তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ৩+৪

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ৩+৪
শান্তনা আক্তার

আহসান রিমির সাথেই কাটিয়ে দিল দিনটা। ফরম জমা দিতে গিয়েই যত সময় গেল। কিন্তু তবুও যেন আহসান সামান্য পরিমাণও বিরক্ত হয়নি। রিমি অবশ্য সারাদিন বকবক করে আহসানের মাথা খেয়ে ফেলেছিল। তারপরও আহসান হাসিমুখে সবটা শুনে গেল। বরং আহসান খুব এঞ্জয় করেছে রিমির প্যাচালগুলো। ডেয়ার অনুযায়ী বিকেলে আহসানের ফেরার কথা। আহসান ঠিক বিকেলেই ফিরেছে। ফেরার আগে জিসানকে ছোট করে একটা ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে রেখেছে। ফলে নিজ রুম অবধি খুব সচেতনতার সাথে আসতে পারলো আহসান। রাতে আবার বসলো ভাই বোনেদের হাট। এবার সবাই ছাদে গিয়ে গল্পে বসেছে। চারটে চেয়ার গোল করে বসানো। মানুষও চারজন। সর্বপ্রথম জিসান বলল,

‘কিরে ভাইয়া! এখনো কিছু বলছিস না কেন? সেই থেকে আনমনে হেসেই চলেছিস দেখছি। আমাদেরও একটু হাসার সুযোগ দে।’
‘ঠিক। বলনা ভাইয়া কি হয়েছে আজ তোর সাথে।’ জান্নাত বলল।
‘তেমন কিছু না তবে আজকের দিনটা আমার জন্য খুব স্পেশাল। টুডে ইজ মাই ডে।’
স্রুতি তেমন কিছু বলছে না। কিন্তু আহসানের কথা শুনে আর কথা না বলে থাকতে পারলো না।
‘কি এমন হলো রে? তোর এক্সপ্রেশন দেখে জান্নাত আর জিসানের সাথে আমারও খুব জানতে ইচ্ছে এখন।’
‘বললাম তো তেমন কিছুই হয়নি। জাস্ট বলবো আমি খুব এঞ্জয় করলাম আজকের দিনটা। লোকাল বাস, ফুটপাতের ফুচকা, জনসমাগম, একজনকে ধাক্কা দিয়ে অন্যজন আগে যাওয়া। জাস্ট ওয়াও ফ্যাক্ট। লাইফে ফার্স্ট এমন এক্সপেরিয়েন্স হলো। অল ক্রেডিট গোস টু মাই লিটিল ব্রাদার জিসান।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ইয়াক! এসব আবার কেমন এক্সপেরিয়েন্স! আমার তো ভেবেই কেমন বিচ্ছিরি লাগছে। নোংরা পরিবেশের, নোংরা মানুষগুলোর সাথে তোর কিভাবে দিন ভালো গেল রে ভাইয়া?’ জান্নাত ওর কথাটা শেষ করার সাথে সাথে জিসান আস্তে করে একটা চাটা মারলো জান্নাতের মাথায়। মেরেই বলল,
‘তুই যেভাবে বললি যেন তুই অন্য গ্রহের মানুষ! ভাবছি ভাইয়ার মতো আমি একদিন এমন কোনো এক ভ্রমণে বের হবো। বেশ হবে। তারপর আমিও ভাইয়ার মতো এভাবে মিটিমিটি হাসবো। কি বলো গাইস?’
‘আহারে, মিটিমিটি হাসতে আসছে! ভাইয়াকে তো মানিয়েছে। কিন্তু তোমাকে? বাতাস লজ্জা পেয়ে অক্সিজেন দেওয়া বন্ধ করে দিবে তোমার হাসি দেখলে।’

