নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব ২১

নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব ২১
একান্তিকা নাথ

সেতুর মিহি ঠোঁটজোড়া কিঞ্চিৎ ফোলা আর লালচে বোধ হলো।গলার কাছে কালো তিলটার আশপাশে কাঁমড়ের লালচে দাগ জ্বলজ্বল করছে।সদ্য স্নান সারা সেতু আয়নায় নিজেকে পর্যবেক্ষন করেই চোখ খিচল।অপ্রত্যাশিত মুহুর্তের কথা স্মরণ করেই বার কয়েক ঘনঘন শ্বাস ফেলল।

উঠে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে দ্রুত ভেজা চুল মুড়িয়ে নিল। বিছানায় ঘুমন্ত নিষাদের দিকে এক নজর তাকিয়েই নিজের ভেতর শীতল প্রবাহের অস্তিত্ব টের পেল।ঘুমন্ত মানুষটার থুতনি আর গলার কাছে সিঁধুরের লালাভ বর্ণ।চুলগুলো বেশ এলোমেলো।সেতু কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে রইল সেই ঘুমন্ত মুখের দিকে।পরক্ষনেই অবাক হলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঘুমন্ত নিষাদের ঠোঁট চওড়া হলো।বন্ধ রাখা চোখের পাতা মেলে ধরল তৎক্ষনাৎ।তার মানে এতক্ষনও জেগেই ছিল নিষাদ।সঙ্গে সঙ্গে দুইজনের চোখাচোখি হলো।সেতু অপরাধীর মতো দ্রুত নজর সরিয়ে মাথা নত করল।নিষাদ মুচকি হেসেই শুধাল,

” নজর সরালে কেন?লুকিয়ে লুকিয়ে না দেখে তুমি চাইলে সরাসরিই তাকিয়ে থাকতে পারো।ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থেকে আমার রূপের প্রেমে পড়তে পারো।আমি নিষেধ করব না কিন্তু।কিছু মনেও করব না।”
সেতু অসহায় বোধ করল।কিছু বলার মতো সাহস কিংবা ইচ্ছে নিজের মধ্যে সঞ্চার করে উঠতে পারল না।তার অবস্থা তখন নুঁইয়ে থাকা ফুলের মতোই লাজুক।শরীরে জড়োসড়ো ভাব।নিষাদ সেই জড়োসড়ো ভাবকে পাত্তা দিল না।ঠোঁট চওড়া করে বলল,

“এমন লাজুকলতার মতো নুঁইয়ে আছো কেন?আশ্চর্য!আমি কি তোমায় কিছু করেছি এই মুহুর্তে?বলো।”
সেতু মাথা তুলে চাইল এবার।আড়ষ্ট গলা দিয়ে শব্দ গলিয়ে বলল,
” কিছুই করেন নি।”
নিষাদ চাপা হাসল।বলল,

” তবে লজ্জ্বা পাচ্ছো কেন?লজ্জ্বা কাঁটাতে আরেকটু প্রেম নিয়ে যাও। এদিকে আসো।”
সেতু চোখ খিচল।আর এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে থেকে যেতে যেতে বলল,
” আপনার থুতনি আর গলায় সিঁধুর লেগে আছে নিষাদ।”
নিষাদ এবার আওয়াজ করেই হাসল।সেতুর যাওয়ার দিকে এক পানে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড়িয়ে বলল,
” থাকুক লেগে!”

সেতু পা টিপি টিপে নীরুর ঘরে ডুকল।নীরুর ঘরের দেওয়ালে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বুঝল সবে সকাল ছয়টা।চোখের দৃষ্টি নামিয়ে খাটের দিকে তাকাল।সবাই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।সেতু মনে মনে স্বস্তি পেল।এতক্ষনকার অস্বস্তি এবার একটু হলেও কেঁটে আসল।পা ফেলে আবারও রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসে রান্নাঘরে গেল।কিয়ৎক্ষন রান্নার কাজে হাত লাগাতেই সেখানে কোথায় থেকে হাজির হলো নিষাদ।সেতুর অস্বস্তি আবারও বাড়ল।এই লোক আবার ও?আড়চোখে নিষাদের দিকে তাকাতেই নিষাদের আগের মতোই অবস্থা চোখে পড়ল।থুতনি আর গলার কাছে আগের মতোই সিঁধুরের লালাভ রং।অগোছাল চুল, ঘুমুঘুমু ফোলা চোখ৷ সেতু আড়চোখে বার কয়েক তাকালেও কিছুই বলল না।নিষাদই আগ বাড়িয়ে বলল,

