ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৪

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৪
তাসনিম তামান্না

আজ বাবুর আকিকা হৃদি রহমান রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আত্মীয় কে দাওয়াত করা হয়েছে। সবাই ই কানাকানি, ফুসুরফুসুর, গুজুরগুজুর করছে নিপা সবটা বুঝতে পারছে। নিজের কাছে ছোট লাগছে। নিপার ফুফু তো বলেই ফেলল
— নিপা ভালোই তো… প্ল্যান করে এক ভাই মরতেই অন্য ভাইয়ের গ লা য় ঝুলে গেলি। তোর বুদ্ধির তারিফ না করে পারি না রে
নিপা শক্ত গলায় বলল

— ফুপি মুখ সামলে কথা বলো আমি রুদ্র কে বিয়ে করতে চাই নি পরিস্থিতির চাপে পড়ে আমাকে বিয়ে টা করতে হলো আমার হাতে কিছুই ছিল না
— বুঝি বুঝি সবই বুঝি চোরের মায়ের বড় গলা কেউ না চাইলে তাকে আবার জোর করে বিয়ে দেওয়া যায় না-কি। তুই নিশ্চয়ই কিছু করেছিলি তাই হয়ত বেয়াই বেয়ইরা রুদ্রর সাথে বিয়ে দিতে বাদ্ধ্য হয়েছে তা না হলে ওমন সোনার টুকরো ছেলের সাথে তোমার মতো বিধবা সাথে মেয়ে হয়ে গেছে বিয়ে দিবে কেনো? আবার শুনলাম পপির সাথে রুদ্র প্রেম ছিল। মেয়েটা কতটা কষ্ট পেয়েছে সব তোর জন্য হয়েছে
নিপা এতো কথা শুনে ভেঙে গেলো বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— ফুপি এসব কি বলছ? বিশ্বাস করো আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই নি।
— শোন তোর মতো লো ভী মেয়ে দের আমার ভালো করে চেনা আছে যেই দেখেছিস অভ্র মা রা গেছে এখন যদি রুদ্র বিয়ে করে বউ আনে তাহলে তোই লস রুদ্রর ছেলে বাচ্চা হলে সব সম্পত্তি তো রুদ্র হয়ে যাবে সেই রাগে রাগে তুই বিয়ে করেছিস। কী ভেবেছিস আমরা বুঝি না কিছু? কোনো কিছুর খবর রাখি না?
পাশের বাসার আন্টির সাহস পেয়ে এগিয়ে এসে বলল

— ঠিক বলেছেন। সোনার ডিম পাড়া হাঁস কি কেউ ছাড়তে চাই না-কি? রুদ্র সাইন্টিস্ট নিশ্চয়ই কোনো বেহায়াপনা করে
নিপা নিচু করে শুনছে কিছু বলার নেই সবাই ওকে ভুল বুঝছে। নিপার মা এসে এসব কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল
— এসব কি বলছেন আমার মেয়ে কে? যা জানেন না তা নিয়ে কথা বলছেন কেনো?
— হ্যাঁ তুমি তো মেয়েকে এই শিক্ষা দিয়েছ না হলে রুদ্র মতো ছেলে তোমার মেয়ের মতো মেয়েকে কেনো বিয়ে করবে। তোমার মেয়ে রুদ্র কে ফুসলিয়ে তো বিয়ে করলো

— মুখ সামলিয়ে কথা বলুন। আমার মেয়ের নামে আমি আর একটাও বাজে কথা সহ্য করবো না অনেক বলেছেন আপনারা
রুদ্র বাইরে ছিলো। গরিব মানুষদের খাওয়া দাওয়ার যাতে কোনো কমতি না থাকে সে সবই দেখা শোনা করছিল। বাসার ভিতরে চিৎকার চেচামেচিতে রুদ্র বাসার ভিতরে আসলো নিপাকে মাথা নিচু করে কাঁদতে দেখে আর নিপার মার কথা শুনে যা বোঝার বুঝে গেলো। রুদ্র রেগে গেলো
— আপনারা এখানে আমাদের পার্সোনাল ব্যাপারে নাক গলাতে এসেছেন? নাকি দাওয়াত খেতে এসেছে? অবশ্যই দাওয়াত খেতে। তো খেয়ে দেয়ে চুপচাপ চলে যাবেন। এখানে তো এতো কথা হওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখছি না
নিপার ফুপু নরম গলায় বলল

— রুদ্র বাবা আমরা জানি বুঝতে ও পারছি নিপা তোমাকে ফাসিয়ে বিয়ে করেছে যেই মেয়ে হারে হারে বজ্জাত খুব ভালো করে চিনি। ছেলেদের কিভাবে পঠাতে হয় সেটা ও ভালো করেই জানে
রুদ্র গম্ভীর গলায় বলল
— আপনি কিছু ই জানেন না। আমার মতেই বিয়ে হয়েছে। না আমাকে কেউ জোর করছে। আর আপনারা আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমারই স্ত্রী কে যা নয় তাই বলছেন? লজ্জা করছে না দাওয়াত খেতে এসে কুঠনামি করতে? ফুপি নিপা না আপনার ভাইঝি আপনি কিভাবে নিজের ভাইঝির সম্পর্কে এসব কথা বলতে পারছেন? এতো নিচ মন মানুষী কতা আপনাদের।
নিপার ফুপুর রাগে অপমানে চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো।