জান্নাতের কথায় আহসান আর জিসান বাদে স্রুতি হো হো করে হেসে দিয়ে বলল, ‘একদম ঠিক বলেছিস জান্নাত।’
‘জান্নাত কি ঠিক বলেছে আপু? তুই এই পিচ্চি গাঁধী মার্কা মেয়েকে বল আমাদের অক্সিজেন গাছ দেয়। বাতাস নয়। এতোটুকু সেন্স নেই মাথায় আবার আসছে আমার হাসির কমপ্লিমেন্ট দিতে।’
‘আপু তোমার বেয়াদব ভাইয়ে আদব শেখাও প্লিজ। আমার কিন্তু আর একটুও ভালো লাগছে না।’
‘তোদের মাঝে থেকে আমার মুড খারাপ না থাকলেও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমার ঘুম পাচ্ছে সো গুড নাইট গাইস।’ বলে চলে গেল আহসান।

‘ঠিক বলেছে আহসান। আমারও সেম ঘুম আসছে আমিও যাই গুড নাইট এভরিবডি।’ এবার স্রুতিও চলে গেল।
‘আমি আর কি করবো? এই পেত্নীর সাথে গল্প করার কোনো ইচ্ছে নেই আমিও যাই। যাই গিয়ে একটা তামিল সিনেমা দেখি।’ জিসানও চলে গেল। জান্নাত একে একে সবাইকে চলে যেতে দেখলো বসে বসে। তারপর বলল,
‘যাহ সবাই চলে গেল! তো আমি কি করছি? একা একা এই ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত দেখার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার। নিজের রুমে যাই আমি।’

আহসান নিজের রুমে এসে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালালো। মুহুর্তেই রুমের চারিদিকের মহল বদলে গেল। রুমের চারিদিকে নীল আভা। আহসান বিছানায় আধশোয়া হয়ে ভাবতে লাগলো রিমির কথা। চারপাশের হিমশীতল পরিবেশটা একটা আলাদা অনুভূতির জাগরণ করলো আহসানের মনে। কিছু কথা মনে পড়তেই ফিক করে হেসে দিল আহসান। তারপর বলল, ‘কি অদ্ভুত ব্যাপার! আহসানের সামনেই আহসানকে প্রপোজ করার কথা বলল মেয়েটি। শিট আমি তো মেয়েটির নামই জিজ্ঞেস করলাম না! মেয়েটির থেকেও আমি বেশি অদ্ভুত দেখছি। আজ তো এই ভেবে ঘুমও আসবে না। কি করি? কাল আবার সেই জায়গাটায় যাই বরং। হ্যাঁ তাই করি। লাক ভালো হলে দেখা হয়েও যেতে পারে মেয়েটির সাথে। তারপর নাহয় আমার আসল পরিচয় আর তার নাম জানা যাবে। এখন তার কথাই ভেবে রাত কভার করি।’

গতকালের সেই জায়গাটাতে একই সময়ে আহসান রিমির জন্য ওয়েট করতে লাগলো। ওয়েট করেই যাচ্ছে কিন্তু রিমির দেখা মিলছে না। এবার গাড়ি থেকে নেমে আশে পাশে চোখ বুলাতে লাগলো।
‘আচ্ছা উনি কি এই পথ দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন, নাকি গতকাল দরকারি কাজের জন্য এসেছিলেন? ওনার বাড়ি কি আশেপাশে?’ এমন নানানরকম প্রশ্ন একা একাই নিজেকে করতে লাগলো আহসান। কিছুক্ষণ পর হাতের ডান সাইডের গলিটায় পা বাড়ালো কি যেন ভেবে। কিছুদূর যেতেই একটা কম বয়সী মেয়ে আর দুটো বখাটে টাইপ ছেলেকে দেখতে পেল। ছেলে দুটো মেয়েকে বাজে কথা বলে উত্ত্যক্ত করছিল। আহসানের কাছে বিষয় টা একদমই পছন্দ হয়নি বলে দ্রুত গতিতে সেখানে গিয়ে পৌঁছালো।
‘এভাবে একটা বাচ্চা মেয়েকে harass করতে লজ্জা লাগছে না?’