” তুমি মেয়েদের মতো এভাবে সিঁধুর লাগিয়ে দিয়েছো কেন আমায়?আমি মেয়ে?”
সেতুর রাগ হলো।খুব বিচ্ছিরি কিছু বলতে মন চাইলেও বলতে পারল না।অস্ফুট স্বরে প্রশ্ন করল,
” আমি?”
” তো?আমি নিজেই নিজের গায়ে সিঁধুর মেখে আছি মনে হচ্ছে?”
সেতুর চোখের দৃষ্টি ক্ষীন হলো।চুলা জ্বালিয়ে কড়াই বসাতে বসাতেই বলে উঠল,

” পরিষ্কার করে নিন।তাহলেই তো হয়ে গেল।”
নিষাদ ত্যাড়া উত্তর ছুড়ল,
” পরিষ্কার করতে হবে কেন?”
“আপনি কি যাবেন? নাকি ইচ্ছে করেই এখানে জ্বালানোর জন্য এসেছেন?”
নিষাদ হাসল। উত্তরে বলল,

” দোষ তো তোমার।সিঁধুর ফিঁধুর লাগিয়ে ভূত বানিয়ে দিয়েছো আমায়।আমি তো আয়নায় নিজেকে দেখে মিনিট দশ শকড হয়ে ছিলাম।শেষে কিনা এই পরিণতি হলো আমার?এই অবস্থা করে ছাড়লে?ছিঃ ছিঃ!লোকে দেখলে বলবে কি আমায়?”

সেতু বিড়বিড় করল কিছু।নিষাদ বুঝে উঠল না অবশ্য সেই বিড়বিড় করা শব্দগুলো।ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি কি আমায় গা’লি দিচ্ছো সেতু?ছিঃ!ছিঃ!স্বামীকে গালি দিলে অন্যায় হয়।জানো না?”
সেতু ক্লান্তি ভরা চোখে চাইল নিষাদের দিকে।অসহায় গলায় বলল,
” কোন গা’লি দিইনি আপনাকে। সব দোষ আমার। আমি স্বীকার করলাম।দয়া করে এবার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।”

নিষাদ ঠোঁট চওড়া করে হাসল।হাত নাড়িয়ে অগোছাল চুলগুলোকে ঠিক করতে করতে পিঁছু ঘুরল। পুরু ঠোঁটজোড়া গোল করে শিষ বাঁজাতে বাঁজাতেই প্রস্থান করল সেইখান থেকে।

সকালের নাস্তার টেবিলে নীরু, নিলু, নিষাদ সকলেই উপস্থিত হলো।নীর বসে রইল নীরুর কোলে।সেতু হাতে হাতে সবাইকে নাস্তা এগিয়ে দিল।সবাই খাওয়ায় মনোযোগী হলো।পিনপতন নিরবতার মাঝেই হঠাৎ নিলু আওয়াজ তুলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে উঠল।তৎক্ষনাৎ সবাই ওর দিকে ফিরে চাইল।নিলু ঠোঁট উল্টে বলল,
” নীরুর বাচ্চা নীরু থাকলে আমি খাব না।কোনদিনই খাব না আমি।সকালের নাস্তা না খেয়েই ম’রে যাব আমি বলে দিলাম।”

নীরু হেসে উঠল খিলখিলিয়ে। ত্যাড়া চোখে তাকিয়েই ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
” আরেহ পাগল নিলু।সকালের নাস্তা না খেলে কেউ মরে যায় না।তোকে মরতে হলে কমপক্ষে কয়েকদিন না খেয়ে থাকতে হবে। কয়েকদিন না, কয়েক মাস না খেয়ে থাকতে হবে।পারবি?”
নিলুর কান্নার আওয়াজ আরো বাড়ল।ঠোঁট উল্টে সেতুর দিকে তাকাতেই সেতু এগিয়ে এল।ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