— রুদ্র তুমি কিন্তু আমাদের অপমান করছ। আমরা তোমার ভালোর জন্যই বলছিলাম
— আমার ভালো খারাপ নিয়ে তো আপনাদের ভাবতে বলি নাই বলছি কি? তাহলে কেনো শুধু শুধু আমার লাইফ নিয়ে টানা হ্যাস্রা করছেন? এতো কেনো মাথা ব্যথা আপনাদের?
নীলিমা আসলো কিছুই বুঝলেন না শুধু শুনে গেলেন। নিপার ফুপু বলল

— বাড়িতে ডেকে এনে এমন অপমান না করলেও পারতে রুদ্র
— ভুল বললেন। আমি আপনাদের অপমান করতে চাই নি আপনারা যেচে অপমানিত হয়েছে আপনাদের দোষেই। এখানে আপনাদের আনা হয়েছে আমার মেয়ের আকিকার জন্য ওর দোয়ার জন্য কিন্তু আপনারা তা না করে গিবত গায়ইছেন বসে বসে। আমার স্ত্রী কেও অপমান করেছেন। এগুলো এবাড়িতে আমি টলারেট করবো না।
পাশের বাসার আন্টি তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
— তোমার মেয়ে? বিয়ে হলো কয়দিন মাত্র তার মধ্যে ই বউয়ের আঁচল ধরে বসে আছো? বউয়ের দোষ খুঁজেই পাচ্ছো না দেখছি

— আপনার ছেলে শুনলাম আপনার বউয়ের সাথে আলাদা থাকে সেটা কে কি বলে?
আন্টির মুখ থমথমে হয়ে গেলো। এতোক্ষণ তিনি বেশ মজাই নিচ্ছিলেন। রুদ্রর মুখে এমন কথা শোনার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। নিপা ওখান থেকে রুমে চলে আসলো। এসব কটুক্তি ওর ভালো লাগছে না। রুদ্র ও নিপার পিছনে পিছনে আসলো। তা দেখে আরেকজন নীলিমা কে বলল
— দেখো নীলিমা তোমার ছেলেকে ঔ মেয়ে হাত করে ফেলেছে
নীলিমা বিরক্ত হয়ে বলল

— দেখলাম আর বুঝালম ও আপনারা আছেন ই এমন কটুকথা বলার জন্য চলেন খেয়ে বাসায় চলে যাবেন
নিপার চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরছে। রুদ্র বলল
— কাঁদছ কেনো? এমনি সময় তোমার মুখ দিয়ে গু লি বের হয়। কাজের সময় তোমার কথা কই যায়?
নিপার এতোক্ষণের জমানো রাগ টা বের হলো
— একদম কথা বলবেন আপনি আমার সাথে। সব দোষ আপনার এই বিয়ে টা যদি না হতো তাহলে কেউ এমন কথা বলার সুযোগ পেতো না। সবার কাছে আমিই অ প রা ধী। এসব দেখে আপনি খুব মজায় আছে তো খুব খুশি আপনি তাই না?

— নিপা কি বলছ এগুলো তুমি দেখলে না আমি ওখানে সব বললাম
— বলে কি হলো? ওরা কি আর বুঝলো? দিনের পর দিন নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসছে বাঁচার ইচ্ছে মরে যাচ্ছে
— কারণ টা কি আমি?
— অবশ্যই কেনো আপনি বুঝতে পারছেন না?
রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
— নিপা আমাকে কি ভালোবাসা যায় না?
নিপা অবাক চোখে রুদ্রর দিকে তাকালো নিরব থেকে বলে উঠলো

— আমি আপনার বড় ভাইয়ের বউ। আপনার লজ্জা করছে না এগুলো বলতে?
— আগে তুমি আমার বড় ভাইয়ের বউ ছিলে এখন তুমি আমার বউ। ভাই থাকলে আমি কখনো তোমাকে এগুলো বলতাম না। আমি যাকে বিয়ে করতাম তাকে বলতাম দেখো যা হবার তো হয়েই গেছে আমরা একটা সুন্দর ভাবে জীবন গড়তে পারি না। আমাদের মধ্যে কার এসব ঝামেলা হৃদির ওপরে পড়বে। ওর ওপর কি প্রেসার পড়বে ভাবতে পারছ? যখন দেখবে ওর বাবা-মা র মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়া ঝামেলা লেগেই আছে ওর মনে কি প্রভাব পড়বে?

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৩

নিপা ভাবনায় পড়ে গেলো। কি করা উচিত ওর? অভ্র নামক ভালোবাসার মানুষ টাকে ভুলে তার ভাইয়ের সাথে সংসার করবে? অভ্র ভুল বুঝছে না তো তাকে? নিপার চিন্তিত মুখ দেখে রুদ্র বাঁকা হাসলো। মনে মনে বলল
— প্ল্যান কাজে দিচ্ছে

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৫