মেয়েটি ভয়ে কাঁপছে। চোখ টলমল করছে। এতোক্ষণ কেউ মেয়েটির হয়ে কথা বলছিল না বলে মেয়েটির ভয় ধিরে ধিরে বাড়ছিল। তবে এখন কিছুটা স্বস্তি পেল আহসান এগিয়ে আসায়। মেয়েটি বলল, ‘ভাইয়া আমাকে এই বাজে লোকগুলো অশ্লীল কথা বলছে। বাসায় যেতে দিচ্ছে না।’

আহসান মেয়েটির মাথায় হাত রেখে বলল, ‘কিছুই হবে না এদের পুলিশে দিয়ে দিলেই শিক্ষা হবে।’ বলে ফোন বের করল। তাই দেখে ছেলে দুটোর মধ্যে একজন বলে ওঠে, ‘হিরোগিরি দেখাতে আসছোস নাকি? যা ভাগ এখান থেকে। এটা আমাদের এলাকা। এখানকার মেয়েরা আমাদের সম্পদ তোকে আগ বাড়িয়ে আসতে হবে না।’ আহসান পুলিশের সাথে কথা বলতে পারলো না। তার আগেই ছেলেটিকে সপাটে একটা চড় দিল। ছেলেটি কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে।

‘ভালো শিক্ষার অভাবে তোমরা দিনকে দিন হিংস্র হয়ে যাচ্ছো। মেয়েদের মানুষ মনে হয়না তাইনা? ওয়েট করো দু মিনিটের মধ্যে পুলিশ চলে আসছে।’ ছেলে দুটো আর ঝামেলা পাকালো না। চারিদিকে লোকজনের ভীড় জমেছে। তাই পরিস্থিতি খারাপ দেখে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেল।
মেয়েটি মনের ভয় কাটিয়ে হেসে দিয়ে বলল,’থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া।’
‘থ্যাঙ্কিউ জানাতে হবে না। তুমি এভাবে একা বাজারে কেন এসেছো?’
‘আমার তো ভাই নেই তাই আসতে হয় মাঝে মাঝে। ছেলেগুলো এমনই রোজ কাউকে না কাউকে বিরক্ত করে। আজ আমাকে যেভাবে করলো।’

‘হুম, এদের জন্য সবাইকে একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে। এক দুজনে কাজ হবে না। তুমি চিন্তা করো না এদের ব্যবস্থা আমি করবো।’
‘আপনি খুব ভালো ভাইয়া। নাম কি আপনার?’
‘আহসান তালুকদার। আর তোমার?’
‘তিয়াসা, কিন্তু ভাইয়া আপনি কোন আহসান?(গলায় বিস্মিত ভাব টেনে বলল)
‘কোন আহসান বলতে?’
‘মানে কাছেই যে একটা মস্ত বড় তালুকদার বাড়ি আছে সেই বাড়ির আহসান নাকি?’
‘হ্যাঁ, আমাকে চেনো নাকি?’

‘আপনাদের কে না চেনে? আপনাদের ফ্যামিলি নিয়ে আমাদের মতো পরিবারের লোকেরা কতই না আলোচনা করে। কিন্তু একজন তো একটু বেশিই। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি সেই আহসান!’
‘একজন একটু বেশি মানে? কে সে?’
‘আমার সাথে চলুন দেখতে পাবেন।’
‘কোথায় যাব?’
‘গেলেই জানতে পারবেন। প্লিজ ভাইয়া চলুন না।’

‘কতদূর যাবে? আমার হাতে সময় নেই একদম। একজনের জন্য ওয়েট করছিলাম।’
‘এইতো কিছুদূর হাঁটতে হবে। বেশিক্ষণ লাগবে না।’
‘ওকে তাহলে চলো আমার গাড়িতে করে যাই। প্রবলেম হবে কি? আসলে আমার খুব তাড়া।’
‘না চলুন কোন প্রবলেম নেই।’

আহসান তিয়াসার ভাব ভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু যেভাবে রিকুয়েষ্ট করলো, আহসান আর মানা করতে পারলো না।
‘এই তিয়াসা এখনো আসছে না কেন? সেই কখন পাঠালাম বিরিয়ানির মসলা আনতে, এখনো আসছে না। রিমি রাগে গিজগিজ করছে আর খুন্তি নাড়ছে। আজ বাড়ি আসুক পুরো ধুয়ে দেব। আব্বু আম্ম বাসায় নেই ভালোই হয়েছে। এই সুযোগে তোকে যদি একটু সঠিক পথে আনতে পারি। আব্বু আম্মুর জন্য কিছুই বলা যায়না তোকে। তুই আজ শুধু আয় বাড়ি!’