” কি হয়েছে মামনি?নীরু কি করেছে তোমায় বলো।”
নিলু যেন এই প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিল।ফোঁসফাঁস করে শ্বাস ছেড়ে উত্তরে বলল,
” ও আমায় চিমটি দিচ্ছে। শান্তিতে খেতে দিচ্ছে না।কিছু করো ওকে।পারলে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিয়ে আসো মামি।”

নিলুর আকস্মিক জবাবে হাসির রোল পড়ল খাবার টেবিলে। নিষাদ ঠোঁট চওড়া করেই বলল,
” ঠিক বলেছিস নিলু।এই নীরুকে রেখে টেখে লাভ নেই।বড় একটা বস্তায় ভরে সোজা নদীতে ফেলে দিব।আহা শান্তি!”
নীরু এবার রেগে গেল।নাক ফুলে উঠল সেই রাগে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলল,
” নদীতে ফেলে দেখাও আগে।কত বড় সাহস!আমায় নদীতে ফেলে দেবে?”
নিলু বাচ্চা কন্ঠে বলল,

” তো? তোমায় নদীতে ফেলে দেওয়া কি বিরাট বড় কঠিন কাজ নাকি?”
নীরু তেঁতে উঠল।চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,
” নিলু, ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম। ছয় বছরের বাচ্চা, এই তো কয়েকদিন হলো দুনিয়াতে এসে প্যাঁ ফ্যাঁ করে কান্না করছিলি।আর সেই তুই এত বড় কালসাঁপ তৈরি হয়ে উঠলি কবে?কখন?তোকে তোর মায়ের সাথে কালই তাড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল।”

নিলু মুখ ফুলিয়ে বলল,
” যাব না আমি।কি করবে তুমি?”
নীরু খাবার চিবুতে চিবুতে উত্তর দিল,
” আঁছাড় মারব তোকে।”

কথাটা বলার পর পাল্টা উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিল নীরু। ঠিক তখনই মোবাইলের আওয়াজ আসল কানে।মোবাইলটা নিষাদের।টেবিলের উপর বেঁজে চলেছে।নিষাদ কিয়ৎক্ষন পর কল তুলল।হ্যালো বলে কিয়ৎক্ষন চুপ থেকেই ওপাশের কথা শুনল। তারপর পরই নীরুর দিকে এগিয়ে দিল মোবাইলটা।মুখে বলল,
” কথা বলে আয়।”
নীরু ভ্রু কুঁচকাল।কিছু না বুঝেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে কানের সামনে ধরল।নম্র গলায় বলতে লাগল,
” হ্যা্…”

বাকিটা বলা হয়ে উঠল না নীরুর।তার আগেই ওপাশ থেকে বাঁজখাই গলায় রঙ্গন বলে উঠল,
” থা’পড়ে তোর গালের সব দাঁত ফেলে দিব নীরু।তোকে না বলে এসেছিলাম কল দিলে কল ধরতে?আর তুই কিনা এখনো মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিস?কত বড় সাহস তোর!”
নীরু চোখ ছোট ছোট করে এবার মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাল। বুঝল রঙ্গন কল দিয়েছে।তার মোবাইলটা ঐদিন যে আঁছাড় মেরে ফ্লোরে ফেলেছিল তারপর থেকে আর হাতে উঠিয়ে দেখে নি।সে কি করে জানবে মোবাইল সচল আছে নাকি বন্ধ হয়ে আছে?আশ্চর্য!এতদিন মোবাইল সচল রেখে হাতে নিয়ে বসে থাকলেও রঙ্গন কল দিত না।আর এখন মোবাইল বন্ধ হতে হতেই কলের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে? ঠোঁট চেপে বলল,

” বেশ করেছি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছি।কিছু বলবে?”
রঙ্গন ওপাশ থেকে গমগমে সুরে উত্তর দিল,
” এখন দ্রুত তোর মোবাইল অন করে আমায় কল দিবি। নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না নীরু।”
নীরু পাত্তা দিল না সেই ধমককে। আস্তেধীরে শান্তিতে খেতে খেতে বলল,
” এখন নাস্তা করছি।মোবাইলে চার্জ নেই বললেই চলে।নাস্তার পর মোবাইলে ফুল চার্জ দিয়ে তারপর কথা বলছি।রাখলাম।”

