ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১৩

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১৩
তাসনিম তামান্না

বিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বাসায় এসে রুদ্র নিপা থম মেরে বসে আছে। নিদ্র বুঝতে পারছে না তার বাবার মতো মেয়েটা দেখতে কে? নিরবতা ভেঙে নিপা রুদ্রের বাহু খামচে ধরে বলল

— শোনো ঐ আমার মেয়ে হৃদি। আমার হৃদি বেঁচে আছে ওকে আমার কাছে এনে দাও। কি হলো কথা বলছ না কেনো?
— দেখ নিপা শুধু ফ্রেসের সাথে মিল এই ভিত্তিতে ও আমাদের মেয়ে হতে পারে না। পৃথিবীতে এমন ফ্রেসের মিল হয়েই থাকে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— না তুমি ভুল করছ ঔই আমার মেয়ে হৃদি মায়ের মন কখনো মিথ্যা বলতে পারে না
— নিপা আমাদের আগে শিওর হতে হবে ও-ই আমাদের হৃদি। তারজন্য ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে হবে
— ও বাবা-মা আমরা তুমি কার কথা বলছ
— নিপা… এতোটা শিওর কি করে হচ্ছো।
— আমি জানি ও আমার মেয়ে
— আচ্ছা আমি দেখছি কিভাবে কি করা যায়।
নিদ্র এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলল

— আব্বু ওনি যদি আমার আপু হয় তাহলে আপু কি মানবে আমাদের সাথে কি থাকতে রাজি হবে?
রুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে নিদ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— চেষ্টা করবো
তারপর দ্রুত পায়ে ফোন বের করে চলে গেলো। নিদ্র মায়ের থেকে সবসময় দূরে থাকে কিন্তু কি মনে করে আজ মায়ের পাশে গিয়ে বসে বলল

— আম্মু তুমি টেনশন করো না আপু ঠিক আমাদের কাছে চলে আসবে দেখ
নিপা নিদ্রকে জড়িয়ে ধরলো। নিদ্র চমকে গেলো। মা আজ বেশি খুশি তার…
রুদ্র বাইরে গিয়ে ফুয়ানের কাছে ফোন দেয়। সালাম বিনিময় করে রুদ্র বলে
— ফুয়ান তোমার কাছে মৃত্তিকার বাবার নম্বর আছে?
ফুয়ান জানত এমন প্রশ্ন আসবে তাই না ঘাবড়িয়ে বলল

— বাবার কাছে আছে
— তোমার বাবার কাছ থেকে নিয়ে আমাকে পাঠাও ফাস্ট
–জি স্যার
ফুয়ানদের বাসা থেকে অনেক আত্মীয় স্বজনরা চলে গিয়েছে। মৃত্তিকারা চলে যাবার পর রুদ্ররা চলে গিয়েছে। ততক্ষণ মৃত্তিকার দিকেই খেয়াল রাখছিল ওরা। ফুয়ান বাবার কাছে গিয়ে বলল

— বাবা যে মেয়েটাকে চ ড় মে রে ছিলাম। ঐ মেয়েটার বাবার নম্বর আছে?
রাশেদ সন্দিহান চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল
— আছে কিন্তু কি করবি?
— আব রুদ্র স্যার ওনার সাথে কথা বলবে
রাশেদের মনে ভয় ডুকে গেলো। ভয়ে ঘামতে শুরু করলো

— কি হলো বাবা দাও
— ওনি ওনার নম্বর নিয়ে কি করবে?
— দেখলে না মৃত্তিকা বলে মেয়েটা স্যারের মতো দেখতে স্যার ম্যাম ধরেই নিয়েছে ওটা ওদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে
— কি বলছিস তা কখনো হয় না-কি এসব তো ওনারা আমাদেরকে বলে নি
— তা সব পরে জানা যাবে তুমি নম্বর দাও
রাশেদ কাঁপা হাতে ফোন বের করে ছেলের কাছে দিয়ে বলল

— দেখ বড় বেয়াইন বলে সেভ করা আছে। আমি একটু আসছি
— তোমার আবার কি হলো
রাশেদ উত্তর না দিয়ে হাঁটা ধরলো।
মৃত্তিকা কারোর সাথে কথা বলছে না মুখ ভার করে রেখেছে। মূলত তখন দাউদের কাছে ধমক খেয়েই এই অবস্থা বেশি আহ্লাদি মেয়ে কি-না। দাউদ সেটা দেখে বলল

— ঢং দেখে বাঁচি না যে ছেলে ভরা বিয়ে বাড়িতে চ ড় মা র তার জন্য ওনার ভালোবাসা উঠলে পড়ছে আর ভাই ভালের জন্য একটা ধমক দিয়েছে তার জন্য কথাই বলছে না লাগবে না এমন বোন
— লাগতে হবে না আমি বিয়ে করে চলে যাবো তখন বুঝবে
— আপনাকে কে বিয়ে করে নিজের কপাল পোড়াবে? মানুষের এতোটাও খারাপ দিন আসি নি
— ঋতু আপুর কপাল পুড়ে বসে আছে যেই জল্লাদের জল্লাদ আপনি