‘ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাইকে দেখছি কিন্তু আহসানকে দেখছি না কেন অপা?’
খুব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন রঞ্জিত। অপা বলবে কি তার আগে স্রুতি বলে ওঠে,
‘আহসান একটু বাহিরে বের হয়েছে মামু। ওর নাকি বাড়িতে বসে বসে ভালো লাগছে না।’
‘ওহ, ভালো করেছে। কিন্তু তোমরা সব ভাইবোন কেন গেলে না আহসানের সাথে?’
‘ভাইয়া কি আমাকে নিয়ে কোথাও গিয়েছি বাপি?’ জান্নাত বলল।

‘নিয়ে যায়নি ঠিক আছে কিন্তু তুমি ছাড়াও এখানে স্রুতি আর জিসান আছে। আহসানের উচিত ছিল সবাইকে সাথে নিয়ে যাওয়ার।’
‘আহ রঞ্জিত! খাবার সময় এতো কথা বলবি না বলে দিলাম। এসব আমার মোটেও পছন্দ না। আর আহসান বড় হয়েছে। নিজের ভালো মন্দ বোঝে। ওর একা যেতে ইচ্ছে হয়েছে, তাই একাই গিয়েছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।’ বেশ ধমকের সুরে বললেন মুনতাহা তালুকদার। রঞ্জিত তার মায়ের কথায় উঠে বসে। মুনতাহার যেটা অপছন্দ সেটা রঞ্জিতের কাছেও অপছন্দ। কখনো মায়ের মুখের উপর কথা বলেনা রঞ্জিত। সবসময় মায়ের খুশির জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে।

‘ঠিক আছে মা। ও হ্যাঁ তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম মা। এখন বলবো নাকি পরে?
‘কি কথা? এখনই বল পরে ভুলে যেতে পারিস। তোর অভ্যাস ভালো না। সবসময় সময়ের কথা সময়ে না বললে ভুলে যাস তুই। হা করে তাকিয়ে না থেকে বল কি বলবি।’
‘আগামীকাল বাবার নামে হসপিটাল টার inauguration ceremony হবে। আমি চাই তুমি ফিতে কেটে সবার আগে হসপিটালে প্রবেশ করো। তোমার পায়ের ধুলো দিয়ে আমি কাজ শুরু করতে চাই।’
‘এতো তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেল! অবিশ্বাস্য। তুই যে কি? মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই।’
‘তোমার হুকুম বলে কথা। এভাবেই আমাকে শুধু হুকুম করে যাবে তুমি।’
‘হয়েছে এবার খাবার শেষ কর। নইলে আমাকে জানিস তো।’

একটা চিপা গলির সামনে গাড়ি থামাতে বলল তিয়াসা। আহসান গাড়ি থামিয়ে বলল, ‘তুমি exactly বলবে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’
‘সামনেই আমাদের বাড়ি। চলুন জানতে পারবেন।’
‘তোমাদের বাড়িতে আমি অচেনা একজন মানুষ হয়ে কিভাবে যাব? আজব মেয়ে তো তুমি!’
‘চলুন না ভাইয়া প্লিজ। এতোদূর যখন এসেছেন, বাসায় না গিয়ে চলে যাবেন কেন? আমি মানছি না সেটা।’
‘তোমার বাসায় কে কে আছে বলোতো? তারা সবাই কি ভাববে না ভাববে!’

‘আমরা চারজন। বাবা মা আর আমরা দুই বোন। বাবার নাম নাজমুল শিকদার,আম্মুর নাম আম্বিয়া, আপু রিমি,আমি তিয়াসা।’
‘এই মেয়ে, আমি কি সবার নাম জানতে চেয়েছি নাকি? বয়সের মতোই কাজ তোমার।’
‘দেখুন ভাইয়া, আপনি অন্যদের মতো আমাকে বয়স নিয়ে ছোট বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না বলে দিলাম। আর এতো হেজিটেড করছেন কেন হুম? আপনি চলুন গিয়ে দেখতে পাবেন কিছু একটা।’
‘কি দেখবো? তুমি অবিলম্বে একই কথা বলে যাচ্ছো। তুমি চাইছো টাকি? কাকে দেখবো আমি?’