কথাটা বলেই মুখের উপর কল কাঁটল।আহা শান্তি!মন ফুরফুরে লাগছে রঙ্গনের মুখের উপর কল কাঁটতে পেরে।অন্যদিন যে জায়গা নাস্তা বিশমিনটে খাওয়া হয়ে যায় সেই জায়গায় আজ চল্লিশ মিনিটে নাস্তা শেষ করল।নীরকে সেতুর কাছে দিয়ে হেলেদুলে মোবাইল খুঁজে বের করল।তারপর চার্জে বসাল।চার্জে বসালে যে নীরু একটু চার্জ হলে মোবাইল চালানো শুরু করত সেই নীরু আজ মোবাইলে পুরো পুরি শতভাগ চার্জ হওয়ার পরই মোবাইল হাতে নিল।তারপর ফুরফুরে মেজাজে বেলকনিতে গেল।রঙ্গনকে কল দিয়ে কানে মোবাইল নিতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভড হলো।নীরু বলল,

” কেমন আছো গাঁধা?”
রঙ্গন চাপা গলায় বলল,
” গাঁধা বলবি না একদম।তোর থেকে বয়সে বড় আমি।”
নীরু চাপা হাসল।চঞ্চল গলায় শুধাল,
” তাহলে কি বলে ডাকব তোমায়?”
” যা খুশি তাই বলেই ডাকবি।”

নীরুর মাথায় মুহুর্তেই দুষ্টুবুদ্ধি ভর করল।ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
” কেমন আছো দাদাভাই?”
রঙ্গন মুহুর্তেই বিষম খেল।বলল,
” কি বললি?কি বললি তুই?দাদাভাই?”
” হ্যাঁ।কেন?তুমি বেচারা এতগুলো দিন সম্মানের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছো।আমার উচিত না তোমায় সম্মান দেওয়া?”

” না উচতি না।তোর এই সম্মান চাই না আমার।এই সম্মানমূলক শব্দ বয়কট করলাম আমি। ছিঃ!”
নীরু এবার আওয়াজ করে হেসে উঠল।বলল,
” ছিঃ এর কি হলো?আশ্চর্য!এইজন্যই বলে মানুষকে অতিরিক্ত সম্মান দিতে নেই।তারপর বলো,তুমি এমন কল দিতে দিতে ম’রে টরে যাচ্ছো কেন?”
রঙ্গন কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।তারপর বলল,

” আমার কথা আছে বললাম না তখন?তুই কি কথা বলবি না?”
নীরু আহাম্মকের মতো শুধাল,
” কি আশ্চর্য!কথা না বললে এতক্ষন কি বলছি তোমার সাথে? এগুলা কি কথা না?নাকি তুমি শুনতে পাচ্ছো না?”
” এই কথা না।গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।তোকে সেসব কথা শুনতে হবে।”
” কেন শুনতে হবে?”

রঙ্গন আবারও চুপ থাকল। বলল,
” কথাগুলো তোকে নিয়েই তাই।কখন সময় হবে তোর?”
নীরু উত্তরে আয়েশ করে বলল,
” আমি অলটাইম ফ্রী।এবার বলো কি গুরুত্বপূর্ণ কথা? ”
” দেখা করি?এভাবে সবটা বুঝাতে পারব না। ”
নীরু মুহুর্তেই নাকোচ করল সেই প্রস্তাব।ঠোঁট নেড়ে বলল,

” না, দেখা করব না।”
” কেন?”
নীরু হেসে উঠল।উত্তরে গলা ঝেড়ে বলল,
” মন চাচ্ছে না তোমার সাথে দেখা করতে গাঁধা।একটা গাঁধার সাথে দেখা করলে আমি নামক অতি ব্রিলিয়ান্ট মেয়েটার সম্মানের বারোটা বেঁজে যাবে না?”
রঙ্গন রেগে গেল মুহুর্তেই।এতক্ষন কার নম্র গলা হঠাৎ শক্ত হলো।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“সামনে থাকলে নির্ঘাত এক চ’ড় মারতাম।কত সম্মানের মালিক তিনি।দেশ বিদেশের মানুষ তার সম্মানে একদম হাবুডুবু খেয়ে ম’রে যাচ্ছে।”