— সেটা আপনাকে বুঝতে হবে না। আপনি সারাজীবন আইবুড়ি থেকে যাবেন আপনাকে কেউ বিয়ে করবেও না আপনার স্বপ্ন মরুভূমির বালিতে বালি চাপা দিয়ে আসেন। আর এমনিতেই বাংলাদেশে ছেলের সংখ্যা কম
দাউদের বাবা দাউদকে ধমক দিয়ে বলল

— আহ দাউদ মৃত্তিকা বাচ্চা তাই বলে তুমিও ওর সাথে বাচ্চামো করবে?
— ও-ই তো আগে শুরু করলো… এখন সব দোষ আমার হয়ে গেলো? ও ছোট বলে ওর সাত খু ন মাফ বাহ বাবা বাহ
মৃত্তিকা ফিক করে হেসে দিলো সাথে গাড়িতে সকলে সশব্দে হেঁসে উঠলো। মৃত্তিকার বাবা বলল
— তোরা পারিস ও বটে

মৃত্তিকার মা’কে চুপ থাকতে দেখে মৃত্তিকার বাবা কিছু বলতে তখনি ফোন বেজে উঠল যাবে তখনি মৃত্তিকা বলল
— কী গো আম্মু তোমার আবার কী হলো? অন্য দিন আমাকে বক আজ বকছ না যে তোমার বকা না শুনলে ভালো লাগে না
মৃত্তিকার মা মৃত্তিকার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল
— পাগলি মেয়ে!
মৃত্তিকা অবাক হয়ে বলল
— আম্মু তোমার কি শরীর খারাপ করলো না-কি ভুতে ধরলো? এতো মিষ্টি কথা বললে যে
— মা র বো টেনে এক চ ড়
— এবার ঠিক আছে
দাউদ বলল
— দেখলে বড়ম্মু তোমার মেয়ে কি ফাজিল হচ্ছে
— হ্যাঁ দেখি আবার বিয়ের জন্য আজকাল একটু বেশি লাফালাফি করছে। তো ছেলে দেখা শুরু করে দে
— না না আম্মু ছেলে দেখা আছেই শুধু রাজি করাতে হবে
— দেখছ চাচিম্মু কত নিলর্জ্জ মেয়ে
দাউদের মা বলল

— তুই চুপ কর তো আমাদের মৃত্তিকা মা একটু দুষ্টুমি করে তাই বলে কি ওর এই দুষ্টুমি তে সাই দিচ্ছি নাকি
মৃত্তিকা মন খারাপ করে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
— আজ ছোট বলে কেউ সিরিয়াসলি নিচ্ছেই না দূর ভালো লাগে না
মৃত্তিকার বাবা মাহাতাব ফোন ধরার আগেই ফোন ওফ হয়ে গেলো ফোনের চার্জ নেই। রুদ্র এদিকে অনবরত ফোন দিয়ে রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ফোনে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়িতে ডুকলো। নিপা হন্তদন্ত হয়ে রুদ্র কাছে এসে বলল

— কি হলো কোনো খোঁজ পেলে
রুদ্র কথা ঘুরিয়ে বলল
— আব কি বলো তো খোঁজ নিতে তো একটু সময় লাগবে না-কি এটা কি হাতের মোয়া যে চাইলাম আর পেয়ে গেলাম
— তুমি ওনার নম্বর নাও নি?
— ফুয়ানকে দিতে বলেছি ওদের বাসায় অনুষ্ঠান ব্যস্ত আছে পরে সময় করে দিবে হয় তো এতো টেনশন করো না
রুদ্র নিপার পাশ কাটিয়ে ওপরে চলে গেলো ফ্রেস হতে।

মৃত্তিকা বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে শুয়ে পড়লো। ফুয়ান আহমেদ বলে সাস দিয়ে ফুয়ানের আইডি খুঁজে বের করে ফেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে। ফুয়ানের ছবি গুলো জুম করে করে দেখছে আর চু!মু খাচ্ছে আর লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। ছবি দেখতে দেখতে গান ধরলো

এ লাড়কা হাই আল্লাহ ক্যাসা হে দিওয়ানা
কিতনা মুসকিল হে তাওবা ইসকো সামজানা
কে ধিরে ধিরে দিল বেকারার হোতাহে
হোতে হোতে দিল পেয়ার হোতা হে (২)
হামনে তো ইতনা দেখা
হামনে তো ইতনা শোনা….

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১২

গান শেষ করে কিছুক্ষণ ভেবে ভেবে ঠিক করলো ফুয়ানকে ফোন দিবে। কিন্তু দিয়ে কি উল্টো পাল্টা বলা যায় সেই ফন্দি আঁটে ফোন লাগালো….

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১৪