‘ভাইয়া প্লিজ চলুন না। এসেই তো পড়েছি। আর পাঁচ মিনিট ধৈর্য রেখে আমার কথা মতো চলুন। নইলে ভাইয়া আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাবো।’
‘কি আর করার! আচ্ছা চলো।’
মনে মনে আহসান খুব বিরক্ত হচ্ছে। ভাবছে মেয়েটার সাথে আসাই ওর ভুল হয়ে গেছে। এখন এসে ফেঁসে গেছে। চলে যেতেও পারছে না। তিয়াসা যেভাবে আকুতি মিনতি করছে তাতে আর জোর দেখিয়ে কিছু বলতেও পারছে না যে ও বিরক্ত তিয়াসার কাজে। তিয়াসা আহসানকে নিয়ে বাসায় ঢোকা মাত্র একটা টমেটো ওদের কাছে ছুটে আসলো।

কেউ ছুড়ে মেরেছে। আহসান টমেটো টা ক্যাচ ধরে নিল সাথে সাথে। তারপর সামনে তাকাতেই বড়সড় আকারে অবাক হলো। আহসান ভাবতেও পারেনি আচমকা রিমি এসে প্রকট হবে ওর সামনে। রিমি কাউকে না দেখে বেশ রেগেই টমেটো ছুড়ে মেরেছিল। ভেবেছিল তিয়াসাই হবে। কিন্তু তিয়াসার সাথে আহসানকে দেখবে তা ভাবেনি। যদিও রিমি এখনো জানে না যে ছেলেটি আহসান। ওর কাছে আহসান অচেনা এক ছেলে এবং পাওনাদার। এটাই জানে শুধু।

রিমির চোখ ছোট হয়ে আসলো আহসানকে দেখে। আর আহসানের চোখ বড় হয়ে আসলো রিমিকে অকস্মাৎ দেখে। তিয়াসা গিয়ে বলল, ‘আপু দেখ আমি কাকে নিয়ে আসছি। তুই কিন্তু আমাকে ট্রিট দিবি বলে রাখলাম।’ তিয়াসা কথাটা শেষ করতেই রিমি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হানার মতো রূপ ধারণ করলো। হাতের খুন্তিটা তিয়াসার সামনে তাক করে বলল, ‘এতো দেড়ি লাগে হুম? সামান্য একটা কাজ দিয়েছি তাতেও তোর ঢিলামি।আর এই মক্কেলকে কোথা থেকে ধরে এনেছিস তুই? কিসের ট্রিট হুম? তোকে আজ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেব দেড়ি করার অপরাধে।’

‘আপু কি যাতা বলছিস তুই? উনি কে জানিস? জানলে তোর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। তওবা কর।’
‘আমাকে মানুষ চেনাস না বুঝলি। আমি ওনাকে চিনি আগে থেকেই।’
‘তুই চিনিস! ওএমজি, তাহলে তোর এক্সপ্রেশন এমন শুকনো কেন? ডাহা মিছা কথা বলছিস তুই।’
‘চুপ কর তুই। বলে রিমি আহসানের সামনে গিয়ে বলল, এই তুমি তো আস্ত একটা ছ্যাছড়া লোক দেখছি! আমি তো বলেছি সময় হলে বা আমার কাছে টাকা হলে আমি তোমাকে ফোন দিয়ে জানাবো,তুমি তোমার টাকা এসে নিয়ে যাবে। বিশ্বাস হলো না তাইনা? ভাবলে কোথাকার কোন মেয়ে তোমাকে বোকা বানিয়ে টাকা মেরে দিয়ে গেল। তাই আমার ছোট বোনকে খুঁজে বের করে বাড়ি অবধি চলে এলে!’