নীরু ঝাঝালো গলায় বলল,
” সম্মানী ব্যাক্তিদের সম্মান দেখে তো জ্বলবেই তোমরা।তোমার মতো গাঁধাকে কি আর কেউ সম্মান দিবে?তাই তো ফোঁস ফোঁস করে জ্বলছো, আর লুচির মতো ফুলছো।”
” তোকে সামনে পেলে মাথায় তুলে আঁ’ছাড় দিতাম।”

” তোমার সারাজীবন এই চ’ড়, থা’প্পড়, মাথায় তুলে আঁছাড় দেওয়া আর হাত পা ভা’ঙ্গতে ভা’ঙ্গতেই কেঁটে যাবে গো গাঁধা।তোমার সাথে পরিচয়ের সূচনা লগ্ন থেকে এই শব্দ গুলো শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেল।”
” এতদিন তোর প্রতি মায়া হয়েছিল বলে কোনদিন মা’রিনি।এবার সত্যি সত্যিই মে’রে দিব।”
নীরু পাত্তা দিল না।খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।উঁচু গলায় বলল,

“দাও, দাও।মেরে দেখাও আগে।”
কথাটা বলেই কল কাঁটল।ওপাশ থেকে রঙ্গনের কথার অপেক্ষা করল না।গুনগুন করে মিহি কন্ঠে গাইল,
” আমাকে আমার মতো থাকতে দাও,
আমি নিজেকে নিজের মতো সামলে নিয়েছি..”

তখন রাত।সেতু আলমারিতে কাপড় গুঁছিয়ে রাখছিল।নিষাদ সবে অফিস থেকে ফিরেছে।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেই সেতুর দিকে চেয়ে থাকল।বেশ কিছুক্ষন পায়ের উপর পা তুলে সেতুকে পর্যবেক্ষন করার পরই চোখ পরল সেতুর গলার নিচে তিলটায়।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে সেতুর উদ্দেশ্যে বলল,

” একি!তোমার গলার নিচে তিলটায় এমন ক্ষত চিহ্ন কেন?লালচে হয়ে আছে?কিছু কাঁমড় দিল বুঝি?”
কথাটা নিষাদ অতি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেও সেতুর পছন্দ হলো না।মনে মনে বার কয়েক নিষাদকে বকাঝকা করা শেষ করে নিষাদের দিকে ফিরে চাইল।মুখের হাসিটা দেখেই গা জ্বলে উঠল।দাঁতে দাঁত চেপে স্পষ্টভাবে বলল,
” আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না নিষাদ।”

নিষাদ আকস্মিক কথায় অবাক হওয়ার ভান ধরল।মনে মনে হাসলেও মুখ গম্ভীর করে বলল,
” কেন?কি আশ্চর্য! আমি তো তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না।”
” না পারলে না পারবেন।তবুও কথা বলবেন না।”

নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব ২০

নিষাদ এবার আওয়াজ করে হেসে উঠল। সেতু দুয়েকবার সেই হাসির দিকে তাকিয়েই পা বাড়াল।সঙ্গে সঙ্গেই মোবাইলের আওয়াজ আসল কানে।আবারও দু পা পিঁছিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাতেই নাম্বারটা দেখে অবাক হলো।সেতু নিজের কন্ট্যাক্ট নাম্বারটা বদলেছিল নিষাদের সাথে বিয়ের পরপরই।এতগুলো দিন মোবাইলটা অচল হয়েই ছিল একপ্রকার।আজ এতগুলোদিন পর এই নাম্বারে কেউ কল করবে ভাবে নি সেতু।আকাশ কল দিয়েছে।কিন্তু তার নতুন নাম্বারটা পেল কোথায়?এতগুলো দিন পর কেনই বা কল দিল?

নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব ২২