন। যেচে বলতে হবে না কিছু। দরকারই নেই কোনো।’

‘ওকে, তবে স্রুতি যে এতটা খারাপ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। খুব ভালো ভাবতাম ওকে।’
‘তার মানে আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না তাইতো?’
‘আরে তা বলিনি। বিশ্বাস করেছি। কিন্তু মানতে পারছি না। কারণ স্রুতি সবসময় শান্তশিষ্ট থাকে। তাছাড়া আমার রিমি মিথ্যে বলতে পারে না। এত বড় একটা বিষয় নিয়ে তো না-ই।’
‘শুনুন! সকল শান্তশিষ্ট মানুষরাই লেজবিশিষ্ট হয়। উপরে দেখায় এক, কিন্তু ভেতরে থাকে আরেক।’

‘ওহ,জানতাম নাতো।’
‘এখন জেনেছেন তো?’
‘হুম আপনি জানালেন বলে জানার সুযোগ হলো। যাই হোক ওইসব কথা বাদ। আজ তাহলে হলুদ রঙে দেখছি আপনাকে?’
‘হুম তবে আপনি কিন্তু লাল পড়বেন বলে রাখলাম।’
‘ঠিক আছে। আমার বউ যা বলবে তাই শুনবো।’
‘গুড, আপনার ফর্সা গায়ে লাল পাঞ্জাবি বেশ মানাবে। আমি তো ভেবেই খুন।’
‘এই না। খুন হওয়ার কথা বলবেন না। আপনি খুন হলে আমার বউ কে হবে?’
‘কে আবার? ওই স্রুতি ডাইনি।’

‘চুপ! একদম চুপ।’ আহসান ধমক দিয়ে উঠে।
‘ধমকাচ্ছেন কেন? ভুল কি বললাম?’
‘আপনার জায়গায় অন্য কেউ যে মানানসই নয়। তাই নেক্সট টাইম আর এসব বলবেন না।’
‘হুম বলবো না। তবে একটা শর্তে। আপনাকে আমার একটা কথা রাখতে হবে।’
‘কি শর্ত? সব শর্তেই রাজি আমি।’

‘আপনি এত ভদ্র কেন? এতটা ভদ্র হওয়াও ভালো না বুঝলেন?’
আহসান গলায় বিস্মিত ভাব টেনে বলল, ‘মানে? আমি কি তাহলে অভদ্র হয়ে যাব?’
রিমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলল,
‘হুম একটু হন।’
‘যেমন! কেমন অভদ্র হতে বলছেন?’
‘আপনি থেকে তুমিতে নেমে।’
‘ওহ, হা হা হা।’
‘হাসলেন যে?’

‘হাসছি আপনার,,,,সরি হাসছি তোমার কথা শুনে। নিজে ভদ্র থেকে আমাকে অভদ্র হতে বলছো। এটা কেমন?’
‘সরি, আমিও অভদ্র হলাম তাহলে। তুমি বলবো এখন থেকে। চলবে?’
‘হুম চলবে। কি করছো তুমি?’
‘কি আর করবো? বোর হচ্ছি। তবে এখন ভালো আছি। তুমি আমার সাথে কথা বলতে পারো না সবসময়? তাহলেই তো ভালো থাকি আমি।’

আহসান দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল, ‘তুমি তো পাগল হয়ে গেছো আমার প্রেমে। ব্যাপার কি হুম?’
আহসানের কথায় রিমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। আসলেই তো রিমি একটু বেশিই দুর্বল আহসানের প্রতি। রিমি লজ্জা কাটিয়ে কঠোর হয়ে বলল,
‘তো অন্য মেয়েদের মতো ইগনোর করলে খুশি হতে মনে হচ্ছে? আচ্ছা তাই করি নাহয়।’
‘আরে না, আমার তো এমনই ভালো লাগে। সবার ভাগ্যে এমন বউ জুটে নাকি? তুমি যেমন আছো, এমনই থেকো।’
‘আর তুমিও এমনই থেকো। স্রুতি টুতি পেয়ে আমাকে ভুলে যেওনা।’

‘আবার!’
‘আচ্ছা সরি। আর বলবো না। এই শেষ।’
‘মনে থাকে যেন। আমার চোখ একজনকেই দেখতে চায়, আর সেটা আমার রিমি।’
‘সত্যি বলছো?’
‘হুম সত্যি। কম্পনের তীব্র আকার তুমি, গিটারের তার তুমি, আষাঢ়ের ঘনঘটা তুমি, আমার প্রতিটি নিশ্বাসে শুধুই তুমি। এই তুমিটা কখন যে আমার রুমের ভাগীদার হবে! তুমি খুব তাড়াতাড়ি চলে এসো আমার সব জিনিসে ভাগ বসাতে।’

‘কিন্তু ডাক্তার সাহেব, আমি যে আপনার মনে ভাগ বসাতে চাই। সেটা হলেই হবে।’
‘সেটা আর বলতে? হেসে দিয়ে দেব তোমায়। তুমি ছাড়া কে পাবে সেটা?’
‘কেউ না। কাউকে পেতেই দেব না। স্রুতিকে তো না-ই।
‘রিমিই!’
‘সরি,সরি,সরি আর না। এবারই শেষ। মাফ করে দাও গো।’
‘আজকে Turmeric Ceremony তে এসো শুধু। তারপর শাস্তি তোমায় দিয়েই ছাড়বো।’ এই বলে ফোন কেটে দিল আহসান।

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৩+২৪

জিসান খুব এক্সাইটেড তিয়াসাকে আবার দেখতে পারবে বলে। জিসান শুধু চোখ বন্ধ করে ভাবছে তিয়াসাকে দেখলে ওর এক্সপ্রেশন কেমন হবে। ওর ভাবনার মাঝেই কানে তীব্র আকারে গানের শব্দ গিয়ে বারি খেল। জিসান হতভম্ব হয়ে চোখ খুলে ফেলল। দেখলো জান্নাত দাড়িয়ে আছে ফোন হাতে। জান্নাত জিসানকে ভয় পেতে দেখে ফিক করে হাসলো খানিক।
তা দেখে জিসান বেশ রেগে গিয়ে বলল, ‘কি চাই তোর?’

‘কি চাই মানে? দেখছো না গান বাজছে। ডান্স হবে বুঝলে?’
‘তো কে মানা করেছে? নিজের রুমে গিয়ে নাচ। এখন আমাকে একা থাকতে দে।’
‘না, তুমি আমার পার্টনার হিসেবে নাচবে। তাই আমি যাচ্ছি না। চলো তোমাকে শিখিয়ে দেই।’
‘নো ম্যাম। আমি নাচছি না। তুই অন্য কারো সাথে নাচ গিয়ে।’
‘না তুমিই নাচবে আমার সাথে। আমি কিছুই জানি না।’

‘দেখ আমার মাথায় প্রচুর ব্যথা। তাই বলছি জ্বালাস না আমায়।’
‘সত্যি তোমার মাথা ব্যথা?’
‘হুম সত্যি।’
‘তাহলে থাক। আমিও নাচছি না তাহলে।’ মন খারাপ করে বলল জান্নাত।
‘কেন? তুই মজা কর। তোর আপন ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।’
‘না মুড নেই।’ এই বলে চলে আসে জান্নাত।

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