‘আপনি ভুল ভাবছেন। আমি তা মনে করিনি। প্লিজ ভুল বুঝবেন না।’
‘ঠিকই বুঝেছি। ভীতু লোক। তোমার টাকা আমি এক সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দেব। আমি যা বলি তাই করি। এটা রিমির যোবান। কখনো কথার হেরফের করি না।’
‘আপনার নাম তাহলে রিমি। খুব সুন্দর নাম।’
‘শুধু আমার নাম কেন? আমার বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টির নাম ঠিকানা বলছি। লিখে নিয়ে যেতে পারো। আমি ভয় পাইনা ওকে?’
‘আপনি শান্ত হয়ে আমার কথাটা শুনুন প্লিজ। আমি জানতাম না এটা আপনার বাড়ি। আর তিয়াসা যে আপনার ছোট বোন সেটাও জানতাম না। বিশ্বাস করুন।’

‘আপু তুই কি বলছিস এসব? টাকা দিয়ে দিবি বলছিস। কিসের টাকা দিবি ভাইয়াকে?’
‘তুই কোনো কথা বলবি না তিয়াসা। এখানে বড়দের কথা হচ্ছে।’
‘আপনি শুধু শুধু আপনার ছোট বোনকে বকবেন না। বেচারি জানে না বলে জিজ্ঞেস করছে।’
‘সেটা আমার সমস্যা। আমার বোনকে আমি মারবো,কাটবো তাতে আপনার কি? আপনি এখন আমার সামনে থেকে যান। এক সপ্তাহ পর দেখা কইরেন। বাসা যখন চিনে ফেলেছেন, বাসায় এসেই টাকাটা নিয়ে যেয়েন। এখন যান এখান থেকে।’

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১+২

‘আপু তুই আহসান ভাইয়ার সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেন?’
‘কি বললি? এর নাম আহসান? এর নামতো,,,,,,! এই তোমার নাম কি হুম?'(ভ্রু উপর নিচ করে বলল রিমি)
‘আহসান।’
‘ওমনি হুম? ওমনি আহসান হয়ে গেল! আজব!’
‘আজব নয় আপু। ভাইয়ার নাম আহসানই। ভাইয়া আমাকে বলেছে সে তালুকদার বাড়ির আহসান। তোর সেই প্রিন্স,ক্রাশ, ড্রিম। বুঝলি?’

‘কঁচু! গতকাল আমি একে আহসানের কথা বলেছিলাম। তাই আজ প্লান বানিয়ে এসেছে আহসান সেজে। কি মতলব তোমার হুম? ওরে বাব্বাহ! আজ দেখি সুট বুট পড়ে আসছে। বেশভূষাও পালটে ফেলেছো? ভালোই তো মতলব পুষে আসছো। ভেবেছো কি হুম? ভেবেছো আমি বিশ্বাস করে তোমার গলায় ঝুলে পড়বো? সাংঘাতিক মিনমিনে লোক তো? নিশ্চয়ই মস্ত বড় একটা গাড়িও ভাড়া করে এনেছো?’

‘আপু ওটা ওনারই গাড়ি।’
‘গাড়িও এনেছে! বাহ মিলে গেছে আমার ইম্যাজিনেশন। রিমির সেয়ানা মাথা বলে কথা। যা ভাবি তাই হয়ে যায়।’
‘দেখুন আপনি কিন্তু না জেনে বলছেন সবটা। আমি সব কিছু ক্লেয়ার করে বলছি। প্লিজ ঠান্ডা মাথায় শুনুন।’
‘আমি কোনো কথা শুনবো না। তুমি বের হও আমার বাড়ি থেকে।

এখনি বের হও নইলে আমি লোক ডাকতে বাধ্য হবো। ছদ্মবেশী লোক কোথাকার। বাঁচতে চাইলে বের হয়ে যাও এখনি। আর পাওনা টাকাটা ঠিক এক সপ্তাহ পর নিয়ে যেও।’
‘আপনি বিশ্বাস করুন আমিই আহসান। আমি ছদ্মবেশী নই।’ রিমি আহসানের কোনো কথাই আর শুনলো না। আহসানকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে বের করে দরজা লাগিয়ে তবেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ৫+৬